ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে শিক্ষা by সুচিত্রা সরকার

শৈশব থেকেই যন্ত্রপাতির প্রতি ঝোঁকটা বেশিই ছিল। আর বর্তমান বিশ্বের সবকিছুই তো এখন প্রযুক্তিনির্ভর। নতুন কিছু করতেই এখানে পড়তে আসা।’ বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সম্মান চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আলিম উল নিয়াজ।


চোখের চশমা ঠিক করতে করতে রায়হান যোগ করেন, ‘আমি বরাবরই সৃজনশীল কিছু করার চেষ্টা করি। আর সৃজনশীল কাজটা তথ্যপ্রযুক্তিতে যত সহজ, অন্য ক্ষেত্রে তেমন নয়। এখানে আমি একটা ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার পেলেই হচ্ছে। খুব বেশি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই।’
কথা হচ্ছিল এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাঁদের কাছে প্রশ্ন করি, পড়াশোনার মান, নতুন বিষয়—সব মিলিয়ে কেমন লাগছে? ‘আমরা এই প্রতিষ্ঠানের সবাই যেন একটি প্রযুক্তি পরিবারের সদস্য। যেকোনো সমস্যায় শিক্ষকেরা আমাদের খুব সাহায্য করেন। তাঁদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে দূরত্বও কম।’ বলেন তাবাস্সুম।
উৎসাহের পরিমাণ এক ধাপ বাড়িয়ে অমিত শীল যোগ করেন, ‘একটা ঘটনা বলি, ২০০৯ সালে আমরা সবে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। সুযোগ এল মালয়েশিয়া যাওয়ার। সেখানে ইমেজ প্রসেসিংয়ের ওপর একটা সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে আমরা একটা নিবন্ধ জমা দিয়েছিলাম। অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের শিক্ষকেরা সাহস আর শক্তি না জোগালে এটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হতো না।’ বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য বয়ে নিয়ে এনেছেন।
বর্তমান বিশ্ব খুব দ্রুতই তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন এ ক্ষেত্রে রয়েছে দক্ষ জনশক্তির অভাব। বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে বেশি করে নিজস্ব প্রোগ্রাম ও সফটওয়্যার তৈরি করবে। অচিরেই তথ্যপ্রযুক্তিতে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতার দিন শেষ হয়ে যাবে। এ স্বপ্ন সত্যি হতে পারে দক্ষ জনশক্তির হাত ধরে। তাই অসীম সম্ভাবনাময় এই খাতে উন্নত পড়ালেখার স্বপ্ন যাঁদের রয়েছে, তাঁরা জেনে নিতে পারেন এ বিষয়ে সঠিক তথ্য।
যেভাবে শুরু
১৯৮৫ সালে প্রথমে কম্পিউটার সেন্টার প্রতিষ্ঠা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও তাঁদের কোর্সের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা।
২০০১ সালে প্রথম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর ২০০২ সালে সরকারের অর্থায়নে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন। ২০০৫ সালে এমআইটি ও ২০০৮ সালে চার বছর মেয়াদি অনার্স প্রোগ্রাম চালু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের বিপরীতে এ বিভাগের অবস্থান।
কেন পড়ব
‘আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এখন দক্ষ মানবশক্তির প্রয়োজন। দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের অনেকেরই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষা নেই। অথচ শ্রমবাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বিষয়ে জ্ঞানের ঘাটতি বিলোপ করার জন্য আমরা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম চালু করেছিলাম।’ বললেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাহবুবুল আলম জোয়ারদার।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি সময়োপযোগী। প্রয়োজনমতো সুবিধা দিতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আর এতে করে বিদেশি বাজারের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতাও কমবে।
ভর্তির যোগ্যতা ও পদ্ধতি
বিআইটি শিক্ষাক্রম চার বছর মেয়াদি। এ বিষয়ে পড়তে এইচএসসি পাস হতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগের যেকোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী এ বিষয়ে পড়তে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এমআইটি ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন দুটো এক বছর মেয়াদি। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় জুলাই মাসে। একই নিয়মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়।
কাজের সুযোগ
ভবিষ্যতে কাজের ক্ষেত্র বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক কাজী মুহেইমীন সাকিব জানান, দেশে এখন সব প্রতিষ্ঠানেই তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি প্রয়োজন। আর আমরা শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষে ছয় মাস মেয়াদি একটি ইন্টার্নশিপ কোর্স করার ব্যবস্থা করে দিই। বিভিন্ন নামকরা কোম্পানিতে শিক্ষার্থীরা ছয় মাস ভাতাসহ ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পায়। এতে তাদের ব্যবহারিক দক্ষতাও বাড়ে। দেখা যায়, পরে ওই কোম্পানিগুলোই তাদের নিয়োগ দেয়। এ ছাড়া দেশীয় বিভিন্ন টেলিকম কোম্পানি এবং সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোতেও তারা কাজ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাক্রম থাকার কারণে বিদেশেও তাদের সুযোগ তৈরি হয়। আর মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.