নতুন করে জেগে উঠি by কিশোর রহমান
ধান, গম ইত্যাদির বীজকে উজ্জীবিত করা যায়। বীজ উজ্জীবিত হলে ফলন বেড়ে যায় এবং কম সময়ে ফসল ঘরে তোলা যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন এ কাজ করছেন। প্রথমে তাঁর কাছে উজ্জীবনের এ গল্প শুনে খুবই মুগ্ধ হয়েছিলাম। জড়জীবনে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করা যায়।
নতুন করে জীবন দান করা যায়। একটি উজ্জীবিত বীজ চাষিকে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখায়। একটি উজ্জীবিত ধানবীজের তুলনায় একজন উজ্জীবিত মানুষের সম্ভাবনা কত বেশি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি বীজ তার চাষিকে স্বপ্ন দেখাতে পারে। আর একজন উজ্জীবিত মানুষ সারা পৃথিবীকে স্বপ্ন দেখাতে পারে।
নদীর পাশে দাঁড়ালে তার প্রবাহ মনে করিয়ে দেয় তার থেমে থাকার সময় নেই। সে বয়ে যাচ্ছে এক নগর থেকে আরেক নগরে। কোনো এক কবির লেখায় পড়েছিলাম ‘বস্তুত: নদীর কোনো প্রাণ নেই। তবু প্রাণজ উল্লাসে ভাঙে দুই পাড়’। বাস্তবে নদীর প্রাণ থাকুক আর না থাকুক, নদীর বয়ে যাওয়া যেন প্রাণের অধিক স্বতঃস্ফূর্ত।
এম মনজুর হোসেন একটি বীজের প্রাণ-পরিচর্যা করেন। নিজের জেগে ওঠা এবং অপরকে জাগিয়ে তোলার জন্য প্রাণেরই পরিচর্যা প্রয়োজন। আসলে প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরে উঠলেই তিনি তখন উজ্জীবিত। নিজের ভেতরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা পেলে তিনি বাতাসে কান পাতলে প্রাণের স্পন্দন শুনবেন, নদীর দিকে তাকালে প্রাণের চঞ্চলতা দেখবেন। রবীন্দ্রনাথ তাই গেয়েছেন ‘প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে তাই হেরি তাই সকল প্রাণে’। প্রবল প্রাণশক্তির কাছে পৃথিবীর কোনো সংকট বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। মানতার সব সংকটে প্রাণ-স্পন্দিত মানুষই ত্রাণকর্তা। প্রাণের টান হতে পারে প্রবহমান নদীর চেয়ে বেগবান।
রাজশাহী শহরে জালাল উদ্দিন নামের একজন মানুষকে দেখে তা-ই মনে হয়। জালাল উদ্দিন এখন ষাটোর্ধ্ব। এই বয়সে প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে চলে যান শহরতলির কোনো গ্রামে। যে গ্রামের শিশুরা অভাবের তাড়নায় ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। জালাল উদ্দিন রাতের বেলায় তাদের পড়াশোনা দেখিয়ে দেন। হারমোনিয়াম বাজিয়ে তাদের কণ্ঠে তুলে দেন দেশের গান। জালাল উদ্দিন দুটি বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি করেছেন। ১৯৭৬ সালে সেনাবাহিনীর এডুকেশন কোরে চাকরি পেয়েছিলেন—করেননি। মনে করেছিলেন পিছিয়ে পড়া মানুষ শিক্ষিত না হলে দেশটাকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। ৩২ বছর ধরে তিনি পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। এ কাজের ক্ষতির কথা ভেবে বিয়েই করেননি। এ জন্য তাঁর কোনো অনুতাপ নেই। তাঁর পাশে দাঁড়ালে প্রাণের প্রবল উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
আসলে যেখানে যেতে চাই, যা বলতে চাই, যা করতে চাই—তাতে প্রাণের উপস্থিতি অনিবার্য।
প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন বন্ধুসভাকে খুব কাছে থেকে দেখি, প্রবহমান নদীর কাছে দাঁড়াই, উজ্জীবিত মানুষ জালাল উদ্দিনের পাশে বসি আর নিজের ভেতরে প্রাণের প্রতিধ্বনি শুনি। প্রতিদিন নিজের ভেতরে নতুন করে জেগে উঠি।
নদীর পাশে দাঁড়ালে তার প্রবাহ মনে করিয়ে দেয় তার থেমে থাকার সময় নেই। সে বয়ে যাচ্ছে এক নগর থেকে আরেক নগরে। কোনো এক কবির লেখায় পড়েছিলাম ‘বস্তুত: নদীর কোনো প্রাণ নেই। তবু প্রাণজ উল্লাসে ভাঙে দুই পাড়’। বাস্তবে নদীর প্রাণ থাকুক আর না থাকুক, নদীর বয়ে যাওয়া যেন প্রাণের অধিক স্বতঃস্ফূর্ত।
এম মনজুর হোসেন একটি বীজের প্রাণ-পরিচর্যা করেন। নিজের জেগে ওঠা এবং অপরকে জাগিয়ে তোলার জন্য প্রাণেরই পরিচর্যা প্রয়োজন। আসলে প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরে উঠলেই তিনি তখন উজ্জীবিত। নিজের ভেতরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা পেলে তিনি বাতাসে কান পাতলে প্রাণের স্পন্দন শুনবেন, নদীর দিকে তাকালে প্রাণের চঞ্চলতা দেখবেন। রবীন্দ্রনাথ তাই গেয়েছেন ‘প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে তাই হেরি তাই সকল প্রাণে’। প্রবল প্রাণশক্তির কাছে পৃথিবীর কোনো সংকট বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। মানতার সব সংকটে প্রাণ-স্পন্দিত মানুষই ত্রাণকর্তা। প্রাণের টান হতে পারে প্রবহমান নদীর চেয়ে বেগবান।
রাজশাহী শহরে জালাল উদ্দিন নামের একজন মানুষকে দেখে তা-ই মনে হয়। জালাল উদ্দিন এখন ষাটোর্ধ্ব। এই বয়সে প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে চলে যান শহরতলির কোনো গ্রামে। যে গ্রামের শিশুরা অভাবের তাড়নায় ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। জালাল উদ্দিন রাতের বেলায় তাদের পড়াশোনা দেখিয়ে দেন। হারমোনিয়াম বাজিয়ে তাদের কণ্ঠে তুলে দেন দেশের গান। জালাল উদ্দিন দুটি বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি করেছেন। ১৯৭৬ সালে সেনাবাহিনীর এডুকেশন কোরে চাকরি পেয়েছিলেন—করেননি। মনে করেছিলেন পিছিয়ে পড়া মানুষ শিক্ষিত না হলে দেশটাকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। ৩২ বছর ধরে তিনি পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। এ কাজের ক্ষতির কথা ভেবে বিয়েই করেননি। এ জন্য তাঁর কোনো অনুতাপ নেই। তাঁর পাশে দাঁড়ালে প্রাণের প্রবল উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
আসলে যেখানে যেতে চাই, যা বলতে চাই, যা করতে চাই—তাতে প্রাণের উপস্থিতি অনিবার্য।
প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন বন্ধুসভাকে খুব কাছে থেকে দেখি, প্রবহমান নদীর কাছে দাঁড়াই, উজ্জীবিত মানুষ জালাল উদ্দিনের পাশে বসি আর নিজের ভেতরে প্রাণের প্রতিধ্বনি শুনি। প্রতিদিন নিজের ভেতরে নতুন করে জেগে উঠি।
No comments