রাজনৈতিক অস্থিরতা-আর হরতাল নয়
টানা তিনদিনের হরতালে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ। দেশ যেন ফিরে গেছে পুরনো অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার বৃত্তে। যানবাহনে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, সংঘর্ষ ও সংঘাতের খবর_ একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। অবাধ চলাফেরায় ছেদ, হরতালের নানামুখী দুর্ভোগে নাগরিকরা শুধু ত্যক্তবিরক্ত নয়,
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও এখন চরমে। গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট, সহনশীলতা, সমঝোতার যে সংস্কৃতি সীমিত আকারে শুরু হয়েছিল তা থেকে দূরে সরে আসছে রাজনীতি। সরকারের মেয়াদের প্রথম দু'বছর বিরোধী দল হরতাল দিয়েছে অপেক্ষাকৃত কম। হরতালের বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচির দিকেও ইতিবাচক ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে। অতিসম্প্রতি জনমত গঠনের জন্য লংমার্চ ও সভা-সমাবেশ করার প্রতিই তারা মনোযোগী ছিল। সেসব কর্মসূচি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর প্রায় বিনা নোটিশেই তিনদিনের হরতাল পালন করল বিএনপি। দলীয় একজন নেতার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় অবশ্যই প্রতিবাদ হবে; কিন্তু এ নিয়ে টানা তিনদিনের হরতাল কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হরতালে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির যে ক্ষতি হয় তা অপূরণীয়। রফতানিমুখী শিল্পগুলো সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হয়। এমনকি সাধারণ বাজারেও সরবরাহ কমে গিয়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি হরতাল পরিহারের আহ্বান জানিয়েছে। আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসায়ীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হরতালের পথ চিরতরে ত্যাগ করবে। ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের জন্য বিএনপি চারদিনের আলটিমেটাম দিয়েছে। আমরা আশা করব, এ সময় এমনকি অতিক্রান্ত হলেও হরতাল দেওয়া হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করা উচিত নয় যাতে হরতাল-জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো কর্মসূচি আসে। দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দায়িত্ব সরকারের। গুমের মতো যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বিষয়গুলোর সমাধান করা। আর বিরোধী দলের উচিত যে কোনো পরিস্থিতিতে বিকল্প কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে নামা। শান্তিপূর্ণ যে কোনো কর্মসূচি হরতালের চেয়ে বেশি সমর্থন পেতে পারে। বিগত তিনদিনের হরতালে সমাজে যে অস্থিরতা নেমে এসেছে তা থেকে স্পষ্ট যে, হরতাল শুধু অর্থনীতির জন্যই নয়_ সার্বিক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির জন্যই ক্ষতিকর। রাজনৈতিক কর্মসূচি হলেও এ থেকে যে গ্রেফতার-জ্বালাও-পোড়াও-বোমাবাজির সৃষ্টি হয় তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এবারের হরতালে বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কোনো সচেতন নাগরিকই এমন পরিস্থিতি সমর্থন করতে পারেন না। স্বার্থান্ধ রাজনীতির দায় মেটাতে গিয়ে জানমালের এমন অপূরণীয় ক্ষতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয়। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকরা আশা করেন, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊধর্ে্ব উঠে দেশ ও জাতির স্বার্থকেই বড় করে দেখবে। পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে এমন ঘটনা ও কর্মসূচির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে যে কোনো সমস্যায় সরকার ও বিরোধী দল আলোচনার টেবিলে বসলে সেটিই হবে প্রত্যাশিত পদক্ষেপ।
No comments