আরও পূর্ণাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ আইন প্রয়োজন-বন্য প্রাণী সংরক্ষণ

বন্য প্রাণী, বিপন্ন উদ্ভিদ ও বৃক্ষ রক্ষা এবং এদের বিচরণ ও বিকাশের পরিবেশ রক্ষায় ১৯৭৩ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন সেকেলে ও অকার্যকর হয়ে উঠেছিল। এ বিষয়ে নতুন আইনের খসড়া প্রণয়ন এবং আগামী সংসদ অধিবেশনে তা উত্থাপনের প্রস্তুতি তাই সময়ের প্রয়োজনই মেটাবে।


আইনটি এখনো খসড়া, তাই একে আরও পূর্ণাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে প্রথমবারের মতো বন্য প্রাণী, উদ্ভিদ ও বৃক্ষ রক্ষায় নতুন ধারণা ও করণীয় ঠিক করা হয়েছে। এসবের মধ্যে বন বিভাগের অধীনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল রক্ষা, পবিত্র বৃক্ষ ও উদ্ভিদ চিহ্নিত করার মতো প্রায়োগিক ও সাংস্কৃতিক বিবেচনার প্রকাশও ইতিবাচক। কিন্তু কিছু অসংগতি ও অসম্পূর্ণতা লক্ষ করা যায়, তা আমলে নেওয়া প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত আইনে বন্য প্রাণীদের মধ্যে বাঘকেই সবচেয়ে বেশি মূল্য দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছাকৃত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বাঘ হত্যা বা এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির জন্য পরিবহনের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে ১২ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকার জরিমানা। কিন্তু একই রকম বিপন্ন চিতা বাঘ, লাম চিতাসহ তিমি ও ডলফিনদের বেলায় শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সাত থেকে ১৫ লাখ টাকা শাস্তির বিধান লঘুদণ্ড নয় কি? একই রকম বিপন্ন ও দুর্লভ প্রাণীদের মধ্যে এই ‘বৈষম্যের’ যুক্তিটি বোধগম্য নয়।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে ‘পবিত্র’ বলে গণ্য হওয়া বৃক্ষ এবং ইতিহাসের ‘স্মারক’ বৃক্ষ রক্ষার কথা বলা হলেও তাতে তুলসী বা বটসহ অনেক নাম বাদ পড়েছে বলে সংশ্ল্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। একইভাবে সর্পগন্ধা, নাগলিঙ্গমের মতো বিভিন্ন এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণের প্রশ্নও বাদ পড়ে গেছে। ‘বননির্ভর জনগোষ্ঠী’ হিসেবে বনের ওপর আদিবাসীদের প্রথাগত অধিকারের স্বীকৃতি ন্যায্য হলেও তাদের বন সংরক্ষণকারী ভূমিকার কথা আসেনি। আসেনি বন্য প্রাণী ও বন ধ্বংসে পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির কথা। আগ্রাসী প্রজাতির গাছের কথা বলা হলেও নাম না থাকায় এসব গাছ বর্জনে অসুবিধা হওয়ার কথা।
বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ বৃক্ষের জীবনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও হাওর-জলাভূমি বোর্ডের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ দুটি সংস্থার প্রতিনিধিদের বন্য প্রাণী উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য না রাখাও ঘাটতির বিষয়। বাদ পড়ে গেছে ভূমি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নামও। আশা করি, সংসদে উত্থাপনের আগে খসড়া আইনে ওপরে তুলে ধরা বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আইনটিকে সুষম ও কার্যকরভাবে প্রণয়ন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.