ধর্ম-দানশীলতা ও বদান্যতার চর্চা করুন by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
মাহে রমজানে রোজা পালন মানুষকে দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা ও মহত্ত্বের শিক্ষা দেয়। কোনো প্রকার অপচয় না করে রোজার মাসে মানুষের সেবায় দান করলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণ হয় এবং মানবতা উপকৃত হয়। মানুষের কল্যাণের জন্যই রোজা।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সমগ্র মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক উদার ও দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে যখন হজরত জিব্রাঈল (আ.) নিয়মিত আসতে শুরু করতেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দানশীলতা বহুগুণ বেড়ে যেত।’ (বুখারি) হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-এর চেয়ে কাউকে অধিকতর দয়ালু দেখিনি।’ (মুসলিম)
দানশীলতা ও বদান্যতা একটি মহৎ গুণ। ইসলাম যেমন দানশীলতাকে উত্সাহিত করেছে, তেমনি পরনির্ভরশীল হওয়াকে নিরুত্সাহিত করেছে। মহানবী (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম, আর যারা তোমার অধীন আছে, তাদের থেকেই দান করা শুরু করো। আর উত্তম দান হচ্ছে তা, যা প্রাচুর্য থেকে প্রদান করা হয়। আর যে ব্যক্তি যাচ্ঞা থেকে পবিত্রতা চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন। আর যে ব্যক্তি অন্যের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করেন’ (বুখারি ও মুসলিম)
মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন রোজাদার মুমিন বান্দার অন্তরে দানশীলতা ও বদান্যতার গুণাবলি সৃষ্টি হতে পারে। মানুষকে দানশীল, উদার হূদয়, সহানুভূতিশীল, মানবদরদি ও পারস্পরিক কল্যাণকামী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইসলামের প্রতিটি বিধিবদ্ধ ইবাদত সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালায়। তাই রোজাদার ব্যক্তিকে ইবাদতে মগ্ন থেকে সহানুভূতি, সদয় আচরণ, দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রোজার দ্বারাই মানুষ দানশীল ও আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ হয়। দানশীলতা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ পাক বলেছেন: হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাকো আমিও তোমাকে দান করব।’ (বুখারি ও মুসলিম)
যিনি দাতা বা দানশীল তার হাত দানগ্রহীতা বা দান গ্রহণকারীর হাত থেকে উত্তম। দাতা শ্রেষ্ঠ এ জন্য যে তিনি দানশীলতা ও বদান্যতার মাধ্যমে অন্যের উপকার করেন। যেহেতু দান গ্রহণহীন কাজ, সেহেতু স্বীয় অধীনস্থ অভাবগ্রস্ত আত্মীয়স্বজন থেকে প্রথম দান শুরু করে নিজের বংশের লোককে অন্যের কাছে হাত পাতা তথা দান গ্রহণ থেকে রক্ষা করতে হবে। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যারা আত্মমর্যাদাশীল অথচ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত, তারা প্রকাশ্যে সাহায্য চাইতে লজ্জাবোধ করলেও তাদের থেকে দান আরম্ভ করা অপরিহার্য। আর দান করে রোজাদার ব্যক্তি অন্তরে কষ্ট অনুভব করলে সেই দান আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় ও পছন্দনীয় হয় না। তাই প্রাচুর্য থেকে দান করলে অধিক পুণ্য হয়। কেননা এতে দাতার অন্তরে কোনোরূপ কষ্ট হয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের (ধনীদের) অর্থ-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আল-যারিআত, আয়াত ১৯)
মাহে রমজানে দানের ফজিলত অনেক বেশি। অন্য ১১ মাসের তুলনায় এ মাসে অধিক দান-সদকা করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতদের বাস্তব শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে রমজান মাসে দান-দক্ষিণা ও বদান্যতার হাত বেশি করে প্রসারিত করতেন। রমজান মাসে নবী করিম (সা.)-এর দানশীলতা অন্যান্য মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেত। এ পবিত্র মাসটিকে তিনি দানশীলতার ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি মাহে রমজানে অন্যান্য সময় অপেক্ষা অধিক দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতেন। প্রত্যেক সায়েল তথা সাহায্যপ্রার্থী দরিদ্রকেই তিনি দান করতেন। এ সময় কোনো প্রার্থী তাঁর কাছ থেকে বঞ্চিত হতে পারত না। কোনো কয়েদিও এ সময়ে বন্দী থাকত না।
যে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে তাকওয়া বা খোদাভীতি সৃষ্টি হলো না, ‘সামাহাত’ তথা দানশীলতা ও বদান্যতার গুণাবলি তৈরি হলো না, তার রোজা পালন নিছক উপবাস ছাড়া আর কিছু নয়। তাই যে ব্যক্তি মাহে রমজানে শুধু রোজা পালন করে, কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত, ত্যাগ-তিতিক্ষায় এগিয়ে আসে না, সমাজের গরিব-দুঃখীদের অভাব দূরীকরণ তথা দারিদ্র্য বিমোচনে হাত সম্প্রসারণ করে না, সে ব্যক্তি রমজান মাসের দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়। এমন রোজাদার ব্যক্তির মর্যাদা একজন আবেদ সাধারণ দানশীল রোজাদারের মর্যাদার অনেক নিচে। একজন আবেদ রোজাদার ব্যক্তি রোজা রেখে মন থেকে কৃপণতা পরিহার করে যদি দানশীল না হন, তাহলে তিনি আল্লাহর কাছে কেবল রোজা রাখার জন্য তাঁর রহমত লাভে বঞ্চিত হবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন কৃপণ আবেদের চেয়ে একজন মূর্খ দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।’ আর যে ব্যক্তি রমজান মাসে দান-খয়রাত করে সে সাধারণ সময়ের দানের চেয়ে বহুগুণ বেশি সওয়াব পাবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘রমজান মাসে এক দিরহাম দান-খয়রাতের বিনিময়ে সহস্র দিরহামের পুণ্য লিপিবদ্ধ করা হয়।’
মাহে রমজানকে ‘শাহরুল মুওয়াসাতি’ বা সহানুভূতির মাস বলা হয়েছে। এ মাস সমাজের গরিব-দুস্থদের প্রতি অর্থ দ্বারা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। প্রতিটি রোজাদার মুমিন বান্দা রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে খাদ্য-পানীয়ের অভাবে গরিব-দুঃখী ও দরিদ্র-অসহায় লোকেদের কষ্ট অনুভব করে থাকেন। এ জন্য তাদের মধ্যে দানের প্রবণতা সৃষ্টি হয়। ফলে সমাজের ধর্মপ্রাণ ধনী সামর্থ্যবান রোজাদার ব্যক্তি রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ গঠনে গরিব-দুঃখী, দুস্থ, অভাবী, অনাথ, এতিম, মিসকিন ও কপর্দকহীন পথচারীকে প্রয়োজনে অর্থ বণ্টন করে দেবেন। তারা ক্ষুধার্ত হলে প্রয়োজনে তাদের সেহির-ইফতারের বন্দোবস্ত করবেন, এটা মাহে রমজানে দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের সুবর্ণ সুযোগ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মিসকিনকে দান করা হলে তা একটি দান মাত্র, কিন্তু নিকটাত্মীয়, দরিদ্রদের দান করা হলে তা যেমন দান, তেমনি তা আত্মীয়তার হক আদায়েরও ব্যবস্থা।’
যে রোজাদারের মন উদার ও আত্মা পরিশুদ্ধ, সে দরিদ্র হলেও প্রকৃত ধনী। যার যত টাকা-পয়সা আছে সেই অনুপাতে দানই আল্লাহ গ্রহণ করে থাকেন। ধনী ও বিত্তশালী রোজাদার ব্যক্তি বেশি টাকা দান করে যে পুণ্যের অধিকারী হবেন, অনুপাতে কম টাকা দানকারী বিত্তহীন ব্যক্তিও আল্লাহর কাছে সেই পুণ্যের অধিকারী হতে পারেন, যিনি বিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে খুশিমনে দান করবেন। দানের ব্যাপারে শুধু টাকার অঙ্কের ওপর নির্ভর করে না, তা মানুষের মনের ওপর নির্ভর করে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আত্মার অভাব মুক্তিই হচ্ছে আসল অভাবমুক্তি।’ (বুখারি)
যে ব্যক্তি শুধু প্রথাগত রোজা পালন করে, কিন্তু দানশীলতা ও বদান্যতার চর্চা করে না, মাহে রমজানে তার এ রোজা তাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রিয় বানাতে পারবে না। হজরত ওমর ইবনে আবদুল আযিয (রা.) বলেছেন, ‘নামাজ মানুষকে আল্লাহর পথে অর্ধেক পৌঁছে দেয়। রোজা তাকে আল্লাহর ঘরের দরজার কাছে পৌঁছায়। আর দান-খয়রাত তাকে খোদ আল্লাহর ঘরে পৌঁছে দেয়।’
সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য মাহে রমজানে রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে স্বীয় ধন-সম্পদকে দুস্থ মানবতার সেবায় সাধ্যমতো ব্যয় করা, অপরকে দান করার মনোভাব পোষণ করা। তাহলে তিনি দানশীল হিসেবে মানবসমাজে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারবেন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
দানশীলতা ও বদান্যতা একটি মহৎ গুণ। ইসলাম যেমন দানশীলতাকে উত্সাহিত করেছে, তেমনি পরনির্ভরশীল হওয়াকে নিরুত্সাহিত করেছে। মহানবী (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম, আর যারা তোমার অধীন আছে, তাদের থেকেই দান করা শুরু করো। আর উত্তম দান হচ্ছে তা, যা প্রাচুর্য থেকে প্রদান করা হয়। আর যে ব্যক্তি যাচ্ঞা থেকে পবিত্রতা চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন। আর যে ব্যক্তি অন্যের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করেন’ (বুখারি ও মুসলিম)
মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন রোজাদার মুমিন বান্দার অন্তরে দানশীলতা ও বদান্যতার গুণাবলি সৃষ্টি হতে পারে। মানুষকে দানশীল, উদার হূদয়, সহানুভূতিশীল, মানবদরদি ও পারস্পরিক কল্যাণকামী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইসলামের প্রতিটি বিধিবদ্ধ ইবাদত সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালায়। তাই রোজাদার ব্যক্তিকে ইবাদতে মগ্ন থেকে সহানুভূতি, সদয় আচরণ, দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রোজার দ্বারাই মানুষ দানশীল ও আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ হয়। দানশীলতা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ পাক বলেছেন: হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাকো আমিও তোমাকে দান করব।’ (বুখারি ও মুসলিম)
যিনি দাতা বা দানশীল তার হাত দানগ্রহীতা বা দান গ্রহণকারীর হাত থেকে উত্তম। দাতা শ্রেষ্ঠ এ জন্য যে তিনি দানশীলতা ও বদান্যতার মাধ্যমে অন্যের উপকার করেন। যেহেতু দান গ্রহণহীন কাজ, সেহেতু স্বীয় অধীনস্থ অভাবগ্রস্ত আত্মীয়স্বজন থেকে প্রথম দান শুরু করে নিজের বংশের লোককে অন্যের কাছে হাত পাতা তথা দান গ্রহণ থেকে রক্ষা করতে হবে। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যারা আত্মমর্যাদাশীল অথচ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত, তারা প্রকাশ্যে সাহায্য চাইতে লজ্জাবোধ করলেও তাদের থেকে দান আরম্ভ করা অপরিহার্য। আর দান করে রোজাদার ব্যক্তি অন্তরে কষ্ট অনুভব করলে সেই দান আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় ও পছন্দনীয় হয় না। তাই প্রাচুর্য থেকে দান করলে অধিক পুণ্য হয়। কেননা এতে দাতার অন্তরে কোনোরূপ কষ্ট হয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের (ধনীদের) অর্থ-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আল-যারিআত, আয়াত ১৯)
মাহে রমজানে দানের ফজিলত অনেক বেশি। অন্য ১১ মাসের তুলনায় এ মাসে অধিক দান-সদকা করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতদের বাস্তব শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে রমজান মাসে দান-দক্ষিণা ও বদান্যতার হাত বেশি করে প্রসারিত করতেন। রমজান মাসে নবী করিম (সা.)-এর দানশীলতা অন্যান্য মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেত। এ পবিত্র মাসটিকে তিনি দানশীলতার ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি মাহে রমজানে অন্যান্য সময় অপেক্ষা অধিক দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতেন। প্রত্যেক সায়েল তথা সাহায্যপ্রার্থী দরিদ্রকেই তিনি দান করতেন। এ সময় কোনো প্রার্থী তাঁর কাছ থেকে বঞ্চিত হতে পারত না। কোনো কয়েদিও এ সময়ে বন্দী থাকত না।
যে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে তাকওয়া বা খোদাভীতি সৃষ্টি হলো না, ‘সামাহাত’ তথা দানশীলতা ও বদান্যতার গুণাবলি তৈরি হলো না, তার রোজা পালন নিছক উপবাস ছাড়া আর কিছু নয়। তাই যে ব্যক্তি মাহে রমজানে শুধু রোজা পালন করে, কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত, ত্যাগ-তিতিক্ষায় এগিয়ে আসে না, সমাজের গরিব-দুঃখীদের অভাব দূরীকরণ তথা দারিদ্র্য বিমোচনে হাত সম্প্রসারণ করে না, সে ব্যক্তি রমজান মাসের দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়। এমন রোজাদার ব্যক্তির মর্যাদা একজন আবেদ সাধারণ দানশীল রোজাদারের মর্যাদার অনেক নিচে। একজন আবেদ রোজাদার ব্যক্তি রোজা রেখে মন থেকে কৃপণতা পরিহার করে যদি দানশীল না হন, তাহলে তিনি আল্লাহর কাছে কেবল রোজা রাখার জন্য তাঁর রহমত লাভে বঞ্চিত হবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন কৃপণ আবেদের চেয়ে একজন মূর্খ দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।’ আর যে ব্যক্তি রমজান মাসে দান-খয়রাত করে সে সাধারণ সময়ের দানের চেয়ে বহুগুণ বেশি সওয়াব পাবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘রমজান মাসে এক দিরহাম দান-খয়রাতের বিনিময়ে সহস্র দিরহামের পুণ্য লিপিবদ্ধ করা হয়।’
মাহে রমজানকে ‘শাহরুল মুওয়াসাতি’ বা সহানুভূতির মাস বলা হয়েছে। এ মাস সমাজের গরিব-দুস্থদের প্রতি অর্থ দ্বারা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। প্রতিটি রোজাদার মুমিন বান্দা রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে খাদ্য-পানীয়ের অভাবে গরিব-দুঃখী ও দরিদ্র-অসহায় লোকেদের কষ্ট অনুভব করে থাকেন। এ জন্য তাদের মধ্যে দানের প্রবণতা সৃষ্টি হয়। ফলে সমাজের ধর্মপ্রাণ ধনী সামর্থ্যবান রোজাদার ব্যক্তি রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ গঠনে গরিব-দুঃখী, দুস্থ, অভাবী, অনাথ, এতিম, মিসকিন ও কপর্দকহীন পথচারীকে প্রয়োজনে অর্থ বণ্টন করে দেবেন। তারা ক্ষুধার্ত হলে প্রয়োজনে তাদের সেহির-ইফতারের বন্দোবস্ত করবেন, এটা মাহে রমজানে দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের সুবর্ণ সুযোগ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মিসকিনকে দান করা হলে তা একটি দান মাত্র, কিন্তু নিকটাত্মীয়, দরিদ্রদের দান করা হলে তা যেমন দান, তেমনি তা আত্মীয়তার হক আদায়েরও ব্যবস্থা।’
যে রোজাদারের মন উদার ও আত্মা পরিশুদ্ধ, সে দরিদ্র হলেও প্রকৃত ধনী। যার যত টাকা-পয়সা আছে সেই অনুপাতে দানই আল্লাহ গ্রহণ করে থাকেন। ধনী ও বিত্তশালী রোজাদার ব্যক্তি বেশি টাকা দান করে যে পুণ্যের অধিকারী হবেন, অনুপাতে কম টাকা দানকারী বিত্তহীন ব্যক্তিও আল্লাহর কাছে সেই পুণ্যের অধিকারী হতে পারেন, যিনি বিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে খুশিমনে দান করবেন। দানের ব্যাপারে শুধু টাকার অঙ্কের ওপর নির্ভর করে না, তা মানুষের মনের ওপর নির্ভর করে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আত্মার অভাব মুক্তিই হচ্ছে আসল অভাবমুক্তি।’ (বুখারি)
যে ব্যক্তি শুধু প্রথাগত রোজা পালন করে, কিন্তু দানশীলতা ও বদান্যতার চর্চা করে না, মাহে রমজানে তার এ রোজা তাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রিয় বানাতে পারবে না। হজরত ওমর ইবনে আবদুল আযিয (রা.) বলেছেন, ‘নামাজ মানুষকে আল্লাহর পথে অর্ধেক পৌঁছে দেয়। রোজা তাকে আল্লাহর ঘরের দরজার কাছে পৌঁছায়। আর দান-খয়রাত তাকে খোদ আল্লাহর ঘরে পৌঁছে দেয়।’
সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য মাহে রমজানে রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে স্বীয় ধন-সম্পদকে দুস্থ মানবতার সেবায় সাধ্যমতো ব্যয় করা, অপরকে দান করার মনোভাব পোষণ করা। তাহলে তিনি দানশীল হিসেবে মানবসমাজে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারবেন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
No comments