পাহাড় কাটা চলছেই-চুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে এ আচরণ প্রত্যাশিত নয়

ট্টগ্রামে প্রতিবছর পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে। শোকাবহ একেকটি পাহাড়ধসের পর দেশব্যাপী পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি ওঠে। পত্রপত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। সরকার ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পাহাড় কাটা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়। এর কিছুদিন পরই আবার যথারীতি পাহাড় কাটা শুরু হয়। ব্যক্তি পর্যায়ের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়েও চলে পাহাড় কাটার মহোৎসব। গতকাল রবিবারের কালের কণ্ঠেও এমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।


চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একটি পাঁচতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য এঙ্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। গত মাসে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছে, পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাহাড় কাটা সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে চুয়েটের উপাচার্য ড. শ্যামল কান্তি বিশ্বাস বলেছেন, পাহাড় নয়, ১৫-১৬ ফুট উঁচু একটি টিলা কাটা হচ্ছে। চুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অচিন্ত্য কুমার চক্রবর্তী বলেছেন, পাহাড় কাটার জন্য যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়, তা-ই তাঁরা জানেন না এবং এ ব্যাপারে তাঁরা কোনো চিঠিও কখনো পাননি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাম্য জবাব বটে!
সবিস্ময়ে তাই বলতেই হয়, শাবাশ চুয়েট কর্তৃপক্ষ! ১৯৯৫ সাল থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দেশে পাহাড় হোক আর টিলা হোক, সেগুলো কাটা নিষিদ্ধ রয়েছে। ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, 'অনিবার্য প্রয়োজনে' পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় ও টিলা কাটার বিধান রাখা হয়। যদিও সেই 'অনিবার্য প্রয়োজন' নিয়ে বহু প্রশ্ন রয়েছে। প্রতিবছর পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে পাহাড় কাটা, পাহাড়ধস নিয়ে প্রচুর আলোচনা, লেখালেখি হচ্ছে; তার পরও দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে থাকা সর্বোচ্চ শিক্ষাধারী ব্যক্তিরা যদি কিছুই না জানেন, তাহলে অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত যেসব লোক পাহাড় কাটছে, তাদের দোষ দিয়ে লাভ কী?
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আমরা অস্বীকার করছি না। চুয়েট ক্যাম্পাসটি যেহেতু পাহাড়ি এলাকায়, তাই সেখানে উন্নয়নের স্বার্থে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখানোটা আমরা কিভাবে নেব? এটা সত্য, রাস্তা বা জনগুরুত্বসম্পন্ন কোনো কোনো স্থাপনা নির্মাণের প্রয়োজনে কখনো কখনো কোনো কোনো পাহাড় বা তার অংশবিশেষ কাটার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সেটি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনেই করা উচিত। এ ক্ষেত্রে চুয়েট কর্তৃপক্ষ যে নজির স্থাপন করেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.