তাঁরা নারী বলে... by লাবনী খন্দকার
উচ্চশিক্ষার জন্য বা শিক্ষা শেষে চাকরি খুঁজতে কিংবা চাকরি করতে যেসব নারী আসেন এই শহরে, তাঁদের বাধা পেতে হয় পদে পদে। এই বাধা শুধু তাঁরা নারী বলে। কোথায় থাকবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, ‘আমরা মুখে বলি, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে দেশের অর্ধেক জনশক্তি
নারীদের এগিয়ে নিতে হবে; কিন্তু বাস্তবে তা অধরাই রয়ে যায়। এ অবস্থায় নারীর নিরাপদ ঠিকানা প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং সরকারিভাবে মহিলা হোস্টেল বৃদ্ধি করা।’
বর্তমানে পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। ছেলে-মেয়ের পার্থ্যক উড়িয়ে দিয়ে অনেক নারী একা যুদ্ধ করতে আসেন এই শহরে। আর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যে বাধা পেতে হয় তা হলো, নিশ্চিত একটা ঠিকানা। বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি এমন নারী খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাঁদেরই একজন ফাহমিদা আক্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বাসা খোঁজার সহযোদ্ধা রওনক জাহানকে নিয়ে ছুটছেন অলিগলিতে। ফাহমিদা আক্তার মুখ গোমড়া করে বলেন, ‘নোটিশ অনুযায়ী রোকেয়া হলের সিট ছেড়ে দিতে হয়েছে গত মে মাসে। কিন্তু আমরা নীলক্ষেত মহিলা কর্মজীবী হোস্টেলে সিট পাওয়ার জন্য গত জানুয়ারি মাস থেকে চেষ্টা করেও আবেদনপত্র পাচ্ছি না। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বাসা পেলে বাড়িওয়ালা যখন বলেন অভিভাবক ছাড়া ভাড়া দেওয়া হবে না, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।’
নারীরা কত প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছেন, তা বোঝা যায় শামিমা নাসরিনকে দেখে। শামিমা এফএম রেডিওর সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘জীবনে একা যুদ্ধে জিততে চেয়েছি। প্রথমে খালার বাসায়, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে, এখন সাবলেটে আছি। সাবলেটে থেকে মনে হয়, কড়া শাশুড়ির সঙ্গে বাস করি। বিদ্যুৎ খরচ করা যাবে না, জোরে কথা বলা যাবে না, গান শোনা যাবে না, বারান্দায় যাওয়া যাবে না...।’
তিনি দুঃখ জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘কত দিন যে মোমের আলোয় রান্না করি!’
রাঙামাটি থেকে আসা দুলালী চাকমা পড়েন শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে। থাকেন নূরজাহান রোডে। তবে একা নন, তাঁর ছোট ভাইও থাকে। দুই মাসের মাথায় বাড়িওয়ালার নির্দেশে ভাইকে অভিভাবক দেখানো হয়। তার পরও বাড়িওয়ালার নির্দেশ, মা-বাবা না থাকলে ভাইবোন একসঙ্গে থাকা যাবে না।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেরদৌস আজীম জানান, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের জন্য ঢাকা অনেক বেশি সংকীর্ণ। তিনি বলেন, সরকার নারী উন্নয়নের পরিকল্পনায় নারীদের জন্য ছাত্রী হোস্টেল বা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল বাড়িয়ে তাঁদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে। বৈষম্য না করে বাড়িওয়ালাদের উদার হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
ঢাকায় কয়েকটি মহিলা হোষ্টেল যদিও আছে, সেগুলোর চিত্র দেখি করুণ।
চিত্রশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পরিবার-পরিজন ছেড়ে একা সাহসে ভর করে বেরিয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার সাদিয়া সুলতানা। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউডার (ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ) চিত্রকলা বিভাগের ছাত্রী। বেসরকারি একটি মহিলা হোস্টেলে থাকেন। সাদিয়া সুলতানা জানান, তিনজনের একটি রুমে মাথাপিছু ভাড়া দিতে হয় চার হাজার ৮০০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অতি সীমিত পরিসরে তিনটি বিছানা, যেখানে শুধু ঘুমানো যায়। খাওয়ার মান কেমন জানতে চাইলে সাদিয়াসহ সবাই অভিযোগ করেন, ‘খাবার এত নিকৃষ্ট মানের যে তা না খেলে কিছুতেই বুঝতে পারবেন না।’
সাদিয়া বলেন, ‘আরও আছে পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, কর্তৃপক্ষ নানা কারণে প্রতি মাসে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অজুহাত তৈরি করে। এ ব্যাপারে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হোস্টেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে হোস্টেল চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ এমন চিত্র ঢাকা শহরে প্রায় সব মহিলা হোস্টেলেই। এর মধ্যেই অসীম ধৈর্য নিয়ে নারীরা ছুটে চলেছেন জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে।
বর্তমানে পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। ছেলে-মেয়ের পার্থ্যক উড়িয়ে দিয়ে অনেক নারী একা যুদ্ধ করতে আসেন এই শহরে। আর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যে বাধা পেতে হয় তা হলো, নিশ্চিত একটা ঠিকানা। বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি এমন নারী খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাঁদেরই একজন ফাহমিদা আক্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বাসা খোঁজার সহযোদ্ধা রওনক জাহানকে নিয়ে ছুটছেন অলিগলিতে। ফাহমিদা আক্তার মুখ গোমড়া করে বলেন, ‘নোটিশ অনুযায়ী রোকেয়া হলের সিট ছেড়ে দিতে হয়েছে গত মে মাসে। কিন্তু আমরা নীলক্ষেত মহিলা কর্মজীবী হোস্টেলে সিট পাওয়ার জন্য গত জানুয়ারি মাস থেকে চেষ্টা করেও আবেদনপত্র পাচ্ছি না। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বাসা পেলে বাড়িওয়ালা যখন বলেন অভিভাবক ছাড়া ভাড়া দেওয়া হবে না, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।’
নারীরা কত প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছেন, তা বোঝা যায় শামিমা নাসরিনকে দেখে। শামিমা এফএম রেডিওর সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘জীবনে একা যুদ্ধে জিততে চেয়েছি। প্রথমে খালার বাসায়, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে, এখন সাবলেটে আছি। সাবলেটে থেকে মনে হয়, কড়া শাশুড়ির সঙ্গে বাস করি। বিদ্যুৎ খরচ করা যাবে না, জোরে কথা বলা যাবে না, গান শোনা যাবে না, বারান্দায় যাওয়া যাবে না...।’
তিনি দুঃখ জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘কত দিন যে মোমের আলোয় রান্না করি!’
রাঙামাটি থেকে আসা দুলালী চাকমা পড়েন শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে। থাকেন নূরজাহান রোডে। তবে একা নন, তাঁর ছোট ভাইও থাকে। দুই মাসের মাথায় বাড়িওয়ালার নির্দেশে ভাইকে অভিভাবক দেখানো হয়। তার পরও বাড়িওয়ালার নির্দেশ, মা-বাবা না থাকলে ভাইবোন একসঙ্গে থাকা যাবে না।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেরদৌস আজীম জানান, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের জন্য ঢাকা অনেক বেশি সংকীর্ণ। তিনি বলেন, সরকার নারী উন্নয়নের পরিকল্পনায় নারীদের জন্য ছাত্রী হোস্টেল বা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল বাড়িয়ে তাঁদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে। বৈষম্য না করে বাড়িওয়ালাদের উদার হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
ঢাকায় কয়েকটি মহিলা হোষ্টেল যদিও আছে, সেগুলোর চিত্র দেখি করুণ।
চিত্রশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পরিবার-পরিজন ছেড়ে একা সাহসে ভর করে বেরিয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার সাদিয়া সুলতানা। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউডার (ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ) চিত্রকলা বিভাগের ছাত্রী। বেসরকারি একটি মহিলা হোস্টেলে থাকেন। সাদিয়া সুলতানা জানান, তিনজনের একটি রুমে মাথাপিছু ভাড়া দিতে হয় চার হাজার ৮০০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অতি সীমিত পরিসরে তিনটি বিছানা, যেখানে শুধু ঘুমানো যায়। খাওয়ার মান কেমন জানতে চাইলে সাদিয়াসহ সবাই অভিযোগ করেন, ‘খাবার এত নিকৃষ্ট মানের যে তা না খেলে কিছুতেই বুঝতে পারবেন না।’
সাদিয়া বলেন, ‘আরও আছে পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, কর্তৃপক্ষ নানা কারণে প্রতি মাসে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অজুহাত তৈরি করে। এ ব্যাপারে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হোস্টেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে হোস্টেল চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ এমন চিত্র ঢাকা শহরে প্রায় সব মহিলা হোস্টেলেই। এর মধ্যেই অসীম ধৈর্য নিয়ে নারীরা ছুটে চলেছেন জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে।
No comments