শিক্ষা-সৃজনশীল শিশু এবং আমাদের দায়িত্ব by সরকার আবদুল মান্নান
প্রতিটি শিশুই অফুরন্ত সৃষ্টিশীলতার আধার। তার ভাবনার পরিধি, কল্পনা করার সীমা ও স্বপ্নের মানচিত্র অফুরন্ত। আমরা যাঁরা বুড়োর দল—মা-বাবা, ভাইবোন, শিক্ষক, শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলের মধ্যে তাদের সম্ভাবনার সীমা নির্ধারণ করে ফেলি। এটি আমাদের চতুরতা, বোকামি বা নির্বুদ্ধিতা।
আমরা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভাবি; পড়াশোনায় ভালো করা ছাড়া যে ভবিষ্যৎ গড়া যায় না। শিশুকে পড়াশোনায় ভালো করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে হবে, ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এই হলো শিশুদের নিয়ে আমাদের প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা শিশুটির ওপর অত্যাচার করব; তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো লাগা-মন্দ লাগা; তার নিজস্ব শখ-শৌখিনতা ইত্যাকার সবকিছুকে পিষে মেরে আমরা তাকে আমাদের প্রকল্পের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলব। শিশুটি যে আলাদা মানুষ এবং বলতে হয়, সম্পূর্ণই আলাদা, সে বিবেচনা আমরা কখনোই করি না। তার অফুরন্ত সম্ভাবনার মধ্যে বহু কিছু হয়ে ওঠার গোপন প্রক্রিয়ার মধ্যে লেখাপড়ায় ভালো করা না-করা যে মাত্র একটি, এ কথা আমরা বিশ্বাস করি না, মানি না। দোষ দেব কাকে? প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংগঠনের প্রকৃতিটাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে অভিভাবক বা শিক্ষকদের নতুন পথে ভাববার কোনো সুযোগ থাকে না।
আমাদের শিশুশিক্ষার পুরো আয়োজনটি শিশুর নিজের মতো করে বেড়ে ওঠার পরিপন্থী, তার অনন্য প্রতিভার বিকাশের পরিপন্থী, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার পরিপন্থী, মানবিক গুণাবলি এবং সৌন্দর্যবোধসম্পন্ন রুচিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পরিপন্থী, আদর্শ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠার পরপন্থী।
কতগুলো প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষায় ভালো করানো স্কুলের অঙ্গীকার হতে পারে না। এমনকি শিক্ষার্থীকে শেখানোও শিক্ষকের দায়িত্ব নয়। শিক্ষকের দায়িত্ব হলো, শিক্ষার্থীকে শেখার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। একজন দাবা খেলোয়াড় প্রথমে দাবা খেলার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়, দাবা খেলার নিয়মকানুনের সঙ্গে পরিচিত হয়। কিন্তু সে যখন দাবা খেলে, তখন প্রতিটি নতুন পরিস্থিতিতে সে দাবা খেলার নিয়মের বই দেখে নিশ্চয়ই চাল দেয় না; বরং নিয়মের আওতায় সে তার নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, সৃষ্টিশীল প্রতিভা দিয়ে প্রতিটি নতুন পরিস্থিতি অতিক্রম করতে চেষ্টা করে। জ্ঞানার্জনের বিষয়টিও একই রকম। শিক্ষক জ্ঞানার্জনের নিয়মনীতি ও পদ্ধতির সঙ্গে শিক্ষার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেবেন। শিক্ষার্থী সব নতুন পরিস্থিতিতে সেই নিয়ম-রীতিকে প্রয়োগ করে সমস্যার একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। এ ক্ষেত্রে সে ব্যবহার করতে শিখবে তার যুক্তিমনস্কতা, কল্পনাপ্রতিভা, সৃষ্টিশীলতা, মনন ও বুদ্ধিমত্তা। যদি দক্ষতার এই স্তরে একজন শিক্ষার্থীকে পৌঁছে দেওয়া যায় অর্থাৎ তার পাঠ্যভুক্ত জ্ঞানের জগৎ নিয়ে তাকে চিন্তা করতে শেখানো যায় এবং জীবনযাপনের কোন কোন স্তরে কীভাবে সেই জ্ঞানকে ব্যবহার করা যায়, ইত্যাকার বিষয় সম্পর্কে যদি শিক্ষার্থীকে কৌতূহলী করে তোলা যায়, তাহলে রাত জেগে পাঠ্যপুস্তক কিংবা নোট মুখস্থ করার যন্ত্রণা আর থাকে না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর এই স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন যে পাঠ্য বিষয়কে সে তার নিজের মতো করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারবে এবং উক্ত পাঠের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সব বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যাপারটাই কোনো কোনো শিশুর জন্য কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ওই সব শিশু অপদার্থ। বরং এদের মধ্যে যে বহুতর সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে, সেই সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করার জন্যই স্কুলগুলোতে আছে সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম। খেলাধুলা, গান, আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক, লেখালেখি, বিজ্ঞান মেলা ইত্যাকার নানা বিষয় সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের অংশ। স্কুলে লেখাপড়ার মতো সমান গুরুত্ব দিয়ে যদি সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যেত, পড়াশোনায় সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীর মতো একজন খেলোয়াড় শিক্ষার্থী, একজন আঁকিয়ে শিক্ষার্থী, একজন গায়ক শিক্ষার্থী, একজন লিখিয়ে শিক্ষার্থীকে যদি মর্যাদা দেওয়া যেত এবং শিক্ষার্থীর ভালো লাগার জগৎটিকে তার জন্য উন্মুক্ত ও অবাধ করে দেওয়া যেত, তাহলে লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই প্রতিষ্ঠার অবিকল্প বিষয় হতো না। অভিভাবক ও শিক্ষকেরাও শুধু পরীক্ষায় ভালো করানোর জন্য শিক্ষার্থীর ওপর নিরবচ্ছিন্ন অত্যাচার করে যেতেন না।
কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীবান্ধব এই পরিস্থিতি কখনোই ছিল না, আজও নেই এবং কখনোই হবে কি না, তা-ও বলা যায় না। স্কুলগুলোতে খেলাধুলা নেই, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই, লেখালেখি করার সুযোগ নেই, আঁকিবুঁকি করার সুযোগ নেই। এককথায় খাতা-কলমে লিখে পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া শিক্ষার্থীর বিচিত্র প্রতিভা বিকাশের আর কোনো উপায় নেই। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বছরান্তে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, খেলাধুলার আয়োজন করে। এসব একান্তই প্রথাগত, কতটা লোকদেখানো। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীর অনন্য প্রতিভার স্ফুরণ তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা, বছরান্তে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠান দিয়ে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের অনন্য প্রতিভাকে চিহ্নিত করা যায় না।
একটি ইতিবাচক উদাহরণ দিই। ২০০৫ সাল থেকে ‘ঐতিহ্য-গোল্লাছুট-প্রথম আলো গল্পলেখা প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করছে। সেই আয়োজনটি বিপুল এক প্রাণের মেলা। কী নিয়ে? শিশুদের গল্প লেখা নিয়ে। কত শিশু যে গল্প লিখছে, প্রতিযোগিতায় গল্প নিয়ে এসেছে, তার ইয়ত্তা নেই। এর মধ্যে অনেক শিশু নিজেকে খুঁজে পেল লেখক হিসেবে। স্বপ্নের এই আহ্বান থেকে, কল্পনা প্রতিভার এই বিস্ময়কর বিকাশ থেকে হয়তো কোনো দিন আর তাকে ফিরে আসতে হবে না। ২০১০ সালের প্রতিযোগিতায় সর্বসেরা গল্পকার লুবাবা নাওয়ার তাই স্বপ্ন দেখে বড় লেখক হওয়ার। আমাদের স্কুলগুলো কি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাতে পারে—কবি হওয়ার স্বপ্ন, ঔপন্যাসিক হওয়ার স্বপ্ন, গল্পকার হওয়ার স্বপ্ন, নাট্যকার হওয়ার স্বপ্ন, প্রাবন্ধিক হওয়ার স্বপ্ন, খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন, গায়ক হওয়ার স্বপ্ন, গবেষক হওয়ার স্বপ্ন, চিত্রশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন, বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন, মানবদরদি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, আদর্শ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন, জনদরদি রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন, সৎ ও দক্ষ আমলা হওয়ার স্বপ্ন, দেশপ্রেমিক সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন? শিশুর মধ্যে তো স্বপ্নেরা ঘুমিয়ে থাকে। মায়ামমতার সোনার কাঠির স্পর্শে জাগিয়ে তুলতে হয় সেই স্বপ্ন। এর জন্য দরকার স্বপ্নবান শিক্ষক। স্বপ্নের বেসাতি ছাড়া শিশুকে দেওয়ার আর কী থাকতে পারে একজন শিক্ষকের? কিন্তু হায়! সেই শিক্ষক কোথায়? কোথায় সেই আয়োজনে পরিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান?
ড. সরকার আবদুল মান্নান: প্রাবন্ধিক, গবেষক।
আমাদের শিশুশিক্ষার পুরো আয়োজনটি শিশুর নিজের মতো করে বেড়ে ওঠার পরিপন্থী, তার অনন্য প্রতিভার বিকাশের পরিপন্থী, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার পরিপন্থী, মানবিক গুণাবলি এবং সৌন্দর্যবোধসম্পন্ন রুচিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পরিপন্থী, আদর্শ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠার পরপন্থী।
কতগুলো প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষায় ভালো করানো স্কুলের অঙ্গীকার হতে পারে না। এমনকি শিক্ষার্থীকে শেখানোও শিক্ষকের দায়িত্ব নয়। শিক্ষকের দায়িত্ব হলো, শিক্ষার্থীকে শেখার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। একজন দাবা খেলোয়াড় প্রথমে দাবা খেলার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়, দাবা খেলার নিয়মকানুনের সঙ্গে পরিচিত হয়। কিন্তু সে যখন দাবা খেলে, তখন প্রতিটি নতুন পরিস্থিতিতে সে দাবা খেলার নিয়মের বই দেখে নিশ্চয়ই চাল দেয় না; বরং নিয়মের আওতায় সে তার নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, সৃষ্টিশীল প্রতিভা দিয়ে প্রতিটি নতুন পরিস্থিতি অতিক্রম করতে চেষ্টা করে। জ্ঞানার্জনের বিষয়টিও একই রকম। শিক্ষক জ্ঞানার্জনের নিয়মনীতি ও পদ্ধতির সঙ্গে শিক্ষার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেবেন। শিক্ষার্থী সব নতুন পরিস্থিতিতে সেই নিয়ম-রীতিকে প্রয়োগ করে সমস্যার একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। এ ক্ষেত্রে সে ব্যবহার করতে শিখবে তার যুক্তিমনস্কতা, কল্পনাপ্রতিভা, সৃষ্টিশীলতা, মনন ও বুদ্ধিমত্তা। যদি দক্ষতার এই স্তরে একজন শিক্ষার্থীকে পৌঁছে দেওয়া যায় অর্থাৎ তার পাঠ্যভুক্ত জ্ঞানের জগৎ নিয়ে তাকে চিন্তা করতে শেখানো যায় এবং জীবনযাপনের কোন কোন স্তরে কীভাবে সেই জ্ঞানকে ব্যবহার করা যায়, ইত্যাকার বিষয় সম্পর্কে যদি শিক্ষার্থীকে কৌতূহলী করে তোলা যায়, তাহলে রাত জেগে পাঠ্যপুস্তক কিংবা নোট মুখস্থ করার যন্ত্রণা আর থাকে না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর এই স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন যে পাঠ্য বিষয়কে সে তার নিজের মতো করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারবে এবং উক্ত পাঠের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সব বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যাপারটাই কোনো কোনো শিশুর জন্য কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ওই সব শিশু অপদার্থ। বরং এদের মধ্যে যে বহুতর সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে, সেই সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করার জন্যই স্কুলগুলোতে আছে সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম। খেলাধুলা, গান, আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক, লেখালেখি, বিজ্ঞান মেলা ইত্যাকার নানা বিষয় সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের অংশ। স্কুলে লেখাপড়ার মতো সমান গুরুত্ব দিয়ে যদি সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যেত, পড়াশোনায় সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীর মতো একজন খেলোয়াড় শিক্ষার্থী, একজন আঁকিয়ে শিক্ষার্থী, একজন গায়ক শিক্ষার্থী, একজন লিখিয়ে শিক্ষার্থীকে যদি মর্যাদা দেওয়া যেত এবং শিক্ষার্থীর ভালো লাগার জগৎটিকে তার জন্য উন্মুক্ত ও অবাধ করে দেওয়া যেত, তাহলে লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই প্রতিষ্ঠার অবিকল্প বিষয় হতো না। অভিভাবক ও শিক্ষকেরাও শুধু পরীক্ষায় ভালো করানোর জন্য শিক্ষার্থীর ওপর নিরবচ্ছিন্ন অত্যাচার করে যেতেন না।
কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীবান্ধব এই পরিস্থিতি কখনোই ছিল না, আজও নেই এবং কখনোই হবে কি না, তা-ও বলা যায় না। স্কুলগুলোতে খেলাধুলা নেই, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই, লেখালেখি করার সুযোগ নেই, আঁকিবুঁকি করার সুযোগ নেই। এককথায় খাতা-কলমে লিখে পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া শিক্ষার্থীর বিচিত্র প্রতিভা বিকাশের আর কোনো উপায় নেই। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বছরান্তে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, খেলাধুলার আয়োজন করে। এসব একান্তই প্রথাগত, কতটা লোকদেখানো। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীর অনন্য প্রতিভার স্ফুরণ তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা, বছরান্তে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠান দিয়ে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের অনন্য প্রতিভাকে চিহ্নিত করা যায় না।
একটি ইতিবাচক উদাহরণ দিই। ২০০৫ সাল থেকে ‘ঐতিহ্য-গোল্লাছুট-প্রথম আলো গল্পলেখা প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করছে। সেই আয়োজনটি বিপুল এক প্রাণের মেলা। কী নিয়ে? শিশুদের গল্প লেখা নিয়ে। কত শিশু যে গল্প লিখছে, প্রতিযোগিতায় গল্প নিয়ে এসেছে, তার ইয়ত্তা নেই। এর মধ্যে অনেক শিশু নিজেকে খুঁজে পেল লেখক হিসেবে। স্বপ্নের এই আহ্বান থেকে, কল্পনা প্রতিভার এই বিস্ময়কর বিকাশ থেকে হয়তো কোনো দিন আর তাকে ফিরে আসতে হবে না। ২০১০ সালের প্রতিযোগিতায় সর্বসেরা গল্পকার লুবাবা নাওয়ার তাই স্বপ্ন দেখে বড় লেখক হওয়ার। আমাদের স্কুলগুলো কি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাতে পারে—কবি হওয়ার স্বপ্ন, ঔপন্যাসিক হওয়ার স্বপ্ন, গল্পকার হওয়ার স্বপ্ন, নাট্যকার হওয়ার স্বপ্ন, প্রাবন্ধিক হওয়ার স্বপ্ন, খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন, গায়ক হওয়ার স্বপ্ন, গবেষক হওয়ার স্বপ্ন, চিত্রশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন, বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন, মানবদরদি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, আদর্শ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন, জনদরদি রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন, সৎ ও দক্ষ আমলা হওয়ার স্বপ্ন, দেশপ্রেমিক সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন? শিশুর মধ্যে তো স্বপ্নেরা ঘুমিয়ে থাকে। মায়ামমতার সোনার কাঠির স্পর্শে জাগিয়ে তুলতে হয় সেই স্বপ্ন। এর জন্য দরকার স্বপ্নবান শিক্ষক। স্বপ্নের বেসাতি ছাড়া শিশুকে দেওয়ার আর কী থাকতে পারে একজন শিক্ষকের? কিন্তু হায়! সেই শিক্ষক কোথায়? কোথায় সেই আয়োজনে পরিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান?
ড. সরকার আবদুল মান্নান: প্রাবন্ধিক, গবেষক।
No comments