নৈশপ্রহরী সুরুজের সেবা শিক্ষালয় by ভবতোষ রায় মনা
সন্ধ্যা নামার আগেই এক হাতে বই-খাতা আর অন্য হাতে কুপিবাতি নিয়ে গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে এপাড়া-ওপাড়া থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসছে সেবা শিক্ষালয় নামের একটি স্কুলে। কখনও কলেজের ঘরে বেঞ্চে বসে, আবার কখনও কলেজ ভবনের বারান্দায় কুপির আলোয় দুই সারিতে চটের ছালা বিছিয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে দুলে দুলে, গুনগুনিয়ে পড়া মুখস্থ করছে। সন্ধ্যার পর ওই গ্রামটি পড়ার আওয়াজে মুখর হয়ে ওঠে।
এ দৃশ্য যে কারও নজর কাড়বেই। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে গজারিয়া ইউনিয়নের অনুন্নত একটি গ্রাম বাউশী কলেজপাড়া। ওই গ্রামে সন্ধ্যার পরের চিত্র এ রকমই। গ্রামের প্রায় সবাই পেশায় প্রান্তিক চাষি, দিনমজুর ও গরিব। ছেলেমেয়েরা দূরের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলেও লেখাপড়ায় তাদের তেমন মন নেই। সন্ধ্যায় বাড়িতে বেশিরভাগ শিশু কুপির
তেলের অভাবে পড়তে পারে না। প্রাইভেট টিউশনি দূরের কথা, পরিবারে এমন কেউ নেই, তাদের লেখাপড়ার দেখাশোনা করবে। এমন প্রতিকূল অবস্থা থেকে গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলোয় আনতে কলেজের নৈশপ্রহরী শাহ আলম সুরুজ প্রতিষ্ঠা করেন স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত নৈশ স্কুল 'সেবা শিক্ষালয়'।
অভাবের কারণে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বাউশী গ্রামের শাহ আলম সুরুজ (৪৬)। 'আন্ডার ম্যাট্রিক' সুরুজ চাকরি করেন ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজের নৈশ প্রহরী হিসেবে। নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো পরিবারের সন্তান সুরুজের ঘরে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে ২ ছেলে, ১ মেয়ে। তার সংসার সারাটা বছরই কাটে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থার মধ্যে। এই সুরুজের মনের সুপ্ত বাসনা ছিল এলাকার অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া ও গরিব এবং পিছিয়েপড়া শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার; কিন্ত এ জন্য যা যা দরকার, এর কিছুই তার ছিল না। তাই আশপাশের সচ্ছল, বিত্তবান অনেককে পাঠশালা গড়ে তুলতে সুরুজ উদ্বুদ্ধ করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে; কিন্ত সাড়া দেননি কেউই। শেষমেশ ২০০৮ সালের মে মাসে নিজের কর্মস্থল ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজের বারান্দায় অদম্য আগ্রহে সেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে একাই ৫৫ ছেলেমেয়ে নিয়ে শুরু করেন তার স্বপ্নের নৈশ স্কুল 'সেবা শিক্ষালয়'। প্রথমে ঘর নেই, বেঞ্চ নেই, চেয়ার নেই, টেবিল নেই, এমনকি বল্গ্যাকবোর্ডও ছিল না। কলেজের বারান্দায় চট বিছিয়ে শিশুদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। পরে অবশ্য কলেজের রুমে বসার ব্যবস্থা করে দেন কলেজের অধ্যক্ষ মাজারুল হান্নান। এ প্রসঙ্গে কলেজ অধ্যক্ষ মাজারুল হান্নান বলেন, হতদরিদ্র ও গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা যেটা করতে পারিনি, সেটা নৈশ প্রহরী সুরুজ করে দেখাল। তার এ উদ্যোগ দেখে ঘরের রুম খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এখন সেখানেই ছেলেমেয়েরা রাতে পড়াশোনা করছে।
সুরুজ জানান, তার শিক্ষালয়ে বর্তমানে ১৮৬ শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ করছে। প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে নবম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করছে। স্কুলের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে একটি করে নেম্পো (কুপিবাতি)। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে সুরুজের এ পাঠশালা। প্রতিদিন কুপি জ্বালাতে নিজ পকেটের টাকায় ২ লিটার কেরাসিন কিনতে হয়। সব বিষয়ে পাঠদান করা হলেও বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুরুজকে সহায়তা করছেন এইচএসসি এবং বিএ পাস ৯ শিক্ষক-শিক্ষিকা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে ৩ ঘণ্টা পড়ানো হয়। শুধু পাঠ্যবইয়ের শিক্ষাই দেওয়া হয় না তাদের, সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, শরীরচর্চা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে মাঝে মধ্যে শিশুদের চকোলেট কিনে দেন এবং পিকনিকের আয়োজন করে থাকেন সুরুজ। এ ছাড়া প্রতি মাসে নিয়মিত মূল্যায়ন পরীক্ষাও নেওয়া হয়। শিশু থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় পড়ানো হচ্ছে। সেবা শিক্ষালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়মিত করতে হাজিরা খাতা আছে। এ খাতায় আসা ও যাওয়ার সময় স্বাক্ষর করতে হয়। এ ছাড়াও সুরুজ সম্প্রতি তার বাড়ির উঠানে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অক্ষরজ্ঞনহীন বয়স্ক নারীদের পড়ালেখা ও নাম স্বাক্ষর শিখানো শুরু করেছেন। সেখানে ৩০ নারী প্রতিদিন আসেন। উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী হতদরিদ্র নগেন চন্দ্র দাস তার মেয়ে লাবনী রানী দাসকে (৯) সুরুজের সেবা শিক্ষালয়ে ভর্তি করেছেন। নগেন বলেন, 'কোনো ভালো ইশকুলোত ব্যাতন দিয়া পড়াবার ক্ষমতা হামার নাই। অভিভাবক হয়্যাও হামরা ছোলগুলাক বাড়িতও পড়াবার টাইম পাই না। সুরুজ স্যার সেই কামটা মাগনায় (বিনা পয়সায়) করবার নাইগছেন। ভগবান তার ভালো করুক।' ফুলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী আতিফা আক্তার রাতে পড়তে আসে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে। সে বলে, 'আমরা গরিব মানুষ। প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য নাই। তাই সুরুজ স্যারের নাইট স্কুলে ভর্তি হয়্যাছি।' একইভাবে নিজের উপলব্ধির কথা জানায়, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী আশা আক্তার।
শাহ আলম সুরুজ সমকালকে বলেন, 'আমি এ ছেলেমেয়েগুলোর মধ্যে স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে পেরেছি, এটাই বড় কথা। ভবিষ্যতে এলাকার সব গরিব, অসহায়, হতদরিদ্র, কর্মজীবী ও ঝরেপড়া ছাত্রছাত্রীকে খুঁজে বের করে সেবা শিক্ষালয়ের আওতায় আনা হবে। তবে একা আর পারি না। পকেটের টাকায় আর কত হয়? নিজের এবং ছেলের বেতনের টাকায় আর জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা মাঝে মাঝে আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করলেও এখন আর সে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।' ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তার ছেলে রাজু আহম্মেদ চাকরি করেন। তার অর্থ সাহায্য আর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন ও হাবিবুর রহমান হবি বিভিন্ন সময় সাহায্য সহযোগিতা করেন। এভাবে অতিকষ্টে চালাচ্ছেন সেবা শিক্ষালয়। সুরুজ জানান, এলাকার কিছু বেকার যুবক পাঠদানের ক্ষেত্রে সাহায্য করছেন। তাদের সামান্য কিছু সম্মানী, চক-ডাস্টার ও অন্যান্য খরচসহ মাসে এখন প্রয়োজন হয় ৫ হাজার টাকা। এত টাকা আমার পক্ষে খরচ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দেশের কোনো হৃদয়বান শিক্ষানুরাগী যদি সেবা শিক্ষালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়ান এবং প্রতিষ্ঠানের একটি নিজস্ব স্কুল ঘর, বেঞ্চ, টেবিলসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে হয়তো আজীবন স্কুলটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো।
তেলের অভাবে পড়তে পারে না। প্রাইভেট টিউশনি দূরের কথা, পরিবারে এমন কেউ নেই, তাদের লেখাপড়ার দেখাশোনা করবে। এমন প্রতিকূল অবস্থা থেকে গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলোয় আনতে কলেজের নৈশপ্রহরী শাহ আলম সুরুজ প্রতিষ্ঠা করেন স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত নৈশ স্কুল 'সেবা শিক্ষালয়'।
অভাবের কারণে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বাউশী গ্রামের শাহ আলম সুরুজ (৪৬)। 'আন্ডার ম্যাট্রিক' সুরুজ চাকরি করেন ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজের নৈশ প্রহরী হিসেবে। নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো পরিবারের সন্তান সুরুজের ঘরে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে ২ ছেলে, ১ মেয়ে। তার সংসার সারাটা বছরই কাটে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থার মধ্যে। এই সুরুজের মনের সুপ্ত বাসনা ছিল এলাকার অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া ও গরিব এবং পিছিয়েপড়া শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার; কিন্ত এ জন্য যা যা দরকার, এর কিছুই তার ছিল না। তাই আশপাশের সচ্ছল, বিত্তবান অনেককে পাঠশালা গড়ে তুলতে সুরুজ উদ্বুদ্ধ করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে; কিন্ত সাড়া দেননি কেউই। শেষমেশ ২০০৮ সালের মে মাসে নিজের কর্মস্থল ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজের বারান্দায় অদম্য আগ্রহে সেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে একাই ৫৫ ছেলেমেয়ে নিয়ে শুরু করেন তার স্বপ্নের নৈশ স্কুল 'সেবা শিক্ষালয়'। প্রথমে ঘর নেই, বেঞ্চ নেই, চেয়ার নেই, টেবিল নেই, এমনকি বল্গ্যাকবোর্ডও ছিল না। কলেজের বারান্দায় চট বিছিয়ে শিশুদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। পরে অবশ্য কলেজের রুমে বসার ব্যবস্থা করে দেন কলেজের অধ্যক্ষ মাজারুল হান্নান। এ প্রসঙ্গে কলেজ অধ্যক্ষ মাজারুল হান্নান বলেন, হতদরিদ্র ও গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা যেটা করতে পারিনি, সেটা নৈশ প্রহরী সুরুজ করে দেখাল। তার এ উদ্যোগ দেখে ঘরের রুম খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এখন সেখানেই ছেলেমেয়েরা রাতে পড়াশোনা করছে।
সুরুজ জানান, তার শিক্ষালয়ে বর্তমানে ১৮৬ শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ করছে। প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে নবম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করছে। স্কুলের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে একটি করে নেম্পো (কুপিবাতি)। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে সুরুজের এ পাঠশালা। প্রতিদিন কুপি জ্বালাতে নিজ পকেটের টাকায় ২ লিটার কেরাসিন কিনতে হয়। সব বিষয়ে পাঠদান করা হলেও বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুরুজকে সহায়তা করছেন এইচএসসি এবং বিএ পাস ৯ শিক্ষক-শিক্ষিকা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে ৩ ঘণ্টা পড়ানো হয়। শুধু পাঠ্যবইয়ের শিক্ষাই দেওয়া হয় না তাদের, সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, শরীরচর্চা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে মাঝে মধ্যে শিশুদের চকোলেট কিনে দেন এবং পিকনিকের আয়োজন করে থাকেন সুরুজ। এ ছাড়া প্রতি মাসে নিয়মিত মূল্যায়ন পরীক্ষাও নেওয়া হয়। শিশু থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় পড়ানো হচ্ছে। সেবা শিক্ষালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়মিত করতে হাজিরা খাতা আছে। এ খাতায় আসা ও যাওয়ার সময় স্বাক্ষর করতে হয়। এ ছাড়াও সুরুজ সম্প্রতি তার বাড়ির উঠানে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অক্ষরজ্ঞনহীন বয়স্ক নারীদের পড়ালেখা ও নাম স্বাক্ষর শিখানো শুরু করেছেন। সেখানে ৩০ নারী প্রতিদিন আসেন। উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী হতদরিদ্র নগেন চন্দ্র দাস তার মেয়ে লাবনী রানী দাসকে (৯) সুরুজের সেবা শিক্ষালয়ে ভর্তি করেছেন। নগেন বলেন, 'কোনো ভালো ইশকুলোত ব্যাতন দিয়া পড়াবার ক্ষমতা হামার নাই। অভিভাবক হয়্যাও হামরা ছোলগুলাক বাড়িতও পড়াবার টাইম পাই না। সুরুজ স্যার সেই কামটা মাগনায় (বিনা পয়সায়) করবার নাইগছেন। ভগবান তার ভালো করুক।' ফুলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী আতিফা আক্তার রাতে পড়তে আসে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে। সে বলে, 'আমরা গরিব মানুষ। প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য নাই। তাই সুরুজ স্যারের নাইট স্কুলে ভর্তি হয়্যাছি।' একইভাবে নিজের উপলব্ধির কথা জানায়, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী আশা আক্তার।
শাহ আলম সুরুজ সমকালকে বলেন, 'আমি এ ছেলেমেয়েগুলোর মধ্যে স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে পেরেছি, এটাই বড় কথা। ভবিষ্যতে এলাকার সব গরিব, অসহায়, হতদরিদ্র, কর্মজীবী ও ঝরেপড়া ছাত্রছাত্রীকে খুঁজে বের করে সেবা শিক্ষালয়ের আওতায় আনা হবে। তবে একা আর পারি না। পকেটের টাকায় আর কত হয়? নিজের এবং ছেলের বেতনের টাকায় আর জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা মাঝে মাঝে আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করলেও এখন আর সে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।' ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তার ছেলে রাজু আহম্মেদ চাকরি করেন। তার অর্থ সাহায্য আর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন ও হাবিবুর রহমান হবি বিভিন্ন সময় সাহায্য সহযোগিতা করেন। এভাবে অতিকষ্টে চালাচ্ছেন সেবা শিক্ষালয়। সুরুজ জানান, এলাকার কিছু বেকার যুবক পাঠদানের ক্ষেত্রে সাহায্য করছেন। তাদের সামান্য কিছু সম্মানী, চক-ডাস্টার ও অন্যান্য খরচসহ মাসে এখন প্রয়োজন হয় ৫ হাজার টাকা। এত টাকা আমার পক্ষে খরচ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দেশের কোনো হৃদয়বান শিক্ষানুরাগী যদি সেবা শিক্ষালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়ান এবং প্রতিষ্ঠানের একটি নিজস্ব স্কুল ঘর, বেঞ্চ, টেবিলসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে হয়তো আজীবন স্কুলটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো।
No comments