এই দিনে-অনন্য একটি প্রতিষ্ঠান by ডা. এ বি এম জামাল
স্বাধীনতা-উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রয়োজনে ১৯৭২ সালের আজকের এই দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সাজর্নস, যা সংক্ষেপে বিসিপিএস নামে পরিচিত।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাস্থ্যসুবিধা পাওয়াকে জনগণের মৌলিক অধিকার পাওয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং রাষ্ট্র ও সরকারকে তা সব নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। স্বাধীনতা-পূর্বকালে এ ভূখণ্ডের মানুষ চিকিৎসাব্যবস্থার জন্য মূলত নির্ভরশীল ছিল এলএমএফ, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি এবং স্বল্পসংখ্যক গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকের ওপর। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে দেশে কর্মরত চিকিৎসকের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৯০ জন নিহত হলে চিকিৎসা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়ে। এ অবস্থায় দেশে বিপুলসংখ্যক গ্র্যাজুয়েট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজনেই সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিপিএস। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিন সহস্রাধিক ফেলো ও দেড় সহস্রাধিক মেম্বার তৈরি করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
দেশের চিকিৎসা ও চিকিৎসাশিক্ষার প্রায় সব ক্ষেত্রেই এ কলেজের ফেলো ও সদস্যরা বিপুল অবদান রেখে আসছেন। আজ দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয় এই কলেজের সনদ পাওয়া বিশেষজ্ঞরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশে আমাদের ফেলোরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭২ সালের ৬ জুন ব্রিটেনের বিভিন্ন কলেজ ও পাকিস্তান কলেজ থেকে ফেলোশিপ পাওয়া মাত্র ৫৩ জন ফেলো নিয়ে এই কলেজ যাত্রা শুরু করলেও এখন ৪৭টি বিষয়ে ফেলোশিপ দিচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সাত হাজার চিকিৎসক এই কলেজের ফেলোশিপ অর্জনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।
কলেজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: ক. চিকিৎসাশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার প্রসার।
খ. স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব শাখায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
গ. ফেলোশিপ ও মেম্বারশিপ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা।
ঘ. চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও প্রণোদনা দেওয়া।
ঙ. চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সব জনবলের জন্য পেশাগত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।
চ. চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিবিধ শাখায় সেমিনার, কর্মশালা ও ব্যবহারিক প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমবেত, সংগঠিত ও উজ্জীবিত করা ।
গঠন ও পরিচালনা: বিসিপিএস অত্যন্ত উচ্চমানসম্পন্ন একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, একই সঙ্গে এটি বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষকে মূল্যায়ন করে। প্রতি দুই বছর পরপর ফেলোদের ভোটের মাধ্যমে ১৬ জন কাউন্সিলর (প্রতি দ্বিবর্ষে আটজন) চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন। এর সঙ্গে যুক্ত হন সরকার মনোনীত চারজন, যাঁরা অবশ্যই এই কলেজের ফেলো ও সমাজে উচ্চমর্যাদায় আসীন। কাউন্সিলরদের নিজেদের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে একজন সভাপতি, দুজন সহসভাপতি, একজন ট্রেজারার, দুজন সদস্য ও একজন অনারারি সচিব নির্বাচন করে থাকেন। এই কার্যকরী পরিষদ সিনিয়র ফেলোদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কমিটি ও ফ্যাকাল্টি নির্বাচন করে থাকেন, যাঁরা দুই বছরের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
পরীক্ষা পদ্ধতি: প্রতিবছর দুবার জানুয়ারি ও জুলাই সেশনে ৪৭টি বিষয়ের ওপর ফেলোশিপ ও ১৫টি বিষয়ের ওপর মেম্বারশিপ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষাগুলোর পরিপূরক মৌখিক, ব্যবহারিক, ক্লিনিক্যাল ও সুবিন্যস্ত ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য ও প্রায়োগিক বিশেষজ্ঞ বেছে নেওয়া হয়। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কলেজ একটি অনন্য সুন্দর স্বনিয়ন্ত্রিত কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে, যা পক্ষপাতমুক্ত, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
বিসিপিএস সব সময়ই নিজস্ব পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উৎকর্ষ সাধনে ব্যাপৃত থাকে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যথাসম্ভব সর্বাধুনিক ব্যবস্থাই বেছে নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিগুলো পরীক্ষিত ও কার্যকরী শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে অন্যত্র প্রমাণিত। যেহেতু এই কলেজ তার চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বটি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়ে থাকে, কাজেই এক ধরনের তদারকি ও প্রতিষ্ঠান মূল্যায়নের কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনে পড়ে। এ ক্ষেত্রে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে সহায়তা ও সহযোগিতা দেওয়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও জনগণের জন্য সার্ভিস একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্পন্ন এই কলেজটি তার ফেলোদের সুগভীর প্রজ্ঞা ও কঠোর অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে গৌরবের শিখরে আরোহণ করে যাচ্ছে। কালপরিক্রমায় কলেজ সাবালক হয়েছে। একই সঙ্গে কলেজের কাছে আপামর জনসাধারণের প্রত্যাশা বিস্তৃত হচ্ছে। কলেজ তার নিজস্ব দর্শনের ওপর দাঁড়িয়ে ধারণায় ও ব্যাপ্তিতে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে।
আজ এমন কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চল পাওয়া যাবে না, যেখানে কলেজের ফেলোরা মানবতার সেবা ও চিকিৎসাব্রত পালন না করে যাচ্ছেন। আমাদের প্রত্যাশা, সেবার এই পরিধি সহমর্মিতা, সৃজনশীলতা ও প্রগতিমুখিনতার মিশেল হয়ে সাধারণ মানুষের হূদয়ে চিরজাগরূক হয়ে থাকুক।
ডা. এ বি এম জামাল
সহযোগী অধ্যাপক সার্জারি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
দেশের চিকিৎসা ও চিকিৎসাশিক্ষার প্রায় সব ক্ষেত্রেই এ কলেজের ফেলো ও সদস্যরা বিপুল অবদান রেখে আসছেন। আজ দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয় এই কলেজের সনদ পাওয়া বিশেষজ্ঞরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশে আমাদের ফেলোরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭২ সালের ৬ জুন ব্রিটেনের বিভিন্ন কলেজ ও পাকিস্তান কলেজ থেকে ফেলোশিপ পাওয়া মাত্র ৫৩ জন ফেলো নিয়ে এই কলেজ যাত্রা শুরু করলেও এখন ৪৭টি বিষয়ে ফেলোশিপ দিচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সাত হাজার চিকিৎসক এই কলেজের ফেলোশিপ অর্জনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।
কলেজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: ক. চিকিৎসাশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার প্রসার।
খ. স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব শাখায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
গ. ফেলোশিপ ও মেম্বারশিপ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা।
ঘ. চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও প্রণোদনা দেওয়া।
ঙ. চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সব জনবলের জন্য পেশাগত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।
চ. চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিবিধ শাখায় সেমিনার, কর্মশালা ও ব্যবহারিক প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমবেত, সংগঠিত ও উজ্জীবিত করা ।
গঠন ও পরিচালনা: বিসিপিএস অত্যন্ত উচ্চমানসম্পন্ন একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, একই সঙ্গে এটি বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষকে মূল্যায়ন করে। প্রতি দুই বছর পরপর ফেলোদের ভোটের মাধ্যমে ১৬ জন কাউন্সিলর (প্রতি দ্বিবর্ষে আটজন) চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন। এর সঙ্গে যুক্ত হন সরকার মনোনীত চারজন, যাঁরা অবশ্যই এই কলেজের ফেলো ও সমাজে উচ্চমর্যাদায় আসীন। কাউন্সিলরদের নিজেদের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে একজন সভাপতি, দুজন সহসভাপতি, একজন ট্রেজারার, দুজন সদস্য ও একজন অনারারি সচিব নির্বাচন করে থাকেন। এই কার্যকরী পরিষদ সিনিয়র ফেলোদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কমিটি ও ফ্যাকাল্টি নির্বাচন করে থাকেন, যাঁরা দুই বছরের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
পরীক্ষা পদ্ধতি: প্রতিবছর দুবার জানুয়ারি ও জুলাই সেশনে ৪৭টি বিষয়ের ওপর ফেলোশিপ ও ১৫টি বিষয়ের ওপর মেম্বারশিপ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষাগুলোর পরিপূরক মৌখিক, ব্যবহারিক, ক্লিনিক্যাল ও সুবিন্যস্ত ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য ও প্রায়োগিক বিশেষজ্ঞ বেছে নেওয়া হয়। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কলেজ একটি অনন্য সুন্দর স্বনিয়ন্ত্রিত কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে, যা পক্ষপাতমুক্ত, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
বিসিপিএস সব সময়ই নিজস্ব পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উৎকর্ষ সাধনে ব্যাপৃত থাকে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যথাসম্ভব সর্বাধুনিক ব্যবস্থাই বেছে নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিগুলো পরীক্ষিত ও কার্যকরী শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে অন্যত্র প্রমাণিত। যেহেতু এই কলেজ তার চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বটি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়ে থাকে, কাজেই এক ধরনের তদারকি ও প্রতিষ্ঠান মূল্যায়নের কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনে পড়ে। এ ক্ষেত্রে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে সহায়তা ও সহযোগিতা দেওয়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও জনগণের জন্য সার্ভিস একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্পন্ন এই কলেজটি তার ফেলোদের সুগভীর প্রজ্ঞা ও কঠোর অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে গৌরবের শিখরে আরোহণ করে যাচ্ছে। কালপরিক্রমায় কলেজ সাবালক হয়েছে। একই সঙ্গে কলেজের কাছে আপামর জনসাধারণের প্রত্যাশা বিস্তৃত হচ্ছে। কলেজ তার নিজস্ব দর্শনের ওপর দাঁড়িয়ে ধারণায় ও ব্যাপ্তিতে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে।
আজ এমন কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চল পাওয়া যাবে না, যেখানে কলেজের ফেলোরা মানবতার সেবা ও চিকিৎসাব্রত পালন না করে যাচ্ছেন। আমাদের প্রত্যাশা, সেবার এই পরিধি সহমর্মিতা, সৃজনশীলতা ও প্রগতিমুখিনতার মিশেল হয়ে সাধারণ মানুষের হূদয়ে চিরজাগরূক হয়ে থাকুক।
ডা. এ বি এম জামাল
সহযোগী অধ্যাপক সার্জারি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
No comments