মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, সামনে একুশ ২০১০ by দিলওয়ার
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, সার্বিক মঙ্গল কামনা করি। আপনার মাধ্যমে নিরক্ষর ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে জর্জরিত শিক্ষিত এবং স্বল্পশিক্ষিত দেশবাসীকে কালজয়ী একটি বাক্য উপহার দিলাম। বাক্যটি রেখে গেছেন মনীষী ইবেন রুশ্দ্ (১১২৬-১১৯৮)।
তিনি বলেন—'কঘঙডখঊউএঊ ওঝ ঞঐঊ ঈঙঘঋঙজগওঞণ ঙঋ ঞঐঊ ঙইঔঊঈঞ অঘউ ঞঐঊ ওঘঞঊখখঊঈঞ.
বাক্যটির মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে—ঞঐঊ ঈখঅঝঝওঈ উঊঋওঘওঞওঙঘ ঙঋ ঊচওঝঞঊগঙখঙএণ, ঝঞওখখ ঈঙগগঊঘঞঊউ ঙঘ ঞঙউঅণ অঘউ টঝঊউ ইণ ঞঐঊ ঘঊঙঞঐঙগওঝঞঝ.
এপিসটামোলজি’র বাংলা অর্থ-জ্ঞানতত্ত্ব এবং বাকিটা আপনার জ্ঞানসমৃদ্ধ ধ্যান-ধারণার ওপর ছেড়ে দিলাম। কেননা অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী।
দুই.
চলছে ২০১০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধ।
আপনার মনে আছে কি বৃহত্তর সিলেটকে অগ্নিমন্ত্রে দীপ্তিমান করে তোলার পেছনে মত প্রতিষ্ঠিত ‘সমন্বয় লেখক ও শিল্পী সংস্থা’র কথা?
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত আমার একাধিক গানের কথা—‘তুম্ হে ইয়াদ হো কিয়া না ইয়াদ হো?’ বিখ্যাত উর্দু কবি মোমিন-এর (১৮০০-১৮৫১) বিখ্যাত এক গজল থেকে উদ্ধার করা প্রশ্নবোধক কথা দিয়ে জানতে চাইলাম—আপনার স্মরণ আছে কিনা।
একটি গান তুলে ধর্বার আগে আপনাকে অনুরোধ—১৯৬৮ থেকে ১৯৭১’র ২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে ১৯৭৫ পর্যন্ত যারা সিলেট বেতার কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ছিলেন, তাদের মধ্যে এখনও যারা জীবিত, তাদের কেউ না কেউ বলতে পারবেন কি পরিমাণ গান-গীতি নক্শা ফিচার আমাকে লিখতে হয়েছে—জোর তাগিদে। কেননা এসব কর্মকাণ্ডের জন্যই হানাদার বাহিনী সস্ত্রীক আমাকে ফায়ারিং স্কোয়াডের খাদ্য বানিয়ে রেখেছিল।
১৯৭১ সালের রুশ-ভারত চুক্তি যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ায় স্বামী-স্ত্রী বেঁচে গেলাম—এই তথ্য দিয়েছিল পাক আর্মির গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য স্ত্রী আনিসা দিলওয়ারকে, তিনি তখন সরকারি হাসপাতালের ম্যাট্রন ছিলেন। অবশ্য ভারপ্রাপ্ত। আমি তখন শহর থেকে দূরে এক গ্রামে অবস্থান করছিলাম।
আনিসা, সহজ-সরল দুঃসাহসী মহিলা, সেই অবস্থানে গিয়ে রোমহর্ষক এ সংবাদটি সরবরাহ করেছিলেন।
জনাব শিক্ষামন্ত্রী, আমার জীবদ্দশায়, স্বাধীন বাংলার বুকে এমন সব ঘৃণ্য মিথ্যাচার আমাকে দেখতে হলো—যা আকারে বেড়েই চলেছে। যেন এর শেষ নেই।
তিন.
জনাব শিক্ষামন্ত্রী, মূল বক্তব্য রাখার আগে মিথ্যাচারের এক ‘পবিত্র’ নমুনা পেশ করছি। একবার শ্রদ্ধাভাজন এক আত্মীয় ডেকে পাঠালেন আমাকে। আমি গেলাম তার ঠিকানায়।
আমাকে তিনি বসালেন তার কাছে। তারপর যা বললেন তার সারাংশ হলো—কবি দিলওয়ার-এর অনুরাগী প্রবীণ এক ব্যক্তি পরিচয় পেয়ে জানতে চান কবি কীভাবে সংসার জীবন চালাচ্ছেন। উত্তরে তিনি মিথ্যে করে বলেছেন—এই তো কিছুদিন আগে তিনি কবিকে দিয়েছেন এক লাখ টাকা। বুঝতে দেরি হলো না, শ্রদ্ধেয় আত্মীয় অনুতপ্ত।
কিন্তু যাকে বলা হলো, তাকে ‘দোজখ’ থেকে রক্ষা করবে কে? কতশত কানে যাবে এই মিথ্যে বাণী। আর এভাবেই আমার জীবনের দুধসাদা পাঞ্জাবি বহুলাংশে কলঙ্কিত।
প্রিয় শিক্ষামন্ত্রী, এবার নজর দিন একটি ভয়ঙ্কর রচনার দিকে। লিখেছেন দুর্ধর্ষ লেখক—বদরুদ্দীন উমর। ছেপেছেন দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক। রচনার নাম—‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে শেখ মুজিবুর রহমান।’ ৪ ফেব্রুয়ারি বেরিয়েছে।
রচনার সারাংশ এভাবে তুলে ধরা হয়েছে—‘ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের ভূমিকা’—সম্পর্কে যেসব কথা শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমীতে বলেছেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও তাদের ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা বলে থাকেন, এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে, এটা বলা যায় না। এর দ্বারা ইতিহাসকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এই ধর্ষিত ইতিহাসকেই এখন স্কুল-কলেজের পাঠ্য তালিকায় প্রকৃত ইতিহাস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে দেশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার সর্বনাশ করা হচ্ছে।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আমার দেশ-এ প্রকাশিত বদরুদ্দীন উমর-এর নিবন্ধের ন্যায়ানুগ মোকাবিলা করুন। নতুবা আপনার মন্ত্রিত্বের কাল ইতিহাসে ক্ষমার অযোগ্য হয়ে রইবে।
লেখক : কবি
বাক্যটির মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে—ঞঐঊ ঈখঅঝঝওঈ উঊঋওঘওঞওঙঘ ঙঋ ঊচওঝঞঊগঙখঙএণ, ঝঞওখখ ঈঙগগঊঘঞঊউ ঙঘ ঞঙউঅণ অঘউ টঝঊউ ইণ ঞঐঊ ঘঊঙঞঐঙগওঝঞঝ.
এপিসটামোলজি’র বাংলা অর্থ-জ্ঞানতত্ত্ব এবং বাকিটা আপনার জ্ঞানসমৃদ্ধ ধ্যান-ধারণার ওপর ছেড়ে দিলাম। কেননা অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী।
দুই.
চলছে ২০১০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধ।
আপনার মনে আছে কি বৃহত্তর সিলেটকে অগ্নিমন্ত্রে দীপ্তিমান করে তোলার পেছনে মত প্রতিষ্ঠিত ‘সমন্বয় লেখক ও শিল্পী সংস্থা’র কথা?
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত আমার একাধিক গানের কথা—‘তুম্ হে ইয়াদ হো কিয়া না ইয়াদ হো?’ বিখ্যাত উর্দু কবি মোমিন-এর (১৮০০-১৮৫১) বিখ্যাত এক গজল থেকে উদ্ধার করা প্রশ্নবোধক কথা দিয়ে জানতে চাইলাম—আপনার স্মরণ আছে কিনা।
একটি গান তুলে ধর্বার আগে আপনাকে অনুরোধ—১৯৬৮ থেকে ১৯৭১’র ২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে ১৯৭৫ পর্যন্ত যারা সিলেট বেতার কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ছিলেন, তাদের মধ্যে এখনও যারা জীবিত, তাদের কেউ না কেউ বলতে পারবেন কি পরিমাণ গান-গীতি নক্শা ফিচার আমাকে লিখতে হয়েছে—জোর তাগিদে। কেননা এসব কর্মকাণ্ডের জন্যই হানাদার বাহিনী সস্ত্রীক আমাকে ফায়ারিং স্কোয়াডের খাদ্য বানিয়ে রেখেছিল।
১৯৭১ সালের রুশ-ভারত চুক্তি যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ায় স্বামী-স্ত্রী বেঁচে গেলাম—এই তথ্য দিয়েছিল পাক আর্মির গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য স্ত্রী আনিসা দিলওয়ারকে, তিনি তখন সরকারি হাসপাতালের ম্যাট্রন ছিলেন। অবশ্য ভারপ্রাপ্ত। আমি তখন শহর থেকে দূরে এক গ্রামে অবস্থান করছিলাম।
আনিসা, সহজ-সরল দুঃসাহসী মহিলা, সেই অবস্থানে গিয়ে রোমহর্ষক এ সংবাদটি সরবরাহ করেছিলেন।
জনাব শিক্ষামন্ত্রী, আমার জীবদ্দশায়, স্বাধীন বাংলার বুকে এমন সব ঘৃণ্য মিথ্যাচার আমাকে দেখতে হলো—যা আকারে বেড়েই চলেছে। যেন এর শেষ নেই।
তিন.
জনাব শিক্ষামন্ত্রী, মূল বক্তব্য রাখার আগে মিথ্যাচারের এক ‘পবিত্র’ নমুনা পেশ করছি। একবার শ্রদ্ধাভাজন এক আত্মীয় ডেকে পাঠালেন আমাকে। আমি গেলাম তার ঠিকানায়।
আমাকে তিনি বসালেন তার কাছে। তারপর যা বললেন তার সারাংশ হলো—কবি দিলওয়ার-এর অনুরাগী প্রবীণ এক ব্যক্তি পরিচয় পেয়ে জানতে চান কবি কীভাবে সংসার জীবন চালাচ্ছেন। উত্তরে তিনি মিথ্যে করে বলেছেন—এই তো কিছুদিন আগে তিনি কবিকে দিয়েছেন এক লাখ টাকা। বুঝতে দেরি হলো না, শ্রদ্ধেয় আত্মীয় অনুতপ্ত।
কিন্তু যাকে বলা হলো, তাকে ‘দোজখ’ থেকে রক্ষা করবে কে? কতশত কানে যাবে এই মিথ্যে বাণী। আর এভাবেই আমার জীবনের দুধসাদা পাঞ্জাবি বহুলাংশে কলঙ্কিত।
প্রিয় শিক্ষামন্ত্রী, এবার নজর দিন একটি ভয়ঙ্কর রচনার দিকে। লিখেছেন দুর্ধর্ষ লেখক—বদরুদ্দীন উমর। ছেপেছেন দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক। রচনার নাম—‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে শেখ মুজিবুর রহমান।’ ৪ ফেব্রুয়ারি বেরিয়েছে।
রচনার সারাংশ এভাবে তুলে ধরা হয়েছে—‘ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের ভূমিকা’—সম্পর্কে যেসব কথা শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমীতে বলেছেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও তাদের ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা বলে থাকেন, এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে, এটা বলা যায় না। এর দ্বারা ইতিহাসকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এই ধর্ষিত ইতিহাসকেই এখন স্কুল-কলেজের পাঠ্য তালিকায় প্রকৃত ইতিহাস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে দেশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার সর্বনাশ করা হচ্ছে।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আমার দেশ-এ প্রকাশিত বদরুদ্দীন উমর-এর নিবন্ধের ন্যায়ানুগ মোকাবিলা করুন। নতুবা আপনার মন্ত্রিত্বের কাল ইতিহাসে ক্ষমার অযোগ্য হয়ে রইবে।
লেখক : কবি
No comments