সম্ভাবনার হাওরাঞ্চল by সাহেরীন চৌধুরী মিশুক
বিগত তিন মৌসুমের সবচেয়ে সুখী সময় পার করছে হাওরাঞ্চলের মানুষ। গত মৌসুমে তারা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফসল ঘরে তুলেছে। আগের দুই মৌসুমে ফসলহানির পর কৃষকরা যখন শঙ্কাগ্রস্ত তখন প্রকৃতি তাদের দিকে চেয়েছে। এবার মার্চের শেষ দিকে কয়েকটি বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় ফসলহানির শঙ্কা তৈরি হয়েও শেষ পর্যন্ত হাওরাঞ্চলের দুই কোটি মানুষের স্বপ্ন ভেঙে যায়নি।
তাই গত মৌসুমের বাম্পার ফলনের পেছনে যে কৃতিত্ব তার পুরোটাই দিতে হবে প্রকৃতি ও কৃষকদের। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে কতটুকু কাজ করেছে তার প্রমাণ মিলেছে মৌসুমের শুরুতে, যখন ফসল মার যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় অথচ পিছিয়ে পড়া জনপদ হাওরাঞ্চল। এ অঞ্চলের দুই কোটিরও বেশি মানুষের একমাত্র ফসল বোরো। এই একটি ফসলকে ঘিরেই এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ সারা বছর তাদের স্বপ্নের জাল বোনে। কিন্তু সারা বছরের স্বপ্টম্ন যখন উজানে এক-দু'দিনের বৃষ্টিতে সৃষ্ট অকাল বন্যায় শেষ হয়ে যায়, তখন সাহায্য দূরে থাক তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার লোকও খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। অকাল বন্যায় যখন কৃষকের পাকা ধান তলিয়ে যায় তখন চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
হাওরের মানুষ সরকারের কাছে ত্রাণ চায় না, বরং নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তোলার নিশ্চয়তা চায়। সরকার দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য হাজার কোটি টাকা খরচ করে চাল আমদানি করে। অনেক সময় বন্দর থেকে খালাসের আগেই সে চাল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই সরকারকে বলছি, জনগণের টাকা অপচয় না করে হাওরাঞ্চলে সে টাকা বিনিয়োগ করুন। নিশ্চয়ই হাওরের মানুষ মুনাফাসহ তা ফেরত দেবে। দেশে কৃষি জমি বা কৃষিতে বিনিয়োগের কি এতই স্বল্পতা দেখা দিয়েছে যে, আমাদের অন্য দেশ বা মহাদেশে গিয়ে কৃষিতে বিনিয়োগ করতে হবে? আগে নিজ সম্পদের পুরোপুরি ব্যবহার করুন, তারপর অন্য চিন্তা। হাওরাঞ্চলের কৃষির প্রধান সমস্যা অকাল বন্যা। অকাল বন্যা রোধে সরকার প্রতি বছর পাউবোর মাধ্যমে বাঁধ দিয়ে থাকে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। তাছাড়া বাঁধ সঠিক সময়ে নির্মাণ হয় না এবং বাঁধ নির্মাণে এতটাই দুর্নীতি হয় যে তা নিরূপণে কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন পড়ে না, সাধারণ মানুষই তা বুঝতে পারে। গত মৌসুমের আগের মৌসুমের বাঁধ নির্মাণ কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে পঞ্চাশ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। মার্চের শেষদিকে পাহাড়ি ঢলে যখন বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ শুরু করে, তখন সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভাঙে। প্রশ্ন হচ্ছে, কতদিন এভাবে চলবে? হাওরের মানুষ কি প্রতি তিন-চার বছরে একবার ফসল ঘরে তুলবে? হাওরাঞ্চলের দুই কোটি মানুষের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, 'অকাল বন্যা'র মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য যেন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন হাওরে স্থাপিত বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি, বেশি করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও স্লুইসগেট স্থাপন, নদী খনন প্রভৃতি কাজ সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার অনুরোধ করছি। সম্ভাবনাময় হাওরাঞ্চলকে বাদ দিয়ে চিন্তার সুফল আশা করা হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো।
saherinmishuk@yahoo.com
হাওরের মানুষ সরকারের কাছে ত্রাণ চায় না, বরং নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তোলার নিশ্চয়তা চায়। সরকার দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য হাজার কোটি টাকা খরচ করে চাল আমদানি করে। অনেক সময় বন্দর থেকে খালাসের আগেই সে চাল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই সরকারকে বলছি, জনগণের টাকা অপচয় না করে হাওরাঞ্চলে সে টাকা বিনিয়োগ করুন। নিশ্চয়ই হাওরের মানুষ মুনাফাসহ তা ফেরত দেবে। দেশে কৃষি জমি বা কৃষিতে বিনিয়োগের কি এতই স্বল্পতা দেখা দিয়েছে যে, আমাদের অন্য দেশ বা মহাদেশে গিয়ে কৃষিতে বিনিয়োগ করতে হবে? আগে নিজ সম্পদের পুরোপুরি ব্যবহার করুন, তারপর অন্য চিন্তা। হাওরাঞ্চলের কৃষির প্রধান সমস্যা অকাল বন্যা। অকাল বন্যা রোধে সরকার প্রতি বছর পাউবোর মাধ্যমে বাঁধ দিয়ে থাকে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। তাছাড়া বাঁধ সঠিক সময়ে নির্মাণ হয় না এবং বাঁধ নির্মাণে এতটাই দুর্নীতি হয় যে তা নিরূপণে কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন পড়ে না, সাধারণ মানুষই তা বুঝতে পারে। গত মৌসুমের আগের মৌসুমের বাঁধ নির্মাণ কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে পঞ্চাশ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। মার্চের শেষদিকে পাহাড়ি ঢলে যখন বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ শুরু করে, তখন সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভাঙে। প্রশ্ন হচ্ছে, কতদিন এভাবে চলবে? হাওরের মানুষ কি প্রতি তিন-চার বছরে একবার ফসল ঘরে তুলবে? হাওরাঞ্চলের দুই কোটি মানুষের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, 'অকাল বন্যা'র মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য যেন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন হাওরে স্থাপিত বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি, বেশি করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও স্লুইসগেট স্থাপন, নদী খনন প্রভৃতি কাজ সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার অনুরোধ করছি। সম্ভাবনাময় হাওরাঞ্চলকে বাদ দিয়ে চিন্তার সুফল আশা করা হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো।
saherinmishuk@yahoo.com
No comments