নতুন জীবনের আখ্যান by আসাদ সরকার

আমার রোজকার দিনগুলো এখন একটা বদ্ধ ঘরে কাটে। বদ্ধ ঘর, তবে প্রযুক্তির সব ব্যবহার ঘরটাকে বদ্ধ ভাবতে দেয় না মোটেও। ছাত্রত্বের হাত থেকে কিংবা এদিক-সেদিক ছুটে বেড়ানোর পেশা থেকে বাঁচার জন্য এমন একটা ঘর এবং পদবি হিসেবে সরকারি কর্মকর্তার স্বপ্নই দেখছিলাম হয়তো। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার এমন প্রাপ্তি কম মানুষেরই জোটে।


সন্তুষ্টির জায়গাটা তাই নেহাত কম নয়। নতুন চাকরি বলে কিনা জানি না, তবে এখন পর্যন্ত এ পেশায় পর্যাপ্ত সময় আমার হাতে।
আমি রোজ নিয়মমাফিক অফিস করার পরে ঘরে ফিরে পড়ার সময় পাই। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়র; এমনকি পাঠ্যবই কিছুই বাদ যায় না পড়ার তালিকা থেকে। শুক্র, শনি দুই ছুটির দিনে সারা দিন লেখার অফুরন্ত সময় আমার হাতে। লিখি।
আমার নতুন পেশার প্রথম বেতন পাব কয়েক দিন পর। এ বেতন নিয়েও কত স্বপ্ন আমার বুকের ভেতর।
আমার মা তাঁর ফোনে কখন ব্যালান্স ফুরিয়ে যায় বুঝতে পারেন না। আবার সংসার আর চাকরির ব্যস্ততার কারণে ফোনে সময়মতো ব্যালান্স ওঠাতেও পারেন না। রোজ মাসের বেতন থেকে মায়ের ফোনে নিয়মিত ব্যালান্স পাঠানোর স্বপ্ন পূরণটা এখন আমার হাতের মুঠোয়। বাবা আবারও কয়েক দিন আগে তাঁর মোবাইল ফোনটি হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁকে নানাভাবে ভুলিয়ে নতুন মোবাইল ফোনসেট কেনা থেকে বিরত রেখেছি। নতুন চাকরির প্রথম বেতনের টাকায় বাবাকে একটা ফোনসেট কিনে দিতে পারব—এই ভালো লাগা আকাশসমান। অনেক দিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আড্ডায় রওশন ভাই একটা কথা বলেছিলেন, ‘মানুষের সন্তুষ্টির জন্য কখনোই অনেক সম্পদের প্রয়োজন হয় না।’ আজ অনেক দিন পর কথাটা খুব মনে পড়ছে। সত্যিই মানুষের সন্তুষ্টির জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন হয় না।

No comments

Powered by Blogger.