এই পাষণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক-আমরা হাওয়া আক্তারের পাশে আছি

স্বামীর ‘অবাধ্য’ হওয়ার নির্মম পরিণতি আমাদের সমাজে হতভাগ্য নারীদের ভোগ করতে হয়। এর কারণ, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে অনেক পুরুষ প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্কের মতো বিবেচনা করেন। স্বামীর অমত সত্ত্বেও স্ত্রী পড়াশোনা করেছেন, এই ‘অপরাধে’ কি কেউ হাতের আঙুল কেটে দিতে পারে? সমাজ ও আইনের চোখে স্বামী হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিটি যে কাজ করছেন, তা পৌরাণিক কাহিনিকেও হার মানায়।


যে আঙুল দিয়ে স্ত্রী লিখতেন, পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ‘পুরস্কার’ হিসেবে তার চারটি কেটে নিয়েছেন স্বামী নামধারী ব্যক্তিটি! তাঁর নামের আগে কী বিশেষণ ব্যবহার করা যায়—পশু? পশুরা কি এমন কাজ করে?
নরসিংদীর মেয়ে হাওয়া আক্তারের বিয়ে হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তখন হাওয়া মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বিয়ের পর বের হয় ফল; ‘এ’ গ্রেড পেয়ে পাস করেন তিনি। স্বামীর শর্ত, আর পড়ালেখা করা যাবে না। এরপর দুবাই চলে যান স্বামী। পড়ালেখায় অনেক আগ্রহ হাওয়ার। বাবার বাসায় থেকেই তিনি ভর্তি হন এইচএসসিতে। এই খবর পাওয়ার পর ক্ষিপ্ত স্বামী দেশে ফিরে ‘সারপ্রাইজ’ দেওয়ার নাম করে বোনের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এ ঘটনা ঘটান। একজন ‘স্বামী’ নিজেকে কতটা কর্তৃত্বপরায়ণ মনে করলে অবলীলায় ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে এমন বর্বর কাণ্ড ঘটাতে পারেন! রফিকুলের চিন্তাচেতনায় কি এই বোধ কাজ করেছে যে স্ত্রীকে এই ‘শাস্তি’ দেওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে? এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মনজুরের ঘটনাটি যদি আমরা বিবেচনায় নিই, তবে এটা মানতেই হবে যে আমাদের সমাজে বহু পুরুষের মধ্যে এখনো মধ্যযুগীয় মানসিকতা বিদ্যমান।
রফিকুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সেখান থেকে হাওয়া আক্তারের কাটা চারটি আঙুল আর চাপাতিটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাওয়া আক্তারের ওপর যে বর্বরতা হয়েছে, তার বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশ ও প্রশাসনের। আমরা এ ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি দেখতে চাই না। হাওয়া আক্তারের বাবা আক্ষেপ করে বলেছেন, পড়াশোনা করাতে গিয়ে তিনি মেয়ের হাতও খুইয়েছেন, সঙ্গে স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে। আমরা চাই হাওয়া সুস্থ হয়ে উঠুন এবং তাঁর পড়াশোনার স্বপ্ন সত্যি হোক। ইতিমধ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাঁর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছে। আমরাও তাঁর পাশে আছি।

No comments

Powered by Blogger.