সাক্ষাৎকার-ইচ্ছা ও একাগ্রতা থাকলে কঠিন কাজও সম্ভব-সাক্ষাৎকার গ্রহণ : একরামুল হক শামীম by সালমান খান
যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমান খান। টাইম ম্যাগাজিনের বক্তব্য অনুযায়ী, নিজ কাজের মাধ্যমে যারা সারাবিশ্বকে পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন সালমান খান তেমনই একজন। ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিক্ষাকে তিনি বিশ্বব্যাপী পেঁৗছে দিচ্ছেন।
সালমান খান ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদাবাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে। তার বাবা ডা. ফখরুল আমিন খান চিকিৎসক ছিলেন। সালমানের মা কলকাতার। সালমান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে গণিত এবং তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান_ এ দুই বিষয়ের ওপর স্নাতক করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের ওপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তারপর এমবিএ করেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে। সালমান 'খান একাডেমী'র khanacademy.org) প্রতিষ্ঠাতা। এটি বিনামূল্যে শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়ালের ওয়েবসাইট। গণিত, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিদ্যা, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, ফাইন্যান্স, মেডিসিন, ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর শিক্ষামূলক ভিডিও রয়েছে সাইটটিতে। ২০১২ সালের জুনে অনুষ্ঠেয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ১৪৬তম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সালমান। ৩৫ বছর বয়সী সালমান খানই হতে যাচ্ছেন এমআইটির ইতিহাসে কনিষ্ঠতম সমাবর্তন বক্তা। ২০১০ সালে সালমান মাইক্রোসফট টেক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। সমকালের সঙ্গে খান একাডেমী, বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ও নিজের জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সালমান খান। সাক্ষাৎকারটি ই-মেইলের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে
সমকাল : টাইম ম্যাগাজিন প্রকাশিত বিশ্বের প্রভাবশালী সেরা ১০০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় আপনি স্থান পেয়েছেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
সালমান খান : আমি এই অর্জনে সম্মানিতবোধ করছি। নিঃসন্দেহে অনেক বড় অর্জন। নিশ্চয়ই কেউ কেবল কিছু গণিতের সমস্যা ইন্টারনেটে তুলে ধরার জন্যই এত বড় স্বীকৃতির প্রত্যাশা করে না। তবে আমার ক্ষেত্রে এমন একটি অর্জন হয়ে গেছে। আমার আশপাশের মানুষরা এতে খুবই আনন্দিত।
সমকাল : এই অর্জন আপনার জীবন এবং কাজের ওপর প্রভাব রাখবে?
সালমান খান : এর মাধ্যমে আমার কিছু পুরনো বন্ধু আমাকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবে। সত্যিকার অর্থে এর বাইরে আমার জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমি আগের মতোই আছি। এখনও মেয়ের ডায়াপার পরিবর্তন করে দিচ্ছি, ছেলেকে গোসল করাচ্ছি। তবে বলতে দ্বিধা নেই এসব অর্জন কাজে অনুপ্রেরণা জোগায়।
সমকাল : খান একাডেমীর মাধ্যমে আপনার এই অর্জন। খান একাডেমী চালু করেছিলেন কীভাবে?
সালমান খান : ২০০৪ সালের সামারে আমার বিয়ের পর মামার পরিবার বোস্টনে বেড়াতে এসেছিল। বেড়ানোর এক পর্যায়ে মামি আমাকে জানায়, তার মেয়ে মানে আমার মামাতো বোন একক রূপান্তর সংক্রান্ত গণিতে কাঁচা। এর জন্য সে অন্য গাণিতিক সমস্যাগুলো ঠিকভাবে সমাধান করতে পারছিল না। তখন আমার মামাতো বোন নাদিয়া সপ্তম গ্রেডের ছাত্রী। নাদিয়া এমনিতে খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। সুতরাং আমি তার সঙ্গে আলাপ করে ঠিক করলাম, আমার কাজের শেষে দূর থেকে প্রতিদিন তাকে এক ঘণ্টা করে পড়াব। এমনকি কিছু হোমওয়ার্কও করতে দেব। নাদিয়া এতে রাজি হয়। ২০০৪ সালের আগস্টে আমি নাদিয়াকে দূর থেকেই পড়ানো শুরু করলাম। সে তখন থাকত নিউ অরলিন্সে, আর আমি বোস্টনে। নিউ অরলিন্সে যেখানে আমি শৈশবে বেড়ে উঠেছি। আমরা সেলফোনে আলাপের মাধ্যমে পড়ার কাজ সারতাম। মাঝে মধ্যেই ইয়াহুর ডুডল এপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতাম নোটপ্যাড হিসেবে। নাদিয়া ভালোমতোই সবকিছু বুঝল। সে গণিতে ভালো করে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হলো। তারপর আমি নাদিয়া, ছোট দুই ভাই আরমান ও আলীকে পড়ানো শুরু করলাম। এক সময় এই বিষয়টা অনেকেই জেনে গেল। আমি তখন আরও অনেককেই দূর থেকে পড়িয়েছি। এক সময় আমার ব্যস্ততা, তাদের খেলাধুলার সময়, বিভিন্ন টাইমজোন নিয়ে সমস্যা দেখা দিল। দেখা গেল আমি যখন সময় দিতে পারছি তারা তখন সময় দিতে পারছে না। আমি তখন ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করতে থাকলাম। আমার শিক্ষার্থীরা সেসব ভিডিও নিজেদের সুবিধামতো সময়ে দেখে পড়া বুঝে নিতে থাকল। একটা সময় এই বিষয়টা অনেকেই জেনে গেল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমার তৈরি করা ভিডিও নিয়ে আগ্রহ তৈরি হলো। তখন আমি আরও ভিডিও তৈরি করতে থাকলাম, সেখানে সহজভাবে গণিতের নানা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা থাকত। ইউটিউবে তৈরি করা ভিডিওগুলোর মাধ্যমেই এক সময় খান একাডেমীর যাত্রা শুরু হয়। খান একাডেমীতে বেশি সময় দেওয়ার জন্যই আমি আমার চাকরি ছেড়ে দিই।
সমকাল : খান একাডেমী গুগলের একটি প্রজেক্টে বিজয়ী হয়েছিল...
সালমান খান : সেটা কয়েক বছর আগের কথা। গুগলের একটি প্রজেক্ট প্রতিযোগিতায় শিক্ষা বিভাগে বিজয়ী হয়েছিল খান একাডেমী। গুগলের ফান্ডিং সেই সময় আমাদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা এনে দিয়েছিল। আমরা তখন বিভিন্ন ভাষায় ভিডিওগুলোর অনুবাদ শুরু করেছিলাম। তার মধ্যে বাংলা ভাষাও আছে।
সমকাল : খান একাডেমীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সালমান খান : আমাদের উদ্দেশ্য সব পর্যায়ের এবং সব স্থানের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যের ও বিশ্বমানের শিক্ষা পদ্ধতি প্রদান করা। আমাদের লক্ষ্য এমন কিছু বিষয়বস্তু এবং সফটওয়্যার তৈরি করা, যাতে শিক্ষার্থীরা তা ব্যবহার করে নিজেরাই সহজে পড়া বুঝে নিতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, আমরা এমন কিছু তৈরি করতে পারলে অন্য এনজিওগুলো তা মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করবে। বিশ্বমানের শিক্ষা পদ্ধতি ও বিষয়বস্তু তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে খান একাডেমী। অনেকেই এখন আমাদের এই কাজে নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, আমাদের কাজে পরামর্শ দিচ্ছে। এসব বিষয় আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
সমকাল : সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছে খান একাডেমী কীভাবে পেঁৗছবে? সেখানে খান একাডেমীর বিষয়বস্তু দেখার জন্য কম্পিউটার এবং নেটলাইন থাকা জরুরি।
সালমান খান : আমরা বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি। এটা সত্যি যে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত থাকা প্রধান বাধা। তবে দেখুন এই পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রতি বছরই কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ছে। ছোট ছেলেমেয়েরাও এখন কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে অভ্যস্ত হচ্ছে। এমনকি পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল ফোনগুলো দিয়ে খান একাডেমীর কনটেন্টগুলো দেখা সম্ভব হবে। আমার বিশ্বাস, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অনেক স্থানেই ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে যাবে। তখন অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার আরও প্রসার ঘটবে।
সমকাল : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
সালমান খান : আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোও খান একাডেমীকে ঘিরে। খান একাডেমী এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাকে গড়ে তুলতে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। খান একাডেমীকে আমি একটি ফ্রি ভার্চুয়াল স্কুল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি টিচিং ম্যাটেরিয়াল তৈরি করে যাব। ভিডিও আকারে তা আমাদের সাইটে আপলোড হতে থাকবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আর যা যা করা যেতে পারে তা নিয়েও ভাবছি আমি।
সমকাল : আপনার শৈশব কেমন ছিল?
সালমান খান : যুক্তরাষ্ট্রের লুজিয়ানার নিউ অরলিন্সে আমি জন্মগ্রহণ করেছি ও বেড়ে উঠেছি। তবে আমার বাবা বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। বাবার বাড়ি ছিল বরিশালে। তবে আমি বেড়ে উঠেছি মায়ের পরিবারে। আমার বয়স যখন দুই, তখন বাবা-মা আলাদা হয়ে যান। শৈশবে আমাদের পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তবে মানিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আমরা ছিলাম।
সমকাল : বড় হয়ে কী হতে চেয়েছিলেন?
সালমান খান :আমি ভেবেছিলাম হয় আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো, না হয় ডাক্তার। আমি স্কুলে মেজর বিষয় হিসেবে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ইঞ্জিনিয়ারই হয়েছি। তবে গণিত নিয়েও পড়েছি। পাশাপাশি বিজনেস বিষয়েও পড়েছি।
সমকাল : আপনার বাবা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ নিয়ে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা আছে?
সালমান খান : আমি একবারই বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। সেটা ১৯৮৪ সালে। আমার বয়স তখন খুবই কম, মাত্র ৮ বছর। তবে সেবারের বাংলাদেশ ভ্রমণের কথা আমার এখনও মনে আছে। তা এক অর্থে মিশ্র অভিজ্ঞতা। একদিকে তা ছিল আমার জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে কিছুটা বেদনার। অসাধারণ অভিজ্ঞতা এই জন্য যে, সেই ভ্রমণে অনেক অনেক মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল, যারা আমাকে খুবই আদর-যত্ন করেছিল। চারপাশে এত কেয়ারিং মানুষ পেয়ে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। আর বেদনার অভিজ্ঞতা এ জন্য যে, সে সময় আমি দরিদ্রতা সামনে থেকে দেখেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত নয়। তবে সময় পাল্টেছে। বাংলাদেশ এখন অনেক ক্ষেত্রেই ভালো করছে।
সমকাল : আবার বাংলাদেশে আসার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?
সালমান খান : আমি খুব শিগগিরই আবার বাংলাদেশে যেতে চাই। এবার আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ দেখতে যাব। তবে আমার সন্তানদের বয়স এখনও খুব কম। তারা আরেকটু বড় হলেই তাদের নিয়ে বাংলাদেশে যাব।
সমকাল : বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে খান একাডেমীর কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে? এখানে অনেক শিক্ষার্থীরই কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই।
সালমান খান : আমরা বর্তমানে আমাদের কনটেন্টগুলো বাংলায় অনুবাদ করছি। আশা করছি, এটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। এর বাইরে খান একাডেমীর ভিডিওগুলোকে কীভাবে অফলাইনে নিয়ে আসা যায় সে ব্যাপারে আমরা ভাবছি। ডিভিডি আকারে বের করা যেতে পারে। তাহলে হয়তো যাদের ইন্টারনেট সংযোগ নেই তারাও আমাদের কনটেন্টের সুবিধা পাবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ, নিজের পড়াশোনা প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিয়ে নিতে হবে। নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে কীভাবে সে কোন একটা বিষয় পড়বে। খান একাডেমীর মতো সাইটে তারা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো হাতের নাগালে পাবে।
সমকাল : কেউ যদি আপনার প্রজেক্টে যুক্ত হতে চায় তাহলে তা কীভাবে সম্ভব?
সালমান খান : প্রথমেই তারা আমাকে খান একাডেমীর কনটেন্টগুলোকে বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারে। আমরা সবসময়ই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা গ্রহণের ব্যাপারে উন্মুক্ত। কেউ যদি আমাদের কনটেন্টগুলো অফলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাহলেও আমরা তাকে স্বাগত জানাব। এর পাশাপাশি প্রচারণাও এক ধরনের সহায়তা। কেউ যদি তার পরিচিতদের আমাদের রিসোর্স সম্পর্কে জানায় তাহলে হয়তো তার পরিচিত ব্যক্তিটি খান একাডেমী সম্পর্কে আগ্রহী হবে। এভাবে অনেকেই খান একাডেমী সম্পর্কে জানবে। আমরা শিক্ষামূলক ভিডিওগুলো তৈরি করছি শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে। এসব তাদের কাজে এলে আমাদের ভালো লাগবে।
সমকাল : আপনি কাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন? কোন মানুষগুলো থেকে আপনি অনেক কিছু শিখেছেন বলে মনে করেন?
সালমান খান : এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হবে আমার বড় বোনের কথা। সে ছিল আমার জন্য একাডেমিক অনুপ্রেরণা। আমার বোন খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমি চাইতাম বোনের মতো হতে। বোনের অনেক কাজই আমার জন্য অনুপ্রেরণার ছিল। আমি যখন নিউ অরলিন্সে বেড়ে উঠছিলাম তখন দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটির পরস্পরের মধ্যে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তারা আমাকে বিভিন্ন কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। চারপাশের মানুষের সহযোগিতা আর অনুপ্রেরণাতেই আমার আজকের যত অর্জন।
সমকাল : বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আপনার মতো উদ্ভাবনী কাজ করার স্বপ্ন দেখে। তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী হবে?
সালমান খান : যদি কেউ মনে করে সে এমন কোনো কাজ করছে যা স্বল্প পরিসরে হলেও কিছু মানুষের জন্য উপকারের হচ্ছে, তাহলে তা চালিয়ে যাওয়া উচিত। কাজের পরিসরের দিকে সবসময় লক্ষ্য রাখা উচিত। এমনভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত যাতে ক্রমবর্ধমান শ্রেণীকেও কম খরচের মধ্যে সহায়তা করা যায়। মানুষকে সহায়তা করার কাজগুলো একদিকে আনন্দদায়ক, অন্যদিকে এটি জীবনের সন্তুষ্টি এনে দেয়। মানুষের জন্য ভালো কিছু করে যে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় অন্য কোনো কিছুতেই তা মিলবে না।
আমি যেমন বর্তমানে গণিত ও বিজ্ঞানের কিছু লেসন নিয়ে কাজ করছি, আশা করব সেভাবে কিছু বাংলাদেশি তরুণ বাংলা ও ইংরেজির লেসন নিয়ে কাজ করবে। কনটেন্ট যদি ভালো হয় তাহলে তা খুশি মনে আমি খান একাডেমীর ওয়েবসাইটে স্থান দেব।
আমি আশা করব, বাংলাদেশের তরুণরাও নতুন নতুন উদ্ভাবনী বিষয় নিয়ে সামনে এগিয়ে আসবে। ইচ্ছা ও একাগ্রতা থাকলে অনেক কঠিন কাজও করা সম্ভব।
সমকাল : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সালমান খান : আপনাকেও ধন্যবাদ।
সমকাল : টাইম ম্যাগাজিন প্রকাশিত বিশ্বের প্রভাবশালী সেরা ১০০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় আপনি স্থান পেয়েছেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
সালমান খান : আমি এই অর্জনে সম্মানিতবোধ করছি। নিঃসন্দেহে অনেক বড় অর্জন। নিশ্চয়ই কেউ কেবল কিছু গণিতের সমস্যা ইন্টারনেটে তুলে ধরার জন্যই এত বড় স্বীকৃতির প্রত্যাশা করে না। তবে আমার ক্ষেত্রে এমন একটি অর্জন হয়ে গেছে। আমার আশপাশের মানুষরা এতে খুবই আনন্দিত।
সমকাল : এই অর্জন আপনার জীবন এবং কাজের ওপর প্রভাব রাখবে?
সালমান খান : এর মাধ্যমে আমার কিছু পুরনো বন্ধু আমাকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবে। সত্যিকার অর্থে এর বাইরে আমার জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমি আগের মতোই আছি। এখনও মেয়ের ডায়াপার পরিবর্তন করে দিচ্ছি, ছেলেকে গোসল করাচ্ছি। তবে বলতে দ্বিধা নেই এসব অর্জন কাজে অনুপ্রেরণা জোগায়।
সমকাল : খান একাডেমীর মাধ্যমে আপনার এই অর্জন। খান একাডেমী চালু করেছিলেন কীভাবে?
সালমান খান : ২০০৪ সালের সামারে আমার বিয়ের পর মামার পরিবার বোস্টনে বেড়াতে এসেছিল। বেড়ানোর এক পর্যায়ে মামি আমাকে জানায়, তার মেয়ে মানে আমার মামাতো বোন একক রূপান্তর সংক্রান্ত গণিতে কাঁচা। এর জন্য সে অন্য গাণিতিক সমস্যাগুলো ঠিকভাবে সমাধান করতে পারছিল না। তখন আমার মামাতো বোন নাদিয়া সপ্তম গ্রেডের ছাত্রী। নাদিয়া এমনিতে খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। সুতরাং আমি তার সঙ্গে আলাপ করে ঠিক করলাম, আমার কাজের শেষে দূর থেকে প্রতিদিন তাকে এক ঘণ্টা করে পড়াব। এমনকি কিছু হোমওয়ার্কও করতে দেব। নাদিয়া এতে রাজি হয়। ২০০৪ সালের আগস্টে আমি নাদিয়াকে দূর থেকেই পড়ানো শুরু করলাম। সে তখন থাকত নিউ অরলিন্সে, আর আমি বোস্টনে। নিউ অরলিন্সে যেখানে আমি শৈশবে বেড়ে উঠেছি। আমরা সেলফোনে আলাপের মাধ্যমে পড়ার কাজ সারতাম। মাঝে মধ্যেই ইয়াহুর ডুডল এপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতাম নোটপ্যাড হিসেবে। নাদিয়া ভালোমতোই সবকিছু বুঝল। সে গণিতে ভালো করে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হলো। তারপর আমি নাদিয়া, ছোট দুই ভাই আরমান ও আলীকে পড়ানো শুরু করলাম। এক সময় এই বিষয়টা অনেকেই জেনে গেল। আমি তখন আরও অনেককেই দূর থেকে পড়িয়েছি। এক সময় আমার ব্যস্ততা, তাদের খেলাধুলার সময়, বিভিন্ন টাইমজোন নিয়ে সমস্যা দেখা দিল। দেখা গেল আমি যখন সময় দিতে পারছি তারা তখন সময় দিতে পারছে না। আমি তখন ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করতে থাকলাম। আমার শিক্ষার্থীরা সেসব ভিডিও নিজেদের সুবিধামতো সময়ে দেখে পড়া বুঝে নিতে থাকল। একটা সময় এই বিষয়টা অনেকেই জেনে গেল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমার তৈরি করা ভিডিও নিয়ে আগ্রহ তৈরি হলো। তখন আমি আরও ভিডিও তৈরি করতে থাকলাম, সেখানে সহজভাবে গণিতের নানা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা থাকত। ইউটিউবে তৈরি করা ভিডিওগুলোর মাধ্যমেই এক সময় খান একাডেমীর যাত্রা শুরু হয়। খান একাডেমীতে বেশি সময় দেওয়ার জন্যই আমি আমার চাকরি ছেড়ে দিই।
সমকাল : খান একাডেমী গুগলের একটি প্রজেক্টে বিজয়ী হয়েছিল...
সালমান খান : সেটা কয়েক বছর আগের কথা। গুগলের একটি প্রজেক্ট প্রতিযোগিতায় শিক্ষা বিভাগে বিজয়ী হয়েছিল খান একাডেমী। গুগলের ফান্ডিং সেই সময় আমাদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা এনে দিয়েছিল। আমরা তখন বিভিন্ন ভাষায় ভিডিওগুলোর অনুবাদ শুরু করেছিলাম। তার মধ্যে বাংলা ভাষাও আছে।
সমকাল : খান একাডেমীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সালমান খান : আমাদের উদ্দেশ্য সব পর্যায়ের এবং সব স্থানের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যের ও বিশ্বমানের শিক্ষা পদ্ধতি প্রদান করা। আমাদের লক্ষ্য এমন কিছু বিষয়বস্তু এবং সফটওয়্যার তৈরি করা, যাতে শিক্ষার্থীরা তা ব্যবহার করে নিজেরাই সহজে পড়া বুঝে নিতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, আমরা এমন কিছু তৈরি করতে পারলে অন্য এনজিওগুলো তা মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করবে। বিশ্বমানের শিক্ষা পদ্ধতি ও বিষয়বস্তু তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে খান একাডেমী। অনেকেই এখন আমাদের এই কাজে নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, আমাদের কাজে পরামর্শ দিচ্ছে। এসব বিষয় আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
সমকাল : সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছে খান একাডেমী কীভাবে পেঁৗছবে? সেখানে খান একাডেমীর বিষয়বস্তু দেখার জন্য কম্পিউটার এবং নেটলাইন থাকা জরুরি।
সালমান খান : আমরা বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি। এটা সত্যি যে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত থাকা প্রধান বাধা। তবে দেখুন এই পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রতি বছরই কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ছে। ছোট ছেলেমেয়েরাও এখন কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে অভ্যস্ত হচ্ছে। এমনকি পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল ফোনগুলো দিয়ে খান একাডেমীর কনটেন্টগুলো দেখা সম্ভব হবে। আমার বিশ্বাস, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অনেক স্থানেই ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে যাবে। তখন অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার আরও প্রসার ঘটবে।
সমকাল : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
সালমান খান : আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোও খান একাডেমীকে ঘিরে। খান একাডেমী এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাকে গড়ে তুলতে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। খান একাডেমীকে আমি একটি ফ্রি ভার্চুয়াল স্কুল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি টিচিং ম্যাটেরিয়াল তৈরি করে যাব। ভিডিও আকারে তা আমাদের সাইটে আপলোড হতে থাকবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আর যা যা করা যেতে পারে তা নিয়েও ভাবছি আমি।
সমকাল : আপনার শৈশব কেমন ছিল?
সালমান খান : যুক্তরাষ্ট্রের লুজিয়ানার নিউ অরলিন্সে আমি জন্মগ্রহণ করেছি ও বেড়ে উঠেছি। তবে আমার বাবা বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। বাবার বাড়ি ছিল বরিশালে। তবে আমি বেড়ে উঠেছি মায়ের পরিবারে। আমার বয়স যখন দুই, তখন বাবা-মা আলাদা হয়ে যান। শৈশবে আমাদের পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তবে মানিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আমরা ছিলাম।
সমকাল : বড় হয়ে কী হতে চেয়েছিলেন?
সালমান খান :আমি ভেবেছিলাম হয় আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো, না হয় ডাক্তার। আমি স্কুলে মেজর বিষয় হিসেবে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ইঞ্জিনিয়ারই হয়েছি। তবে গণিত নিয়েও পড়েছি। পাশাপাশি বিজনেস বিষয়েও পড়েছি।
সমকাল : আপনার বাবা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ নিয়ে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা আছে?
সালমান খান : আমি একবারই বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। সেটা ১৯৮৪ সালে। আমার বয়স তখন খুবই কম, মাত্র ৮ বছর। তবে সেবারের বাংলাদেশ ভ্রমণের কথা আমার এখনও মনে আছে। তা এক অর্থে মিশ্র অভিজ্ঞতা। একদিকে তা ছিল আমার জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে কিছুটা বেদনার। অসাধারণ অভিজ্ঞতা এই জন্য যে, সেই ভ্রমণে অনেক অনেক মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল, যারা আমাকে খুবই আদর-যত্ন করেছিল। চারপাশে এত কেয়ারিং মানুষ পেয়ে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। আর বেদনার অভিজ্ঞতা এ জন্য যে, সে সময় আমি দরিদ্রতা সামনে থেকে দেখেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত নয়। তবে সময় পাল্টেছে। বাংলাদেশ এখন অনেক ক্ষেত্রেই ভালো করছে।
সমকাল : আবার বাংলাদেশে আসার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?
সালমান খান : আমি খুব শিগগিরই আবার বাংলাদেশে যেতে চাই। এবার আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ দেখতে যাব। তবে আমার সন্তানদের বয়স এখনও খুব কম। তারা আরেকটু বড় হলেই তাদের নিয়ে বাংলাদেশে যাব।
সমকাল : বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে খান একাডেমীর কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে? এখানে অনেক শিক্ষার্থীরই কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই।
সালমান খান : আমরা বর্তমানে আমাদের কনটেন্টগুলো বাংলায় অনুবাদ করছি। আশা করছি, এটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। এর বাইরে খান একাডেমীর ভিডিওগুলোকে কীভাবে অফলাইনে নিয়ে আসা যায় সে ব্যাপারে আমরা ভাবছি। ডিভিডি আকারে বের করা যেতে পারে। তাহলে হয়তো যাদের ইন্টারনেট সংযোগ নেই তারাও আমাদের কনটেন্টের সুবিধা পাবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ, নিজের পড়াশোনা প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিয়ে নিতে হবে। নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে কীভাবে সে কোন একটা বিষয় পড়বে। খান একাডেমীর মতো সাইটে তারা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো হাতের নাগালে পাবে।
সমকাল : কেউ যদি আপনার প্রজেক্টে যুক্ত হতে চায় তাহলে তা কীভাবে সম্ভব?
সালমান খান : প্রথমেই তারা আমাকে খান একাডেমীর কনটেন্টগুলোকে বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারে। আমরা সবসময়ই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা গ্রহণের ব্যাপারে উন্মুক্ত। কেউ যদি আমাদের কনটেন্টগুলো অফলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাহলেও আমরা তাকে স্বাগত জানাব। এর পাশাপাশি প্রচারণাও এক ধরনের সহায়তা। কেউ যদি তার পরিচিতদের আমাদের রিসোর্স সম্পর্কে জানায় তাহলে হয়তো তার পরিচিত ব্যক্তিটি খান একাডেমী সম্পর্কে আগ্রহী হবে। এভাবে অনেকেই খান একাডেমী সম্পর্কে জানবে। আমরা শিক্ষামূলক ভিডিওগুলো তৈরি করছি শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে। এসব তাদের কাজে এলে আমাদের ভালো লাগবে।
সমকাল : আপনি কাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন? কোন মানুষগুলো থেকে আপনি অনেক কিছু শিখেছেন বলে মনে করেন?
সালমান খান : এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হবে আমার বড় বোনের কথা। সে ছিল আমার জন্য একাডেমিক অনুপ্রেরণা। আমার বোন খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমি চাইতাম বোনের মতো হতে। বোনের অনেক কাজই আমার জন্য অনুপ্রেরণার ছিল। আমি যখন নিউ অরলিন্সে বেড়ে উঠছিলাম তখন দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটির পরস্পরের মধ্যে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তারা আমাকে বিভিন্ন কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। চারপাশের মানুষের সহযোগিতা আর অনুপ্রেরণাতেই আমার আজকের যত অর্জন।
সমকাল : বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আপনার মতো উদ্ভাবনী কাজ করার স্বপ্ন দেখে। তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী হবে?
সালমান খান : যদি কেউ মনে করে সে এমন কোনো কাজ করছে যা স্বল্প পরিসরে হলেও কিছু মানুষের জন্য উপকারের হচ্ছে, তাহলে তা চালিয়ে যাওয়া উচিত। কাজের পরিসরের দিকে সবসময় লক্ষ্য রাখা উচিত। এমনভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত যাতে ক্রমবর্ধমান শ্রেণীকেও কম খরচের মধ্যে সহায়তা করা যায়। মানুষকে সহায়তা করার কাজগুলো একদিকে আনন্দদায়ক, অন্যদিকে এটি জীবনের সন্তুষ্টি এনে দেয়। মানুষের জন্য ভালো কিছু করে যে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় অন্য কোনো কিছুতেই তা মিলবে না।
আমি যেমন বর্তমানে গণিত ও বিজ্ঞানের কিছু লেসন নিয়ে কাজ করছি, আশা করব সেভাবে কিছু বাংলাদেশি তরুণ বাংলা ও ইংরেজির লেসন নিয়ে কাজ করবে। কনটেন্ট যদি ভালো হয় তাহলে তা খুশি মনে আমি খান একাডেমীর ওয়েবসাইটে স্থান দেব।
আমি আশা করব, বাংলাদেশের তরুণরাও নতুন নতুন উদ্ভাবনী বিষয় নিয়ে সামনে এগিয়ে আসবে। ইচ্ছা ও একাগ্রতা থাকলে অনেক কঠিন কাজও করা সম্ভব।
সমকাল : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সালমান খান : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments