স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো-লাভের পাল্লা অনেক ভারী
সরকারি বরাদ্দের দিকে তাকিয়ে থেকে যারা বছরের পর বছর দুর্ভোগ মেনে নেন, শেরপুরের কেউটা বিলের ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি তাদের চোখ খুলে দিতে পারে। রোববার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলা শহরমুখী সড়ক ও আশপাশের কয়েক গ্রামের জন্য সবেধন নীলমণি বিদ্যালয়টির সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী এ সাঁকো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল।
ধারণা করা যায়, ক্ষুদ্র সাঁকোটি মেরামতের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিত্যদুর্ভোগের শিকার গ্রামবাসীকে বরাদ্দ, বাজেট, তহবিল প্রভৃতি বড় বড় কারবারের দোহাই দিয়েছেন। আমরা তিরছা গ্রামবাসীকে সাধুবাদ জানাই যে তারা রাজনীতি ও অন্যান্য হিসাবকে সদর দরজা দেখিয়ে দিয়ে নিজেদের পথ খুঁজে নিয়েছেন। বস্তুত রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের ধারণা প্রকট এবং সুযোগ সুলভ হওয়ার আগে এ ধরনের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই গ্রামবাংলায় বাস্তবায়িত হতো। কেবল সেতু নয়, সড়ক, বিদ্যালয় ভবন, সুপেয় পানির উৎস_ সবকিছুই নিজেরা নির্মাণের নজির অতীতে ভূরি ভূরি মেলে। দশে মিলে কাজ করার সেই ঐতিহ্য ক্ষয় হতে হতে এখন তা সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়েছে। অথচ এর মধ্য দিয়ে কেবল দুর্ভোগ লাঘব সহজ নয়; একটি জনপদের বাসিন্দার মধ্যে একতার যে স্মারক তৈরি হয়, সুশাসন ও সামাজিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে তার তাৎপর্য বিরাট। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের মানদণ্ডেও এ ধরনের উদ্যোগ সরকারি প্রকল্প থেকে নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবে। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষের পকেট ভারী হওয়া ছাড়াও সরকারি প্রকল্পে 'সরকার কি মাল দরিয়া মে ঢাল' মানসিকতার কারণে রাষ্ট্রীয় অর্থের যে অপচয় হয়, নাগরিক উদ্যোগগুলো তা থেকেও মুক্ত থাকে। তিরছা গ্রামবাসী যদিও 'পাকা সেতু'র জন্য ৪০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন; মনে রাখা ভালো যে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যের পাকা সেতু তাদের জীবন ও জীবিকার বড় ভরসা কেউটা বিলের বাস্তুসম্পদ অনেকখানি হানি করবে। অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে দেশের আনাচে-কানাচে যে কংক্রিটের আবর্জনা আমরা ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছি, প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি সেতু তা থেকে মুক্তির উপায় হতে পারে। আমরা মনে করি, তৃণমূল পর্যায়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উচিত হবে স্বেচ্ছাশ্রমে এবং স্থানীয় উপাদানে সামষ্টিক স্থাপনা তৈরিতে উৎসাহ জোগানো। এ ধরনের উদ্যোগের শিকড় আমাদের সমাজের গভীরে আগে থেকেই গ্রোথিত আছে; প্রয়োজন কেবল সেটাকে উপযুক্ত মর্যাদায় ফিরিয়ে আনা।
No comments