ভিসেরাঃ তিন মাস মুখ বন্ধ by ফজলুল বারী
সাগর-রুনি’কে কে খুন করেছে, তা আজ পর্যন্ত কেউ জানে না! এ ঘটনার তদন্ত তদারকির দায়িত্ব নিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। আর পুলিশ কোর্টে গিয়ে বললো, তারা ব্যর্থ! জোড়া খুনের ঘটনা শনাক্ত হবার পর তাদের মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করা হয়। কিন্তু এতদিন পরে এসে বিজ্ঞ গোয়েন্দাদের মনে পড়লো, ভিসেরা রিপোর্ট দরকার ছিল!
অতএব এতদিনে পচাগলা লাশ দুটি আবার টেনে তোলো! আবার কাঁটা-ছেঁড়া করো! সাধারণভাবে একটি ভিসেরা পরীক্ষা প্রক্রিয়াজাত, শেষ করতে, রিপোর্ট পেতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। অতএব এমন কিছু করলে অন্তত তিন মাস তো এ ইস্যুতে দেশের মানুষের মুখ বন্ধ রাখা যাবে! সাংবাদিক নেতাদেরও আর কষ্ট করে আগামী তিন মাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চায়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে হবে না! বিদেশের নিরাপদ জীবন ছেড়ে বড় আশা করে দেশের জীবনে ফিরে গিয়েছিলেন আমাদের প্রিয় মেধাবী সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। দুর্ভাগ্য তারা বেডরুমে খুন হয়েছেন বলে রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নিলো না! অভাগা এতিম শিশু মেঘের আর কী বাবা-মা’র প্রিয় দেশে নিরাপদ-সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে?
সৌদি কূটনীতিক খুন হলেন তুলনামূলক সংরক্ষিত এলাকা কূটনৈতিক পাড়ায়। সরকারি লোকজন প্রথম বলার চেষ্টা করেন, ইনি কূটনীতিক না। অ্যাম্বেসিতে বসে বাংলাদেশে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকদের স্বার্থ দেখতেন। যেন তাই এভাবে তিনি মরতেই পারেন আর কী! কিন্তু এ নিয়ে আরব জাহানে প্রতিক্রিয়া খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে কথাটি আর দ্বিতীয়বার বলার চেষ্টা করা হয়নি। এরপর যখন সৌদি প্রতিনিধিদল এলো, তখন বলা হলো, এরা কোনো তদন্ত দল না। তদন্ত করতেও আসেনি। খুনের জায়গাটি পরিদর্শনে এসেছে। বাংলাদেশের তদন্তের ওপর তাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে, ইত্যাদি! তা সেই আস্থার শেষ খবর কী এখন? কে খুন করলো সৌদি কূটনীতিককে? কোন জবাব নেই। মাঝে কোন কোন মহল থেকে বলার চেষ্টা হয়েছে, কূটনীতিক খুনের পিছনে কোন পেশাদার বিদেশি কিলার থাকতে পারে। কারণ যেখানে যেভাবে তাকে গুলি করা হয়েছে, তা কোনো সাধারন গড় উচ্চতার বাংলাদেশি কিলারের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু সরকার থেকে, বাংলাদেশের সব বাঘা বাঘা গোয়েন্দার তরফে আজ পর্যন্ত তদন্তের বিষয়টি নিয়ে কোনো অগ্রগতির খবর দেয়া গেল না! এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জনশক্তির বাজার সৌদি আরবের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ জানে না।
বাংলাদেশে এখন টাকা ছাড়া চাকরি হয় না এটা সবাই জানেন। চট্টগ্রামে রেলওয়েতে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়া হচ্ছিল, এটিও ওপেন সিক্রেট ছিল সেখানে। অতঃপর একদিন মাঝরাতে বিজেবি’র পিলখানার সংরক্ষিত সীমার মধ্যে রেলমন্ত্রীর এপিএস’এর গাড়িতে সত্তুর লাখ টাকার কেলেংকারি ধরা পড়ল! গাড়িতে আবার ছিলেন রেলের একজন জিএম আর নিরাপত্তা কর্মকর্তা! তারা বললেন মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিলেন। সারারাত তাদের বসিয়ে রাখা হলো সেখানে। সকালে নাস্তা খাইয়ে আবার সসম্মানে ছেড়েও দেয়া হলো! মন্ত্রী প্রেসকনফারেন্স করে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করলেন। বললেন এগুলো তার পাঁচ মাস মন্ত্রিত্বের বয়সী এপিএস’র টাকা! তারা তার বাড়ি যাচ্ছিল না। এপিএস’এর বাড়ি যাচ্ছিল! এপিএস সত্তুর লাখ টাকার বস্তা নিয়ে বাড়ি যেতে সঙ্গে আবার রেলওয়ের একজন জিএম আর নিরাপত্তা কর্মকর্তা থাকা লাগে? তাও আবার মধ্যরাতে! এমন একের পর এক মিথ্যা ভাষণেও নিজেকে বাঁচতে না পেরে সব দায় নিয়ে তাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়। এরপর আবার বেরোয় পাঁচ কোটি টাকা জমা দিয়ে মন্ত্রীপুত্রের সরকারি একটি লাইসেন্স নেবার নিশ্চিত সূত্রের খবর! এসব নিয়ে দুদকের তদন্তের আওতায় পদত্যাগী রেলমন্ত্রীও পড়বেন খবর বেরুলে প্রধানমন্ত্রী সাহায্যের হাত বাড়ান! তাকে দফতর ছাড়াই মন্ত্রিসভায় রেখে দেন! পরিস্থিতি টের পেয়ে দুদকও সুর পালটে বলে, নাহ! সাবেক রেলমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা তারা বলেনি। প্রচারিত খবর ভিত্তিহীন!
কারণ দুদকও জানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর দুর্নীতির তদন্ত করা যায় না। পিলখানা কেলেংকারির নেট রেজাল্ট, কবি এখন নীরব! বাংলাদেশের অন্যতম বাগ্মী নেতা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর কথা বলেন না! যিনি প্রতিদিন গড়ে এক-দু’খানা রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতেন, তিনি আর তা দেন না। বা তার সে বড় মুখ আর নেই! তার বক্তৃতার অন্যতম বিখ্যাত চরিত্র ‘গোলাপী’কেও কথা বলতে বলেন না!
বিএনপির এক সময়কার ক্যাডার, সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ইস্যু দেশের এখন গরম ইস্যু। সরকার শুরু থেকে বলে আসছে কারা কাজটি করেছে তা তারা জানে না। জানার চেষ্টা করছে। মানুষ তাদের কথা বিশ্বাস করেনি। কারণ দেশে এটিই প্রথম গুমের ঘটনা না। এখন পর্যন্ত যত গুমের ঘটনা ঘটেছে, এর একটিরও বিশ্বাসযোগ্য জবাব দিতে পারেনি সরকার। বিএনপির সৃষ্টি করা ক্রসফায়ারে বিচার বর্হিভূত মানুষ হত্যা এ আমলেও অব্যাহত আছে। আগে এ নিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলতো বিএনপি। এখন বলছে আওয়ামী লীগ! মানুষ শুধু বেডরুমে খুন হচ্ছে না, পথ থেকেও নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে! বেডরুমে খুন হলেও লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু বেশিরভাগ গুম হওয়ার ঘটনায় কোনো লাশও পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস গুমের ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজন মানুষ খুন হয়েছেন। ঢাকা-সাভারে দু’জন শ্রমজীবী গাড়িচালককে পুড়িয়ে, মাথায় ইট মেরে হত্যা করেছে বিএনপি। সিলেটের বিশ্বনাথে তিন জন মরেছেন পুলিশের গুলিতে। এ নিয়ে বিএনপি তিনদিন হরতালও করে ফেলেছে। আরও হরতাল করবে বলেছে। এইচএসসি সহ অনেক পরীক্ষা পেছাতে হয়েছে। পুলিশ-র্যাব, দলীয় কর্মী মাঠে নামিয়েও দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারেনি সরকার। এর মাঝে আবার গুম নিয়ে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এরপর বলবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামনেস্টি সহ অন্যান্য সংস্থা! ইলিয়াস ইস্যু বিশেষ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে পাঁচ লক্ষাধিক সিলেটি বাংলাদেশি প্রভাবিত বিলাতে। আগামী নির্বাচনে এটি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ভোটের ফ্যাক্টর হবে। আপাত মনে হচ্ছে, এ ইস্যুতে সরকার ও বিরোধীদল পরস্পরকে দোষারোপ করে যাবে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ভোগাবে সরকারকেই। কারণ সরকার ক্ষমতায় আছে।
সোহেল তাজের পদত্যাগ দেশের রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। শিক্ষিত মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে বেশি বেশি আসার আহবান দেশের সুশীল সমাজের(দু:খিত, ‘সুশীল সমাজ’, ‘সংস্কার’ এসব কিন্তু এখন দেশে গালি হিসাবে চিহ্নিত)। কিন্তু বাস্তব অবস্থা তরুণ যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগ নির্ভেজাল নিষ্কলুষ নন।ব্যতিক্রম যারা আছেন-ছিলেন সোহেল তাজ তাদেরই একজন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সন্তান বড় আশা নিয়ে রাজনীতিতে এসে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নির্যাতন সহ্য করে টিকে থাকলেও নিজের দলের ক্ষমতার সময় কেন টিকতে পারলেন না, সে সত্য কেউ বললো না। সোহেল তাজ না, আওয়ামী লীগের সভানেত্রীও না! আত্মসম্মান বজায় রাখার কথা বলে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে প্রবাসজীবনে ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগ গ্রহণ না করে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে তাকে কেবিনেটে একতরফা ধরে রাখেন। তার বেতন-ভাতা তার অ্যাকাউন্টে জমা করতে থাকেন। কিন্তু এটি তার নৈতিকতায় বাধে। পদত্যাগের পরও কেন বেতন ভাতা তার অ্যাকাউন্টে আসছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের তরফে এর কোনো জবাব দেয়া হয়নি। এরপর তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সোহেল তাজ। সেখানে বলেছেন আর তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরবেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগই তার শেষ ঠিকানা। অর্থাৎ অন্য দলেও যাবেন না তাজউদ্দিনপুত্র সোহেল তাজ। শেখ হাসিনা তাকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন। কেন তিনি রাজনীতিতে থাকলেন না বা থাকতে পারলেন না তা শেখ হাসিনা বা সোহেল তাজ কেউ বললেন না! তাজউদ্দিনসহ জেলহত্যার শিকার জাতীয় চার নেতার স্বজন, পরিবারের সদস্য প্রতিনিধিদের রাজনীতিতে মর্যাদার আসনে রাখার শেখ হাসিনার চেষ্টাটি প্রকাশিত। সে জন্যে হয়তো পদত্যাগের পরও দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে তাকে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো তিনি আবার ফিরে আসবেন! অথবা ভেবেছিলেন অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতার টাকা জমা হতে থাকলে হয়ত সে মায়াতেও এক পর্যায়ে ফিরে আসবেন সোহেল তাজ! বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা হয়! কিন্তু সোহেল তাজ প্রমাণ করে দিলেন, তাকে যারা গড়পড়তা আর সবার মতো মনে করেছিল, তারা ভুল। কিন্তু সোহেল তাজের প্রতিবাদের কারণটি সুরাহার চেষ্টা শেখ হাসিনা কখনো করেছেন কীনা, তাও কেউ জানেনি। কেন শেষ পর্যন্ত তাকে সংসদ সদস্যপদ, সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতেও হলো, তাও জানলো না কেউ! অবাক ব্যাপার এমন একজন ব্যতিক্রমী সৎ মানুষ সোহেল তাজ পদত্যাগের পর কিছু অতি উৎসাহী আওয়ামী অনুরাগী ইন্টারনেটে, সোস্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে তার চরিত্রহনন শুরু করেছেন! নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের সময় এই জঘন্য অপতৎপরতা চালানো হয়েছিল সেলিনা হায়াত আইভী’র বিরুদ্ধে! এসব মানুষজনের জন্যেই কী সোহেল তাজের মতো নিপাট ভদ্রলোকদের আওয়ামী লীগে সক্রিয় থাকা দিনে দিনে শুধু অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে?
সোহেল তাজের পদত্যাগ নিয়ে নতুন এক ফাঁকফোঁকর খুজে পেয়েছে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়! কারণ সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণে আছে পদত্যাগপত্র হবে সহস্ত লিখিত। কিন্তু সোহেল তাজের পদত্যাগপত্র কম্পিউটারে কম্পোজকৃত, নিচে তার স্বাক্ষরকৃত ছিল। তাই পুরো পদত্যাগপত্রটি স্বহস্ত লিখিত না হওয়ায় তারা এক্ষেত্রে আইনি প্রশ্ন তুলেছে! স্পিকারও বিষয়টিকে আমলে নিয়েছেন! এতে এদের সবাই সরকারি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশিত হয়েছে তা ‘সইত্য’! সংবিধানটি যখন লিখা হয় তখন আমাদের হাতে কম্পিউটার ছিল না। তখন যারা এটি লিখেছেন তারাও তা হাতে লিখেছেন, তাও ‘সইত্য’। আজকের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি না থাকায় প্রথম সংবিধান মুদ্রিত হয় লেটার কম্পোজে। এরপর সুরঞ্জিতের কমিটি সংশোধনের সময়ও ভাষাগত বিষয়টিও পরখ-পর্যালোচনা করে দেখতে পারতো। অথবা মগজ এ রকম হলে উল্লেখ করে বলতে পারতো সংবিধানে যেহেতু হাতে লেখার উল্লেখ আছে, সেহেতু এটির কোনো কিছু মুদ্রিত আকারে বলা বা উল্লেখ করা অবৈধ!
একটা মানুষ কোথাও কাউকে কোনো অভিযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র নিজের আত্মসম্মান রক্ষার আকুতি জানিয়ে মন্ত্রিত্ব, সংসদ সদস্যপদ, বেতন-ভাতা সবকিছুর লোভ লালসা মাড়িয়ে নিজের ব্যক্তিগত ভুবনে চলে গেছেন, নিউজ ওয়ার্ল্ড নামের একটি বার্তা সংস্থার মাধ্যমে তার কথাগুলো প্রকাশ করেছেন সর্বত্র, কোথাও কিছু লুকাননি, তার কথাগুলো দেশের সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু একদল দলকানা লোক নিজেরা যা খুশি চেটেচুটে চলতে অভ্যস্ত-সন্তুষ্ট, তারা তা থাকুক, অন্যকেও তা শুনতে মানতে বাধ্য করবে কেন? এখানে একদল লোভী মানুষ সংসদে না গিয়েই নানান বাহানায় বেতন-ভাতা নেয়। আরেকদল গুরুত্বপূর্ণ পদের সুযোগে নানাকিছুতে চুরি-ডাকাতি করে, ধরা পড়লেও স্বীকার করে না! সোহেল তাজ তা নন। এসবের সঙ্গে থাকতে চাননি। কিন্তু তাকে তার মতো করে থাকার সুযোগও এরা দেবে না? ‘কম্পিউটার’ বিষয়টি সংযুক্ত হওয়াতে সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত এনালগ-ডিজিটাল বিষয়গুলো আরও সামনে চলে আসবে। সাগর-রুনি’র লাশ কবর থেকে তুলে পুনঃ ময়না তদন্তের মতো সোহেল তাজকেও আবার হয়তো ‘স্বহস্ত লিখিত সংবিধান সম্মত’ পদত্যাগ করে দলকানাদের নিয়ত অনুসারে সরকারি দলকে মিডিয়ায় আরও একদফা নাকানি চোবানি খাওয়ানো হবৈ বৈকি!
আসলে এর সব মিলিয়ে দেশের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি এর মাঝে ডাউন প্লে ঘটে গেছে মিডিয়ায়! ইলিয়াস আন্দোলনে হঠাৎ করে জামায়াতও-হিযবুত তাহরীরও মাঠে নেই! ১৩ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে জটিল করা হচ্ছে লোডশেডিং পরিস্থিতি! যেখানে বিএনপির বেশির ভাগ নেতা মাঠে নেই সেখানে একদল মারদাঙ্গা কর্মী হঠাৎ করে নেমে গেছে ময়দানে! রেল লাইনে নেমে তার ট্রেনেও এখন ঢিলাচ্ছে! কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্নারাও এখন ইলিয়াস ইস্যুতে মাঠে নেমেছেন, ইলিয়াস পরিবারের কাছে যাচ্ছেন, কিন্তু এ ঘটনায় নিহত পাঁচজন নিয়ে এদের বা কারোরই কোনো জোরালো অবস্থান নেই! এমনকি সরকারেরও না! তাদের বাড়িও কেউ খোঁজখবর নিতে যাচ্ছেন না! এসব পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন যারা কথা বলছেন, লিখছেন তাদের তথাকথিত সুশীল বলে গালি দেয়া হচ্ছে! কিন্তু আওয়ামী লীগের ঘর ভর্তি যে এত সুশীল লোকজন, তারা কেন নীরব, গণভবনের সেই ঝালমুড়ির আড্ডায় হঠাৎ একদিন ঢুঁ’ দেবার পর তারা আবার কোথাও আত্মগোপনে চলে গেলেন, তাও কেউ বলছে না!
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
সৌদি কূটনীতিক খুন হলেন তুলনামূলক সংরক্ষিত এলাকা কূটনৈতিক পাড়ায়। সরকারি লোকজন প্রথম বলার চেষ্টা করেন, ইনি কূটনীতিক না। অ্যাম্বেসিতে বসে বাংলাদেশে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকদের স্বার্থ দেখতেন। যেন তাই এভাবে তিনি মরতেই পারেন আর কী! কিন্তু এ নিয়ে আরব জাহানে প্রতিক্রিয়া খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে কথাটি আর দ্বিতীয়বার বলার চেষ্টা করা হয়নি। এরপর যখন সৌদি প্রতিনিধিদল এলো, তখন বলা হলো, এরা কোনো তদন্ত দল না। তদন্ত করতেও আসেনি। খুনের জায়গাটি পরিদর্শনে এসেছে। বাংলাদেশের তদন্তের ওপর তাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে, ইত্যাদি! তা সেই আস্থার শেষ খবর কী এখন? কে খুন করলো সৌদি কূটনীতিককে? কোন জবাব নেই। মাঝে কোন কোন মহল থেকে বলার চেষ্টা হয়েছে, কূটনীতিক খুনের পিছনে কোন পেশাদার বিদেশি কিলার থাকতে পারে। কারণ যেখানে যেভাবে তাকে গুলি করা হয়েছে, তা কোনো সাধারন গড় উচ্চতার বাংলাদেশি কিলারের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু সরকার থেকে, বাংলাদেশের সব বাঘা বাঘা গোয়েন্দার তরফে আজ পর্যন্ত তদন্তের বিষয়টি নিয়ে কোনো অগ্রগতির খবর দেয়া গেল না! এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জনশক্তির বাজার সৌদি আরবের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ জানে না।
বাংলাদেশে এখন টাকা ছাড়া চাকরি হয় না এটা সবাই জানেন। চট্টগ্রামে রেলওয়েতে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়া হচ্ছিল, এটিও ওপেন সিক্রেট ছিল সেখানে। অতঃপর একদিন মাঝরাতে বিজেবি’র পিলখানার সংরক্ষিত সীমার মধ্যে রেলমন্ত্রীর এপিএস’এর গাড়িতে সত্তুর লাখ টাকার কেলেংকারি ধরা পড়ল! গাড়িতে আবার ছিলেন রেলের একজন জিএম আর নিরাপত্তা কর্মকর্তা! তারা বললেন মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিলেন। সারারাত তাদের বসিয়ে রাখা হলো সেখানে। সকালে নাস্তা খাইয়ে আবার সসম্মানে ছেড়েও দেয়া হলো! মন্ত্রী প্রেসকনফারেন্স করে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করলেন। বললেন এগুলো তার পাঁচ মাস মন্ত্রিত্বের বয়সী এপিএস’র টাকা! তারা তার বাড়ি যাচ্ছিল না। এপিএস’এর বাড়ি যাচ্ছিল! এপিএস সত্তুর লাখ টাকার বস্তা নিয়ে বাড়ি যেতে সঙ্গে আবার রেলওয়ের একজন জিএম আর নিরাপত্তা কর্মকর্তা থাকা লাগে? তাও আবার মধ্যরাতে! এমন একের পর এক মিথ্যা ভাষণেও নিজেকে বাঁচতে না পেরে সব দায় নিয়ে তাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়। এরপর আবার বেরোয় পাঁচ কোটি টাকা জমা দিয়ে মন্ত্রীপুত্রের সরকারি একটি লাইসেন্স নেবার নিশ্চিত সূত্রের খবর! এসব নিয়ে দুদকের তদন্তের আওতায় পদত্যাগী রেলমন্ত্রীও পড়বেন খবর বেরুলে প্রধানমন্ত্রী সাহায্যের হাত বাড়ান! তাকে দফতর ছাড়াই মন্ত্রিসভায় রেখে দেন! পরিস্থিতি টের পেয়ে দুদকও সুর পালটে বলে, নাহ! সাবেক রেলমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা তারা বলেনি। প্রচারিত খবর ভিত্তিহীন!
কারণ দুদকও জানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর দুর্নীতির তদন্ত করা যায় না। পিলখানা কেলেংকারির নেট রেজাল্ট, কবি এখন নীরব! বাংলাদেশের অন্যতম বাগ্মী নেতা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর কথা বলেন না! যিনি প্রতিদিন গড়ে এক-দু’খানা রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতেন, তিনি আর তা দেন না। বা তার সে বড় মুখ আর নেই! তার বক্তৃতার অন্যতম বিখ্যাত চরিত্র ‘গোলাপী’কেও কথা বলতে বলেন না!
বিএনপির এক সময়কার ক্যাডার, সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ইস্যু দেশের এখন গরম ইস্যু। সরকার শুরু থেকে বলে আসছে কারা কাজটি করেছে তা তারা জানে না। জানার চেষ্টা করছে। মানুষ তাদের কথা বিশ্বাস করেনি। কারণ দেশে এটিই প্রথম গুমের ঘটনা না। এখন পর্যন্ত যত গুমের ঘটনা ঘটেছে, এর একটিরও বিশ্বাসযোগ্য জবাব দিতে পারেনি সরকার। বিএনপির সৃষ্টি করা ক্রসফায়ারে বিচার বর্হিভূত মানুষ হত্যা এ আমলেও অব্যাহত আছে। আগে এ নিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলতো বিএনপি। এখন বলছে আওয়ামী লীগ! মানুষ শুধু বেডরুমে খুন হচ্ছে না, পথ থেকেও নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে! বেডরুমে খুন হলেও লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু বেশিরভাগ গুম হওয়ার ঘটনায় কোনো লাশও পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস গুমের ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজন মানুষ খুন হয়েছেন। ঢাকা-সাভারে দু’জন শ্রমজীবী গাড়িচালককে পুড়িয়ে, মাথায় ইট মেরে হত্যা করেছে বিএনপি। সিলেটের বিশ্বনাথে তিন জন মরেছেন পুলিশের গুলিতে। এ নিয়ে বিএনপি তিনদিন হরতালও করে ফেলেছে। আরও হরতাল করবে বলেছে। এইচএসসি সহ অনেক পরীক্ষা পেছাতে হয়েছে। পুলিশ-র্যাব, দলীয় কর্মী মাঠে নামিয়েও দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারেনি সরকার। এর মাঝে আবার গুম নিয়ে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এরপর বলবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামনেস্টি সহ অন্যান্য সংস্থা! ইলিয়াস ইস্যু বিশেষ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে পাঁচ লক্ষাধিক সিলেটি বাংলাদেশি প্রভাবিত বিলাতে। আগামী নির্বাচনে এটি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ভোটের ফ্যাক্টর হবে। আপাত মনে হচ্ছে, এ ইস্যুতে সরকার ও বিরোধীদল পরস্পরকে দোষারোপ করে যাবে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ভোগাবে সরকারকেই। কারণ সরকার ক্ষমতায় আছে।
সোহেল তাজের পদত্যাগ দেশের রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। শিক্ষিত মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে বেশি বেশি আসার আহবান দেশের সুশীল সমাজের(দু:খিত, ‘সুশীল সমাজ’, ‘সংস্কার’ এসব কিন্তু এখন দেশে গালি হিসাবে চিহ্নিত)। কিন্তু বাস্তব অবস্থা তরুণ যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগ নির্ভেজাল নিষ্কলুষ নন।ব্যতিক্রম যারা আছেন-ছিলেন সোহেল তাজ তাদেরই একজন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সন্তান বড় আশা নিয়ে রাজনীতিতে এসে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নির্যাতন সহ্য করে টিকে থাকলেও নিজের দলের ক্ষমতার সময় কেন টিকতে পারলেন না, সে সত্য কেউ বললো না। সোহেল তাজ না, আওয়ামী লীগের সভানেত্রীও না! আত্মসম্মান বজায় রাখার কথা বলে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে প্রবাসজীবনে ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগ গ্রহণ না করে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে তাকে কেবিনেটে একতরফা ধরে রাখেন। তার বেতন-ভাতা তার অ্যাকাউন্টে জমা করতে থাকেন। কিন্তু এটি তার নৈতিকতায় বাধে। পদত্যাগের পরও কেন বেতন ভাতা তার অ্যাকাউন্টে আসছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের তরফে এর কোনো জবাব দেয়া হয়নি। এরপর তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সোহেল তাজ। সেখানে বলেছেন আর তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরবেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগই তার শেষ ঠিকানা। অর্থাৎ অন্য দলেও যাবেন না তাজউদ্দিনপুত্র সোহেল তাজ। শেখ হাসিনা তাকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন। কেন তিনি রাজনীতিতে থাকলেন না বা থাকতে পারলেন না তা শেখ হাসিনা বা সোহেল তাজ কেউ বললেন না! তাজউদ্দিনসহ জেলহত্যার শিকার জাতীয় চার নেতার স্বজন, পরিবারের সদস্য প্রতিনিধিদের রাজনীতিতে মর্যাদার আসনে রাখার শেখ হাসিনার চেষ্টাটি প্রকাশিত। সে জন্যে হয়তো পদত্যাগের পরও দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে তাকে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো তিনি আবার ফিরে আসবেন! অথবা ভেবেছিলেন অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতার টাকা জমা হতে থাকলে হয়ত সে মায়াতেও এক পর্যায়ে ফিরে আসবেন সোহেল তাজ! বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা হয়! কিন্তু সোহেল তাজ প্রমাণ করে দিলেন, তাকে যারা গড়পড়তা আর সবার মতো মনে করেছিল, তারা ভুল। কিন্তু সোহেল তাজের প্রতিবাদের কারণটি সুরাহার চেষ্টা শেখ হাসিনা কখনো করেছেন কীনা, তাও কেউ জানেনি। কেন শেষ পর্যন্ত তাকে সংসদ সদস্যপদ, সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতেও হলো, তাও জানলো না কেউ! অবাক ব্যাপার এমন একজন ব্যতিক্রমী সৎ মানুষ সোহেল তাজ পদত্যাগের পর কিছু অতি উৎসাহী আওয়ামী অনুরাগী ইন্টারনেটে, সোস্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে তার চরিত্রহনন শুরু করেছেন! নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের সময় এই জঘন্য অপতৎপরতা চালানো হয়েছিল সেলিনা হায়াত আইভী’র বিরুদ্ধে! এসব মানুষজনের জন্যেই কী সোহেল তাজের মতো নিপাট ভদ্রলোকদের আওয়ামী লীগে সক্রিয় থাকা দিনে দিনে শুধু অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে?
সোহেল তাজের পদত্যাগ নিয়ে নতুন এক ফাঁকফোঁকর খুজে পেয়েছে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়! কারণ সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণে আছে পদত্যাগপত্র হবে সহস্ত লিখিত। কিন্তু সোহেল তাজের পদত্যাগপত্র কম্পিউটারে কম্পোজকৃত, নিচে তার স্বাক্ষরকৃত ছিল। তাই পুরো পদত্যাগপত্রটি স্বহস্ত লিখিত না হওয়ায় তারা এক্ষেত্রে আইনি প্রশ্ন তুলেছে! স্পিকারও বিষয়টিকে আমলে নিয়েছেন! এতে এদের সবাই সরকারি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশিত হয়েছে তা ‘সইত্য’! সংবিধানটি যখন লিখা হয় তখন আমাদের হাতে কম্পিউটার ছিল না। তখন যারা এটি লিখেছেন তারাও তা হাতে লিখেছেন, তাও ‘সইত্য’। আজকের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি না থাকায় প্রথম সংবিধান মুদ্রিত হয় লেটার কম্পোজে। এরপর সুরঞ্জিতের কমিটি সংশোধনের সময়ও ভাষাগত বিষয়টিও পরখ-পর্যালোচনা করে দেখতে পারতো। অথবা মগজ এ রকম হলে উল্লেখ করে বলতে পারতো সংবিধানে যেহেতু হাতে লেখার উল্লেখ আছে, সেহেতু এটির কোনো কিছু মুদ্রিত আকারে বলা বা উল্লেখ করা অবৈধ!
একটা মানুষ কোথাও কাউকে কোনো অভিযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র নিজের আত্মসম্মান রক্ষার আকুতি জানিয়ে মন্ত্রিত্ব, সংসদ সদস্যপদ, বেতন-ভাতা সবকিছুর লোভ লালসা মাড়িয়ে নিজের ব্যক্তিগত ভুবনে চলে গেছেন, নিউজ ওয়ার্ল্ড নামের একটি বার্তা সংস্থার মাধ্যমে তার কথাগুলো প্রকাশ করেছেন সর্বত্র, কোথাও কিছু লুকাননি, তার কথাগুলো দেশের সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু একদল দলকানা লোক নিজেরা যা খুশি চেটেচুটে চলতে অভ্যস্ত-সন্তুষ্ট, তারা তা থাকুক, অন্যকেও তা শুনতে মানতে বাধ্য করবে কেন? এখানে একদল লোভী মানুষ সংসদে না গিয়েই নানান বাহানায় বেতন-ভাতা নেয়। আরেকদল গুরুত্বপূর্ণ পদের সুযোগে নানাকিছুতে চুরি-ডাকাতি করে, ধরা পড়লেও স্বীকার করে না! সোহেল তাজ তা নন। এসবের সঙ্গে থাকতে চাননি। কিন্তু তাকে তার মতো করে থাকার সুযোগও এরা দেবে না? ‘কম্পিউটার’ বিষয়টি সংযুক্ত হওয়াতে সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত এনালগ-ডিজিটাল বিষয়গুলো আরও সামনে চলে আসবে। সাগর-রুনি’র লাশ কবর থেকে তুলে পুনঃ ময়না তদন্তের মতো সোহেল তাজকেও আবার হয়তো ‘স্বহস্ত লিখিত সংবিধান সম্মত’ পদত্যাগ করে দলকানাদের নিয়ত অনুসারে সরকারি দলকে মিডিয়ায় আরও একদফা নাকানি চোবানি খাওয়ানো হবৈ বৈকি!
আসলে এর সব মিলিয়ে দেশের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি এর মাঝে ডাউন প্লে ঘটে গেছে মিডিয়ায়! ইলিয়াস আন্দোলনে হঠাৎ করে জামায়াতও-হিযবুত তাহরীরও মাঠে নেই! ১৩ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে জটিল করা হচ্ছে লোডশেডিং পরিস্থিতি! যেখানে বিএনপির বেশির ভাগ নেতা মাঠে নেই সেখানে একদল মারদাঙ্গা কর্মী হঠাৎ করে নেমে গেছে ময়দানে! রেল লাইনে নেমে তার ট্রেনেও এখন ঢিলাচ্ছে! কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্নারাও এখন ইলিয়াস ইস্যুতে মাঠে নেমেছেন, ইলিয়াস পরিবারের কাছে যাচ্ছেন, কিন্তু এ ঘটনায় নিহত পাঁচজন নিয়ে এদের বা কারোরই কোনো জোরালো অবস্থান নেই! এমনকি সরকারেরও না! তাদের বাড়িও কেউ খোঁজখবর নিতে যাচ্ছেন না! এসব পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন যারা কথা বলছেন, লিখছেন তাদের তথাকথিত সুশীল বলে গালি দেয়া হচ্ছে! কিন্তু আওয়ামী লীগের ঘর ভর্তি যে এত সুশীল লোকজন, তারা কেন নীরব, গণভবনের সেই ঝালমুড়ির আড্ডায় হঠাৎ একদিন ঢুঁ’ দেবার পর তারা আবার কোথাও আত্মগোপনে চলে গেলেন, তাও কেউ বলছে না!
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
No comments