রমজান মাসে বাজারের সুষ্ঠু তদারকি প্রয়োজন-বাজারদরে বড় অসংগতি

রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দামে পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে বড় ধরনের অসংগতির খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের প্রাক্কালে প্রকাশিত এ ধরনের খবরের প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়া একান্ত প্রয়োজন।


কারণ, আমরা সবাই জানি, রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যের বাজার প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের, বিশেষত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক চাপ কষ্টকরভাবে বেড়ে যায়।
বুধবার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, পুরান ঢাকার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ছোলার দাম এখন মানভেদে ৩৭ থেকে ৩৯ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এই ছোলা খুচরা বাজারে এসে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা দরে। অর্থাৎ পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ছোলার দামে পার্থক্য হচ্ছে ৭-৮ টাকা। মণপ্রতি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা। এটা এতটাই অস্বাভাবিক, যার যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু ছোলা নয়, চিনি বা ভোজ্যতেলের মতো দু-একটি পণ্য বাদে আলু-পেঁয়াজ, ডাল, কাঁচা মরিচ, বেগুন ইত্যাদি প্রায় সব খাদ্যদ্রব্যের পাইকারি ও খুচরা দামে অস্বাভাবিক রকমের পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। আরও যে বিষয়টি লক্ষণীয়, তা হলো, একই পণ্যের দাম রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন রকম।
বাজারদরে এই অস্বাভাবিক অসংগতির কারণগুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে পণ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু কেবল খুচরা বাজারে নয়, পাইকারি বাজারেও বাড়ে। সেই কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারের এতটা পার্থক্য হতে পারে না। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের খরচ পণ্যের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে যোগ করলেও এতটা পার্থক্য হতে পারে না। পথে পথে চাঁদাবাজি, পুলিশের বখরা আদায় ইত্যাদি চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন; কিন্তু এসব যদি চলেও, তবু এতটা পার্থক্য হওয়ার কথা নয়। একই সবজির দামে কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে বড় পার্থক্য হওয়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই।
পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামে বা রাজধানীর এক এলাকার বাজার থেকে অন্য এলাকার বাজারে একই পণ্যের দামে বড় পার্থক্য থেকে সাধারণভাবে মনে হয়, খুচরা ব্যবসায়ীরা মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করছেন। তাঁদের এই মুনাফালিপ্সায় বস্তুত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজারে আধিপত্য করছেন বিক্রেতারাই: তাঁরা যে দাম হাঁকছেন, ক্রেতাদের সে দামেই পণ্য কিনতে হয়, দরকষাকষিতে তেমন কোনো ফল হয় না। এটাকে বলে সেলার্স মার্কেট—বিক্রেতা-নিয়ন্ত্রিত বাজার। এখানে ক্রেতাদের অবস্থা প্রায় জিম্মির মতো। এটা মুক্তবাজার নয়, অতিরিক্ত মুনাফালিপ্সু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট-কবলিত বাজার।
দ্রব্যমূল্য বাড়লে সাধারণ মানুষের দুঃখকষ্ট বেড়ে যায়, তাতে মানুষ সরকারের ওপর হতাশ হয়। সরকারের জন্যও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। খুচরা বাজারের ওপর সরকারের কোনো তদারকি নেই। রমজান মাস শুরু নিশ্চিত হয়ে গেল, এখন আর সরকারের নির্বিকার থাকা চলে না। প্রতিটি বাজারে সব ধরনের দ্রব্যের মূল্যতালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হোক; তালিকার চেয়ে বেশি দরে দ্রব্য বিক্রি করলে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ নিয়মিতভাবে বাজার পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হোক। মোট কথা, বাজারকে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী চক্রের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুষ্ঠু তদারকির সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.