বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ-বিতরণ ব্যবস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জ
ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়া হলে তা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হিসেবে গণ্য হয়। তবে কখনও কখনও বাহাদুরি দেখানো কিংবা অসাধুতার জন্যও এমন কাজ করা হয়ে থাকে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলের বিদ্যুৎ বিভাগ যে 'খাম্বা প্রকল্প' হাতে নিয়েছিল তা পুরোপুরি ছিল অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সে সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর প্রকল্পগুলো শিকেয় তুলে রেখে বিতরণ লাইন স্থাপনের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ করা হয় এবং এর মাধ্যমে কাজ না করে কিংবা নিম্নমানের কাজ করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এখন চিত্র ভিন্ন। বুধবার সমকালে 'বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন : বেহাল বিতরণ ব্যবস্থা' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'নতুন লাইন স্থাপনের কাজে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার ধারেকাছেও গতি নেই, উপরন্তু বিদ্যমান লাইনের ৩০ শতাংশ জরাজীর্ণ।' অথচ বর্তমান সরকারের আড়াই বছরে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে এবং চলতি বছরে আরও দুই হাজার মেগাওয়াট যুক্ত হবে। এটাও মনে রাখতে হবে যে, বর্তমানে বিশেষ ব্যবস্থাধীনে যেসব প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে তার উৎপাদন ব্যয় বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোর তুলনায় বেশি পড়ছে এবং চুক্তি অনুযায়ী সরকার তা কিনে নিচ্ছে। এখন প্রশ্ন, চড়া দামে কেনা বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে সময়মতো পেঁৗছানোর যথাযথ ব্যবস্থা কি গ্রহণ করা হবে না? বিদ্যুৎ এমন একটি পণ্য যা মজুদ করে রাখা চলে না_ যতটুকু উৎপাদন করা হবে সেটাই ব্যবহার করা হবে। যদি বিতরণ ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না থাকে তাহলে একটিই পথ_ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া। এর অর্থ হচ্ছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে তা আমরা কাজে লাগাতে পারব না। সরকার চড়া দামে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে তা বিক্রি করতে না পারার কারণে লোকসান দেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণের জন্য ব্যয় পড়বে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থের জোগান সহজ নয়। বিতরণ কাজে দক্ষ প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে সরকার এ ব্যয়ের বোঝা ভাগাভাগি করে নিতে পারে। আমরা আশা করব যে, তড়িঘড়ি কাজ করতে গিয়ে যেন অদক্ষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া না হয়। বিদ্যমান জরাজীর্ণ লাইনের সংস্কারের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি মনে রাখা চাই। আগামী এক বছরে দুই হাজার মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে এ সমস্যা আরও প্রকট হবে। আশা করব, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে স্থবিরতা বিরাজ করছিল, সেটা দূর করা সম্ভব হয়েছে। বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও চাই একই মনোভাব। এর পাশাপাশি বিল আদায়ের ব্যবস্থার প্রতিও মনোযোগ বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রিপেইড কার্ড চালু করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এতে গ্রাহক অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে যতটা বিদ্যুৎ ক্রয় করবে, ততটাই ব্যবহার করতে পারবে। যদি গ্রাহকদের নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে রেহাই দেওয়া যায়, তাহলে নতুন ব্যবস্থায় তাদের আপত্তি থাকার কথা নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ কি এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত?
No comments