বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচি-উৎসবের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ

স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের হাতে রঙিন কার্ড। নিজের নাম ঘোষণা হতেই মঞ্চে গিয়ে তারা গুণীজনের হাত থেকে পুরস্কার নেয়। বই পড়ে বই পুরস্কার পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে তারা। রাজধানীর রমনা বটমূলে গতকাল শুক্রবার দেখা গেছে ঢাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এই আনন্দ।


তাদের আনন্দ পুরো অনুষ্ঠানস্থলে সৃষ্টি করে উৎসবের পরিবেশ। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে গতকাল সকালে শুরু হয়েছে বইপড়া কর্মসূচির দুই দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণের এ উৎসব। বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের এই মিলনমেলায় এসেছিলেন তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, শুভানুধ্যায়ীরা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুণী ব্যক্তিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উৎসবের প্রথম দিনে দুই পর্বে ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। আজ শনিবার আরও ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৯৩০ জনকে পুরস্কার দেওয়া হবে। গত বছর বইপড়া কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঢাকা মহানগরের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে চারটি বিভাগে এবার তারা পুরস্কার পাচ্ছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘জীবনে বড় কিছু পেতে হলে বড় মূল্য দিতে হবে। অল্প দামে মূল্যবান জিনিস পাওয়া যায় না। পৃথিবীতে যাঁরা বেশি মূল্য দিয়ে নিজেকে গড়েছেন, তাঁরাই বড় হয়েছেন। নিজেকে গড়তে বেশি মূল্য দিলে তোমরাও বড় হতে পারবে।’
ছাত্রছাত্রীদের বই পড়ার অভ্যাস গড়তে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগের প্রশংসা করে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এই উদ্যোগ বই পড়ার বিষয়টি সহজ করে দিয়েছে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে বই পড়ায় এমন ব্যবস্থা নেই। এর প্রত্যক্ষ সুফল পাওয়া যাচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক-লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘বই পড়ো বলে তোমাদের জীবনটা অন্যদের জীবনের চেয়ে ভিন্ন। তোমাদের বন্ধু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্করসহ বিখ্যাত সব লেখক। কারণ, তোমরা তাঁদেরই বই পড়ো। এত সুন্দর বন্ধুদের ছেড়ে চলে যেয়ো না।’
লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক বলেন, ‘তোমাদের আলোয় আলোকিত হয়েছে উৎসব প্রাঙ্গণ। আমি চাই, তোমরা ভবিষ্যতে দেশকেও আলোকিত করবে।’
প্রথম দিনের প্রথম পর্বে পুরস্কার বিতরণ ও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল আওয়াল, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মাহবুব জামিল, ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হুসাইন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাস দেবপ্রসাদ। দ্বিতীয় পর্বে পুরস্কার বিতরণ ও বক্তব্য দেন শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, টেলিভিশন উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক হুমায়ূন কবির প্রমুখ। উপস্থাপনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্মসূচি সমন্বয়কারী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
পুরস্কারের বই দিয়েছে ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এবং অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা দিয়েছে গ্রামীণফোন। সার্বিক সহায়তা করেছে প্রথম আলো।
প্রতিবছর সারা দেশের চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় পৌনে চার লাখ ছাত্রছাত্রী এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

No comments

Powered by Blogger.