বিশেষ সাক্ষাৎকার-সংশোধনী প্রস্তাব দুদকের ধারণার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ by গোলাম রহমান
গোলাম রহমানের জন্ম কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ১৯৪৬ সালে। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ওই বিভাগে প্রভাষক নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, পরের বছর পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাউন্টস সার্ভিসে যোগ দেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কন্ট্রোলার অব মিলিটারি অ্যাকাউন্টসে হিসাব নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়, বাণিজ্য, নৌপরিবহন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে তিনি অবসর নেন। ২০০৭ সালে তিনি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালের ২৪ জুন তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম
প্রথম আলো দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন পেয়েছে, শিগগিরই তা সংসদে পেশ করা হবে বলে জানা গেছে। আইনে কী কী সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে?
গোলাম রহমান আইনে কী সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আমি নিশ্চিতভাবে জানি না। যেটুকু জানি, তা জানতে পেরেছি সংবাদমাধ্যমের সূত্রে। সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কী, তা জানা যাবে যখন এটা বিল আকারে জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে। তার আগে এ সম্পর্কে আমাদের জানার কোনো পদ্ধতি আছে কি না, তা আমার জানা নেই।
প্রথম আলো দুর্নীতি দমন কমিশন আইন দ্বারা দুদক পরিচালিত হয়। যে প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই আইন, সেই প্রতিষ্ঠানই জানবে না আইনটিতে কী সংশোধনী আনা হচ্ছে—এটা কি একটু অদ্ভুত ব্যাপার নয়?
গোলাম রহমান আপনি হয়তো জানেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন করা হয় ২০০৪ সালে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর তাঁরা দেখতে পান যে এই আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা বা ঘাটতি রয়েছে। তখন দুর্নীতি দমন কমিশন-সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। সেই দুটি অধ্যাদেশে কিছু বিষয় ছিল, যা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সময় থাকতে পারে না। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় সংসদ ওই অধ্যাদেশগুলোতে অনুসমর্থন দেয়নি, অর্থাৎ অধ্যাদেশ দুটি আইনে রূপান্তর করেনি। ফলে ২০০৪ সালের আইনটিই পুনর্বহাল হলো। তারপর ২০০৯ সালে দুদক কিছু সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে পাঠায়, যা করা হলে কমিশন আরও শক্তিশালী হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকের কর্মকাণ্ডে অনেকেই সংক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। সম্ভবত সেই সংক্ষুব্ধতা থেকে মন্ত্রিপরিষদ কিছু নির্দেশনা দেয়, যাতে দুদক কোনো বাড়াবাড়ি করতে না পারে। তখন একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আইন সংশোধনী ও অধিকতর সংশোধনীর জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই সময় আমি দুদকে ছিলাম না। সেই কমিটিতে দুদকের একজন প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রথম আলো সেই কমিটি কী কাজ করেছে?
গোলাম রহমান কমিটি অনেকগুলো সভা করেছে। মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা বলেছে, আইনের কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন নেই, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিটি কিছু সংশোধনীর প্রস্তাবও করেছিল। দুদকের প্রতিনিধি হিসেবে যিনি ওই কমিটিতে ছিলেন, তাঁর মাধ্যমে আমরা কমিটির মতামত, সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে জানতে পারতাম। আমরা তখন লিখিতভাবে ওই কমিটিকে আমাদের পর্যবেক্ষণগুলো জানাই। সেই সঙ্গে আমরা কমিটিকে অনুরোধ করি, আপনাদের প্রস্তাব যখন মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করবেন, তখন আমাদের মনোভাবও মন্ত্রিপরিষদকে জানাবেন, যাতে মন্ত্রিপরিষদ যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখন যেন আমাদের মতামতগুলো তাঁদের বিবেচনায় থাকতে পারে। কমিটি সেটা করেছে কি না আমাদের জানা নেই। তবে আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছি, তাঁকেও আমাদের মনোভাব জানিয়েছি।
প্রথম আলো আপনাদের মনোভাব বা প্রস্তাবগুলো কী ছিল?
গোলাম রহমান দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত, অনুসন্ধান, প্রসিকিউশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুদকের কাজের পক্ষে অধিকতর সহায়ক কিছু বিধানের প্রস্তাব। যেমন—দুদক আইন, ২০০৪-এ দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত, তদন্তকৃত ও নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত ফৌজদারি মামলায় দুদককে পক্ষভুক্ত করার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। এর ফলে দুদকের পক্ষে মামলায় লড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাই আমরা দুদক আইনে ৩৩(৪) ধারার পর একটি নতুন ধারা ৩৩(৫) সংযোজনের প্রস্তাব করি যে, দুদককে পক্ষভুক্ত করতে হবে এবং মামলায় কোনো ব্যক্তি জামিন বা অন্য কোনো প্রতিকার চাইলে দুদককে শুনানির সংগত সময় দিয়ে শুনানি করতে হবে। আরেকটি প্রস্তাব ছিল এ রকম, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে দুদক যদি মনে করে, সরকারের কোনো সংস্থা থেকে বিশেষজ্ঞের সহায়তা প্রয়োজন, তাহলে দুদক সে রকম সহযোগিতা চাইলে ওই সংস্থা সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে। আমরা এই প্রস্তাবটি করেছি, কারণ বর্তমানে বিশেষজ্ঞ সহযোগিতা পাওয়ার কোনো বিধান নেই। এ ধরনের আরও কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ে সংশোধনীর প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম এবং মন্ত্রিপরিষদ সেগুলোর প্রায় সবই অনুমোদন করেছে।
প্রথম আলো তাহলে কেন বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা কমে যাবে। কীভাবে কমে যাবে?
গোলাম রহমান ওই কমিটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধান, তদন্ত বা মামলা করার ক্ষেত্রে দুদককে সরকারের পূর্বানুমতি নিতে হবে। এটা করা হলে দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন হবে। এবং এই প্রস্তাব এই আইনের মূল চেতনার পরিপন্থী। আইনের প্রস্তাবনাতেই বলা হয়েছে, ‘যেহেতু দেশে দুর্নীতি এবং দুর্নীতিমূলক কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুর্নীতি ও অন্যান্য সুনির্দিষ্ট অপরাধের অনুসন্ধান এবং তদন্ত পরিচালনার জন্য একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়’, সেহেতু এই আইনটি করা হয়েছে। এবং আইনের প্রথম দিকেই দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কে পরিষ্কার ভাষায় লেখা আছে: ‘এই কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হইবে।’ তাহলে, যে স্বাধীন, সে তো তার কাজ করতে গিয়ে অন্যের অনুমোদন নেয় না। আর যাকে অন্যের অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে হয়, সে তো স্বাধীন নয়। কমিশনকে যদি কারোর পূর্বানুমতি নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে কমিশন স্বাধীন থাকবে না, অন্যের কর্তৃত্বাধীন হয়ে পড়বে।
প্রথম আলো কেন এ রকম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন? আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তো প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় গেলে তারা দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও স্বাধীন ও কার্যকর করার উদ্যোগ নেবে। এখন উল্টো পদক্ষেপের প্রস্তাব করা হচ্ছে কেন?
গোলাম রহমান একটা আইন প্রণয়নের সঙ্গে নানা রকম স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহল জড়িত থাকে। প্রত্যেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলই বিভিন্ন পর্যায়ে চেষ্টা করে তাদের জন্য সুবিধাজনকভাবে যেন আইনটি প্রণীত হয়। নানা পর্যায়ে পরিশীলিত হতে হতে সংসদে যখন চূড়ান্তভাবে আইনটি প্রণীত ও গৃহীত হয়, তখন আমার বিশ্বাস দেশের ও জনগণের স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে স্থান দিয়ে আইনটি করা হয়। এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন মহল তাদের বক্তব্য, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সংযুক্ত করার চেষ্টা করছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া হয়তো অব্যাহত থাকবে। আমরাও হয়তো আমাদের মতামত জানানোর সুযোগ পাব; সংবাদমাধ্যম নিজেদের মতামত প্রকাশ করছে, নাগরিক সমাজ নিজেদের মতামত দিচ্ছে। এই সংশোধনীটি যখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যাবে, তখন সেখানকার বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ আইনপ্রণেতারা তা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করবেন। তাঁরা নিশ্চয়ই এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হয়।
প্রথম আলো কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সংশোধনীটি অনুমোদন করেছে; সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এ-বিষয়ে জনসাধারণের মতামত নেওয়া হোক, সংশোধনী প্রস্তাবগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। সরকার এসব ভ্রুক্ষেপ করছে বলে তো মনে হচ্ছে না। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এভাবেই আইনটির সংশোধনী হয়তো পাস হয়ে যাবে। অর্থাৎ দুদক আবার দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মতো নির্বাহী বিভাগের বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্তৃত্বাধীন একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে যাচ্ছে।
গোলাম রহমান দেখুন, পূর্বানুমতিকে বাধ্যতামূলক করার জন্য যে সংশোধনীর প্রস্তাবকে এখন কিছু মহল বেশ জোরালোভাবে সমর্থন করছে, ২০০৪ সালে আইনটি প্রণয়নের সময়ও একই রকম চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি শুনেছি, সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এটার জন্য জোর চেষ্টা চলেছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন বিষয়টি গেছে, তখন তিনি প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন। কারণ স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্যই যে আইন, তাতে কমিশনকে অন্যের অনুমতির ওপর নির্ভরশীল করার বিধান থাকা সম্পূর্ণভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, এবারও বিষয়টি যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে, তখন তিনি এটা নাকচ করবেন। কারণ এটা যে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের ধারণার সঙ্গে স্ববিরোধী, তা তিনি অবশ্যই জানেন। দুদকের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা হাইকোর্টের বিচারকের পদমর্যাদার সমান। সেই দুদককে অনেক নিম্নপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তার সম্মতি নিয়ে কাজ করতে হবে, এটা তো হয় না।
প্রথম আলো বিদ্যমান আইনে দুদকের কী কী সীমাবদ্ধতা আছে, যা আপনারা কাজের ক্ষেত্রে লক্ষ করেছেন?
গোলাম রহমান দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে গেলে অনেক কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে চায় না। এটা একটা মস্ত বড় প্রতিবন্ধকতা। যেসব কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাওয়া হয়, তাদেরও আইন আছে গোপনীয় তথ্য না দেওয়ার পক্ষে। যেমন ধরুন, আমরা যদি কারোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বা আয়করসংক্রান্ত তথ্য জানতে তথ্য চাইতে যাই, তাহলে ক্ষেত্রবিশেষে হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি তদন্তের জন্য যদি হাইকোর্ট পর্যন্ত যেতে হয়, তাহলে প্রক্রিয়াটি কত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে, তা সহজেই বোঝা যায়। আমরা সে জন্য বলি, অর্থনৈতিক গোপনীয়তা রক্ষাসংক্রান্ত যত আইন আছে, দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রে সেগুলোর ওপরে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এই বিধানও করতে হবে যে, দুদক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের লক্ষ্যে যে তথ্য সংগ্রহ করবে, তা অন্য কোনো লক্ষ্যে ব্যবহার করতে পারবে না।
প্রথম আলো এ ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন কি সহায়ক নয়? গোপনীয়তাসংক্রান্ত সব আইনের ওপরে তথ্য অধিকার আইনকে তো প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
গোলাম রহমান না, তথ্য অধিকার আইন এ বিষয়ে সহায়ক নয়। সেই আইনে অনেক এক্সাম্পশন বা ব্যতিক্রম আছে। দুদক আইনকে প্রাধান্য দিলে সমস্যাটির সমাধান হতে পারে।
প্রথম আলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকের দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতি দমন অভিযান স্তিমিত হয়ে পড়ে। এর কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
গোলাম রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জরুরি আইন জারি ছিল। জরুরি আইনে মানুষের মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকে। দ্বিতীয়ত, ছিল গুরুতর অপরাধ দমনবিষয়ক একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি, যার নেতৃত্বে ছিলেন একজন উপদেষ্টা এবং সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন, ৪৮টি টাস্কফোর্স ছিল। উচ্চপর্যায়ের ওই কমিটি দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করেছে, দুদককে তা জানিয়েছে, আবার তারাই তদন্তকাজে দুদককে সহযোগিতা করেছে, সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যম সেগুলো প্রচার করেছে। এভাবে দুর্নীতি দমনের অভিযানটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে। কিন্তু দুদক কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
প্রথম আলো আপনি দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রায় ২০ মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ের মধ্যে দুদক দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে কী কী উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে?
গোলাম রহমান অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিসহ অনেক সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপের অভিযোগে বেশ কিছু মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার যানবাহন অপব্যবহারের অভিযোগসহ নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
গোলাম রহমান আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম
প্রথম আলো দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন পেয়েছে, শিগগিরই তা সংসদে পেশ করা হবে বলে জানা গেছে। আইনে কী কী সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে?
গোলাম রহমান আইনে কী সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আমি নিশ্চিতভাবে জানি না। যেটুকু জানি, তা জানতে পেরেছি সংবাদমাধ্যমের সূত্রে। সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কী, তা জানা যাবে যখন এটা বিল আকারে জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে। তার আগে এ সম্পর্কে আমাদের জানার কোনো পদ্ধতি আছে কি না, তা আমার জানা নেই।
প্রথম আলো দুর্নীতি দমন কমিশন আইন দ্বারা দুদক পরিচালিত হয়। যে প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই আইন, সেই প্রতিষ্ঠানই জানবে না আইনটিতে কী সংশোধনী আনা হচ্ছে—এটা কি একটু অদ্ভুত ব্যাপার নয়?
গোলাম রহমান আপনি হয়তো জানেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন করা হয় ২০০৪ সালে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর তাঁরা দেখতে পান যে এই আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা বা ঘাটতি রয়েছে। তখন দুর্নীতি দমন কমিশন-সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। সেই দুটি অধ্যাদেশে কিছু বিষয় ছিল, যা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সময় থাকতে পারে না। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় সংসদ ওই অধ্যাদেশগুলোতে অনুসমর্থন দেয়নি, অর্থাৎ অধ্যাদেশ দুটি আইনে রূপান্তর করেনি। ফলে ২০০৪ সালের আইনটিই পুনর্বহাল হলো। তারপর ২০০৯ সালে দুদক কিছু সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে পাঠায়, যা করা হলে কমিশন আরও শক্তিশালী হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকের কর্মকাণ্ডে অনেকেই সংক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। সম্ভবত সেই সংক্ষুব্ধতা থেকে মন্ত্রিপরিষদ কিছু নির্দেশনা দেয়, যাতে দুদক কোনো বাড়াবাড়ি করতে না পারে। তখন একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আইন সংশোধনী ও অধিকতর সংশোধনীর জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই সময় আমি দুদকে ছিলাম না। সেই কমিটিতে দুদকের একজন প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রথম আলো সেই কমিটি কী কাজ করেছে?
গোলাম রহমান কমিটি অনেকগুলো সভা করেছে। মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা বলেছে, আইনের কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন নেই, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিটি কিছু সংশোধনীর প্রস্তাবও করেছিল। দুদকের প্রতিনিধি হিসেবে যিনি ওই কমিটিতে ছিলেন, তাঁর মাধ্যমে আমরা কমিটির মতামত, সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে জানতে পারতাম। আমরা তখন লিখিতভাবে ওই কমিটিকে আমাদের পর্যবেক্ষণগুলো জানাই। সেই সঙ্গে আমরা কমিটিকে অনুরোধ করি, আপনাদের প্রস্তাব যখন মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করবেন, তখন আমাদের মনোভাবও মন্ত্রিপরিষদকে জানাবেন, যাতে মন্ত্রিপরিষদ যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখন যেন আমাদের মতামতগুলো তাঁদের বিবেচনায় থাকতে পারে। কমিটি সেটা করেছে কি না আমাদের জানা নেই। তবে আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছি, তাঁকেও আমাদের মনোভাব জানিয়েছি।
প্রথম আলো আপনাদের মনোভাব বা প্রস্তাবগুলো কী ছিল?
গোলাম রহমান দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত, অনুসন্ধান, প্রসিকিউশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুদকের কাজের পক্ষে অধিকতর সহায়ক কিছু বিধানের প্রস্তাব। যেমন—দুদক আইন, ২০০৪-এ দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত, তদন্তকৃত ও নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত ফৌজদারি মামলায় দুদককে পক্ষভুক্ত করার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। এর ফলে দুদকের পক্ষে মামলায় লড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাই আমরা দুদক আইনে ৩৩(৪) ধারার পর একটি নতুন ধারা ৩৩(৫) সংযোজনের প্রস্তাব করি যে, দুদককে পক্ষভুক্ত করতে হবে এবং মামলায় কোনো ব্যক্তি জামিন বা অন্য কোনো প্রতিকার চাইলে দুদককে শুনানির সংগত সময় দিয়ে শুনানি করতে হবে। আরেকটি প্রস্তাব ছিল এ রকম, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে দুদক যদি মনে করে, সরকারের কোনো সংস্থা থেকে বিশেষজ্ঞের সহায়তা প্রয়োজন, তাহলে দুদক সে রকম সহযোগিতা চাইলে ওই সংস্থা সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে। আমরা এই প্রস্তাবটি করেছি, কারণ বর্তমানে বিশেষজ্ঞ সহযোগিতা পাওয়ার কোনো বিধান নেই। এ ধরনের আরও কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ে সংশোধনীর প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম এবং মন্ত্রিপরিষদ সেগুলোর প্রায় সবই অনুমোদন করেছে।
প্রথম আলো তাহলে কেন বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা কমে যাবে। কীভাবে কমে যাবে?
গোলাম রহমান ওই কমিটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধান, তদন্ত বা মামলা করার ক্ষেত্রে দুদককে সরকারের পূর্বানুমতি নিতে হবে। এটা করা হলে দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন হবে। এবং এই প্রস্তাব এই আইনের মূল চেতনার পরিপন্থী। আইনের প্রস্তাবনাতেই বলা হয়েছে, ‘যেহেতু দেশে দুর্নীতি এবং দুর্নীতিমূলক কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুর্নীতি ও অন্যান্য সুনির্দিষ্ট অপরাধের অনুসন্ধান এবং তদন্ত পরিচালনার জন্য একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়’, সেহেতু এই আইনটি করা হয়েছে। এবং আইনের প্রথম দিকেই দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কে পরিষ্কার ভাষায় লেখা আছে: ‘এই কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হইবে।’ তাহলে, যে স্বাধীন, সে তো তার কাজ করতে গিয়ে অন্যের অনুমোদন নেয় না। আর যাকে অন্যের অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে হয়, সে তো স্বাধীন নয়। কমিশনকে যদি কারোর পূর্বানুমতি নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে কমিশন স্বাধীন থাকবে না, অন্যের কর্তৃত্বাধীন হয়ে পড়বে।
প্রথম আলো কেন এ রকম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন? আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তো প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় গেলে তারা দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও স্বাধীন ও কার্যকর করার উদ্যোগ নেবে। এখন উল্টো পদক্ষেপের প্রস্তাব করা হচ্ছে কেন?
গোলাম রহমান একটা আইন প্রণয়নের সঙ্গে নানা রকম স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহল জড়িত থাকে। প্রত্যেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলই বিভিন্ন পর্যায়ে চেষ্টা করে তাদের জন্য সুবিধাজনকভাবে যেন আইনটি প্রণীত হয়। নানা পর্যায়ে পরিশীলিত হতে হতে সংসদে যখন চূড়ান্তভাবে আইনটি প্রণীত ও গৃহীত হয়, তখন আমার বিশ্বাস দেশের ও জনগণের স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে স্থান দিয়ে আইনটি করা হয়। এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন মহল তাদের বক্তব্য, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সংযুক্ত করার চেষ্টা করছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া হয়তো অব্যাহত থাকবে। আমরাও হয়তো আমাদের মতামত জানানোর সুযোগ পাব; সংবাদমাধ্যম নিজেদের মতামত প্রকাশ করছে, নাগরিক সমাজ নিজেদের মতামত দিচ্ছে। এই সংশোধনীটি যখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যাবে, তখন সেখানকার বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ আইনপ্রণেতারা তা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করবেন। তাঁরা নিশ্চয়ই এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হয়।
প্রথম আলো কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সংশোধনীটি অনুমোদন করেছে; সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এ-বিষয়ে জনসাধারণের মতামত নেওয়া হোক, সংশোধনী প্রস্তাবগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। সরকার এসব ভ্রুক্ষেপ করছে বলে তো মনে হচ্ছে না। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এভাবেই আইনটির সংশোধনী হয়তো পাস হয়ে যাবে। অর্থাৎ দুদক আবার দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মতো নির্বাহী বিভাগের বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্তৃত্বাধীন একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে যাচ্ছে।
গোলাম রহমান দেখুন, পূর্বানুমতিকে বাধ্যতামূলক করার জন্য যে সংশোধনীর প্রস্তাবকে এখন কিছু মহল বেশ জোরালোভাবে সমর্থন করছে, ২০০৪ সালে আইনটি প্রণয়নের সময়ও একই রকম চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি শুনেছি, সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এটার জন্য জোর চেষ্টা চলেছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন বিষয়টি গেছে, তখন তিনি প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন। কারণ স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্যই যে আইন, তাতে কমিশনকে অন্যের অনুমতির ওপর নির্ভরশীল করার বিধান থাকা সম্পূর্ণভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, এবারও বিষয়টি যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে, তখন তিনি এটা নাকচ করবেন। কারণ এটা যে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের ধারণার সঙ্গে স্ববিরোধী, তা তিনি অবশ্যই জানেন। দুদকের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা হাইকোর্টের বিচারকের পদমর্যাদার সমান। সেই দুদককে অনেক নিম্নপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তার সম্মতি নিয়ে কাজ করতে হবে, এটা তো হয় না।
প্রথম আলো বিদ্যমান আইনে দুদকের কী কী সীমাবদ্ধতা আছে, যা আপনারা কাজের ক্ষেত্রে লক্ষ করেছেন?
গোলাম রহমান দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে গেলে অনেক কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে চায় না। এটা একটা মস্ত বড় প্রতিবন্ধকতা। যেসব কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাওয়া হয়, তাদেরও আইন আছে গোপনীয় তথ্য না দেওয়ার পক্ষে। যেমন ধরুন, আমরা যদি কারোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বা আয়করসংক্রান্ত তথ্য জানতে তথ্য চাইতে যাই, তাহলে ক্ষেত্রবিশেষে হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি তদন্তের জন্য যদি হাইকোর্ট পর্যন্ত যেতে হয়, তাহলে প্রক্রিয়াটি কত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে, তা সহজেই বোঝা যায়। আমরা সে জন্য বলি, অর্থনৈতিক গোপনীয়তা রক্ষাসংক্রান্ত যত আইন আছে, দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রে সেগুলোর ওপরে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এই বিধানও করতে হবে যে, দুদক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের লক্ষ্যে যে তথ্য সংগ্রহ করবে, তা অন্য কোনো লক্ষ্যে ব্যবহার করতে পারবে না।
প্রথম আলো এ ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন কি সহায়ক নয়? গোপনীয়তাসংক্রান্ত সব আইনের ওপরে তথ্য অধিকার আইনকে তো প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
গোলাম রহমান না, তথ্য অধিকার আইন এ বিষয়ে সহায়ক নয়। সেই আইনে অনেক এক্সাম্পশন বা ব্যতিক্রম আছে। দুদক আইনকে প্রাধান্য দিলে সমস্যাটির সমাধান হতে পারে।
প্রথম আলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকের দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতি দমন অভিযান স্তিমিত হয়ে পড়ে। এর কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
গোলাম রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জরুরি আইন জারি ছিল। জরুরি আইনে মানুষের মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকে। দ্বিতীয়ত, ছিল গুরুতর অপরাধ দমনবিষয়ক একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি, যার নেতৃত্বে ছিলেন একজন উপদেষ্টা এবং সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন, ৪৮টি টাস্কফোর্স ছিল। উচ্চপর্যায়ের ওই কমিটি দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করেছে, দুদককে তা জানিয়েছে, আবার তারাই তদন্তকাজে দুদককে সহযোগিতা করেছে, সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যম সেগুলো প্রচার করেছে। এভাবে দুর্নীতি দমনের অভিযানটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে। কিন্তু দুদক কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
প্রথম আলো আপনি দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রায় ২০ মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ের মধ্যে দুদক দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে কী কী উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে?
গোলাম রহমান অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিসহ অনেক সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপের অভিযোগে বেশ কিছু মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার যানবাহন অপব্যবহারের অভিযোগসহ নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
গোলাম রহমান আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments