রক্তরঞ্জিত ক্যাম্পাসঃ নতুন করে বলার কিছুই নেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তের দাগ মুছতে না মুছতেই আবার রক্তরঞ্জিত হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দীর্ঘদিন ধরে হলে সিট দখলের যে তাণ্ডব শুরু হয়েছিল তারই জের ধরে ছাত্র সংঘর্ষে এবার নিহত হলো এক ছাত্র, আহত হলো শতাধিক।
ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সময়িকভাবে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এদিকে ছাত্র নিহত হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব বিভিন্ন ক্যাম্পাসের ছাত্র সংঘর্ষ ও ভর্তি বাণিজ্যে জড়িতদের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। সংঘর্ষের পর রাতেই বিভিন্ন হলে তল্লাশি চালিয়ে চল্লিশ ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা যায় গণিত বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে রাজশাহীর উপ-পুলিশ কমিশনার বলেছেন, এটি একটি সহিংস ঘটনা। প্রক্টরের ভাষ্যমতে, ছাত্র সংগঠনগুলোর আগ্রাসী মনোভাবের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবির একে অপরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে হত্যাকাণ্ডের দায়। ছাত্রলীগ থেকে বলা হয়েছে, শিবির পূর্বপরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগ বৈধ সিট দখল করতে গেলে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে শিবিরও বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। ছাত্রলীগ নিজেরাই তাদের কর্মীকে হত্যা করে শিবিরের নামে চালিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন মহল থেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের পর থেকে গত ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনা পর্যন্ত ২৭ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের হাতে বিভিন্ন সময়ে নিহত হয়েছেন ২৪ জন ছাত্র। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এদের মধ্যে ১৬ জন ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। বাকি পাঁচজন ছাত্রলীগের এবং তিনজন ছাত্রদলসহ অন্যান্য বাম সংগঠনের নেতাকর্মী। হত্যার ঘটনায় থানায় এক বা একাধিক মামলা দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলার সুষ্ঠু বিচার হয়নি বলে জানা গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যেসব ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তারও সুরাহা হয়েছে বলে জানা যায়নি। উপরন্তু এই সময়ে ছাত্রলীগ মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্বস্তিকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বারবার এমন অভিযোগও উঠেছে যে, ছাত্রলীগ শিক্ষাঙ্গনে উচ্ছৃঙ্খলতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়াসহ তাদের হামলায় আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ একাধিক শিক্ষক। এছাড়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হল দখল, সিট দখলের তাণ্ডব সব সীমা অতিক্রম করেছে। বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব তাণ্ডবের সূচনাপর্বেই প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের আপত্তিকর তত্পরতার অবসান করতে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগকে সামলানো যায়নি। সাধারণ মানুষ মনে করে, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের ছাত্র সংগঠনের ভূমিকার ওপর শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ-পরিস্থিতি বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। তাদের শুভবুদ্ধি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত রাখতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত এমনটিই চেয়েছিলেন। অথচ দলীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে ছাত্রলীগের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। সম্প্রতি ১৪ দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ছাত্রলীগের মধ্যে চিহ্নিত শিবির ঢুকে পড়েছে। অর্থাত্ তারাই এসব সংঘর্ষ বাধাচ্ছে ছাত্রলীগের ছদ্মাবরণে। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, যারা ‘চিহ্নিত’ তাদের শনাক্ত করা তো কোনো কঠিন কাজ নয়। তা করা হচ্ছে না কেন? এসব প্রশ্নের সদুত্তর খোঁজা দরকার।
এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। আমরা মনে করি শিক্ষাঙ্গন থেকে যে কোনো মূল্যে এই হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ছাত্ররাজনীতির লেজুড়বৃত্তি নিয়েও ভাবতে হবে নতুন করে। ফিরিয়ে আনতে হবে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ। এবং তা প্রমাণ করতে হবে শুধু মুখের কথায় নয়, কাজের ভিতর দিয়ে। আমাদের কারো অজানা নয় যে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাত্রলীগ সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসছে শিক্ষক পিটিয়ে, শিক্ষাঙ্গনে রক্ত ঝরিয়ে কিংবা টেন্ডারবাজি ও ভর্তিবাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে। সারাদেশে যেখানে নগ্ন দলীয়করণের মহোত্সব চলছে সেখানে ছাত্রলীগকে বাগে আনার কথা ভাবা অর্থহীন। গত এক বছর ধরে এসব নিয়ে অনেক কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
জানা গেছে, হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা যায় গণিত বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে রাজশাহীর উপ-পুলিশ কমিশনার বলেছেন, এটি একটি সহিংস ঘটনা। প্রক্টরের ভাষ্যমতে, ছাত্র সংগঠনগুলোর আগ্রাসী মনোভাবের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবির একে অপরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে হত্যাকাণ্ডের দায়। ছাত্রলীগ থেকে বলা হয়েছে, শিবির পূর্বপরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগ বৈধ সিট দখল করতে গেলে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে শিবিরও বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। ছাত্রলীগ নিজেরাই তাদের কর্মীকে হত্যা করে শিবিরের নামে চালিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন মহল থেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের পর থেকে গত ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনা পর্যন্ত ২৭ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের হাতে বিভিন্ন সময়ে নিহত হয়েছেন ২৪ জন ছাত্র। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এদের মধ্যে ১৬ জন ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। বাকি পাঁচজন ছাত্রলীগের এবং তিনজন ছাত্রদলসহ অন্যান্য বাম সংগঠনের নেতাকর্মী। হত্যার ঘটনায় থানায় এক বা একাধিক মামলা দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলার সুষ্ঠু বিচার হয়নি বলে জানা গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যেসব ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তারও সুরাহা হয়েছে বলে জানা যায়নি। উপরন্তু এই সময়ে ছাত্রলীগ মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্বস্তিকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বারবার এমন অভিযোগও উঠেছে যে, ছাত্রলীগ শিক্ষাঙ্গনে উচ্ছৃঙ্খলতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়াসহ তাদের হামলায় আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ একাধিক শিক্ষক। এছাড়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হল দখল, সিট দখলের তাণ্ডব সব সীমা অতিক্রম করেছে। বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব তাণ্ডবের সূচনাপর্বেই প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের আপত্তিকর তত্পরতার অবসান করতে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগকে সামলানো যায়নি। সাধারণ মানুষ মনে করে, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের ছাত্র সংগঠনের ভূমিকার ওপর শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ-পরিস্থিতি বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। তাদের শুভবুদ্ধি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত রাখতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত এমনটিই চেয়েছিলেন। অথচ দলীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে ছাত্রলীগের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। সম্প্রতি ১৪ দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ছাত্রলীগের মধ্যে চিহ্নিত শিবির ঢুকে পড়েছে। অর্থাত্ তারাই এসব সংঘর্ষ বাধাচ্ছে ছাত্রলীগের ছদ্মাবরণে। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, যারা ‘চিহ্নিত’ তাদের শনাক্ত করা তো কোনো কঠিন কাজ নয়। তা করা হচ্ছে না কেন? এসব প্রশ্নের সদুত্তর খোঁজা দরকার।
এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। আমরা মনে করি শিক্ষাঙ্গন থেকে যে কোনো মূল্যে এই হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ছাত্ররাজনীতির লেজুড়বৃত্তি নিয়েও ভাবতে হবে নতুন করে। ফিরিয়ে আনতে হবে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ। এবং তা প্রমাণ করতে হবে শুধু মুখের কথায় নয়, কাজের ভিতর দিয়ে। আমাদের কারো অজানা নয় যে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাত্রলীগ সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসছে শিক্ষক পিটিয়ে, শিক্ষাঙ্গনে রক্ত ঝরিয়ে কিংবা টেন্ডারবাজি ও ভর্তিবাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে। সারাদেশে যেখানে নগ্ন দলীয়করণের মহোত্সব চলছে সেখানে ছাত্রলীগকে বাগে আনার কথা ভাবা অর্থহীন। গত এক বছর ধরে এসব নিয়ে অনেক কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
No comments