নতুন আশায় শুরু হোক নতুন বছর-স্বাগত ২০১১

আজ, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিন। বিশ্ববাসী পা রাখল একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। বাংলাদেশ পদার্পণ করল স্বাধীনতা অর্জনের ৪০তম বছরে। নতুন বছরের এই নবীন প্রভাতে আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


এ এমন এক মুহূর্ত, যখন আনন্দ উদ্যাপনের পাশাপাশি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখার উপলক্ষও আসে। ঠিক এক বছর আগে যেভাবে আমরা তার আগের বছরের দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকিয়েছিলাম, আশা-প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে চেষ্টা করেছিলাম, ব্যর্থতা ও অপ্রাপ্তিগুলো পূরণের জন্য নতুন আশা ও স্বপ্নে মনকে উজ্জীবিত করেছিলাম, আজও আমাদের মন তা-ই করতে চায়।
নতুন বছরে পদার্পণের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় বছর পূর্ণ হতে চলেছে ৬ জানুয়ারি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয়ের পেছনে তাদের যেসব নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল, সেগুলোর আজ কী অবস্থা, তা আজ তাদের পর্যালোচনা করে দেখার সময়। ২০১০ সালে বাংলাদেশের জন্য কয়েকটি গৌরবজনক ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট বিজয়, যে ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে প্রথমবারের মতো উড্ডীন হয়েছে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে সোনালি আঁশখ্যাত আমাদের একসময়ের অতিশয় অর্থকরী ফসল পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের ঘটনাটিও এক বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। একটি ভালো শিক্ষানীতিও গৃহীত হয়েছে ২০১০ সালে, স্বাধীনতার প্রায় ৩৯ বছর পর। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারকাজ ২০১০ সালে এসে আগের চেয়ে বেগবান হয়েছে। এসব অপরাধের অভিযোগে মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে বিচার-প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে জনমত প্রবল, বিচার-প্রক্রিয়ার ধীরগতির জন্য অনেক অসন্তোষও ব্যক্ত হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিক অনুশীলনের ক্ষেত্রে উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সংসদ অধিবেশনগুলোতে যোগ দেয়নি। উপরন্তু, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যকার সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষণ নেই। বিরোধ-সংঘাতের সেই পুরোনো আবর্তেই রাজনীতি ঘুরপাক খেতে থাকলে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের উপযোগী দেশ আমরা কীভাবে গড়ব?
সরকার মোটের ওপর শাসনকাজ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমলাতন্ত্রে ব্যাপক রদবদলের ফলে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জঙ্গিবাদী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু পুলিশ হেফাজতে ও র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ মৃত্যু বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত থেকেছে এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমেনি, বরং কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে বেশ বেড়েছে—সরকার বাজারের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেয়েছে।
এসব বাস্তবতা সঙ্গে নিয়েই আমরা আরও এক নতুন বছর এবং নতুন দশক শুরু করছি। আমরা সব সময় আশাবাদী। আমরা স্বপ্ন দেখি সামনের দিনগুলো সুন্দর হবে। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনকল্যাণের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে, বৈরিতার পরিবর্তে সহযোগিতার সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।

No comments

Powered by Blogger.