ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে হত্যা ও ডাকাতির আসামিরাও-প্রশ্নবিদ্ধ আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি

আগের দুই সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়ের করা মামলার সংখ্যা কত ছিল? আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি ইতিমধ্যে ছয় হাজার ৬৫৫টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। এখনো বেশুমার মামলা আছে বিবেচনার অপেক্ষায়।


এভাবে চলতে থাকলে যে উদ্দেশ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্যই শুধু ব্যাহত হবে না, আইন-আদালতের প্রতি মানুষের আস্থাও কমে যাবে। আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল আগের দুই সরকারের আমলে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের রেহাই দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
কিন্তু রাজনৈতিক মোড়ক বসিয়ে কমিটি যখন যাকে খুশি ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করছে, আবার সমালোচিত হলে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারও করে নিচ্ছে। মামলা প্রত্যাহারের নামে এসব তুঘলকি কাণ্ড চলতে দেওয়া যায় না। প্রথমে মিরপুরে ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী আসলামসহ সব আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি। পরে এক নম্বর আসামিকে বাদ দিয়ে মামলা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। উত্তরার দক্ষিণখানে প্রকৌশলী হত্যায় দুই পলাতক আসামিসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দেন আদালত। পরদিনই এর বিরুদ্ধে আবেদন করা হলে আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। প্রশ্ন হলো, যেখানে বিবাদীদের হুমকির মুখে নিহত প্রকৌশলীর পরিবার বাড়ি বিক্রি করে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, সেখানে কমিটি কী করে মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে?
আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের বিষয়টি যেমন রাজনৈতিক মহলে আলোচিত হচ্ছে, তেমনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানেরও। তিনি জানিয়েছেন, কমিটির সুপারিশ করা কোনো মামলা দুদক প্রত্যাহার করেনি, হয়তো করবেও না। এই সতর্কবার্তা পেয়েই কমিটি ভবিষ্যতে দুর্নীতির আর কোনো মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হবে না বলে জানিয়েছে। এতে কৃতিত্বের কিছু নেই। বরং যে মামলাগুলো ইতিমধ্যে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলোই পুনর্বিবেচনা করা উচিত। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার নামে বিচারপ্রার্থীদের বঞ্চিত করার কোনো অধিকার কমিটির নেই। কেবল উত্তরা ও মিরপুরের ঘটনা নয়, কমিটির সুপারিশ করা সব মামলাই নিরপেক্ষ কমিটি দ্বারা পুনঃ তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.