গরিবের সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক by গৌতম লাহিড়ী
কিছুদিন ধরে রাজধানী দিলি্লতে গরিবের সংজ্ঞা নিয়ে এক নতুন বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছে। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করার দায়িত্ব যে সংগঠনের ওপর সেই যোজনা কমিশন সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দাখিল করে জানায়, শহর এলাকায় যাদের আয় দৈনিক বত্রিশ রুপি তাদের 'গরিব' বলা যাবে না। গ্রামীণ এলাকায় দৈনিক রোজগার ছাবি্বশ রুপি হলে গরিবি রেখার ওপরে বলে ধরে নিতে হবে। এরপর থেকেই শোরগোল।
কারণ যদি ওই রোজগারের ভিত্তিতে গরিবের সংজ্ঞা নির্ধারিত হয় তাহলে গরিবদের জন্য যেসব উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্প রয়েছে তা থেকে এক বৃহদংশ জনতা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়া বিবৃতি দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন, গরিবি রেখার নিচে যেসব মানুষ আগে থেকেই রয়েছে, তাদের কোনো সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে না। বলে রাখা ভালো, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যোজনা কমিশনের চেয়ারম্যান।
বিবৃতি দিয়ে আশ্বস্ত করলেও এই বিতর্কের চটজলদি নিরসনের কোনো সম্ভাবনা নেই। দিলি্লতে ভারতের দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার নীতি চূড়ান্ত করতে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠক হয়েছে। এই পরিষদের মূল সদস্যরা হলেন দেশের সব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা। তাদের সম্মতি নিয়েই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আর্থ-সামাজিক নীতি চূড়ান্ত হবে। এতদিন এই সম্মেলনে বামশাসিত তিন রাজ্য_ পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীরা কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করতেন। এবার একমাত্র ত্রিপুরা ছাড়া অন্য দুই রাজ্যে বামপন্থিরা অপসারিত।
'গরিবি রেখা' চিহ্নিত করা ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নতুন ঘটনা নয়। ১৯৭৩-৭৪ সালের তথ্যের ভিত্তিতে যোজনা কমিশন ১৯৭৯ সাল থেকেই 'গরিবে'র সংজ্ঞা নির্ধারণ করে আসছে। এই চিহ্নিতকরণের পদ্ধতি বিভিন্ন সময়ে সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন হয় ২০০৯ সালে। চলতি বছরের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট যোজনা কমিশনের কাছে জানতে চান, দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ২ শতংশ মানুষকেই কেবল ভর্তুকি দিয়ে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে কি-না। এর জবাবেই যোজনা কমিশন আদালতে জানায়, গরিবি রেখার ভিত্তিতেই অধিক ভর্তুকি দিয়ে রেশনে চাল-গম-চিনি দেওয়া হয়। কিন্তু দেশের সব রাজ্যের জন্য এক মাপকাঠি করা যাবে না। যোজনা কমিশন অধ্যাপক সুরেশ টেন্ডুলকারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করে 'গরিব' নির্ধারণের পদ্ধতি বদল করার প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখতে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কমিশন ভারতের গ্রামীণ গরিবের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ বলে মেনে নেয়। ২০০৪-০৫ সালে ওই সংখ্যা ছিল ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর সুপ্রিম কোর্ট গরিবি রেখা নতুন করে নির্ধারণের নির্দেশ দেন। যোজনা কমিশন টেন্ডুলকার কমিটির ভিত্তিতে শহর এলাকার প্রতি পাঁচজনের পরিবারে মাসিক বাজেট ৪ হাজার ৮২৪ রুপি এবং গ্রামীণ এলাকায় ৩ হাজার ৯০৫ রুপিকে গরিবি রেখার সীমা বলে চিহ্নিত করে। এই গৃহস্থালি বাজেটে প্রত্যেক মানুষের দৈনিক ৩২ রুপি ও গ্রামে দৈনিক ২৬ রুপি আয় ধরে নেওয়া হয়। অর্থাৎ যারা ওই পরিমাণ অর্থ আয় করেন তাদের আর গরিব বলে ধরা হবে না। যোজনা কমিশন এই ব্যাখ্যা মানছে না। তারা এমন ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টে করেননি বলে দাবি করছেন। কিন্তু তাতে রাজনীতি থেমে নেই। যোজনা কমিশন এও বলছে, কেবল এই সংখ্যক মানুষকেই যে ভর্তুকি দেওয়া হবে তা নয়। কেননা, ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী চাইছেন গরিবি রেখার ওপরে আছে, এমন ব্যক্তিদেরও ভর্তুকিতে খাদ্যশস্য দেওয়া হোক। আসন্ন যোজনা কমিশনের বৈঠক এ কারণেই ভারতের বার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতেও এক ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। জাতীয় রাজনীতির বিতর্কের গতিমুখ ঘুরতে পারে এক নতুন খাতে।
দিলি্লর অন্য ঘটনা : দীর্ঘ ১২ বছর পর রাজধানী দিলি্লর মর্যাদাপূর্ণ প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অংশ নিচ্ছে। বামপন্থিরা ক্ষমতায় থাকাকালে প্রথম প্রথম অংশ নিলেও পরবর্তী সময়ে নিজেদের সরিয়ে নেয়। আগামী ২৬ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী নিজে শান্তিনিকেতন থেকে রাবীন্দ্রিক নৃত্যনাট্যের দল নিয়ে সরাসরি প্রজাতন্ত্রের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এবার দিলি্লর প্রগতি ময়দানে নভেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্পমেলায় যোগ দিচ্ছে। এ উপলক্ষে একদিন 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' উদযাপিত হবে দিলি্লতে।
কবিগুরুর ছবির প্রদর্শনী : ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা এক ডজন দুষ্প্রাপ্য চিত্রকলার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। 'দ্য লাস্ট হারভেস্ট' নামের এই প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে বার্লিন, রোম, নিউইয়র্ক, শিকাগো, সিউল, লন্ডন, প্যারিস ও নিউজিল্যান্ডের জাতীয় মিউজিয়ামে। আগামী বছরের মে মাস পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের ভারতীয় দূতাবাসে কবিগুরুর আবক্ষ মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্বভারতীকে এর জন্য ১৫টি মূর্তি তৈরি করতে বলা হয়েছে।
গৌতম লাহিড়ী :সমকাল প্রতিনিধি
বিবৃতি দিয়ে আশ্বস্ত করলেও এই বিতর্কের চটজলদি নিরসনের কোনো সম্ভাবনা নেই। দিলি্লতে ভারতের দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার নীতি চূড়ান্ত করতে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠক হয়েছে। এই পরিষদের মূল সদস্যরা হলেন দেশের সব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা। তাদের সম্মতি নিয়েই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আর্থ-সামাজিক নীতি চূড়ান্ত হবে। এতদিন এই সম্মেলনে বামশাসিত তিন রাজ্য_ পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীরা কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করতেন। এবার একমাত্র ত্রিপুরা ছাড়া অন্য দুই রাজ্যে বামপন্থিরা অপসারিত।
'গরিবি রেখা' চিহ্নিত করা ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নতুন ঘটনা নয়। ১৯৭৩-৭৪ সালের তথ্যের ভিত্তিতে যোজনা কমিশন ১৯৭৯ সাল থেকেই 'গরিবে'র সংজ্ঞা নির্ধারণ করে আসছে। এই চিহ্নিতকরণের পদ্ধতি বিভিন্ন সময়ে সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন হয় ২০০৯ সালে। চলতি বছরের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট যোজনা কমিশনের কাছে জানতে চান, দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ২ শতংশ মানুষকেই কেবল ভর্তুকি দিয়ে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে কি-না। এর জবাবেই যোজনা কমিশন আদালতে জানায়, গরিবি রেখার ভিত্তিতেই অধিক ভর্তুকি দিয়ে রেশনে চাল-গম-চিনি দেওয়া হয়। কিন্তু দেশের সব রাজ্যের জন্য এক মাপকাঠি করা যাবে না। যোজনা কমিশন অধ্যাপক সুরেশ টেন্ডুলকারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করে 'গরিব' নির্ধারণের পদ্ধতি বদল করার প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখতে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কমিশন ভারতের গ্রামীণ গরিবের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ বলে মেনে নেয়। ২০০৪-০৫ সালে ওই সংখ্যা ছিল ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর সুপ্রিম কোর্ট গরিবি রেখা নতুন করে নির্ধারণের নির্দেশ দেন। যোজনা কমিশন টেন্ডুলকার কমিটির ভিত্তিতে শহর এলাকার প্রতি পাঁচজনের পরিবারে মাসিক বাজেট ৪ হাজার ৮২৪ রুপি এবং গ্রামীণ এলাকায় ৩ হাজার ৯০৫ রুপিকে গরিবি রেখার সীমা বলে চিহ্নিত করে। এই গৃহস্থালি বাজেটে প্রত্যেক মানুষের দৈনিক ৩২ রুপি ও গ্রামে দৈনিক ২৬ রুপি আয় ধরে নেওয়া হয়। অর্থাৎ যারা ওই পরিমাণ অর্থ আয় করেন তাদের আর গরিব বলে ধরা হবে না। যোজনা কমিশন এই ব্যাখ্যা মানছে না। তারা এমন ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টে করেননি বলে দাবি করছেন। কিন্তু তাতে রাজনীতি থেমে নেই। যোজনা কমিশন এও বলছে, কেবল এই সংখ্যক মানুষকেই যে ভর্তুকি দেওয়া হবে তা নয়। কেননা, ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী চাইছেন গরিবি রেখার ওপরে আছে, এমন ব্যক্তিদেরও ভর্তুকিতে খাদ্যশস্য দেওয়া হোক। আসন্ন যোজনা কমিশনের বৈঠক এ কারণেই ভারতের বার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতেও এক ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। জাতীয় রাজনীতির বিতর্কের গতিমুখ ঘুরতে পারে এক নতুন খাতে।
দিলি্লর অন্য ঘটনা : দীর্ঘ ১২ বছর পর রাজধানী দিলি্লর মর্যাদাপূর্ণ প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অংশ নিচ্ছে। বামপন্থিরা ক্ষমতায় থাকাকালে প্রথম প্রথম অংশ নিলেও পরবর্তী সময়ে নিজেদের সরিয়ে নেয়। আগামী ২৬ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী নিজে শান্তিনিকেতন থেকে রাবীন্দ্রিক নৃত্যনাট্যের দল নিয়ে সরাসরি প্রজাতন্ত্রের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এবার দিলি্লর প্রগতি ময়দানে নভেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্পমেলায় যোগ দিচ্ছে। এ উপলক্ষে একদিন 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' উদযাপিত হবে দিলি্লতে।
কবিগুরুর ছবির প্রদর্শনী : ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা এক ডজন দুষ্প্রাপ্য চিত্রকলার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। 'দ্য লাস্ট হারভেস্ট' নামের এই প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে বার্লিন, রোম, নিউইয়র্ক, শিকাগো, সিউল, লন্ডন, প্যারিস ও নিউজিল্যান্ডের জাতীয় মিউজিয়ামে। আগামী বছরের মে মাস পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের ভারতীয় দূতাবাসে কবিগুরুর আবক্ষ মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্বভারতীকে এর জন্য ১৫টি মূর্তি তৈরি করতে বলা হয়েছে।
গৌতম লাহিড়ী :সমকাল প্রতিনিধি
No comments