গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া-অবৈধ ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ by বদিউল আলম মজুমদার
গত ২১ জুলাই জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ধারা-২৬৬-এর অধীনে সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্দেশ্যে সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি ‘সংসদীয় বিশেষ কমিটি’ গঠন করেছে। আমরা যতটুকু জেনেছি, কমিটির জন্য কোনো ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ বা কার্যপরিধি এবং সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া
হয়নি। তাই আসলে কী উদ্দেশ্য নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে এবং তা করার জন্য কত সময় কমিটির হাতে আছে, তা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নয়। তবে সংবাদপত্রের তথ্য থেকে জানা যায়, কমিটি গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করার সময় সংসদে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এ-সম্পর্কিত বক্তব্যই হবে কমিটির কার্যপরিধি।
সংসদীয় বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক ফরমান জারি করে অতীতে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে, আর সে জন্যই সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের বুকে যাতে সামরিক শাসনের জগদ্দল পাথর আর চেপে বসতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতেই এ কমিটি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণে সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে এটি গঠন করা হচ্ছে। কমিটি প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে এ বিষয়ে তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করবে (প্রথম আলো, ২১ জুলাই ২০১০)।
তাই এটি সুস্পষ্ট যে পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় বাস্তবায়নের পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনের আরেকটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো অবৈধ ক্ষমতা দখল রোধ, যাতে ভবিষ্যতে ক্ষমতা পরিবর্তন হয় বুলেটের পরিবর্তে ব্যালটের মাধ্যমে। অনেকে জোর করে ক্ষমতা দখলকে দেশদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য করে কঠোর শাস্তি, এমনকি মৃত্যুদণ্ডের বিধানেরও প্রস্তাব করছেন। পঞ্চম সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত রায়ে আদালতও অবৈধ ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন।
অবশ্যই সামরিক বাহিনী কিংবা তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ ক্ষমতা দখল বন্ধ করতে হবে। সংবিধানকে সমুন্নত রেখে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। কমিটি এ ব্যাপারে আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর সংবিধান, যেগুলোতে এ ধরনের বিধান রয়েছে, পর্যালোচনা করে দেখার কথা ভাবছে বলে আমরা সংবাদপত্রে পড়েছি। কিন্তু সংবিধানে কঠোর শাস্তির বিধান, এমনকি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে কি তা বন্ধ করা যাবে?
এ প্রসঙ্গে আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো পর্যন্ত যেতে হবে না। আমরা পাকিস্তানের উদাহরণ টানতে পারি। জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালে প্রণীত পাকিস্তানের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘৬.(১) কোনো ব্যক্তি যে সংবিধানকে ক্ষমতাবলে বাতিল করে, পরিবর্তন করে, অথবা জোর করে বা শক্তি প্রদর্শন করে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করে, সে ব্যক্তি চরম দেশদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হবে। (২) কোনো ব্যক্তি (১) ধারায় উল্লিখিত কার্যক্রমের সহায়তা বা উৎসাহ প্রদান করলে, সে ব্যক্তিও একইভাবে চরম দেশদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হবে। (৩) সংসদ আইনের মাধ্যমে চরম দেশদ্রোহিতার শাস্তি নির্ধারণ করবে।’ দেশদ্রোহিতার শাস্তি সাধারণত মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু ১৯৭৩ সালের সংবিধান রচনার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী পাকিস্তানি জেনারেল জিয়াউল হকের মৃত্যুদণ্ড হয়নি। বরং মৃত্যুদণ্ড হয়েছে সংবিধান প্রণয়নকারী জনাব ভুট্টোর। তাই কঠোর শাস্তির বিধান করে অবৈধ ক্ষমতা দখল এড়ানো যায় না। এ ছাড়া জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এখনো বহালতবিয়তেই আছেন। অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখলকারীরা সংবিধান পড়েও ক্ষমতা দখল করেন না।
এ ছাড়া পাকিস্তান ও বাংলাদেশের উচ্চ আদালতই বহুবার সামরিক শাসনের বৈধতা দিয়েছেন, যদিও আমাদের সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় অবৈধ ক্ষমতা দখলকে চিরতরে বিদায় জানানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে এবং বিচার বিভাগের অতীতের ভুল স্বীকার করেছে। আমরা আদালতের এ আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানাই। প্রসঙ্গত, সাংবিধানিক ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক চোরাগলি আছে, যা ব্যবহার করে বিচারকেরা অতীতে সামরিক সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, সময়ের প্রয়োজনীয়তা, রাজনৈতিক প্রশ্ন, সফল বিপ্লব মার্জনা প্রদান ইত্যাদি যুক্তি কাজে লাগিয়ে তাঁরা জবরদখলদারদের কার্যক্রমকে সমর্থন দিয়েছেন।
আমাদের অতীতের দিকে তাকালে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয় যে অধিকাংশ অবৈধ ক্ষমতা দখলের জন্য দখলকারীরা যতটুকু দায়ী, রাজনীতিবিদেরা তার চেয়ে কম দায়ী নন। রাজনীতিবিদেরাই অনেক ক্ষেত্রে দখলকারীদের উৎসাহিত করেছেন এবং প্রশ্রয় দিয়েছেন। সংসদে আইন পাস করে তাঁদের বৈধতা দিয়েছেন। রাজনীতিবিদদের মদদ ও সহায়তা ছাড়া অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা জোর করে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারে না, কেড়ে নিলেও টিকে থাকতে পারে না। এ ছাড়া আমাদের দেশে সামরিক শাসক কিংবা তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না, যার প্রমাণ জেনারেল এরশাদ, যিনি বর্তমান জোট সরকারেরই শরিক। শুধু তা-ই নয়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁকে নিয়ে অনেক অনৈতিক খেলাও খেলা হয়েছে।
আর রাজনীতিবিদেরাই তাঁদের সীমাহীন দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, স্বার্থপরতা, সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন, দুঃশাসন এবং সাধারণ জনগণের অধিকার হরণ ও বঞ্চনার মাধ্যমে যে বিষবৃক্ষ রোপণ করেন, তারই বিষফল অবৈধ ক্ষমতা দখল। এ ছাড়া তাঁদের যথেচ্ছাচারের কারণে সৃষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চরম দুরবস্থায়ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়লে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও ভেঙে পড়ে, যা অবৈধ ক্ষমতা দখলের পথ সুগম করে। রাজনীতিকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, হানাহানি, চতুর্যপূর্ণ আচরণ ও মৌলিক বিষয়ে সমঝোতার অভাবও অগণতান্ত্রিক পন্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক হয়েছে। উপরন্তু অস্ত্রের মুখে অবৈধ ক্ষমতা দখল রাজপথকেন্দ্রিক, অনিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিরই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি।
উদাহরণস্বরূপ, ১১ জানুয়ারি ২০০৭-এর ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটের দিকে তাকানো যাক। সম্প্রতি ব্যারিস্টার রফিকুল হক চারজন বিএনপি নেতাকে ওই দিনের দুঃখজনক ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, তাঁরাই মূলত সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর পেছনে ছিলেন, যার মাধ্যমে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হয়, যাতে বিচারপতি কে এম হাসান পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারেন। আমার মনে হয়, শুধু ওই একটি সিদ্ধান্তই নয়, গত জোট সরকার আরও অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিল, যা পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই ভেঙে পড়তে সহায়তা করেছিল। যেমন—সংবিধানে নির্ধারিত সব বিকল্প নিঃশেষ না করে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিনের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ, তাঁর প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণের পর হাইকোর্টে দায়ের করা মামলা প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরিচালনা করতে না দেওয়া, নির্বাচন কমিশনে দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দান, ভোটার তালিকায় ভুয়া ভোটারের ছড়াছড়ি, প্রশাসনের চরম দলীয়করণ ইত্যাদি। বলাবাহুল্য যে এগুলো করা হয় একটি পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় পুনরায় অধিষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করতে। আর তা করা হয় জোট সরকারের আমলে সৃষ্ট লুটপাটতন্ত্র অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে।
এসব অপকর্মের ফলে নির্বাচন কমিশন তার কার্যকরতা হারিয়ে ফেলে এবং কমিশন চরম আস্থার সংকটে নিপতিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুরোপুরি দলীয় সরকারে পরিণত হয় এবং অকার্যকর হয়ে পড়ে। উচ্চ আদালত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে অপারগ হয়ে পড়ে। এসব প্রতিষ্ঠানই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার খুঁটি হিসেবে কাজ করে। আর খুঁটি ভেঙে পড়লে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য। ১১ জানুয়ারি তা-ই ঘটেছিল। একটি বেলুনকে ক্রমান্বয়ে ফুলাতে থাকলে যেমন এটি একসময় ফুটে যেতে বাধ্য, তেমনিভাবে সীমাহীন ম্যানিপুলেশনের কারণে আমাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিও ভেঙে পড়েছিল। অন্যভাবে বলতে গেলে, জোট সরকারের আমলের সব অপকর্মের কারণে নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন সম্ভব ছিল না, সে কারণেই ২২ জানুয়ারি তারিখের নির্ধারিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
প্রকৃতিতে যেমন শূন্যতা বিরাজ করে না, তেমনিভাবে রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রেও তা বজায় থাকতে পারে না। কারণ রাষ্ট্র একটি স্থায়ী সত্তা। তাই ১১ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে সেনাসমর্থিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে, আমাদের মধ্যে হয়তো গৃহযুদ্ধ বেধে যেত, যার ফলেও নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন করা সম্ভব হতো না। অর্থাৎ জোট সরকারের সব অন্যায়, অপকর্ম ও অনৈতিক ম্যানিপুলেশনই ১১ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে অনুষ্ঠিত ক্ষমতা বদল ও পরবর্তীকালে নির্বাচন স্থগিতের জন্য মূলত দায়ী। আর সরকারবিরোধীদের অনিয়মতান্ত্রিক ও সহিংস আন্দোলন বারুদস্তূপে জ্বলন্ত দেশলাইয়ের কাঠি ছুড়ে দেওয়ারই কাজ করেছে।
একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন—পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বারবার সামরিক সরকার এসেছে, কিন্তু ভারতে তা ঘটেনি কেন? এর কারণ হলো, ১৯৪৭ সালের পর ভারতে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়—স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, দলীয়করণমুক্ত প্রশাসন ইত্যাদি—যেগুলো তাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়া ভারতে একটি অতি শক্তিশালী নাগরিক সমাজ বিরাজমান, যা রাজনীতিবিদদের বাড়াবাড়ি প্রতিহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
এ ছাড়া আমাদের রাজনীতিবিদেরা অতীতে সংবিধানকে পদদলিত এবং আদালতের রায় অমান্য করেতেও দ্বিধা করেননি। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের সংবিধানে (অনুচ্ছেদ ৫৯) প্রশাসনের সর্বস্তরে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো সরকারই সব স্তরে তা করেনি। এমনকি উচ্চ আদালতের রায়ও তাঁরা নির্বিচারে উপেক্ষা করেছেন। আইন বাস্তবায়নও তাঁরা করেন পছন্দমাফিক। তাই আইনের শাসন আমাদের নাগরিকদের জন্য বহুলাংশে মরীচিকাসম।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করতে অনেক অঙ্গীকারও আমাদের রাজনীতিবিদেরা অতীতে করেছেন, যা তাঁরা রক্ষা করেননি। এর একটি বড় উদাহরণ হলো নব্বইয়ের তিনজোটের রূপরেখা। ওই রূপরেখার মাধ্যমে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অনেকগুলো সংস্কারের অঙ্গীকার করেছিল। তাঁরা অঙ্গীকার করেছিলেন জাতীয় সংসদকে সব সমস্যা সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার এবং নির্বাচিত সরকারকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকার। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া, পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই যা কার্যকর হয়ে গিয়েছিল, দুর্ভাগ্যবশত অন্য সবগুলো অঙ্গীকারই তাঁরা ভঙ্গ করেন। শুধু তা-ই নয়, এমনকি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানেও নির্বাচিত সরকার পরবর্তীকালে ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছিল। বিদেশি মধ্যস্থতাকারী এনেও আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। মনে আছে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে স্যার নিনিয়ন স্টিফেনের দূতিয়ালির কথা!
আমাদের রাজনীতিবিদদের অনেকের অসদাচরণ এবং স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ হতে অনীহাও আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অতীতে সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত এখনো এ অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। আমাদের সংসদ সদস্যরা এখনো সম্পদের হিসাব দিতে নারাজ, তাঁরা নিজেদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন করে নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রকাশ করতে অসম্মত। তাঁরা দেশের অসংখ্য দারিদ্র্যপীড়িত ও নগ্নভাবে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা না ভেবে নিজেদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি, আবাসিক এলাকায় প্লটসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতেই লিপ্ত। উল্লেখ্য যে সম্পদের হিসাব প্রদান ও আচরণবিধি প্রণয়নের অঙ্গীকার দিনবদলের সনদেও অন্তর্ভুক্ত আছে।
পরিশেষে, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা দখলকে দেশদ্রোহিতা হিসেবে ঘোষণা করে এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান করা যেতেই পারে—এ ব্যাপারে কারোরই আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে, জনপ্রিয় কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, এখন ‘শুধু সংবিধান সংশোধন নয়, প্রয়োজন রাজনীতিকদের সংশোধন’ (প্রথম আলো, ২৩ জুলাই, ২০১০)। বস্তুত তাঁদের সদাচরণ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রীতি-নীতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনই অবৈধ ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে সর্বাধিক কার্যকর রক্ষাকবচ হতে পারে। এ ছাড়া আমাদের দণ্ডবিধির ১২৪ ও ১২৪ক ধারায় রাষ্ট্রপতি বা সরকারের আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধাদান এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা এখনো ব্যবহার করা যায়।
ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)।
No comments