সংকট-মুহূর্তে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে-সরকার উর্যাখাতের ব্যর্থ চেষ্টা
গণতান্ত্রিক সরকারকে উর্যাখাত এবং সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস নস্যার্যা হওয়ায় দেশবাসী আশ্বস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেনাসদরে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পরিচালক (পিএস পরিদপ্তর) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাসুদ রাজ্জাক বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের চেষ্টা প্রতিহত করেছে।’ আমরা সেনাবাহিনীর এই ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাই এবং সংশ্লিষ্ট সবাই ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন বলে আশা রাখি।
সেনাসদরের বক্তব্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উর্যাখাতে সেনাবাহিনীর কতিপয় সাবেক ও বর্তমান সদস্য কীভাবে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করেছিলেন, তার বিবরণ আছে। এই অপপ্রয়াসে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক দুই সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেও ষড়যন্ত্রের অন্যতম হোতা ও বর্তমানে সেনাবাহিনীতে চাকরিরত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক পলাতক রয়েছেন। অভ্যুত্থান-প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর এই কর্মকর্তা ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ‘গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের অবিশ্বাস্য কাহিনি’ প্রচার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। পরে নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্রীর সেই বার্তা লিফলেট আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
সেনাসদর থেকে অভ্যুত্থান-প্রচেষ্টার সঙ্গে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে। তাদের অন্তর্জাল হিযবুত তাহ্রীরের মধ্যে সীমিত, না আরও কোনো সংগঠনে বিস্তৃত—তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, সেনাবাহিনীর মতো একটি পেশাদারি ও সুশৃঙ্খল বাহিনীতে কীভাবে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীটি শিকড় গাড়ল।
এ ঘটনায় সেনা কর্তৃপক্ষ যে সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রতি সমগ্র দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন আছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়টি জনসমক্ষে তুলে ধরায় এ নিয়ে গুজব ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে বলে আশা করি। অতীতে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটলেও জনগণকে প্রকৃত তথ্য জানতে দেওয়া হয়নি।
আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কখনোই অবস্থান নিতে পারে না। বিভিন্ন সময়ে কতিপয় ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনীর কাঁধে ভর করে যেসব অপকর্ম চালিয়েছে, তাতে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে; ব্যাহত হয়েছে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা।
বিষয়টির সঙ্গে যেহেতু আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, সেহেতু প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও নাগরিকের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণই প্রত্যাশিত। তার্যাক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখতে চাই। তাঁরা উভয়েই গণতান্ত্রিক ধারা এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
আমরাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেকোনো মূল্যে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমুন্নত রাখতে হবে। অভ্যুত্থান-প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ভবিষ্যতে যাতে কোনো গোষ্ঠী এ ধরনের চক্রান্ত না চালাতে পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
No comments