সদরে অন্দরে-এমন নৃশংসতাও কি বন্ধ হবে না! by মোস্তফা হোসেইন
ফর্সা এক তরুণকে দুই হাত বেঁধে পেটাচ্ছে বিএসএফ। ইয়া লম্বা লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত হানা হচ্ছে যুবকটির শরীরে। একবার মনে হলো, যিশুর মতো তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে বুঝি! দুই হাত প্রসারিত দুদিকে। খাড়া হয়ে আছে যুবকটি। বেদম পিটিয়ে চলছে জওয়ানরা। স্পষ্টতই বোঝা যায়, পিটুনি খেয়ে আর সইতে পারছে না সে। নেতিয়ে পড়ে নিচের দিকে। ঝুলে পড়েছে দড়ি কিংবা তারে_যাতে তার হাত বাঁধা ছিল।
নেতিয়ে পড়া যুবকটির গায় তখনো বাঁশ কিংবা বড় সেই লাঠির আঘাত চলতে থাকে। যুবকটি শুয়ে পড়তে চায়। জওয়ানের জোয়ানকি যেন তর সয় না! আঘাতের পর আঘাত চলে যুবকের গায়। সইতে পারে না যুবক। পা জোড়া শূন্যে উঠে যায়। এবার মারের কৌশল বদলে যায়। শূন্যে ঝুলে থাকা পায়ের তালুতে চলে আঘাতের পর আঘাত। এর আগে যে মুহূর্তে যুবকটি নেতিয়ে পড়েছিল, ওই সময় তার পরনের কাপড়চোপড় খুলে ফেলা হয়। একেবারে বিবস্ত্র করা হয় তাকে। টেলিভিশনের পর্দায় তখনো স্পষ্ট দেখা যায়, উলঙ্গ যুবকটিকে পিটিয়ে চলেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কতিপয় সদস্য। ভারতের এনডিটিভি কর্তৃপক্ষ ছবিতে অস্পষ্টতা আনে যুবকটির উলঙ্গতা রক্ষা করতে। দুর্বিষহ চিত্র দেখে যে কেউ মনে করতে পারেন একাত্তরের কথা। সে সময় আমাদের ওপর এভাবেই নৃশংসতা চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। কিন্তু যদি কেউ ভারতের ভূমিকার কথা তুলতে চান, তুলতেই পারেন। একাত্তরে তারা আমাদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল। আমরা ৪০ বছর পরও সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আগামীতেও প্রকাশ করে যাব। কিন্তু সম্প্রতি কী হচ্ছে? মনে হয় না কঠিন কোনো মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে। যাঁরা কম্পিউটার ব্যবহার করেন, যাঁরা ইন্টারনেটে খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা ইচ্ছা করলে সেই নৃশংসতা এখনো দেখতে পারেন। দেখতে হলে চোরাই কোনো লিংকে যেতে হবে না। যে টেলিভিশন প্রধানত এই সংবাদটি প্রচার করেছে, অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সেই টিভি চ্যানেলটির লিংকে যান। সহজেই পেয়ে যাবেন ইন্টারনেটে।www.ndtv.com লিংকে গিয়ে bsf-এ সার্চ করলে দেখা যাবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নৃশংসতার সেই দৃশ্য।
এবার হয়তো বিএসএফের মহাপরিচালক রামণ শ্রীবাস্তব আর বলতে পারবেন না, এসব ঠিক নয়, এগুলো স্বাভাবিক মৃত্যু। কারণ যে দৃশ্যটি আমরা গত সপ্তাহান্তে দেখেছি, সেটি প্রচার করেছে শ্রীবাস্তব মহোদয়ের দেশের চ্যানেলই। আর যা এই লেখার সময় পর্যন্ত দেখা গেছে, সেও বাংলাদেশের কোনো প্রচারমাধ্যমে নয়। সেটি আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধার সুফল।
দৃশ্যটি দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই যে কারো মনে আসতে পারে বছর ৭ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনার কথা। এ বছরের জানুয়ারি মাসের মতোই ঘটনা। আগেরবার ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের চিত্র আমাদের কাঁদিয়েছিল। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের কাছে ফেলানী (১৫) কাঁটাতারে ঝুলে ছিল তিন দিন। সে সময় ভারতের নয়াদিলি্লতে বিএসএফ ও বিজিবিপ্রধান পর্যায়ে যৌথ বৈঠক শেষে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রধান ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে আর আগ্নেয়াস্ত্র প্রদান করা হবে না। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশি কোনো নাগরিককে আর হত্যা করা হবে না। কিন্তু মাসকাল অতিবাহিত হতে না হতেই সাতক্ষীরা জেলার গাজীপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বসন্তপুর গ্রামের রেকাতুল ইসলাম (১৭) নিহত হয়। আমরা সংক্ষুব্ধ হয়েছিলাম আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের প্রতি তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আচরণে। যদিও আমরা আরো আগে থেকেই হিসাব করছিলাম, আর বারবারই হিসাব মিলছিল না। আমরা বুঝতে পারছিলাম না এই আচরণ যে করতে পারে, সে কি আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারত? যে নাকি একাত্তরে আমাদের প্রায় এক কোটি মানুষকে ৯ মাস পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা করেছিল? যে নাকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছিল?
প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের করতে হয়। প্রশ্ন করতেও কষ্ট হয়। যখন দেখি, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি দল ক্ষমতায় এবং যে দলটি ভারতের বন্ধুত্ব স্বীকার করে আন্তরিকভাবে। তার বহিঃপ্রকাশও বারবারই ঘটেছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিগুলো এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অন্যরাও বর্তমান সরকারি দলকে ভারতের প্রিয় দল হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তাদের কেউ কেউ বর্তমান সরকারি দলকে ভারতের দালাল বলতেও দ্বিধা করে না। এমন পরিস্থিতিতে এই দলটি ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ করা হয় না। তখন সংগত কারণেই নানামুখী প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে। আমরা আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হই, তাহলে ভারত কি প্রকৃতই এমন? কই, তারা তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেও খুন করার কাজ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এই সরকারের আমলে গত ৩ বছরে সীমান্তে অন্তত ২০৩ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এ সময় বিএসএফের হাতে অপহৃত হয়েছে অনেক বাংলাদেশি। সন্দেহ করা হয়, এদের অনেককেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বিএসএফের হাতে। এদের সংখ্যা মিলিয়ে বছরে শতাধিক মানুষ খুন হয়েছে বলে সহজেই অনুমান করা যায়।
আন্তর্জাতিক আইনে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যা করার কোনো বিধানই নেই আইনে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অন্য দেশের নাগরিক কোনো অপরাধ করে থাকলে সেই দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচারের বিধান আছে। আর সেই বিধান অনুযায়ী কারাদণ্ড দেওয়ার কথা। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি ভারতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে, তাহলে ভারতের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে এবং তাকে সেই দেশের আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করতে পারে। বিধান অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মাত্র তিন মাসের কারাদণ্ড। কোনো মৃত্যুদণ্ডের বিধান এই অপরাধের জন্য সেখানে নেই।
আর যদি থাকতও তাহলেও কি এভাবে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করা সম্ভব হতো? কিন্তু বাস্তবতা আমরা কী দেখছি? দেখছি, কিভাবে গত ১০ বছরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে আমাদের দেশের ৮৭৫ জন মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী বৃহৎ দেশ। এই দেশের প্রতি আমাদের ঋণ অনেক। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও অনেক। বড় দেশ হিসেবে এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে আমরা অবশ্যই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের নিরীহ মানুষগুলোকে তারা পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করবে।
মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ে, এমনকি পতাকা বৈঠকগুলোতেও বলা হয়, আর কোনো হত্যাকাণ্ড হবে না। বিএসএফের প্রধান এমনও বলেছেন যে স্পর্শকাতর এলাকাতে বিএসএফের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না। কিন্তু হত্যা করা যদি বিএসএফের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে মারণাস্ত্র দিয়ে মারতে হয় না। এটাও তারাই দেখিয়ে দিয়েছে। তারা পানিতে চুবিয়ে বাংলাদেশি খুন করেছে। ফেলানীকে খুন করা হয়েছে কাঁটাতারে আটকে। সর্বশেষ যে দৃশ্যটি আমরা টেলিভিশনের সুবাদে দেখার সুযোগ পেলাম, সেই দৃশ্যটিসহ অনেক ঘটনাতেই মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু খুন হয়েছে ঠিকই।
তাই আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের কাছে হয়তো অনুরোধ করতে পারি, এভাবে নিরীহ মানুষকে খুন করা বন্ধ করুন। ওপরের পর্যায়ে যেমন সহমর্মিতাসুলভ কথা বলা হয়, তা যেন স্থানীয় পর্যায়ে তথা একেবারে তৃণমূল পর্যায়েও কার্যকর হয়। আমরা আর সীমান্তে কোনো মানুষকে খুন হতে দেখতে চাই না। আমরা চাই না, ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র থেকে সরে যাক।
mhussain_71@yahoo.com
এবার হয়তো বিএসএফের মহাপরিচালক রামণ শ্রীবাস্তব আর বলতে পারবেন না, এসব ঠিক নয়, এগুলো স্বাভাবিক মৃত্যু। কারণ যে দৃশ্যটি আমরা গত সপ্তাহান্তে দেখেছি, সেটি প্রচার করেছে শ্রীবাস্তব মহোদয়ের দেশের চ্যানেলই। আর যা এই লেখার সময় পর্যন্ত দেখা গেছে, সেও বাংলাদেশের কোনো প্রচারমাধ্যমে নয়। সেটি আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধার সুফল।
দৃশ্যটি দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই যে কারো মনে আসতে পারে বছর ৭ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনার কথা। এ বছরের জানুয়ারি মাসের মতোই ঘটনা। আগেরবার ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের চিত্র আমাদের কাঁদিয়েছিল। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের কাছে ফেলানী (১৫) কাঁটাতারে ঝুলে ছিল তিন দিন। সে সময় ভারতের নয়াদিলি্লতে বিএসএফ ও বিজিবিপ্রধান পর্যায়ে যৌথ বৈঠক শেষে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রধান ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে আর আগ্নেয়াস্ত্র প্রদান করা হবে না। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশি কোনো নাগরিককে আর হত্যা করা হবে না। কিন্তু মাসকাল অতিবাহিত হতে না হতেই সাতক্ষীরা জেলার গাজীপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বসন্তপুর গ্রামের রেকাতুল ইসলাম (১৭) নিহত হয়। আমরা সংক্ষুব্ধ হয়েছিলাম আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের প্রতি তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আচরণে। যদিও আমরা আরো আগে থেকেই হিসাব করছিলাম, আর বারবারই হিসাব মিলছিল না। আমরা বুঝতে পারছিলাম না এই আচরণ যে করতে পারে, সে কি আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারত? যে নাকি একাত্তরে আমাদের প্রায় এক কোটি মানুষকে ৯ মাস পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা করেছিল? যে নাকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছিল?
প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের করতে হয়। প্রশ্ন করতেও কষ্ট হয়। যখন দেখি, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি দল ক্ষমতায় এবং যে দলটি ভারতের বন্ধুত্ব স্বীকার করে আন্তরিকভাবে। তার বহিঃপ্রকাশও বারবারই ঘটেছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিগুলো এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অন্যরাও বর্তমান সরকারি দলকে ভারতের প্রিয় দল হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তাদের কেউ কেউ বর্তমান সরকারি দলকে ভারতের দালাল বলতেও দ্বিধা করে না। এমন পরিস্থিতিতে এই দলটি ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ করা হয় না। তখন সংগত কারণেই নানামুখী প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে। আমরা আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হই, তাহলে ভারত কি প্রকৃতই এমন? কই, তারা তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেও খুন করার কাজ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এই সরকারের আমলে গত ৩ বছরে সীমান্তে অন্তত ২০৩ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এ সময় বিএসএফের হাতে অপহৃত হয়েছে অনেক বাংলাদেশি। সন্দেহ করা হয়, এদের অনেককেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বিএসএফের হাতে। এদের সংখ্যা মিলিয়ে বছরে শতাধিক মানুষ খুন হয়েছে বলে সহজেই অনুমান করা যায়।
আন্তর্জাতিক আইনে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যা করার কোনো বিধানই নেই আইনে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অন্য দেশের নাগরিক কোনো অপরাধ করে থাকলে সেই দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচারের বিধান আছে। আর সেই বিধান অনুযায়ী কারাদণ্ড দেওয়ার কথা। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি ভারতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে, তাহলে ভারতের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে এবং তাকে সেই দেশের আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করতে পারে। বিধান অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মাত্র তিন মাসের কারাদণ্ড। কোনো মৃত্যুদণ্ডের বিধান এই অপরাধের জন্য সেখানে নেই।
আর যদি থাকতও তাহলেও কি এভাবে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করা সম্ভব হতো? কিন্তু বাস্তবতা আমরা কী দেখছি? দেখছি, কিভাবে গত ১০ বছরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে আমাদের দেশের ৮৭৫ জন মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী বৃহৎ দেশ। এই দেশের প্রতি আমাদের ঋণ অনেক। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও অনেক। বড় দেশ হিসেবে এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে আমরা অবশ্যই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের নিরীহ মানুষগুলোকে তারা পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করবে।
মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ে, এমনকি পতাকা বৈঠকগুলোতেও বলা হয়, আর কোনো হত্যাকাণ্ড হবে না। বিএসএফের প্রধান এমনও বলেছেন যে স্পর্শকাতর এলাকাতে বিএসএফের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না। কিন্তু হত্যা করা যদি বিএসএফের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে মারণাস্ত্র দিয়ে মারতে হয় না। এটাও তারাই দেখিয়ে দিয়েছে। তারা পানিতে চুবিয়ে বাংলাদেশি খুন করেছে। ফেলানীকে খুন করা হয়েছে কাঁটাতারে আটকে। সর্বশেষ যে দৃশ্যটি আমরা টেলিভিশনের সুবাদে দেখার সুযোগ পেলাম, সেই দৃশ্যটিসহ অনেক ঘটনাতেই মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু খুন হয়েছে ঠিকই।
তাই আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের কাছে হয়তো অনুরোধ করতে পারি, এভাবে নিরীহ মানুষকে খুন করা বন্ধ করুন। ওপরের পর্যায়ে যেমন সহমর্মিতাসুলভ কথা বলা হয়, তা যেন স্থানীয় পর্যায়ে তথা একেবারে তৃণমূল পর্যায়েও কার্যকর হয়। আমরা আর সীমান্তে কোনো মানুষকে খুন হতে দেখতে চাই না। আমরা চাই না, ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র থেকে সরে যাক।
mhussain_71@yahoo.com
No comments