সখি ভালোবাসা কারে কয় by কে জি মোস্তফা
A perfect gift for you today, absolutely no cost, non-taxable, silent performance, extremely personal, fully returnable. It’s a very valentine day. Enjoy.
আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে। আন্তর্জাতিক ভালোবাসা দিবস। আভিধানিক অর্থে ওই দিন প্রিয়জনদের মধ্যে শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময়, উপহার আদান-প্রদান এবং প্রণয়ী নির্বাচনের।
আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে। আন্তর্জাতিক ভালোবাসা দিবস। আভিধানিক অর্থে ওই দিন প্রিয়জনদের মধ্যে শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময়, উপহার আদান-প্রদান এবং প্রণয়ী নির্বাচনের।
বছর কয়েক আগে এক তরুণী, সম্পর্কে ভাগ্নী ‘ভালোবাসা দিবসে’ আমাকে উপরোক্ত এসএমএসটি পাঠায়। ইংরেজি বাক্যের শব্দগুলোর অর্থ সম্ভবত সে পুরোপুরি বোঝেনি। লেখার বক্তব্য বোধগম্য থাকলে হয়তো ওই লেখা আমাকে পাঠাত না। সাক্ষাতে একদিন তাকে খানিকটা স্নেহমিশ্রিত, খানিকটা রক্তবাহিত সংস্কারে বকাঝকা করলাম। আসলে অন্যান্য বিদ্যার মেডইজির মতো এসএমএস লেখার নোটবইও নাকি বাজারে পাওয়া যায়। যাই হোক, অনতিঅতীত থেকে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবসটি সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়ে আসছে, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। যখন যৌবন আছে প্রণয় থাকবে, বয়স যখন আছে প্রেমও থাকবে। বিশ্বের মুগ্ধতা নিয়ে ফুল-পাখি, গাছপালা-নদী কোনো এক অগোচর দায়ে যে যার মতন সবাই রয়েছে মগ্ন।
‘ভালোবাসা’ কথাটি কিন্তু গভীর তাত্পর্যবাহী। ভালো না বাসলে দুর্দিনে তীব্র সংগ্রামে বেঁচে ওঠা যায় না। ধূলিমুঠি থেকে পাথর, পাথর থেকে সোনা হয় না। ভালোবাসা কী? বলা যেতে পারে—১. দৈহিক আকর্ষণের ভদ্র রুচিসম্মত প্রতিশব্দ ২. জীবনের প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ পাওয়া ৩. সাহচর্য বা কমপ্যানিয়নশিপ। মানবসম্পর্কের মধ্যে রয়েছে ভালোবাসার বিচিত্র রূপ। বয়োজ্যেষ্ঠের প্রতি ভালোবাসা, কনিষ্ঠদের প্রতি ভালোবাসা, অন্যান্য সম্পর্কিত ব্যক্তিদের প্রতি ভালোবাসা, সর্বোপরি নর-নারীর ভালোবাসা। প্রতিটি ভালোবাসার মধ্যে আছে শ্রদ্ধা, স্নেহ, আবেগ, আত্মিক সম্পর্ক, কল্যাণকামনা ও ত্যাগ। দাম্পত্যে নারী-পুরুষের ভালোবাসায় অবশ্য থাকতে হয় পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, কল্যাণবোধ, ত্যাগ ও রোমান্টিকতা। সাংসারিক জীবনে প্রেম স্নেহের হাত ধরে।
প্রেম তো মানুষের জীবনে এক দুর্লভ সৌভাগ্য। প্রেম অহৈতুকী হলেও আগের দিনে একটা বিচারবোধ কাজ করত। কিন্তু ইদানীং যেন স্খলিতস্বরেই এর উচ্চারণ হচ্ছে বেশি। এক পিচ্ছিল সময়ে যখন নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের অতীত হয়ে উঠেছে ধূসর, দেশ-বিদেশের অপসংস্কৃতি গ্রাস করে ফেলছে তাদের। কাঁচা আবেগ, অনুচিত বোধ কিছুই যেন আর নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। ভুবনজুড়ে প্রেমের স্রোতে তরুণ বয়সের ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। কেউ কেউ যেন এক নির্বোধ আবেগের শিকার, এক ব্যাখ্যাতীত মানসিক বিকারের শিকার। নামহীন সম্পর্কের চোরাবালিতে যার অবস্থান। বলাবাহুল্য, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে (নারী-পুরুষের) প্রশ্ন, সমাজনির্দেশিত ভূমিকা ও গণ্ডি নিয়ে আছে প্রশ্ন। কিন্তু ভালোবাসার সাতকাহনে এখন প্রচলিত পথের উল্টো গতি। আজকে গোলকায়নের যুগে ভোগবাদী সমাজে একশ্রেণীর বিবেকবর্জিত মানুষ এক অদ্ভুত আত্মদৌড়ের শামিল। সবকিছুরই বিচার বস্তুমূল্যের নিরিখে। ভোগবাদের প্রভাব যতই আমাদের জীবনে আসছে ততই দেখা দিচ্ছে নৈতিকতার অভাব। বাজার অর্থনীতিতে ভালোবাসাও যেন আজ পণ্য। পরিণামে আধুনিক জীবনের অনিকেত পরিযায়ী অস্তিত্ব সর্বব্যাপী। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের আক্রমণে প্রেম-অপ্রেম, শ্রদ্ধা, স্নেহ-করুণা কিচ্ছু নেই। এক-এক সময় মনে হয় ওরা যেন অন্যগ্রহের জীব, ভুল করে এখানে ছিটকে এসেছে। জগত ও জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীনতাই এদের যেন মূল সুর। অতি আধুনিক সময়ের সম্পর্কের অনিরাপত্তাই কি এই অসুখের কারণ? প্রকৃতপঙ্গে বর্তমান অস্থির সময়ের আর্থ-সামাজিক অবক্ষয় এবং নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কগত ভারসাম্যহীনতার ফসল এর আসল কারণ। সময়ের চেয়ে বেশি অগ্রসর ছেলেমেয়েরা দিন দিন কেমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পারিপার্শ্বিক ও মানসিক চাপে কেবলই ধস্ত ও অবসন্ন। চেতনে-অবচেতনে কেবলই ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। তবু খোলা আকাশের নিচে চত্বরে-চত্বরে বিকালের জুঁই ফুল। যুগলেষু। অস্ফুট কথার বিনুনীতে গাঁথা বহুমুখী কাব্যস্রোতে কথা আছে, বার্তা নেই। ব্যাকুল হৃদয়, দীর্ঘদিনের উপবাসী হৃদয়, নিয়মের অনুশাসনে বন্দি থাকে না। আসঙ্গ আড়ালে ফোটে যদি প্রণয়ের ফুল, সবুজশিকারি, ধ্রুপদ গজল ভুলে গাও পাগলসঙ্গীত। কুন্তলী তেলে অথৈ শিহরণ। বাউলভাষায় দেহের জমিজঙ্গলে ছোটখাটো মন চাষ করে ভালোবাসা ভাগ করে খাও।
দৈনন্দিন জীবনের মধ্যকার নাটকীয়তা, করুণ পরিণতি এবং সব আলোড়ন শেষে আবার নিত্য গতানুগতিকের মধ্যে ফিরে যাওয়া। অনুক্ত অসম্পূর্ণ কত শব্দ কত কথা বুকের ভেতর মাথা খুঁড়ে মরে। দুটো জীবন দুটো যৌবনের আনন্দ-বাসনা সব দলে পিষে অবশেষে কী পেল? আধুনিক সময়ে বৃদ্ধতন্ত্র অস্তমিত। বংশলতিকায় আছে রক্তের ও শিক্ষার উত্তরাধিকার, তবু সময়ের হাতে আত্মসমর্পণ করে কীভাবে পাল্টে ফেলি নিজেকে! বিভ্রান্ত হই না, নিজের ভেতর ক্ষোভও তৈরি করি না। নষ্ট সময় হয়তো নষ্ট নয়, পজিটিভ এক পরমার্থ। সেই কোন্্ সুদূর অতীতে হারিয়ে যাওয়া এক বসন্ত ঋতুর মোহময় হাতছানি ভুলিয়ে দেয় বয়স, প্রৌঢ়ত্ব, বর্তমান জীবন। এক হারানো জেনারেশনের সঙ্গে এক সন্ধানী হেঁটে যাই। মনে হচ্ছে এগোচ্ছি ঠিকই, কিন্তু কোনো একক গন্তব্য নেই।
লেখক : কবি, গীতিকার ও সাংবাদিক
‘ভালোবাসা’ কথাটি কিন্তু গভীর তাত্পর্যবাহী। ভালো না বাসলে দুর্দিনে তীব্র সংগ্রামে বেঁচে ওঠা যায় না। ধূলিমুঠি থেকে পাথর, পাথর থেকে সোনা হয় না। ভালোবাসা কী? বলা যেতে পারে—১. দৈহিক আকর্ষণের ভদ্র রুচিসম্মত প্রতিশব্দ ২. জীবনের প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ পাওয়া ৩. সাহচর্য বা কমপ্যানিয়নশিপ। মানবসম্পর্কের মধ্যে রয়েছে ভালোবাসার বিচিত্র রূপ। বয়োজ্যেষ্ঠের প্রতি ভালোবাসা, কনিষ্ঠদের প্রতি ভালোবাসা, অন্যান্য সম্পর্কিত ব্যক্তিদের প্রতি ভালোবাসা, সর্বোপরি নর-নারীর ভালোবাসা। প্রতিটি ভালোবাসার মধ্যে আছে শ্রদ্ধা, স্নেহ, আবেগ, আত্মিক সম্পর্ক, কল্যাণকামনা ও ত্যাগ। দাম্পত্যে নারী-পুরুষের ভালোবাসায় অবশ্য থাকতে হয় পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, কল্যাণবোধ, ত্যাগ ও রোমান্টিকতা। সাংসারিক জীবনে প্রেম স্নেহের হাত ধরে।
প্রেম তো মানুষের জীবনে এক দুর্লভ সৌভাগ্য। প্রেম অহৈতুকী হলেও আগের দিনে একটা বিচারবোধ কাজ করত। কিন্তু ইদানীং যেন স্খলিতস্বরেই এর উচ্চারণ হচ্ছে বেশি। এক পিচ্ছিল সময়ে যখন নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের অতীত হয়ে উঠেছে ধূসর, দেশ-বিদেশের অপসংস্কৃতি গ্রাস করে ফেলছে তাদের। কাঁচা আবেগ, অনুচিত বোধ কিছুই যেন আর নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। ভুবনজুড়ে প্রেমের স্রোতে তরুণ বয়সের ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। কেউ কেউ যেন এক নির্বোধ আবেগের শিকার, এক ব্যাখ্যাতীত মানসিক বিকারের শিকার। নামহীন সম্পর্কের চোরাবালিতে যার অবস্থান। বলাবাহুল্য, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে (নারী-পুরুষের) প্রশ্ন, সমাজনির্দেশিত ভূমিকা ও গণ্ডি নিয়ে আছে প্রশ্ন। কিন্তু ভালোবাসার সাতকাহনে এখন প্রচলিত পথের উল্টো গতি। আজকে গোলকায়নের যুগে ভোগবাদী সমাজে একশ্রেণীর বিবেকবর্জিত মানুষ এক অদ্ভুত আত্মদৌড়ের শামিল। সবকিছুরই বিচার বস্তুমূল্যের নিরিখে। ভোগবাদের প্রভাব যতই আমাদের জীবনে আসছে ততই দেখা দিচ্ছে নৈতিকতার অভাব। বাজার অর্থনীতিতে ভালোবাসাও যেন আজ পণ্য। পরিণামে আধুনিক জীবনের অনিকেত পরিযায়ী অস্তিত্ব সর্বব্যাপী। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের আক্রমণে প্রেম-অপ্রেম, শ্রদ্ধা, স্নেহ-করুণা কিচ্ছু নেই। এক-এক সময় মনে হয় ওরা যেন অন্যগ্রহের জীব, ভুল করে এখানে ছিটকে এসেছে। জগত ও জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীনতাই এদের যেন মূল সুর। অতি আধুনিক সময়ের সম্পর্কের অনিরাপত্তাই কি এই অসুখের কারণ? প্রকৃতপঙ্গে বর্তমান অস্থির সময়ের আর্থ-সামাজিক অবক্ষয় এবং নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কগত ভারসাম্যহীনতার ফসল এর আসল কারণ। সময়ের চেয়ে বেশি অগ্রসর ছেলেমেয়েরা দিন দিন কেমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পারিপার্শ্বিক ও মানসিক চাপে কেবলই ধস্ত ও অবসন্ন। চেতনে-অবচেতনে কেবলই ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। তবু খোলা আকাশের নিচে চত্বরে-চত্বরে বিকালের জুঁই ফুল। যুগলেষু। অস্ফুট কথার বিনুনীতে গাঁথা বহুমুখী কাব্যস্রোতে কথা আছে, বার্তা নেই। ব্যাকুল হৃদয়, দীর্ঘদিনের উপবাসী হৃদয়, নিয়মের অনুশাসনে বন্দি থাকে না। আসঙ্গ আড়ালে ফোটে যদি প্রণয়ের ফুল, সবুজশিকারি, ধ্রুপদ গজল ভুলে গাও পাগলসঙ্গীত। কুন্তলী তেলে অথৈ শিহরণ। বাউলভাষায় দেহের জমিজঙ্গলে ছোটখাটো মন চাষ করে ভালোবাসা ভাগ করে খাও।
দৈনন্দিন জীবনের মধ্যকার নাটকীয়তা, করুণ পরিণতি এবং সব আলোড়ন শেষে আবার নিত্য গতানুগতিকের মধ্যে ফিরে যাওয়া। অনুক্ত অসম্পূর্ণ কত শব্দ কত কথা বুকের ভেতর মাথা খুঁড়ে মরে। দুটো জীবন দুটো যৌবনের আনন্দ-বাসনা সব দলে পিষে অবশেষে কী পেল? আধুনিক সময়ে বৃদ্ধতন্ত্র অস্তমিত। বংশলতিকায় আছে রক্তের ও শিক্ষার উত্তরাধিকার, তবু সময়ের হাতে আত্মসমর্পণ করে কীভাবে পাল্টে ফেলি নিজেকে! বিভ্রান্ত হই না, নিজের ভেতর ক্ষোভও তৈরি করি না। নষ্ট সময় হয়তো নষ্ট নয়, পজিটিভ এক পরমার্থ। সেই কোন্্ সুদূর অতীতে হারিয়ে যাওয়া এক বসন্ত ঋতুর মোহময় হাতছানি ভুলিয়ে দেয় বয়স, প্রৌঢ়ত্ব, বর্তমান জীবন। এক হারানো জেনারেশনের সঙ্গে এক সন্ধানী হেঁটে যাই। মনে হচ্ছে এগোচ্ছি ঠিকই, কিন্তু কোনো একক গন্তব্য নেই।
লেখক : কবি, গীতিকার ও সাংবাদিক
No comments