প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করুন, মহাস্থানগড় বাঁঁচান-জাতীয় গৌরব ধ্বংসের অপচেষ্টা

মহাস্থানগড়ে আরেক ‘লাল সালু’ আখ্যান ঘটে চলেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ, সরকারি কর্মকর্তাদের নিষেধ সত্ত্বেও হাজার হাজার বছরের পুরোনো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ধ্বংস করার অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরই সাম্প্রতিক নমুনা হলো, সংস্কৃতিসচিবের নেতৃত্বে মহাস্থানগড় পরিদর্শক দলের সঙ্গে অভব্য আচরণ।


স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজস্ব লোকজন দিয়ে বিক্ষোভ করিয়েছেন, মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান নাহিদা সুলতানার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন এবং সরকারি কর্মকাণ্ডে বাধা দিয়েছেন। অর্থের মোহ তাঁদের এতই প্রবল যে ঐতিহ্য, প্রাচীন নিদর্শন, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা পৌণ্ড্রনগর সভ্যতার রাজধানীর ক্ষতিসাধনেও বিবেকের দংশন তাঁরা অনুভব করছেন না।
মহাস্থান মাজার নামে পরিচিত হজরত শাহ সুলতান মাহী সওয়ারের (রহ.) মাজারসংলগ্ন গড়ে বড় একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করার প্রকল্প নিয়েছে মাজার উন্নয়ন কমিটি। যে গড়ের ওপর এটি করা হচ্ছে, তার নিচেই রয়েছে কয়েক হাজার বছরের পুরোনো প্রত্নকীর্তি। কাজটি স্পষ্টত সংবিধানের লঙ্ঘন। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, জাতীয় ঐতিহ্য নষ্ট করার মতো কোনো স্থাপনা করা যাবে না। তার পরও প্রকল্পটি নেওয়া হয় জেলা প্রশাসন ও মাজার উন্নয়ন কমিটির তত্ত্বাবধানে। বিনা টেন্ডারে আড়াই কোটি টাকার এই কাজ পান ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ লোকজন। এর আগে ১৯৯৫ সালে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে প্রত্নকীর্তিকে চাপা দিয়ে ভবন তৈরি করা হয়। অনেক প্রতিবাদ সত্ত্বেও বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসন অপকর্মটি চালিয়ে যায়। এখন আবার সেই একই জায়গায় চলছে নতুন ভবনের আগ্রাসন। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই অপকর্মে সরাসরি জড়িত বলে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
উচ্চ আদালত প্রত্নস্থান ধ্বংস ও খোঁড়াখুুঁড়ি বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও বগুড়া জেলা প্রশাসন তা পালনে ব্যর্থ হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত বগুড়ার জেলা প্রশাসককে তলব করে এর জন্য জবাবদিহিও চান। এ অবস্থায় এখন চলছে এলাকাবাসীকে খেপিয়ে তোলার কার্যকলাপ। গত বুধবারের প্রথম আলোর সংবাদে এসেছে, মাজার উন্নয়ন কমিটির এক নেতা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিছিল করানোর জন্য লোকজন নিয়ে এসেছেন। এমনকি প্রত্নসম্পদ রক্ষায় সোচ্চার মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান নাহিদা সুলতানাও হুমকির মুখে দায়িত্ব পালন করছেন। স্পষ্টত, বগুড়ার জেলা প্রশাসক এবং আওয়ামী লীগের সভাপতির এখানে দায়দায়িত্ব রয়েছে।
বাংলাদেশ ‘আফগানিস্তান’ নয়; যাঁরা প্রত্নসম্পদের ক্ষতির চেষ্টা চালাচ্ছেন, তাঁরাও ‘মৌলবাদী’ নন। তাঁরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী লোকজন। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এঁদের দাপট থেকে মহাস্থানগড়কে রক্ষা করা যাবে না। আমরা তাঁর কাছেই প্রতিকার চাইছি।

No comments

Powered by Blogger.