বাজেট বাস্তবায়নের স্বার্থে পরনির্ভরতা ছাড়তে হবে by টিটু দত্ত
বাজেটের ৮৯ শতাংশ অর্থই আসে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে। তাই ইআরডির বদলে আইআরডিকে
জোরালো করার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদেররাজস্ব আয় ও ঋণ মিলিয়ে জাতীয় বাজেটের ৮৯ শতাংশ অর্থই আসে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে। মাত্র ১১ শতাংশের জন্য হাত পাততে হয় বিদেশি উৎসের কাছে।
জোরালো করার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদেররাজস্ব আয় ও ঋণ মিলিয়ে জাতীয় বাজেটের ৮৯ শতাংশ অর্থই আসে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে। মাত্র ১১ শতাংশের জন্য হাত পাততে হয় বিদেশি উৎসের কাছে।
নানা শর্ত মেনে, দুর্নীতির অপবাদ সয়ে, মুচলেকা দিয়ে বৈদেশিক ঋণের যে প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়, বছর শেষে তার অর্ধেকও আসে না। ফলে ভেস্তে যায় উন্নয়ন পরিকল্পনা। ১১ শতাংশের অনিশ্চয়তায় বিপন্ন হয়ে পড়ে পুরো বাজেট ব্যবস্থাপনা। প্রতিবছর এমন ঘটনা ঘটলেও অনিশ্চিত বৈদেশিক সহায়তার প্রাক্কলন ধরেই তৈরি হচ্ছে জাতীয় বাজেট। এ জন্য অর্থনৈতিক আমলাদের মানসিকতাকে দায়ী করে বিশ্লেষকরা বলেন, রাজনৈতিক সরকারও গতানুগতিক এ ধারার বাইরে যেতে পারছে না। সরকারের দৃঢ় ইচ্ছা থাকলেই পরমুখাপেক্ষী বাজেট প্রণয়নের অবসান ঘটানো সম্ভব বলে তাঁদের বিশ্বাস। এ জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) শক্তিশালী করার মাধ্যমে স্থানীয় সম্পদ আহরণে আরো মনোযোগী হতে সরকারকে পরামর্শ দেন তাঁরা। বার্ষিক বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মোট বরাদ্দের ৭০-৭২ শতাংশ আসে আইআরডির মাধ্যমে স্থানীয় রাজস্ব আয় থেকে। ঘাটতির ১৮ শতাংশ মেটানো হয় ব্যাংকসহ স্থানীয় উৎস থেকে ঋণ নিয়ে। ১১ শতাংশ প্রত্যাশা করা হয় বিদেশি সহায়তা থেকে, যা সংগ্রহের দায়িত্ব ইআরডির। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ বিভাগ কোনো বছরই প্রত্যাশিত বৈদেশিক সহায়তা জোগাড় করতে পারে না। অন্যদিকে, প্রাক্কলনের চেয়েও বেশি অর্থ জোগান দেয় আইআরডি। ২০১০-১১ অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২৩ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, বৈদেশিক সূত্র থেকে প্রথমে ১৫ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার আশা করা হলেও তা কমিয়ে আনা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকায়। অনুন্নয়ন ব্যয় কমানোর সুযোগ নেই, স্বভাবতই কমানো হয় উন্নয়ন বাজেট। মূল এডিপি ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এসে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৮৮০ কোটিতে।
চলতি অর্থবছরে মোট বাজেট এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার। এর মধ্যে এডিপির আকার ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের মোট বরাদ্দের ৭২ শতাংশেরও বেশি জোগান দেওয়া হয় স্থানীয় আয় থেকে, ১৭ শতাংশ মেটানো হয় অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ে। বৈদেশিক উৎস থেকে আশা করা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১১ শতাংশ। ব্যয় মেটানোর জন্য সরকারকে ব্যাংক থেকে প্রাক্কলনের বেশি অর্থ ধার করতে হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক উৎস থেকে প্রাপ্তি হতাশাব্যঞ্জক হওয়ায় এডিপির বরাদ্দ পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমাতে হয়েছে।
ইআরডি থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ছিল ৪২৮ কোটি ডলার। পাওয়া গেছে ১৬৪ কোটি ডলার, যা প্রতিশ্রুতির ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিশ্রুত ২৬৪ কোটি ডলারই পাওয়া যায়নি। এর প্রভাব পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ সময়ে বরাদ্দ করা অর্থের ৫৫ শতাংশ খরচ হয়েছে। আগের দুই বছরে এ হার ছিল ৫৮ ও ৫৯ শতাংশ। বৈদেশিক সহায়তা কম আসায় আগেই এডিপি ছোট করা হয়েছিল। সংশোধিত এডিপিতে ১০ মাসে খরচ করা হয়েছে ২২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৬৯ শতাংশ। বৈদেশিক উৎস থেকে এসেছে সাত হাজার ১৩৭ কোটি টাকা।
একই সময়ে ৭১ হাজার ৬৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত (২০১০-১১) অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা বেশি। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯.২৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ৯২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
গত দুই বছরের বাজেট বরাদ্দ হিসাব করলে দেখা যায়, মূল বাজেটের ৮৯ শতাংশের অর্থায়ন হয় স্থানীয় উৎস থেকে। বৈদেশিক সাহায্য আসে প্রাক্কলনের অনেক কম। অন্যদিকে, স্থানীয় উৎস থেকে আয় প্রাক্কলনকে ছাড়িয়ে যায়। বাড়তি রাজস্ব আয় ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি উন্নয়ন কাজেও ব্যয় করা হয়। প্রাক্কলন ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৈদেশিক সাহায্য না আসায় প্রতিবছরই কাটছাঁট করা হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। তারপরও কোনো বছরই তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায় না। মাঝপথে অর্থায়ন অনিয়মিত হয়ে যাওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা অর্থের অপচয় হয় এবং কাজের মান খারাপ হয় বলে পরিকল্পনা কমিশন ও তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান।
বৈদেশিক সহায়তার হতাশাব্যঞ্জক চিত্র পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের উচিত ইআরডির ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আইআরডির দিকে নজর দেওয়া। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ বিভাগের পক্ষেই সম্ভব স্থানীয় সম্পদ আহরণ বাড়িয়ে বাজেটের অনিশ্চয়তা দূর করা। সেই সঙ্গে দেশকে আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
জাতীয় বাজেটের পুরো অর্থায়নই স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাবেক সচিব আবদুল মজিদ। 'আরো ১৫ বছর আগে থেকেই আমরা তা করতে পারতাম। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই আমাদের অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে। স্থানীয় সম্পদ আহরণের জন্য তখন থেকে কোমর বেঁধে নামলে ২০০০ সালের মধ্যেই বিদেশি সহায়তাকে সালাম জানাতে পারতাম আমরা।'
এ সম্ভাবনা আরো প্রবল হয়েছে আইআরডির প্রধান সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গত কয়েক বছরের সাফল্যে। অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও এনবিআরই সরকারের মূল ভরসা। বাংলাদেশে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে বেশি। ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে প্রবৃদ্ধির উচ্চ ধারা অব্যাহত রেখেছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১-৭২ সালে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয় ছিল ৭৯ হাজার ৫২ কোটি টাকা, আগের বছরের চেয়ে যা প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, এনবিআরবহির্ভূত উৎস থেকে ২০১০-১১ অর্থবছরে আয় ১৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে রাজস্ব আয় আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে ৯৫ হাজার ১৮৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছিল।
স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত বিদেশি সহায়তা এসেছে ২৮.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সুদ-আসলে ১২.৮ বিলিয়ন ডলার শোধ করার পরও ২১.৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ রয়ে গেছে। সুদ-আসল মিলিয়ে ২০০৮-০৯ সালে শোধ করতে হয়েছিল ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার। স্বাধীনতা-পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশকে খাদ্য ও পণ্য সহায়তা নিতে হতো বেশি। এ দুই খাতে এখন বাংলাদেশ কোনো ঋণ নেয় না। ১৯৮৫-৮৬ সাল থেকেই খাদ্য বাবদ কোনো ঋণ নেয়নি বাংলাদেশ। পণ্যখাতেও গত ১০ বছরে কোনো বিদেশি ঋণ আসেনি। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কাছাকাছি। খাদ্য রপ্তানির সম্ভাবনার কথাও সম্প্রতি বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী। তৈরি পোশাকে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। এখন মোট বৈদেশিক সহায়তার ৯৭ শতাংশই আসে উন্নয়ন প্রকল্পে।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অতিমাত্রায় বিদেশি ঋণ-নির্ভরতা কমাতে সরকারের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সত্তরের দশকে সদ্য-স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে খাদ্য, ওষুধ, তৈরি পণ্যসহ জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য বৈদেশিক সহায়তার খুব দরকার ছিল। জাতীয় বাজেট প্রণয়নে, বিশেষ করে উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি উৎসের ওপর নির্ভরতা বাড়ে আশির দশকে। বাজেট প্রণয়নের আগে এপ্রিলে প্যারিস কনসোর্টিয়াম ছিল প্রতিবছরের রেওয়াজ। সেখান থেকে 'দাতা দেশ ও সংস্থা'র প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশে ফিরে বাজেট বরাদ্দ চূড়ান্ত করতেন অর্থমন্ত্রীরা। সেই বৈঠকের নাম ও স্থান বদলে গেছে। এখন বৈদেশিক সহায়তার মতো ঢাকায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের বৈঠকটিও হয়ে পড়েছে অনিয়মিত ও অনিশ্চিত। তবে অভ্যাস বদলেনি অর্থনৈতিক আমলাদের।
আবদুল মজিদ বলেন, 'অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের চেয়ে বৈদেশিক সহায়তার জন্য ধরনা দেওয়া এখনো সহজ মনে করেন আমলারা। ওখানে কমিশন পাওয়া যায়। সরকারও তাঁদের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে আইআরডি সব সময়ই অবহেলিত থেকেছে। ১৯৮৪ সাল থেকে জনবল বাড়ানো হয়নি এনবিআরে।'
পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিবছর বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল ২০০৭ সালেই। তখন থেকে রাখা হলে চার বছরে স্থানীয় সম্পদ দিয়েই এ সেতুর অর্থায়ন এত দিনে হয়ে যেত। 'কী লাভ হলো বিদেশি অর্থের আশায় বসে থেকে?' প্রশ্ন মজিদের।
একই মনোভাব ব্যক্ত করে এনবিআরের আরেকজন সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বলেন, সরকারের যদি দেশপ্রেম থাকে তাহলেই নিজেদের অর্থায়নে বাজেট প্রণয়ন সম্ভব। তিনি প্রশ্ন করেন, যারা প্রতিশ্রুতি দিয়েও ঋণ দেয় না, নানা শর্ত দিয়ে মুচলেকা আদায় করে, চুক্তি করেও পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পে ঋণ বন্ধ করে দেয়, তারা কিভাবে উন্নয়ন সহযোগী হয়?
সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁরা মূলত দুই কারণে এসব উন্নয়ন সহযোগীদের গুরুত্ব দেন বলে উল্লেখ করেন বদিউর রহমান। প্রথমত, তাঁদের ধারণা, এরা বিগড়ে গেলে ক্ষমতায় থাকা কঠিন হবে। দ্বিতীয়ত, বিশেষ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যেখানে বৈদেশিক সহায়তার মাত্রা কমতে কমতে এখন জিডিপির ৩ শতাংশেরও কম, সেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এত কলেবরের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বাজেটে স্থানীয় সম্পদের জোগানদাতা আইআরডিতে লোকবল ২৫ জনের মতো। আইআরডিসচিব ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ একই সঙ্গে এনবিআরেরও চেয়ারম্যান। তিনি এনবিআরেই বসেন। এনবিআর ছাড়াও করবহির্ভূত সব আয়েরই তদারকির দায়িত্ব আইআরডির। মন্ত্রণালয়ে এ বিভাগের কার্যালয়ে কর্মরত আছেন একজন অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্ম সচিব, একজন উপসচিব এবং তিনজন ঊর্ধ্বতন সহকারী সচিব। একজন কর্মকর্তা বলেন, 'স্থানীয় উৎস থেকে সব ধরনের রাজস্ব আয় করে আমরা সরকারের কোষাগারে জমা দিই। তবু আমরা সব সময়ই উপেক্ষিত।'
অন্যদিকে, বরাদ্দের মাত্র ১১ শতাংশের জোগান দিতেও সক্ষম নয় যে সংস্থা, সেই ইআরডিতে এখন চারজন অতিরিক্ত সচিব কর্মরত রয়েছেন। জাপান, বিশ্বব্যাংক, মধ্যপ্রাচ্য ও জাতিসংঘের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দেখভাল করছেন তাঁরা। ইআরডিতে যুগ্ম সচিব আছেন ১৩ জন, উপসচিবের সংখ্যা ৪০ জনেরও বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ইআরডির দায়িত্বে আছেন একজন সিনিয়র সচিব। অতিরিক্ত সচিবের দুইটি পদের বিপরীতে এখন ইআরডিতে আছেন চারজন। এতে কাজের কোনো উন্নতি না হয়ে বরং ব্যাঘাত ঘটছে। যুগ্ম সচিবের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত। ফলে পদোন্নতি পাওয়ার পরও অনেক যুগ্ম সচিব কর্মকর্তা এখন সিনিয়র সহকারী সচিব কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে যোগ দিতে আগামী মাসে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে সাবেক সচিব কাজী আমিনুল ইসলাম কর্মরত রয়েছেন। এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ আগামী ডিসেম্বরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) যোগ দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইআরডির কিছু কর্মকর্তা বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থায় যোগ দিতে জোর তদবির করেন।
ইআরডিতে তাঁর দুই দফা কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বদিউর রহমান বলেন, 'সারা মাসে একটি চিঠি লেখার কাজও পেতাম না। বেতনের চেক নিতে সংকোচ লাগত। আত্মসম্মানবোধ আছে এমন কারো পক্ষে ইআরডিতে কাজ করা কঠিন। আমার মতে, আলাদা বিভাগ হিসেবে ইআরডির কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। এটি বড়জোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি উইং হিসেবে থাকতে পারে।'
অন্যদিকে, বৈদেশিক সূত্র থেকে প্রথমে ১৫ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার আশা করা হলেও তা কমিয়ে আনা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকায়। অনুন্নয়ন ব্যয় কমানোর সুযোগ নেই, স্বভাবতই কমানো হয় উন্নয়ন বাজেট। মূল এডিপি ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এসে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৮৮০ কোটিতে।
চলতি অর্থবছরে মোট বাজেট এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার। এর মধ্যে এডিপির আকার ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের মোট বরাদ্দের ৭২ শতাংশেরও বেশি জোগান দেওয়া হয় স্থানীয় আয় থেকে, ১৭ শতাংশ মেটানো হয় অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ে। বৈদেশিক উৎস থেকে আশা করা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১১ শতাংশ। ব্যয় মেটানোর জন্য সরকারকে ব্যাংক থেকে প্রাক্কলনের বেশি অর্থ ধার করতে হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক উৎস থেকে প্রাপ্তি হতাশাব্যঞ্জক হওয়ায় এডিপির বরাদ্দ পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমাতে হয়েছে।
ইআরডি থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ছিল ৪২৮ কোটি ডলার। পাওয়া গেছে ১৬৪ কোটি ডলার, যা প্রতিশ্রুতির ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিশ্রুত ২৬৪ কোটি ডলারই পাওয়া যায়নি। এর প্রভাব পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ সময়ে বরাদ্দ করা অর্থের ৫৫ শতাংশ খরচ হয়েছে। আগের দুই বছরে এ হার ছিল ৫৮ ও ৫৯ শতাংশ। বৈদেশিক সহায়তা কম আসায় আগেই এডিপি ছোট করা হয়েছিল। সংশোধিত এডিপিতে ১০ মাসে খরচ করা হয়েছে ২২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৬৯ শতাংশ। বৈদেশিক উৎস থেকে এসেছে সাত হাজার ১৩৭ কোটি টাকা।
একই সময়ে ৭১ হাজার ৬৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত (২০১০-১১) অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা বেশি। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯.২৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ৯২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
গত দুই বছরের বাজেট বরাদ্দ হিসাব করলে দেখা যায়, মূল বাজেটের ৮৯ শতাংশের অর্থায়ন হয় স্থানীয় উৎস থেকে। বৈদেশিক সাহায্য আসে প্রাক্কলনের অনেক কম। অন্যদিকে, স্থানীয় উৎস থেকে আয় প্রাক্কলনকে ছাড়িয়ে যায়। বাড়তি রাজস্ব আয় ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি উন্নয়ন কাজেও ব্যয় করা হয়। প্রাক্কলন ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৈদেশিক সাহায্য না আসায় প্রতিবছরই কাটছাঁট করা হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। তারপরও কোনো বছরই তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায় না। মাঝপথে অর্থায়ন অনিয়মিত হয়ে যাওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা অর্থের অপচয় হয় এবং কাজের মান খারাপ হয় বলে পরিকল্পনা কমিশন ও তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান।
বৈদেশিক সহায়তার হতাশাব্যঞ্জক চিত্র পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের উচিত ইআরডির ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আইআরডির দিকে নজর দেওয়া। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ বিভাগের পক্ষেই সম্ভব স্থানীয় সম্পদ আহরণ বাড়িয়ে বাজেটের অনিশ্চয়তা দূর করা। সেই সঙ্গে দেশকে আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
জাতীয় বাজেটের পুরো অর্থায়নই স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাবেক সচিব আবদুল মজিদ। 'আরো ১৫ বছর আগে থেকেই আমরা তা করতে পারতাম। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই আমাদের অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে। স্থানীয় সম্পদ আহরণের জন্য তখন থেকে কোমর বেঁধে নামলে ২০০০ সালের মধ্যেই বিদেশি সহায়তাকে সালাম জানাতে পারতাম আমরা।'
এ সম্ভাবনা আরো প্রবল হয়েছে আইআরডির প্রধান সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গত কয়েক বছরের সাফল্যে। অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও এনবিআরই সরকারের মূল ভরসা। বাংলাদেশে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে বেশি। ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে প্রবৃদ্ধির উচ্চ ধারা অব্যাহত রেখেছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১-৭২ সালে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয় ছিল ৭৯ হাজার ৫২ কোটি টাকা, আগের বছরের চেয়ে যা প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, এনবিআরবহির্ভূত উৎস থেকে ২০১০-১১ অর্থবছরে আয় ১৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে রাজস্ব আয় আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে ৯৫ হাজার ১৮৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছিল।
স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত বিদেশি সহায়তা এসেছে ২৮.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সুদ-আসলে ১২.৮ বিলিয়ন ডলার শোধ করার পরও ২১.৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ রয়ে গেছে। সুদ-আসল মিলিয়ে ২০০৮-০৯ সালে শোধ করতে হয়েছিল ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার। স্বাধীনতা-পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশকে খাদ্য ও পণ্য সহায়তা নিতে হতো বেশি। এ দুই খাতে এখন বাংলাদেশ কোনো ঋণ নেয় না। ১৯৮৫-৮৬ সাল থেকেই খাদ্য বাবদ কোনো ঋণ নেয়নি বাংলাদেশ। পণ্যখাতেও গত ১০ বছরে কোনো বিদেশি ঋণ আসেনি। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কাছাকাছি। খাদ্য রপ্তানির সম্ভাবনার কথাও সম্প্রতি বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী। তৈরি পোশাকে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। এখন মোট বৈদেশিক সহায়তার ৯৭ শতাংশই আসে উন্নয়ন প্রকল্পে।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অতিমাত্রায় বিদেশি ঋণ-নির্ভরতা কমাতে সরকারের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সত্তরের দশকে সদ্য-স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে খাদ্য, ওষুধ, তৈরি পণ্যসহ জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য বৈদেশিক সহায়তার খুব দরকার ছিল। জাতীয় বাজেট প্রণয়নে, বিশেষ করে উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি উৎসের ওপর নির্ভরতা বাড়ে আশির দশকে। বাজেট প্রণয়নের আগে এপ্রিলে প্যারিস কনসোর্টিয়াম ছিল প্রতিবছরের রেওয়াজ। সেখান থেকে 'দাতা দেশ ও সংস্থা'র প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশে ফিরে বাজেট বরাদ্দ চূড়ান্ত করতেন অর্থমন্ত্রীরা। সেই বৈঠকের নাম ও স্থান বদলে গেছে। এখন বৈদেশিক সহায়তার মতো ঢাকায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের বৈঠকটিও হয়ে পড়েছে অনিয়মিত ও অনিশ্চিত। তবে অভ্যাস বদলেনি অর্থনৈতিক আমলাদের।
আবদুল মজিদ বলেন, 'অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের চেয়ে বৈদেশিক সহায়তার জন্য ধরনা দেওয়া এখনো সহজ মনে করেন আমলারা। ওখানে কমিশন পাওয়া যায়। সরকারও তাঁদের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে আইআরডি সব সময়ই অবহেলিত থেকেছে। ১৯৮৪ সাল থেকে জনবল বাড়ানো হয়নি এনবিআরে।'
পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিবছর বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল ২০০৭ সালেই। তখন থেকে রাখা হলে চার বছরে স্থানীয় সম্পদ দিয়েই এ সেতুর অর্থায়ন এত দিনে হয়ে যেত। 'কী লাভ হলো বিদেশি অর্থের আশায় বসে থেকে?' প্রশ্ন মজিদের।
একই মনোভাব ব্যক্ত করে এনবিআরের আরেকজন সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বলেন, সরকারের যদি দেশপ্রেম থাকে তাহলেই নিজেদের অর্থায়নে বাজেট প্রণয়ন সম্ভব। তিনি প্রশ্ন করেন, যারা প্রতিশ্রুতি দিয়েও ঋণ দেয় না, নানা শর্ত দিয়ে মুচলেকা আদায় করে, চুক্তি করেও পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পে ঋণ বন্ধ করে দেয়, তারা কিভাবে উন্নয়ন সহযোগী হয়?
সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁরা মূলত দুই কারণে এসব উন্নয়ন সহযোগীদের গুরুত্ব দেন বলে উল্লেখ করেন বদিউর রহমান। প্রথমত, তাঁদের ধারণা, এরা বিগড়ে গেলে ক্ষমতায় থাকা কঠিন হবে। দ্বিতীয়ত, বিশেষ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যেখানে বৈদেশিক সহায়তার মাত্রা কমতে কমতে এখন জিডিপির ৩ শতাংশেরও কম, সেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এত কলেবরের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বাজেটে স্থানীয় সম্পদের জোগানদাতা আইআরডিতে লোকবল ২৫ জনের মতো। আইআরডিসচিব ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ একই সঙ্গে এনবিআরেরও চেয়ারম্যান। তিনি এনবিআরেই বসেন। এনবিআর ছাড়াও করবহির্ভূত সব আয়েরই তদারকির দায়িত্ব আইআরডির। মন্ত্রণালয়ে এ বিভাগের কার্যালয়ে কর্মরত আছেন একজন অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্ম সচিব, একজন উপসচিব এবং তিনজন ঊর্ধ্বতন সহকারী সচিব। একজন কর্মকর্তা বলেন, 'স্থানীয় উৎস থেকে সব ধরনের রাজস্ব আয় করে আমরা সরকারের কোষাগারে জমা দিই। তবু আমরা সব সময়ই উপেক্ষিত।'
অন্যদিকে, বরাদ্দের মাত্র ১১ শতাংশের জোগান দিতেও সক্ষম নয় যে সংস্থা, সেই ইআরডিতে এখন চারজন অতিরিক্ত সচিব কর্মরত রয়েছেন। জাপান, বিশ্বব্যাংক, মধ্যপ্রাচ্য ও জাতিসংঘের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দেখভাল করছেন তাঁরা। ইআরডিতে যুগ্ম সচিব আছেন ১৩ জন, উপসচিবের সংখ্যা ৪০ জনেরও বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ইআরডির দায়িত্বে আছেন একজন সিনিয়র সচিব। অতিরিক্ত সচিবের দুইটি পদের বিপরীতে এখন ইআরডিতে আছেন চারজন। এতে কাজের কোনো উন্নতি না হয়ে বরং ব্যাঘাত ঘটছে। যুগ্ম সচিবের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত। ফলে পদোন্নতি পাওয়ার পরও অনেক যুগ্ম সচিব কর্মকর্তা এখন সিনিয়র সহকারী সচিব কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে যোগ দিতে আগামী মাসে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে সাবেক সচিব কাজী আমিনুল ইসলাম কর্মরত রয়েছেন। এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ আগামী ডিসেম্বরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) যোগ দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইআরডির কিছু কর্মকর্তা বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থায় যোগ দিতে জোর তদবির করেন।
ইআরডিতে তাঁর দুই দফা কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বদিউর রহমান বলেন, 'সারা মাসে একটি চিঠি লেখার কাজও পেতাম না। বেতনের চেক নিতে সংকোচ লাগত। আত্মসম্মানবোধ আছে এমন কারো পক্ষে ইআরডিতে কাজ করা কঠিন। আমার মতে, আলাদা বিভাগ হিসেবে ইআরডির কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। এটি বড়জোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি উইং হিসেবে থাকতে পারে।'
No comments