শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের দায়িত্ব সরকারেরই-শিক্ষা-বাণিজ্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ
যে কথাটি শিক্ষাবিদদের তরফে, শিক্ষা আন্দোলনের মঞ্চে বারবার উচ্চারিত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে তারই স্বীকৃতি মিলল। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাবিষয়ক এক সভায় শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য বিষয়ে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শিক্ষার উদ্দেশ্য এখন সার্টিফিকেট অর্জন, আর সার্টিফিকেট প্রয়োজন উচ্চ আয় নিশ্চিত করার জন্য।
শিক্ষার মাধ্যমে অগ্রসর, গণতন্ত্রমনা, প্রগতিশীল ও উন্নয়ন-সহায়ক জনগোষ্ঠী সৃষ্টির ভাবনার পালে এখন আর তেমন হাওয়া পাচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগকে কথার কথা না ভেবে শিক্ষা বিষয়ে সরকারের নীতিগত অবস্থানের প্রতিফলন ভাবাই সংগত। সুতরাং সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণই বেশি কাম্য। সব বিপর্যয় প্রকাশ্যে আসে না। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ তেমনই এক বিপর্যয়। এটা এমন ধরনের বিপর্যয়, যার কুফল সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ে না; বরং দীর্ঘ মেয়াদে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পিছিয়ে পড়ে গোটা জনগোষ্ঠী।
শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের প্রধান লক্ষণ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় লক্ষণ, ভালো ফল করাই সুশিক্ষা—এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা পাওয়া। তৃতীয় লক্ষণ, শিক্ষাকে পণ্যমূল্যে বিবেচনা করা। এরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে স্নাতক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে শিক্ষা এখানে বিত্ত অর্জনের উপায় ছাড়া আর কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, ‘প্রকৃত শিক্ষার পরিবর্তে এসেছে শিক্ষা-বাণিজ্য।’ তিনি ভর্তি-বাণিজ্য ও কোচিংয়েরও সমালোচনা করেন। সমালোচনা করেছেন অসাধু ছাত্রনেতা ও অর্থলোভী শিক্ষকদের। ক্ষমতাসীন দল প্রভাবিত ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারেরই। আর সমাজের সব অংশ যদি বিত্ত ও ভোগের স্রোতে ভাসতে চায়, তাহলে একা শিক্ষকদের দোষ দিয়ে লাভ কী? শিক্ষার সুযোগের মধ্যে যদি বৈষম্য থাকে, যদি একেক শ্রেণীর জন্য একেক ধরনের শিক্ষা থাকে, যদি প্রাপ্ত মানের চেয়ে পরিমাণই অগ্রাধিকার পায়, তাহলে বাণিজ্যিক মনোবৃত্তিই যে শিক্ষাক্ষেত্রকে শাসন করবে তাতে সন্দেহ কী? দুঃখের বিষয়, সদ্য ঘোষিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে উচ্চশিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।
এসব সমস্যার প্রতিকার কেবল কথায় হওয়ার নয়। প্রথমেই সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে উন্নত করতে হবে, যাতে তা বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভালো করতে পারে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের শিক্ষাদানে উৎসাহিত করতে হলে তাঁদের বেতন-ভাতা ও সামাজিক সম্মান বাড়ানোর বিকল্প নেই। শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য হতে হবে এমন ধরনের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করা, যারা দেশের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রিক সমস্যাগুলো বুঝতে ও সমাধান দিতে সক্ষম হবে। কেবল ভালো চাকরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে এ কাজ হবে না।
শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের প্রধান লক্ষণ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় লক্ষণ, ভালো ফল করাই সুশিক্ষা—এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা পাওয়া। তৃতীয় লক্ষণ, শিক্ষাকে পণ্যমূল্যে বিবেচনা করা। এরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে স্নাতক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে শিক্ষা এখানে বিত্ত অর্জনের উপায় ছাড়া আর কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, ‘প্রকৃত শিক্ষার পরিবর্তে এসেছে শিক্ষা-বাণিজ্য।’ তিনি ভর্তি-বাণিজ্য ও কোচিংয়েরও সমালোচনা করেন। সমালোচনা করেছেন অসাধু ছাত্রনেতা ও অর্থলোভী শিক্ষকদের। ক্ষমতাসীন দল প্রভাবিত ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারেরই। আর সমাজের সব অংশ যদি বিত্ত ও ভোগের স্রোতে ভাসতে চায়, তাহলে একা শিক্ষকদের দোষ দিয়ে লাভ কী? শিক্ষার সুযোগের মধ্যে যদি বৈষম্য থাকে, যদি একেক শ্রেণীর জন্য একেক ধরনের শিক্ষা থাকে, যদি প্রাপ্ত মানের চেয়ে পরিমাণই অগ্রাধিকার পায়, তাহলে বাণিজ্যিক মনোবৃত্তিই যে শিক্ষাক্ষেত্রকে শাসন করবে তাতে সন্দেহ কী? দুঃখের বিষয়, সদ্য ঘোষিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে উচ্চশিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।
এসব সমস্যার প্রতিকার কেবল কথায় হওয়ার নয়। প্রথমেই সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে উন্নত করতে হবে, যাতে তা বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভালো করতে পারে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের শিক্ষাদানে উৎসাহিত করতে হলে তাঁদের বেতন-ভাতা ও সামাজিক সম্মান বাড়ানোর বিকল্প নেই। শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য হতে হবে এমন ধরনের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করা, যারা দেশের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রিক সমস্যাগুলো বুঝতে ও সমাধান দিতে সক্ষম হবে। কেবল ভালো চাকরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে এ কাজ হবে না।
No comments