রঙ্গব্যঙ্গ-ফখরুদ্দীন-মইনের টেলি-সংলাপ by মোস্তফা কামাল
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের কথা নিশ্চয়ই পাঠকদের মনে হয়। ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংস ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে গঠিত সংসদীয় তদন্ত কমিটি তাঁদের দুজনকে তলব করেছে।
তলবের চিঠি তাঁদের হাতে পেঁৗছানোর জন্য প্রথমে তাঁদের গরু খোঁজার মতো খোঁজা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁদের অবস্থান জানা যায়। অবশেষে তলবের চিঠি পেঁৗছানো হয়। এ জন্য অবশ্য দূতাবাসের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। কারণ ফখরুদ্দীন-মইন দুজনই থাকেন আমেরিকায়। দুজন দুই স্টেটে। তলবের চিঠি পেয়ে ফখরুদ্দীন তো বেশ উদ্বিগ্ন। তিনি মইন সাহেবকে ফোন করেন। টেলিফোনে তাঁদের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়েছে তা আমরা কল্পনা করতে পারি।
ফখরুদ্দীন : হ্যালো মইন সাহেব?
মইন : জি বলছি। বড় ভাই নাকি?
ফখরুদ্দীন : আরে রাখেন আপনার বড় ভাই! বড় ভাই বানাইয়া তো মহাঝামেলায় ফেলে দিলেন!
মইন : কেন, কী হয়েছে বড় ভাই? কোনো সমস্যা?
ফখরুদ্দীন : আপনি কোনো চিঠি পেয়েছেন?
মইন : কোন চিঠি? সংসদীয় কমিটির?
ফখরুদ্দীন : হ্যাঁ।
মইন : পেয়েছি। আমাকে তলব করা হয়েছে।
ফখরুদ্দীন : তাই নাকি! আমাকেও তো তলব করেছে। কী, ঘটনা কী?
মইন : ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছিল, তা রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য নাকি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তারা আমাদের বক্তব্য জানতে চায়। কেন সেই ঘটনা ঘটেছিল, আমাদের ভূমিকা কী ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফখরুদ্দীন : এরা একটু বাড়াবাড়ি করছে না?
মইন : একটু না ব্যাপক।
ফখরুদ্দীন : এটা কেন করছে?
মইন : বুঝতে পারছেন না_আমাদের বিব্রত করার জন্য। লোকগুলো আসলে বদ!
ফখরুদ্দীন : হুম! বিএনপি হরহামেশা আমাদের নিয়ে কথা বলছে। এখন আওয়ামী লীগের লোকরাও টানাটানি করছে।
মইন : আমি তাদের দোষ দিই না। তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। আমরা যদি মাইনাস টু থিওরিতে না যেতাম, তাহলে এখনো আমরা ক্ষমতায় থাকতে পারতাম!
ফখরুদ্দীন : তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন।
মইন : সব শনির মূল আপনার মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির বন্ধুরা। তাঁদের কারণে আমাদের আজ এই দশা। তাঁরা বললেন, দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে না সরালে কিছুই হবে না। আমরাও দেখলাম, কথা ঠিক। তাই দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিলাম। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে মহা ধরা!
ফখরুদ্দীন : তখন তো আপনাকেও দায়িত্ব নিতে বলা হলো। কেন দায়িত্ব নেননি? কেন দেরি করছিলেন বলুন তো। ভেতরে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে।
মইন : কিভাবে নেব? দুই নেত্রীকে আটকের পর তো পুরো পরিস্থিতিই পাল্টে গেল। তখন দায়িত্ব নেব কী, দায়িত্ব ছাড়তে পারলে বাঁচি। তখন মনে হলো, দায়িত্ব না ছাড়লে জনগণের কিল একটাও মাটিতে পড়বে না।
ফখরুদ্দীন : আপনি আসলে একটা ভীতু লোক। আপনি যে কিভাবে সেনাপ্রধান হলেন!
মইন : হায় রে! ভীতু না হলে কি আর তারেক রহমান আমাকে সেনাপ্রধান বানায়। আচ্ছা, আপনাকেও তো তারেক রহমানই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানাল।
ফখরুদ্দীন : আরে না! বেগম জিয়া বানাইছে। এ কথা ভুলেও কাউকে বলবেন না।
মইন : কেন?
ফখরুদ্দীন : তাহলে মানুষ বলবে, আপনারা থাকতে বিএনপির এত ভরাডুবি কিভাবে হলো?
মইন : আমরা তো চেয়েছিলামই, কিন্তু...
ফখরুদ্দীন : আরে ভাই চুপ করেন তো (প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য)। আসলে মানুষ যে দুই নেত্রীকে এ রকম পাগলের মতো ভালোবাসে তা কি বুঝতে পেরেছি? আমরা দেখলাম, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। দেশটা একটা বড় ধরনের ক্রাইসিস থেকে মুক্ত হলো।
মইন : ঠিক ওই সময়ই যদি আমি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে নিতাম, তাহলে বোধ হয় ভালো হতো।
ফখরুদ্দীন : তা হয়তো হতো। কিন্তু আমাদের অভিভাবক (দাতাগোষ্ঠী) বন্ধুরা তো তখন আপত্তি তুলল। বলল, কেয়ারটেকার সিস্টেমেই থাকুন। এই প্রক্রিয়াটা সবাই পছন্দ করছে। এই সিস্টেমটা দীর্ঘস্থায়ী করলে অসুবিধা কী? তারা এও বললেন, আপনারা এবার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করুন। দেখবেন, ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবেন। আমরাও দেখলাম, কথাটা মন্দ নয়।
মইন : সেখানেও তো মহা ধরা খেলাম।
ফখরুদ্দীন : ধরা খাব না! আপনার লোকরা উল্টাপাল্টা লিস্ট করল। ব্যবসায়ী, রাজনীতিক_সবাইকে টার্গেট করল। টাকা বানানোর ধান্দা মাথায় ঢুকল। আর তার মধ্য দিয়ে আমাদের কবরও রচিত হলো।
মইন : আসলে আমরাও তখন বাড়াবাড়ি করেছি। আমরা যদি তালিকা বড় না করে ৫০ জন দুর্নীতিবাজকে শাস্তি দিতে পারতাম। তাহলে আর কিছু করা লাগত না। মানুষ আমাদের চিরজীবন মনে রাখত। আমাদের মধ্যে দুষ্ট লোক ঢুকে গেল। তারাই সর্বনাশ ডেকে আনল।
ফখরুদ্দীন : এখন আর অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। আপনার নিজের লোকরাই বেশি ক্ষতি করেছে। কি, ভুল বললাম?
মইন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ঘটনার জন্য তো আমার লোকরাই দায়ী। তা ছাড়া কিছু সুবিধাবাদী লোককে দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করাও বোধ হয় ঠিক হয়নি। মানুষ ওইসব কর্মকাণ্ডকে ভালোভাবে নেয়নি।
ফখরুদ্দীন : এই যে, এত দিন পর আমার লাইনে এলেন। আমিও তো বলেছিলাম, গোয়েন্দা-ফোয়েন্দা দিয়ে ওসব করানোর দরকার নেই। আপনি তখন শুনলেন না। এখন!
মইন : স্যরি, বড় ভাই। ভুল তো মানুষই করে, নাকি! আপনারও ভুল আছে। আমারও ভুল আছে। ভুলে ভুলে কাটাকাটি। এবার রাখি। ভালো থাকবেন।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
ফখরুদ্দীন : হ্যালো মইন সাহেব?
মইন : জি বলছি। বড় ভাই নাকি?
ফখরুদ্দীন : আরে রাখেন আপনার বড় ভাই! বড় ভাই বানাইয়া তো মহাঝামেলায় ফেলে দিলেন!
মইন : কেন, কী হয়েছে বড় ভাই? কোনো সমস্যা?
ফখরুদ্দীন : আপনি কোনো চিঠি পেয়েছেন?
মইন : কোন চিঠি? সংসদীয় কমিটির?
ফখরুদ্দীন : হ্যাঁ।
মইন : পেয়েছি। আমাকে তলব করা হয়েছে।
ফখরুদ্দীন : তাই নাকি! আমাকেও তো তলব করেছে। কী, ঘটনা কী?
মইন : ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছিল, তা রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য নাকি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তারা আমাদের বক্তব্য জানতে চায়। কেন সেই ঘটনা ঘটেছিল, আমাদের ভূমিকা কী ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফখরুদ্দীন : এরা একটু বাড়াবাড়ি করছে না?
মইন : একটু না ব্যাপক।
ফখরুদ্দীন : এটা কেন করছে?
মইন : বুঝতে পারছেন না_আমাদের বিব্রত করার জন্য। লোকগুলো আসলে বদ!
ফখরুদ্দীন : হুম! বিএনপি হরহামেশা আমাদের নিয়ে কথা বলছে। এখন আওয়ামী লীগের লোকরাও টানাটানি করছে।
মইন : আমি তাদের দোষ দিই না। তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। আমরা যদি মাইনাস টু থিওরিতে না যেতাম, তাহলে এখনো আমরা ক্ষমতায় থাকতে পারতাম!
ফখরুদ্দীন : তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন।
মইন : সব শনির মূল আপনার মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির বন্ধুরা। তাঁদের কারণে আমাদের আজ এই দশা। তাঁরা বললেন, দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে না সরালে কিছুই হবে না। আমরাও দেখলাম, কথা ঠিক। তাই দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিলাম। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে মহা ধরা!
ফখরুদ্দীন : তখন তো আপনাকেও দায়িত্ব নিতে বলা হলো। কেন দায়িত্ব নেননি? কেন দেরি করছিলেন বলুন তো। ভেতরে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে।
মইন : কিভাবে নেব? দুই নেত্রীকে আটকের পর তো পুরো পরিস্থিতিই পাল্টে গেল। তখন দায়িত্ব নেব কী, দায়িত্ব ছাড়তে পারলে বাঁচি। তখন মনে হলো, দায়িত্ব না ছাড়লে জনগণের কিল একটাও মাটিতে পড়বে না।
ফখরুদ্দীন : আপনি আসলে একটা ভীতু লোক। আপনি যে কিভাবে সেনাপ্রধান হলেন!
মইন : হায় রে! ভীতু না হলে কি আর তারেক রহমান আমাকে সেনাপ্রধান বানায়। আচ্ছা, আপনাকেও তো তারেক রহমানই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানাল।
ফখরুদ্দীন : আরে না! বেগম জিয়া বানাইছে। এ কথা ভুলেও কাউকে বলবেন না।
মইন : কেন?
ফখরুদ্দীন : তাহলে মানুষ বলবে, আপনারা থাকতে বিএনপির এত ভরাডুবি কিভাবে হলো?
মইন : আমরা তো চেয়েছিলামই, কিন্তু...
ফখরুদ্দীন : আরে ভাই চুপ করেন তো (প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য)। আসলে মানুষ যে দুই নেত্রীকে এ রকম পাগলের মতো ভালোবাসে তা কি বুঝতে পেরেছি? আমরা দেখলাম, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। দেশটা একটা বড় ধরনের ক্রাইসিস থেকে মুক্ত হলো।
মইন : ঠিক ওই সময়ই যদি আমি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে নিতাম, তাহলে বোধ হয় ভালো হতো।
ফখরুদ্দীন : তা হয়তো হতো। কিন্তু আমাদের অভিভাবক (দাতাগোষ্ঠী) বন্ধুরা তো তখন আপত্তি তুলল। বলল, কেয়ারটেকার সিস্টেমেই থাকুন। এই প্রক্রিয়াটা সবাই পছন্দ করছে। এই সিস্টেমটা দীর্ঘস্থায়ী করলে অসুবিধা কী? তারা এও বললেন, আপনারা এবার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করুন। দেখবেন, ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবেন। আমরাও দেখলাম, কথাটা মন্দ নয়।
মইন : সেখানেও তো মহা ধরা খেলাম।
ফখরুদ্দীন : ধরা খাব না! আপনার লোকরা উল্টাপাল্টা লিস্ট করল। ব্যবসায়ী, রাজনীতিক_সবাইকে টার্গেট করল। টাকা বানানোর ধান্দা মাথায় ঢুকল। আর তার মধ্য দিয়ে আমাদের কবরও রচিত হলো।
মইন : আসলে আমরাও তখন বাড়াবাড়ি করেছি। আমরা যদি তালিকা বড় না করে ৫০ জন দুর্নীতিবাজকে শাস্তি দিতে পারতাম। তাহলে আর কিছু করা লাগত না। মানুষ আমাদের চিরজীবন মনে রাখত। আমাদের মধ্যে দুষ্ট লোক ঢুকে গেল। তারাই সর্বনাশ ডেকে আনল।
ফখরুদ্দীন : এখন আর অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। আপনার নিজের লোকরাই বেশি ক্ষতি করেছে। কি, ভুল বললাম?
মইন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ঘটনার জন্য তো আমার লোকরাই দায়ী। তা ছাড়া কিছু সুবিধাবাদী লোককে দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করাও বোধ হয় ঠিক হয়নি। মানুষ ওইসব কর্মকাণ্ডকে ভালোভাবে নেয়নি।
ফখরুদ্দীন : এই যে, এত দিন পর আমার লাইনে এলেন। আমিও তো বলেছিলাম, গোয়েন্দা-ফোয়েন্দা দিয়ে ওসব করানোর দরকার নেই। আপনি তখন শুনলেন না। এখন!
মইন : স্যরি, বড় ভাই। ভুল তো মানুষই করে, নাকি! আপনারও ভুল আছে। আমারও ভুল আছে। ভুলে ভুলে কাটাকাটি। এবার রাখি। ভালো থাকবেন।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
No comments