সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে by ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত

শিক্ষা খাতকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে হবে। বিদ্যুৎ এবং অবকাঠামো খাতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। অনুৎপাদনশীল খাত থেকে খরচ কমানো দরকার। বিশেষ করে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের ব্যয় হ্রাস করতেই হবে। যোগাযোগ খাতের মধ্যে রেলওয়ে এখনো অবহেলিত। যাতায়াত ও অর্থনীতির স্বার্থে এ দিকটায় আরো নজর দেওয়া প্রয়োজন।


গত ৪০ বছরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, রেল খাতের দিকে সেভাবে হয়নি। বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। উৎপাদনও বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সেটা খুব কম, তা বলা যাবে না। বিদ্যুৎ খাতে এ সরকারের সাফল্য রয়েছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকার তা পারেনি। কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য এ সরকার অর্জন করেছে। কিন্তু কৃষকের জন্য তা সুবার্তা বয়ে না আনলেও উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছে। রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করেছে এ সরকার। কৃষি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা দরকার এবং তা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। কৃষকের স্বার্থে, ব্যাপকভাবে কৃষি উৎপাদনের স্বার্থে এর কোনো বিকল্প নেই। কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস করতে হবে, কর কমাতে হবে। সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। অনেকেই মনে করেন, এ দেশে হোয়াইট ইকোনমি যতটা শক্তিশালী, ব্ল্যাক ইকোনমিও ততটাই শক্তিশালী। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখার কথা শোনা যাচ্ছে তা ইতিবাচক। কারণ জাতীয় অর্থনীতিতে এ টাকা যুক্ত হলে আয়ের চক্রাকার প্রবাহতে তা প্রবেশ করবে এবং সাধারণ মানুষ তাতে উপকৃত হবে। মানুষের কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে, কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাসংক্রান্ত কল্যাণের দিকটি বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। এবারও বিপুল পরিমাণ টাকা ঘাটতি রেখেই বাজেট প্রণীত হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া উপায় কী। উন্নয়ন বাজেটে সরকার ৬০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে, বাকি ৪০ শতাংশ আসছে বিদেশি ঋণ, অনুদান ইত্যাদি থেকে। তবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ হ্রাস করা প্রয়োজন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ গতিশীল করতে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের সুদের হার হ্রাস করতে হবে। দুর্নীতি নির্মূল করার অঙ্গীকার দৃঢ় করতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও অত্যন্ত জরুরি। এসব নিশ্চিত করা না গেলে বিনিয়োগ হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারের ব্যয় হ্রাস করতে হবে। বিদেশের বাজারে যদি পণ্যমূল্য বাড়ে তাহলে যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেসব ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, অথচ সেসব ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যয় করা যাচ্ছে না। উৎপাদনশীল খাতে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করা চাই। একই সঙ্গে প্রয়োজন দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরো জোরদার করা এবং এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

লেখক : গ্রন্থনা : দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু

No comments

Powered by Blogger.