ব্যবসায়ী নেতাদের আহবান-দেশের স্বার্থে আর হরতাল দেবেন না

বিরোধী দল হরতাল ডাকলে আগের দিনই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের আহবান জানায় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। কিন্তু এবারের হরতালের আগে শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এ কাজ করেনি। প্রথম দুই দিনের পর তৃতীয় দিনের মতো হরতাল ডাকা হলে হয়তো তাদের আর ধৈর্য থাকেনি।


কোনো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নয়, গতকাল মঙ্গলবার হরতালের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বিরোধী দলকে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
'লাগাতার হরতালের প্রেক্ষিতে উদ্ভূত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, দোকান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ী নেতারা নিজেদের কোনো দলের সমর্থক নয়, বরং ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে অর্থনীতির স্বার্থে হরতালের মতো ধংসাত্মক কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। পাশাপাশি তাঁরা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়া এবং তিন দিনের হরতালে কয়েকজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, 'তিন দিন যাবৎ বিরোধী দল হরতাল পালন করছে। এতে শুধু দেশের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, আপামর জনসাধারণকে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। হরতাল সব সময় ব্যবসা ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। টানা হরতালে আমরা বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত।'
এ কে আজাদ বলেন, 'একজন সাবেক সংসদ সদস্য হারিয়ে যাওয়া বা নিখোঁজ হওয়া- এটাকে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে বিবেচনা করছি। আশা করছি সরকার এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবে। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি বা হরতালের কারণে যেসব পরিবার তাদের সদস্য হারিয়েছে, সরকার সেই সব পরিবারের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবে বলে আশা করি।'
আজাদ বলেন, 'হরতাল অর্থনীতির ক্ষতি করে, বেকারত্ব বাড়ায়। এটি ষাটের দশকের কর্মসূচি। বিশ্ব বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের পিছিয়ে রাখছি। আগেও আমরা বলেছি, এখনো বলছি, হরতাল কোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না। দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ হরতালের বিপক্ষে- এ রকম তথ্য আমাদের কাছে আছে।' তিনি বিরোধী দলের নেত্রীর লংমার্চ, অনশন, ঘেরাওয়ের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে মানুষের সমর্থন রয়েছে বলে জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, 'যেভাবে হত্যা, গুম হচ্ছে তাতে বলা যায়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।'
হরতালে দোকানমালিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন উল্লেখ করে বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির সভাপতি আমির হোসেন খান বলেন, তাঁদের দৈনিক ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স কম্পানি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দিলে হরতাল চলাকালে সারা দেশে শতভাগ দোকান খোলা রাখা হবে। কারণ নগদ টাকায় ব্যবসা করে বলে হরতালে দোকানিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। সাধারণ মানুষ পড়ে দুর্ভোগে। হরতালকে ভোটের রাজনীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'হরতাল দিলে ইলিয়াস আলী ফিরে আসবে- এ নিশ্চয়তা থাকলে আরো এক দিন হরতাল দেন। আমরা মেনে নেব। কিন্তু তেমন নিশ্চয়তা না থাকলে কেন টানা হরতাল দেওয়া হচ্ছে?'
দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, 'বিশ্বে অর্থনৈতিক সুনামি চলছে। আমাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ কমে গেছে। গ্যাস, বিদ্যুতের মতো সমস্যা তো রয়েছেই। আমদানি-রপ্তানি হরতালের আওতামুক্ত থাকলেও পোর্টে পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবহন মিলছে না।' তিনি বলেন, 'যে কারণে হরতাল ডাকা হয়েছে এর জন্য সরকারকে আরো সময় দেওয়া উচিত ছিল। আমরা আশা করব, বিরোধী দলগুলো দেশের অর্থর্নৈতিক পরিস্থিতি অনুধাবন করে হরতালের মতো কর্মর্সূচি থেকে বিরত থাকবে।'
বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, এই হরতালের জন্য বাসচালক, ছাত্রসহ আপামর জনসাধারণ ভোগান্তির শিকার হয়েছে। একজনের জন্য এত মানুষ তথা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা ঠিক নয়। কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে বের করার কাজ প্রশাসনের। কিন্তু হরতালের কারণে প্রশাসনকে এখন জনসাধারণের নিরাপত্তায় থাকতে হচ্ছে, হারানো মানুষকে খোঁজার সুযোগ পাচ্ছে না। এ জন্য হরতাল প্রত্যাহার করে প্রশাসনকে হারানো ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে সহযোগিতা করা উচিত। তিনি বলেন, হরতালের কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকেই ভয়ে মুখ খুলছে না। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তখন কিছু করার থাকবে না। ব্যবসায়ীরা কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নন, দেশের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার চাচ্ছেন তাঁরা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন, ঢাকা চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হায়দার আহমেদ খান, মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক সৈয়দ তারেক আলী উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.