প্রতিক্রিয়া-এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় —মাহবুবুর রহমান

সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সেনা অভ্যুত্থান-চেষ্টার ঘটনায় আমি অত্যন্ত ব্যথিত, উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত বোধ করছি। এ ধরনের ঘটনার আর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য সরকার ও সেনাবাহিনীকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।


সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থান-চেষ্টার বিষয়ে সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে না দেখে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর মূলোৎপাটন করতে হবে।
মাহবুবুর রহমান প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। তিনি ১৯৯৬ সালের মে থেকে ১৯৯৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একজন সেনাসদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান হিসেবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই সমর্থন করি না। সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে, দেশে-বিদেশে শান্তিরক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেধা, যোগ্যতা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে সুনাম কুড়িয়েছে। কিছু সদস্য সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় সেনাবাহিনীর কিছুটা হলেও সুনাম নষ্ট করেছে। তবে সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ দিতে হবে এ কারণে যে তারা পুরো প্রক্রিয়াটি নস্যাৎ করতে পেরেছে।’
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, সেনাসদর সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার জন্য ধর্মান্ধ সেনা কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার কথা বলেছে। এটা সেনাবাহিনীর নিজস্ব বক্তব্য। তবে যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, তা তদন্তের মাধ্যমে বের করতে হবে। এ ঘটনার গভীর থেকে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে শুধু সেনাবাহিনীর গৌরব রক্ষায় পেশাদারি দেখিয়ে ঘটনার তদন্তে নামতে হবে। দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা থাকার অবকাশ নেই। এটা অবশ্যই মানতে হবে। বিশৃঙ্খলা সেনাবাহিনীর পেশাদারি ও সুনামের ওপর আঘাত ছাড়া কিছুই নয়। অভ্যুত্থান-চেষ্টার সঙ্গে জড়িত কিছু সেনাসদস্যের নাম এসেছে, তদন্ত চলছে। বলা হচ্ছে, ১৪ থেকে ১৬ জন এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। বিদেশে বসবাসরত প্রবাসীদের কথাও বলা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আরও গভীরে গিয়ে এর তদন্ত করতে হবে। মূল চিহ্নিত করতে না পারলে এবং সাজা দিতে না পারলে তা ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না। শুধু দোষারোপ করা ঠিক হবে না। এতে মূল অপরাধীরা আড়ালে চলে যেতে পারে।
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, গত তিন বছরে সেনাবাহিনী নিয়ে নানা কথা শোনা গেছে। সর্বশেষ সেনাসদর একটি প্রক্রিয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। এখন সেনাবাহিনী ও সরকারকে সতর্ক হতে হবে। মানুষ সেনাবাহিনীকে সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে দেখতে চায়।
সেনা অভ্যুত্থান-চেষ্টার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানোর ঘটনা বিরল মন্তব্য করে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, এটিকে ভালো ও মন্দ দুভাবেই দেখা যেতে পারে। ভালো দিক হলো, এর ফলে সেনাসদস্যদের একধরনের সংকেত দেওয়া গেছে যে এ ধরনের চেষ্টা সফল হবে না, সেনাবাহিনী এ ধরনের প্রচেষ্টার সঙ্গে থাকতে চায় না। ফলে যদি কারও মধ্যে এ নিয়ে কোনো ধরনের আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলে তা আর বাড়তে পারবে না। আর খারাপ দিকটি হলো, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকবে। বিপথগামী সেনাসদস্যরা সতর্ক হয়ে নতুন পথে এগোনোর চেষ্টা করতে পারেন। তবে এই বার্তাও স্পষ্ট হয়েছে যে বর্তমান সেনাবাহিনী সরকার উৎখাতে নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো।

No comments

Powered by Blogger.