ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি : কয়েকটি উপায় ও কৌশল by ড. আবু এন এম ওয়াহিদ
গত ২০০-৩০০ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, যে ভূখণ্ড নিয়ে আজকের বাংলাদেশ রাষ্ট্র, সেখানে এবং তার আশপাশ অঞ্চলে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এবং বঙ্গোপসাগরে ছোট-বড় অনেক ভূমিকম্প হয়েছে। তাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বিস্তর।
সিস্মোলজিস্টদের ধারণা, এ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৮-৯ মাত্রার আরেকটি বড় ভূমিকম্প যেকোনো সময় হানা দিতে পারে, যার ধ্বংসলীলা থেকে বাংলাদেশ যে রেহাই পাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও হচ্ছে। ভূমিকম্পের প্রস্তুতিস্বরূপ সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দিয়েছে।
সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে ভূমিকম্প-সচেতনতা বৃদ্ধির উপায় ও কৌশল নিয়ে আলাদা একটা লেখার ইচ্ছে আছে। তবে এ নিবন্ধের বিষয়বস্তু বাংলাদেশে ভূমিকম্পের আগাম প্রস্তুতি। বড়মাপের ভূমিকম্প একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা প্রতিবছর পৃথিবীর কোথাও না কোথাও আঘাত হানছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসলীলার চিহ্ন রেখে যাচ্ছে। এর মধ্যে পড়লে দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই, তবে সঠিক পূর্ব পরিকল্পনা এবং ভালো প্রস্তুতি থাকলে, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ও জনদুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে রাখা সম্ভব। ভূমিকম্পের পূর্ব প্রস্তুতি দুই ধরনের। একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারি প্রস্তুতি এবং আরেকটি ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সাধারণ জনগণের প্রস্তুতি। সরকারি প্রস্তুতির ব্যাপারে আরেকটা পৃথক প্রবন্ধ লেখা যেতে পারে। তবে এখানে থাকছে পারিবারিক পর্যায়ে সাধারণ জনগণের প্রস্তুতির বয়ান। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে সাধারণ জনগণ ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে তিন স্তরে। প্রথম স্তরে থাকে ভূমিকম্প ঘটে যাওয়ার আগের করণীয়, দ্বিতীয় স্তরে থাকে ভূমিকম্প চলাকালীন সাবধানতা এবং শেষ স্তরে থাকে ভূমিকম্পের পরে কী করতে হয় তার ফিরিস্তি। আজকের আলোচনা অবশ্য ভূমিকম্পের আগে কী করণীয় তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
শুরুতে যে কথাটা বলে রাখা প্রয়োজন তা হলো, বোধগম্য কারণে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরে ও নগরে ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি এবং জনদুর্ভোগের পরিমাণ হয় অনেক বেশি। আর তাই এখানে যেসব উপায়-পদ্ধতির আলোচনা করব, তা নাগরিক জীবনের জন্য যতটা প্রাসঙ্গিক, গ্রামীণ জীবনের জন্য সংগত কারণেই ততটা প্রযোজ্য হবে না। প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবারের সবাইকে জানিয়ে রাখা দরকার, ভূমিকম্প আঘাত হানলে তাৎক্ষণিকভাবে কী কী করা উচিত। ভূমিকম্পের সময় যারা ঘরে থাকবে তারা কিভাবে ঘর থেকে বেরোবে এবং যারা ঘরের বাইরে অথবা অন্য কোথাও আটকা পড়বে তাদের সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যদের কোথায় এবং কিভাবে যোগাযোগ হবে, তার সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। যেকোনো কারণে সরাসরি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে না পারলে নিজ শহরের ভেতরে এবং বাইরে এক বা একাধিক জায়গায় নির্দিষ্ট আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবার যোগাযোগ করা উচিত। এতে পরিবারের সব সদস্য পরস্পরের অবস্থা এবং অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে। এই যোগাযোগ মানসিক ভারসাম্যের জন্য প্রাথমিকভাবে খুবই দরকার।
নাগরিকদের ভেবে দেখতে হবে, তারা যেসব সিঙ্গেল ইউনিট বাড়িঘরে অথবা বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে থাকে, তাদের বাসস্থান উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের জন্য কতটা নিরাপদ। দালানগুলো যদি নতুন হয়, তাহলে সেগুলো ভূমিকম্প কোড মেনে তৈরি হয়েছি কি না, তার খোঁজখবর নেওয়া উচিত। যদি হয়ে থাকে, তো ভালো কথা। না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাড়ির মালিকদের সংশ্লিষ্ট বিল্ডার ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। থাকার দালানকোঠা যদি বেশি পুরনো হয়, তাহলে তা ভেঙে ভূমিকম্প কোড মেনে নতুন ঘর বানানোর জন্য দেরি না করে দীর্ঘ অথবা মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা শুরু করে দেওয়া দরকার। পুরান ঢাকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর ভেঙে ভূমিকম্প কোড মেনে নতুন বাড়ি বানানোর জন্য সরকারের উচিত এখন থেকেই একটি নীতিমালা তৈরি করে ব্যাপকভাবে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা। বাড়ির ভেতর, বাহির, আশপাশ এবং রাস্তাঘাট যত দূর সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জঞ্জালমুক্ত রাখা উচিত, যাতে দুর্যোগ অবস্থায় মানুষ এবং যানবাহন চলাচল সহজতর হয়। ঘরে এবং কাজের জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়স্থল দেখে রাখা প্রয়োজন। ঘরে এবং কাজের জায়গা থেকে জরুরি অবস্থায় দ্রুত নিরাপদে বেরোনোর পথ রাখা দরকার। ঘরের পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করার সুইচ কোথায় এবং কিভাবে আছে সেগুলো অন-অফ করতে হয়, তা পরিবারের সবার জেনে রাখা উচিত। নিকটবর্তী থানা, ফায়ারস্টেশন, হাসপাতাল অথবা ক্লিনিক চিনে রাখা নিতান্তই প্রয়োজন।
ঘরের ভেতর জিনিসপত্র রাখার তাকগুলো দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে অথবা বেঁধে রাখা প্রয়োজন। ভারী জিনিস নিচের তাকে রাখা উচিত। কাচের বাসনকোসন নিরাপদ জায়গায় অথবা ক্যাবিনেটের ভেতর বন্ধ করে রাখা দরকার। দেয়ালের ছবি, বিছানা এবং বসার জায়গা থেকে নিরাপদ দূরত্বে টাঙিয়ে রাখা উচিত। ঘরের ছাদের লাইট এবং ফ্যান ফিঙ্ার সিকিউরড আছে কি না তা সময় সময় চেক করে দেখা প্রয়োজন। অবহেলা না করে ডিফেক্টিভ পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুতের লাইন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেরামত করে ফেলা দরকার। ঘরের ভিতে, মেঝে, ছাদে অথবা দেয়ালে ফাটল থাকলে তা সুষ্ঠুভাবে মেরামত করতে দেরি করা উচিত নয়। প্রতিটি রুমে ভূমিকম্পের সময় আশ্রয়ের জন্য চৌকি, খাট, পালঙ্ক অথবা মজবুত টেবিলের তলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত। ঘরের ভেতরে অথবা গ্যারেজে কোনো ধরনের ফ্লেমেবল পদার্থ থাকলে তা নিরাপদে রাখতে হবে, যাতে গড়িয়ে পড়ে এখান থেকে আগুন না লাগে।
জরুরি অবস্থার কারণে যদি ঘর থেকে বেরোনো না যায়, তাহলে পারিপাশ্বর্িক অবস্থা জানা, বোঝা এবং করণীয় ঠিক করতে সরকারি নির্দেশাবলি জানার জন্য বাড়তি ব্যাটারিসহ একটি ব্যাটারি-চালিত টেনজিস্টার ঘরে রাখা দরকার। ঘরে আটকা পড়লে অন্তত কয়েক দিনের খাদ্য, পানীয়, ওষুধসহ অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের একটি জরুরি বাঙ্ তৈরি করে পরিবারের সবাইকে জানিয়ে ঘরের মধ্যে একটি নিরাপদ জায়গায় রাখা উচিত। এই জরুরি বাঙ্ েথাকবে_এক বাঙ্ ডিসপোজেবল ভেজা টাওয়েল, তুলা, ব্যান্ড এইড, অ্যান্টিসেপটিক ফ্লুইড, ব্যান্ডেজের জন্য গজ কাপড়, নিত্যব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, জনপ্রতি পাঁচ গ্যালন করে বোতলের পানি (কিছুদিন পর পর পুরনো পানি ব্যবহার করে নতুন পানির বোতল এনে রাখা উচিত), পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি, পাউডার দুধ, পর্যাপ্ত চিঁড়া, মুড়ি ও বিস্কুট-জাতীয় শুকনো খাবার, বাড়তি ব্যাটারিসহ টর্চলাইট, নগদ ২৫ হাজার টাকা, দিয়াশলাই, মোমবাতি, ফেস মাস্ক, ভারী গ্লাভস, সানগ্লাস, হাতুড়ি, পাইপ রেঞ্চ, প্লায়ারস, সুই, সুতা, ছুরি, কাঁচি, আগুন নেভানোর যন্ত্র, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়লে উদ্ধারকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হুইসেল ইত্যাদি। ঘর থেকে বেরোতে পারলেও রাস্তায় যে গাড়িঘোড়া চলবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই দীর্ঘ পথ হাঁটার নিমিত্তে প্রত্যেকের জন্য আরামদায়ক জুতা থাকাও বাঞ্ছনীয়।
এসব প্রস্তুতির কথা সরকারি এবং বেসরকারি রেডিও ও টিভি চ্যানেল, জাতীয় পত্রিকা, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জা, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও রাজনৈতিক সমাবেশের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে সবারই একটি কথা মনে রাখা উচিত, এই প্রচারের মাধ্যমে একটি জীবনও যদি রক্ষা পায়, তাই বা কম কী?
লেখক : অধ্যাপক : টেনেসি স্টেইট ইউনিভার্সিটি;
এডিটর : জার্নাল অব ডেভেলপিং এরিয়াজ
awahid@tnstate.edu
সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে ভূমিকম্প-সচেতনতা বৃদ্ধির উপায় ও কৌশল নিয়ে আলাদা একটা লেখার ইচ্ছে আছে। তবে এ নিবন্ধের বিষয়বস্তু বাংলাদেশে ভূমিকম্পের আগাম প্রস্তুতি। বড়মাপের ভূমিকম্প একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা প্রতিবছর পৃথিবীর কোথাও না কোথাও আঘাত হানছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসলীলার চিহ্ন রেখে যাচ্ছে। এর মধ্যে পড়লে দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই, তবে সঠিক পূর্ব পরিকল্পনা এবং ভালো প্রস্তুতি থাকলে, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ও জনদুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে রাখা সম্ভব। ভূমিকম্পের পূর্ব প্রস্তুতি দুই ধরনের। একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারি প্রস্তুতি এবং আরেকটি ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সাধারণ জনগণের প্রস্তুতি। সরকারি প্রস্তুতির ব্যাপারে আরেকটা পৃথক প্রবন্ধ লেখা যেতে পারে। তবে এখানে থাকছে পারিবারিক পর্যায়ে সাধারণ জনগণের প্রস্তুতির বয়ান। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে সাধারণ জনগণ ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে তিন স্তরে। প্রথম স্তরে থাকে ভূমিকম্প ঘটে যাওয়ার আগের করণীয়, দ্বিতীয় স্তরে থাকে ভূমিকম্প চলাকালীন সাবধানতা এবং শেষ স্তরে থাকে ভূমিকম্পের পরে কী করতে হয় তার ফিরিস্তি। আজকের আলোচনা অবশ্য ভূমিকম্পের আগে কী করণীয় তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
শুরুতে যে কথাটা বলে রাখা প্রয়োজন তা হলো, বোধগম্য কারণে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরে ও নগরে ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি এবং জনদুর্ভোগের পরিমাণ হয় অনেক বেশি। আর তাই এখানে যেসব উপায়-পদ্ধতির আলোচনা করব, তা নাগরিক জীবনের জন্য যতটা প্রাসঙ্গিক, গ্রামীণ জীবনের জন্য সংগত কারণেই ততটা প্রযোজ্য হবে না। প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবারের সবাইকে জানিয়ে রাখা দরকার, ভূমিকম্প আঘাত হানলে তাৎক্ষণিকভাবে কী কী করা উচিত। ভূমিকম্পের সময় যারা ঘরে থাকবে তারা কিভাবে ঘর থেকে বেরোবে এবং যারা ঘরের বাইরে অথবা অন্য কোথাও আটকা পড়বে তাদের সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যদের কোথায় এবং কিভাবে যোগাযোগ হবে, তার সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। যেকোনো কারণে সরাসরি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে না পারলে নিজ শহরের ভেতরে এবং বাইরে এক বা একাধিক জায়গায় নির্দিষ্ট আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবার যোগাযোগ করা উচিত। এতে পরিবারের সব সদস্য পরস্পরের অবস্থা এবং অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে। এই যোগাযোগ মানসিক ভারসাম্যের জন্য প্রাথমিকভাবে খুবই দরকার।
নাগরিকদের ভেবে দেখতে হবে, তারা যেসব সিঙ্গেল ইউনিট বাড়িঘরে অথবা বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে থাকে, তাদের বাসস্থান উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের জন্য কতটা নিরাপদ। দালানগুলো যদি নতুন হয়, তাহলে সেগুলো ভূমিকম্প কোড মেনে তৈরি হয়েছি কি না, তার খোঁজখবর নেওয়া উচিত। যদি হয়ে থাকে, তো ভালো কথা। না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাড়ির মালিকদের সংশ্লিষ্ট বিল্ডার ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। থাকার দালানকোঠা যদি বেশি পুরনো হয়, তাহলে তা ভেঙে ভূমিকম্প কোড মেনে নতুন ঘর বানানোর জন্য দেরি না করে দীর্ঘ অথবা মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা শুরু করে দেওয়া দরকার। পুরান ঢাকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর ভেঙে ভূমিকম্প কোড মেনে নতুন বাড়ি বানানোর জন্য সরকারের উচিত এখন থেকেই একটি নীতিমালা তৈরি করে ব্যাপকভাবে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা। বাড়ির ভেতর, বাহির, আশপাশ এবং রাস্তাঘাট যত দূর সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জঞ্জালমুক্ত রাখা উচিত, যাতে দুর্যোগ অবস্থায় মানুষ এবং যানবাহন চলাচল সহজতর হয়। ঘরে এবং কাজের জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়স্থল দেখে রাখা প্রয়োজন। ঘরে এবং কাজের জায়গা থেকে জরুরি অবস্থায় দ্রুত নিরাপদে বেরোনোর পথ রাখা দরকার। ঘরের পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করার সুইচ কোথায় এবং কিভাবে আছে সেগুলো অন-অফ করতে হয়, তা পরিবারের সবার জেনে রাখা উচিত। নিকটবর্তী থানা, ফায়ারস্টেশন, হাসপাতাল অথবা ক্লিনিক চিনে রাখা নিতান্তই প্রয়োজন।
ঘরের ভেতর জিনিসপত্র রাখার তাকগুলো দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে অথবা বেঁধে রাখা প্রয়োজন। ভারী জিনিস নিচের তাকে রাখা উচিত। কাচের বাসনকোসন নিরাপদ জায়গায় অথবা ক্যাবিনেটের ভেতর বন্ধ করে রাখা দরকার। দেয়ালের ছবি, বিছানা এবং বসার জায়গা থেকে নিরাপদ দূরত্বে টাঙিয়ে রাখা উচিত। ঘরের ছাদের লাইট এবং ফ্যান ফিঙ্ার সিকিউরড আছে কি না তা সময় সময় চেক করে দেখা প্রয়োজন। অবহেলা না করে ডিফেক্টিভ পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুতের লাইন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেরামত করে ফেলা দরকার। ঘরের ভিতে, মেঝে, ছাদে অথবা দেয়ালে ফাটল থাকলে তা সুষ্ঠুভাবে মেরামত করতে দেরি করা উচিত নয়। প্রতিটি রুমে ভূমিকম্পের সময় আশ্রয়ের জন্য চৌকি, খাট, পালঙ্ক অথবা মজবুত টেবিলের তলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত। ঘরের ভেতরে অথবা গ্যারেজে কোনো ধরনের ফ্লেমেবল পদার্থ থাকলে তা নিরাপদে রাখতে হবে, যাতে গড়িয়ে পড়ে এখান থেকে আগুন না লাগে।
জরুরি অবস্থার কারণে যদি ঘর থেকে বেরোনো না যায়, তাহলে পারিপাশ্বর্িক অবস্থা জানা, বোঝা এবং করণীয় ঠিক করতে সরকারি নির্দেশাবলি জানার জন্য বাড়তি ব্যাটারিসহ একটি ব্যাটারি-চালিত টেনজিস্টার ঘরে রাখা দরকার। ঘরে আটকা পড়লে অন্তত কয়েক দিনের খাদ্য, পানীয়, ওষুধসহ অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের একটি জরুরি বাঙ্ তৈরি করে পরিবারের সবাইকে জানিয়ে ঘরের মধ্যে একটি নিরাপদ জায়গায় রাখা উচিত। এই জরুরি বাঙ্ েথাকবে_এক বাঙ্ ডিসপোজেবল ভেজা টাওয়েল, তুলা, ব্যান্ড এইড, অ্যান্টিসেপটিক ফ্লুইড, ব্যান্ডেজের জন্য গজ কাপড়, নিত্যব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, জনপ্রতি পাঁচ গ্যালন করে বোতলের পানি (কিছুদিন পর পর পুরনো পানি ব্যবহার করে নতুন পানির বোতল এনে রাখা উচিত), পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি, পাউডার দুধ, পর্যাপ্ত চিঁড়া, মুড়ি ও বিস্কুট-জাতীয় শুকনো খাবার, বাড়তি ব্যাটারিসহ টর্চলাইট, নগদ ২৫ হাজার টাকা, দিয়াশলাই, মোমবাতি, ফেস মাস্ক, ভারী গ্লাভস, সানগ্লাস, হাতুড়ি, পাইপ রেঞ্চ, প্লায়ারস, সুই, সুতা, ছুরি, কাঁচি, আগুন নেভানোর যন্ত্র, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়লে উদ্ধারকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হুইসেল ইত্যাদি। ঘর থেকে বেরোতে পারলেও রাস্তায় যে গাড়িঘোড়া চলবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই দীর্ঘ পথ হাঁটার নিমিত্তে প্রত্যেকের জন্য আরামদায়ক জুতা থাকাও বাঞ্ছনীয়।
এসব প্রস্তুতির কথা সরকারি এবং বেসরকারি রেডিও ও টিভি চ্যানেল, জাতীয় পত্রিকা, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জা, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও রাজনৈতিক সমাবেশের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে সবারই একটি কথা মনে রাখা উচিত, এই প্রচারের মাধ্যমে একটি জীবনও যদি রক্ষা পায়, তাই বা কম কী?
লেখক : অধ্যাপক : টেনেসি স্টেইট ইউনিভার্সিটি;
এডিটর : জার্নাল অব ডেভেলপিং এরিয়াজ
awahid@tnstate.edu
No comments