কাদেরের ওপর নির্যাতন-সেই ওসির বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে নির্যাতনের ঘটনায় খিলগাঁও থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলালউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে হাইকোর্ট ওসি হেলালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার হাইকোর্টের নির্দেশনার কপি তিনি পেয়েছেন এবং তা খিলগাঁও থানায় পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, হাইকোর্ট সাবেক ওসি হেলালউদ্দিনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৪ ও ৩৩১ ধারায় মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সর্বশেষ অবস্থা জানতে গতকাল বিকেলে খিলগাঁও থানায় গেলে বর্তমান ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ প্রথম আলোকে বলেছেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া যাবে না।
দণ্ডবিধির ৩৩৪ ধারায় ইচ্ছা করে বিপজ্জনক অস্ত্র দিয়ে বিপজ্জনক উপায়ে আঘাত করার অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩৩১ ধারায় জোর করে স্বীকারোক্তি নিতে কাউকে গুরুতর আঘাত করার অপরাধে ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম ও বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
পুলিশের খিলগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্যাতিত আবদুল কাদের মামলার বাদী হবেন। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে কাদেরকে মামলা করার অনুমতি দিতে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তিনি জানান, কাদের গ্রামের বাড়িতে গেছেন। ফিরে এলে মামলা করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বলেন, খিলগাঁও থানার ওসি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আলোচনা করে দু-এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের ছাত্র কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ওসির বিরুদ্ধে মামলা করলে তাঁর ওপর আবার খড়্গ নেমে আসে কি না, এই শঙ্কা থেকে তিনি মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।
খিলগাঁও থানার পুলিশের করা ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে করা দুটি মামলার অভিযোগ থেকে কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ কাদেরকে মোহাম্মদপুর থানার একটি গাড়ি ছিনতাই মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখিয়েছিল। সেই মামলার তদন্তেও কাদের নির্দোষ প্রমাণিত হন।
১৫ জুলাই রাতে ইস্কাটন গার্ডেন রোডের খালার বাসা থেকে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ হলে ফেরার পথে সেগুনবাগিচায় কাদেরকে আটক ও নির্যাতন করে। পরদিন সকালে খিলগাঁও থানার তৎকালীন ওসি হেলালউদ্দিন তাঁর কক্ষে নিয়ে কাদেরকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন।
এ নিয়ে প্রথম আলোসহ একাধিক জাতীয় দৈনিক খবর প্রকাশ করে। এরপর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন এবং ঘটনাটি তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ ও আইন মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি কমিটি তদন্তেও কাদের নির্দোষ প্রমাণিত হয়। কাদেরকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ওসি হেলালউদ্দিনের (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করে। হাইকোর্ট ১১ ডিসেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
No comments