সিলেটের নদী ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা-সারী নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করছে ভারত
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি বাঁধ নির্মিত হচ্ছে। সিলেটের সারী নদীর উজানে মেঘালয়ের মাইনথ্রু নদীতে এই বাঁধ নির্মিত হলে বিপন্ন হবে বাংলাদেশের নদীটির উৎসমুখ। বিপন্ন হবে জেলার পরিবেশও। এই আশঙ্কায় ইতিমধ্যে আন্দোলন শুরু করেছেন পরিবেশবাদীরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য জানা যায়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মেঘালয় রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প সম্পর্কে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবগত নয়।
তবে জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলার তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সালের ২৫ অক্টোবর মাইনথ্রু লেশকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম। মেঘালয় রাজ্যের ওই প্রকল্পে ১২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন’, ‘সারী বাঁচাও আন্দোলন’সহ স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলছেন, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ডাউকি চ্যুতির কাছাকাছি প্রকল্পটির অবস্থান। তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি হলে সিলেটের নদী ও পরিবেশ বিপন্ন হবে বলে পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা।
মাইনথ্রু আর সারীর যোগসূত্র: সারী নদী সিলেটের জৈন্তাপুরের লালাখাল নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মেঘালয়ের পর্বতে এটির উৎপত্তি। ভারতের পুরো জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলা ঘুরে ‘সারী’ নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। উৎসস্থল থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত এটি ‘মাইনথ্রু’ নদী নামেই পরিচিত। সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় প্রবহমান সারী নদীর উজানে জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলায় মাইনথ্রু নদী।
প্রকল্পের প্রস্তুতি ’৭৫ সালে: মেঘালয় রাজ্যের জ্বালানি সংস্থা ও জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলার ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, মেঘালয় রাজ্য বিদ্যুৎ বোর্ড ১৯৭৫-৭৬ সালে মাইনথ্রু লেশকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের (সিইএ) কাছে পাঠানো হয়। পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য মেঘালয়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (এমপিসিবি) ১৯৯৯ সালের মার্চে গণশুনানির আয়োজন করে। আর এতে ইতিবাচক সাড়া দেয় রাজ্যের অধিবাসীরা। ওই বছরের আগস্টে কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার পর প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়। এক মাস পর প্রকল্পের কারিগরি ও অর্থনৈতিক ছাড়পত্র দেয় সিইএ। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে পরিবেশ ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে লোকজন বাস্তুচ্যুত হবে না—এই নিশ্চয়তা দেওয়ার পর পরিবেশ ছাড়পত্র পায় মেঘালয় রাজ্য জ্বালানি সংস্থা।
যা থাকছে লেশকার বিদ্যুৎ প্রকল্পে: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের মাইনথ্রু, লামু ও উমশারিয়াং—এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত মাইনথ্রু লেশকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। মাইনথ্রু নদীতে ৬৩ মিটার উঁচু বাঁধ দিয়ে তিনটি ইউনিটে উৎপাদিত হবে ১২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। প্রথম ইউনিটটির নির্মাণ শেষ হয়েছে গত বছরের আগস্টে। বাকি দুটি ইউনিটের কাজ চলছে।
ভারত সরকারের অজানা!: প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেলেও এ বিষয়ে ভারত সরকার জানে না, এমনটাই দাবি দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের। কারণ, এ ধরনের প্রকল্পের ব্যাপারে বিশেষ করে প্রতিবেশী ভাটির দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত হলে তা সাধারণত ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কিছু জানে না। তা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও কখনো বিষয়টি ভারতের কাছে উত্থাপন করা হয়নি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো এমন দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, প্রকল্পের পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। আর আর্থিক ও কারিগরি ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় পরিবেশবাদীদের দাবি: সিলেটে সারী নদীকে ‘নদী প্রবাহের প্রাণ’ বলে অভিহিত করা হয় জানিয়ে সারী বাঁচাও আন্দোলনের ফেসবুক প্রচারণার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আবদুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, সারী নদীর সঙ্গে সিলেটের তিনটি উপজেলার নদী-খালের যোগসূত্র রয়েছে। কুইগাঙ নামক উপনদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে গোয়াইন নাম ধারণ করে গোয়াইনঘাট সদর উপজেলা হয়ে সিলেট সদর সীমান্তে চেঙেরখাল নামে সদরের কয়েকটি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পরে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। শতাধিক ছোট-বড় খাল-নদী ও হাওর-বিলের সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত।
তবে জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলার তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সালের ২৫ অক্টোবর মাইনথ্রু লেশকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম। মেঘালয় রাজ্যের ওই প্রকল্পে ১২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন’, ‘সারী বাঁচাও আন্দোলন’সহ স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলছেন, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ডাউকি চ্যুতির কাছাকাছি প্রকল্পটির অবস্থান। তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি হলে সিলেটের নদী ও পরিবেশ বিপন্ন হবে বলে পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা।
মাইনথ্রু আর সারীর যোগসূত্র: সারী নদী সিলেটের জৈন্তাপুরের লালাখাল নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মেঘালয়ের পর্বতে এটির উৎপত্তি। ভারতের পুরো জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলা ঘুরে ‘সারী’ নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। উৎসস্থল থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত এটি ‘মাইনথ্রু’ নদী নামেই পরিচিত। সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় প্রবহমান সারী নদীর উজানে জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলায় মাইনথ্রু নদী।
প্রকল্পের প্রস্তুতি ’৭৫ সালে: মেঘালয় রাজ্যের জ্বালানি সংস্থা ও জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলার ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, মেঘালয় রাজ্য বিদ্যুৎ বোর্ড ১৯৭৫-৭৬ সালে মাইনথ্রু লেশকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের (সিইএ) কাছে পাঠানো হয়। পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য মেঘালয়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (এমপিসিবি) ১৯৯৯ সালের মার্চে গণশুনানির আয়োজন করে। আর এতে ইতিবাচক সাড়া দেয় রাজ্যের অধিবাসীরা। ওই বছরের আগস্টে কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার পর প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়। এক মাস পর প্রকল্পের কারিগরি ও অর্থনৈতিক ছাড়পত্র দেয় সিইএ। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে পরিবেশ ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে লোকজন বাস্তুচ্যুত হবে না—এই নিশ্চয়তা দেওয়ার পর পরিবেশ ছাড়পত্র পায় মেঘালয় রাজ্য জ্বালানি সংস্থা।
যা থাকছে লেশকার বিদ্যুৎ প্রকল্পে: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের মাইনথ্রু, লামু ও উমশারিয়াং—এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত মাইনথ্রু লেশকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। মাইনথ্রু নদীতে ৬৩ মিটার উঁচু বাঁধ দিয়ে তিনটি ইউনিটে উৎপাদিত হবে ১২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। প্রথম ইউনিটটির নির্মাণ শেষ হয়েছে গত বছরের আগস্টে। বাকি দুটি ইউনিটের কাজ চলছে।
ভারত সরকারের অজানা!: প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেলেও এ বিষয়ে ভারত সরকার জানে না, এমনটাই দাবি দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের। কারণ, এ ধরনের প্রকল্পের ব্যাপারে বিশেষ করে প্রতিবেশী ভাটির দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত হলে তা সাধারণত ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কিছু জানে না। তা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও কখনো বিষয়টি ভারতের কাছে উত্থাপন করা হয়নি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো এমন দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, প্রকল্পের পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। আর আর্থিক ও কারিগরি ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় পরিবেশবাদীদের দাবি: সিলেটে সারী নদীকে ‘নদী প্রবাহের প্রাণ’ বলে অভিহিত করা হয় জানিয়ে সারী বাঁচাও আন্দোলনের ফেসবুক প্রচারণার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আবদুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, সারী নদীর সঙ্গে সিলেটের তিনটি উপজেলার নদী-খালের যোগসূত্র রয়েছে। কুইগাঙ নামক উপনদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে গোয়াইন নাম ধারণ করে গোয়াইনঘাট সদর উপজেলা হয়ে সিলেট সদর সীমান্তে চেঙেরখাল নামে সদরের কয়েকটি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পরে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। শতাধিক ছোট-বড় খাল-নদী ও হাওর-বিলের সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত।
No comments