অটিস্টিক শিশুরা অপারগ নয় বরং সৃজনশীল by সুপা সাদিয়া

প্রত্যেক মানুষের সামাজিক কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। সেই দায়বদ্ধতার কথা আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন কিছু তরুণ আর তাদের অভিভাবক হ্যানসের চেয়ারম্যান মীর সোহরাবুল হোসেন। 'অটিস্টিক শিশুরা অপারগ নয় বরং সৃজনশীল'_ এ মূলমন্ত্র সামনে রেখে দৃক গ্যালারিতে ১৫ জুলাই শুরু হলো সপ্তাহব্যাপী এমার্জড ফ্রম আননোন-৩ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী। নিজের দায়বদ্ধতা থেকে আমিও ঘুরে এলাম একবার দৃক গ্যালারি থেকে।


জীবন চলে জীবনের গতিতে। সেখানে যেন বিরাজ করে রঙধনু_ বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা আর লাল। আর এসব রঙের মিশ্রণে সাদা। সেই সাদা ক্যানভাসই রাঙিয়ে তুলছে একদল অটিস্টিক শিশু, যাদের জীবনে হয়তো রঙধনুর সব রঙ বিরাজ করছে না, কিন্তু তাদের ক্যানভাসে কোনো রঙের অনুপস্থিতি নেই। আর সেই রঙ-তুলিতে ফুটে উঠেছে নদীতে মাঝিমাল্লা, বাঁশিতে সুর তুলে রাখাল বালক, গ্রামের বধূ, পদ্ম ফুল, পাখি, গ্রামবাংলার বিচিত্র রূপ, স্মৃতিসৌধ, বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য, মুক্তিযুদ্ধ আর সামাজিক নানা অনুষঙ্গ। ছবিগুলো দেখে কে বলবে, এরা এক বিশেষ ধরনের শিশু, এক বিকল্পধারার শিশু। তবে এরা আসলেই প্রতিভাবান। এদেরও আছে উপলব্ধি করার ক্ষমতা, আছে ভালো-মন্দ বিচারের চেষ্টা। তবুও সমাজের অনেকের কাছেই এখনও তারা অবহেলিত, কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে তারা যেন অবাঞ্ছিত।
তিন বছর ধরে হ্যানস আয়োজন করে চলছে অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ছবি নিয়ে এ প্রদর্শনী। এটি তাদের তৃতীয় প্রদর্শনী। এবারের প্রদর্শনীতে ঢাকার সাতটি স্কুলের অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ৭০টি ছবি রয়েছে। এসব শিশুর বয়স ৪ থেকে ২৭ বছর। বয়স যা-ই হোক তারা শিশু_ চিরনবীন। তাদের বুদ্ধি-জ্ঞান তেমনই।
এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে হয়তো অটিজম সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে, হয়তো সচেতনতা বাড়বে। অটিস্টিক শিশু প্রতিবন্ধী নয়, অক্ষম নয়; তারাও হয়ে উঠতে পারে মেধাবী আর প্রতিভাবান। তবে কেবল দরকার সবার সহযোগিতা আর সহানুভূতিপূর্ণ হাত। কেবল শিশুদের প্রতি নয়, তাদের অভিভাবকদের প্রতিও আমাদের আস্থাশীল হাত সম্প্রসারণ করতে হবে। এ শিশু যে তার জীবনের বোঝা নয়, এ শিশু যে সবার আপনজন_ এটা প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুধাবন করতে হবে।
২৫ জুলাই ঢাকায় শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মিলন-২০১১। অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই এর লক্ষ্য।
আসুন সবাই মিলে প্রত্যয় করি, এ শিশুদের প্রতিবন্ধী হিসেবে নয়, আমরা এদের চিহ্নিত করব বিকল্পধারা বা বিশেষ ধরনের শিশু হিসেবে। এদের সৃজনশীলতার প্রতি সচেতন হব। এদেরও সমাজের একজন হিসেবে আপন করে নেব প্রত্যেকে।

No comments

Powered by Blogger.