এমপিদের কাছে আরো দায়িত্বশীল কথা আশা করি : আবু সায়ীদ

সংসদ সদস্যের কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল কথা আশা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, আমি দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলেছি। কিন্তু কী বললাম, তা বুঝতে পারছি না।


সংসদ সদস্যের কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল কথা আশা করি। কোনো কিছু বলার আগে তথ্যগুলো যাচাই করে নেওয়া উচিত ছিল। এখন তাঁরা লজ্জায় পড়েছেন। তাঁদের জন্য আমারই দুঃখ হচ্ছে।'
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্য নিয়ে জাতীয় সংসদে কঠোর সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি। এতে অধ্যাপক আবু সায়ীদ সম্পর্কে সংসদ সদস্যদের দেওয়া আপত্তিকর সব বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই অধ্যাপক আবু সায়ীদের যে কথা নিয়ে এত সমালোচনা হয় তার ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। প্রসঙ্গত, গত শনিবার টিআইবি আয়োজিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ইয়্যুথ অ্যানগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্টার (ইয়েস) জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পরদিন রবিবার জাতীয় সংসদে কঠোর সমালোচনা হয়। সংসদ অধিবেশনে একটি পত্রিকার বরাত দিয়ে অধ্যাপক আবু সায়ীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়।
ওই পত্রিকাটির রিপোর্টে বলা হয়, শনিবার টিআইবির সম্মেলনে ড. আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, দেশের মন্ত্রী-এমপিরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন না, তাঁরা নীতি মানেন না। শপথ নেওয়ার সময় বলেন, অন্যায় করবেন না, কিন্তু প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে তাঁরা অন্যায় করেন। এসব মন্ত্রী-এমপির কোনো নীতি নেই। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিম পয়েন্ট অব অর্ডারে এ বিষয়ে কথা বলেন। পরে শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু অধ্যাপক সায়ীদের কঠোর সমালোচনা করেন। ওই সময় স্পিকারের আসনে থাকা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আলী আশরাফ তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেন। এরপর তা নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ জানান, তিনি তাঁর বক্তব্যে 'সংসদ সদস্য' কথাটি উল্লেখ করেননি। পরদিন সোমবার ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, আবদুল্লাহ সায়ীদকে নিয়ে সংসদে বিরূপ আলোচনা ঠিক হয়নি।
এমপিদের বক্তব্যে কষ্ট পেয়েছিলেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ডেপুটি স্পিকার বিষয়টি মানবিকভাবে দেখেছেন, এতে তাঁর কষ্ট চলে গেছে। অধ্যাপক সায়ীদ বলেন, "সেদিন কী হয়েছে, তা আপনারা দেখেছেন। আমি তো সেদিন 'সংসদ সদস্য' শব্দটিই উচ্চারণ করিনি।" তিনি বলেন, 'আমার তো মাথা খারাপ হয়ে যায়নি যে জাতীয় সংসদের সবাইকে ঢালাওভাবে দুর্নীতিবাজ বলব। এত বড় কথা আমি বলতে পারি না। তবে আমার যেটি সবচেয়ে খারাপ লেগেছে তা হলো- কেউ সত্যতা যাচাই করে দেখেননি যে আমি কি বলেছি।'
আবু সায়ীদ বলেন, 'এটা আমার বোধগম্যই হচ্ছে না যে সাতটি পত্রিকায় কিভাবে একই রকম বিকৃত তথ্য এল। সংবাদগুলোর ধরন দেখে মনে হয় যেন, সব একজনারই লেখা।' টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, 'কোনো কোনো গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে কিছু কথা এসেছে। কিন্তু এমন কথা তো বলাই হয়নি।'
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান লিখিত বক্তব্যে জানান, মাননীয় স্পিকার ও গণমাধ্যম সূত্রে যে কজন সংসদ সদস্য ওই বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাঁদের অবগতির জন্য সোমবারই একটি সিডি ও ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠানো হয়েছে। সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও কপি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, 'অসম্পূর্ণ বা ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর নির্ভর করে সংসদ সদস্যসহ যেকোনো পর্যায়ের কাউকে যেমন অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক না, তেমনি অন্য সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মতো গণমাধ্যমের কাজে অপরিপূর্ণতা থাকা স্বাভাবিক। আমাদের উচিত সে ব্যাপারে সজাগ থাকা।'
'ডেপুটি স্পিকারের উদ্যোগে সমাধানের পথ উন্মোচিত হয়েছে' মন্তব্য করে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে জনগণ এবং জনপ্রতিনিধিদের যৌথ প্রয়াসেই দেশের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে। সেক্ষেত্রে জনগণের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতির কোনো বিকল্প নেই এবং জনপ্রতিনিধিদের জনগণের সহযোগী হয়েই কাজ করতে হবে।
সুলতানা কামাল বলেন, 'সংবিধানের কোথায় আছে যে জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করা যাবে না?' সংসদের যাঁরা প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁদের নিজেদের আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
উল্লেখ্য, টিআইবির সরবরাহ করা আবু সায়ীদের বক্তব্যের অনুলিপিতে বলা হয়েছে, "দুর্নীতি জিনিসটা কী? এই যে চোরেরা যে চুরি করে, ডাকাতরা যে ডাকাতি করে, এটা কি দুর্নীতি? আমার মনে হয় এটা দুর্নীতি নয়। কারণ দুর্নীতি শব্দটার সঙ্গে একটা শব্দ যুক্ত আছে তার নাম হচ্ছে নীতি। চোরের কোনো নীতি নেই, ডাকাতের কোনো নীতি নেই। সুতরাং দুর্নীতি সেই মানুষটি করেন যার নীতি আছে। যিনি মন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন যে- আমি শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ সকলের প্রতি সমান বিচার করব। তিনি শপথ করে যখন অন্যায় করেন তখন সেটা দুর্নীতি।"

No comments

Powered by Blogger.