চরাচর-নিশ্চিহ্ন নীলগাই by আলম শাইন
উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে কর্ণাটক পর্যন্ত নীলগাইয়ের বিস্তৃতি। পাকিস্তানের পূর্ব সীমান্ত থেকে আসাম পর্যন্ত এদের কিছু কিছু দেখা মেলে। তবে একসময় বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের, বিশেষ করে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার মাঠ-প্রান্তর দাপিয়ে বেড়াত নীলগাই। বিশেষ করে শীতের জ্যোৎস্না রাতে এরা দলবেঁধে কৃষিজমিতে খাদ্যের সন্ধানে নেমে আসত পাহাড়ের পাদদেশ থেকে।
নীলগাই দেখতে অবিকল বড় হরিণের মতো হলেও চেহারার আদলে রয়েছে হরিণ-গরুর মাঝামাঝি মিল। গায়ের বর্ণ ধূসর, নীল নয়। তবে পূর্ণ বয়স্ক নীলগাইয়ের দেহ লৌহধূসর লোমে আবৃত। দুই গালের পাশে থাকে সাদা দাগ। ঠোঁট, গলা, কানের ভেতর এবং লেজের তলায় সাদা বর্ণের দাগ থাকে। অল্পবয়সী নীলগাইয়ের বর্ণ অনেক সময় হলদেটে হয়। এ প্রাণীর কাঁধ উঁচু, নিচু নিতম্ব। সামনের পায়ের চেয়ে পেছনের পা সামান্য ছোট। এদের গলার নিচে দুই ইঞ্চি পরিমাণ এক গোছা পশম থাকে, যা দেখতে খুবই সুন্দর। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একরকম মনে হলেও চেনার একমাত্র উপায় শিং জোড়া, যা স্ত্রী নীলগাইয়ের নেই। এরা হরিণের মতোই সামাজিক প্রাণী। বাস করে দলবদ্ধভাবে। প্রতিটি দলে পাঁচ থেকে পনেরোটি নীলগাই থাকে। ঘন জঙ্গল এদের পছন্দ নয়। পছন্দ খোলা প্রান্তরের ঝোপ-জঙ্গল। ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রখর। বিপদ দেখলে আত্মরক্ষার জন্য দ্রুত দৌড়ে পালায় এরা। নিরীহ হলেও এরা খুবই চঞ্চল এবং আজব প্রাণী। নিয়মিত পানি পান করে না, এমনকি গ্রীষ্মকালেও পানি পান না করে দু-চার দিন কাটিয়ে দিতে পারে। আরেকটি হাস্যকর স্বভাব হচ্ছে, এরা দলের সবাই মিলে মলত্যাগ করে একই স্থানে। নীলগাই তৃণভোজী প্রাণী। প্রধান খাদ্য ঘাস। তবে ডালজাতীয় যেমন মাষকলাই, মসুর ও ছোলাগাছ নীলগাইয়ের খুবই প্রিয়। মাদি নীলগাই ২৫ মাস বয়সে যৌবনপ্রাপ্ত হয়। গর্ভধারণের সময়কাল ৮ থেকে ৯ মাস। বাচ্চা প্রসব করে একটি থেকে দুটি। গড় আয়ু ১৫-২০ বছর। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই সামান্য কয়টা বছরই এরা নিরাপদে পার করতে পারে না। লোভাতুর শিকারির দল নির্বিচারে নীলগাই নিধন করে এদের বংশপ্রদীপ নিভিয়ে ফেলেছে। এ জন্যই মূলত নীলগাই এখন চিড়িয়াখানা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় না। বলা যায়, প্রাণীটা এ দেশ থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু আমাদের নৃশংসতার কারণে এবং বন্য প্রাণী আইনের দুর্বলতার জন্য নীলগাইসহ অনেক প্রাণী বিলুপ্তির পথ ধরেছে। এদের এখন আর কোনোভাবেই প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়! তবে অনেকে মনে করছেন, অভয়ারণ্যের মাধ্যমে বংশবিস্তার ঘটিয়ে নীলগাইয়ের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আশা করি, বিষয়টা ভেবে দেখবে কর্তৃপক্ষ।
আলম শাইন
No comments