দুর্নীতি দমন আইন-সংসদীয় কমিটির সুপারিশ আমলে নিন
যে কোনো দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর করার জন্য অপরিহার্য কিছু শর্ত পালন করতে হয়। যেমন, রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকা, দুর্নীতিবিরোধী প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন, পর্যাপ্ত জনবল ও অর্থের জোগান, নিরপেক্ষভাবে দুর্নীতিবিরোধী আইন বলবৎ করতে পারা, দুর্নীতি মোকাবেলায় সরকারের বলিষ্ঠ অঙ্গীকার এবং সর্বোপরি কমিশনের নিজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।
বাংলাদেশ যখন দুর্নীতিতে 'বিশ্বচ্যাম্পিয়ন' হিসেবে নিন্দিত হতে থাকে এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতি মোকাবেলায় অ্যান্টিকরাপশন ব্যুরো নামের সংস্থাটির ব্যর্থতা যখন প্রকট হয়ে ওঠে_ তেমন প্রেক্ষাপটেই একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশনের দাবি জোরালো হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের কমিশন গঠনের প্রতি তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে জনমনে আশাবাদের সঞ্চার হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবে বিস্তর ব্যবধান লক্ষণীয়। ২০০৪ সালে যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন প্রণীত এবং এর আওতায় যাদের নিয়ে কমিশন গঠিত হয় তা সমাজের রল্প্রেব্দ রল্প্রেব্দ ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি বন্ধ না হোক, অন্তত নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে_ এমনটি সাধারণভাবে প্রতীয়মান হয়নি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সংসদে দুর্নীতি দমন (সংশোধন) বিল-২০১১ নামে একটি বিল উপস্থাপন করা হয়। এটি কমিশনের সীমিত ক্ষমতা আরও খর্ব করবে বলেই নাগরিক সমাজ অভিমত দিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বিবেচনায় থাকা ওই বিলে বলা হয়েছে :'এ আইনের অধীনে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে সরকারের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।' এভাবে আইন প্রণীত হলে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি সরকারি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে_ এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না। তবে 'মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে' যে উপমা তা আবার যেন সত্য হয়ে উঠল আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে। শনিবার কমিটির বৈঠক শেষে অভিমত দেওয়া হয়েছে :'স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করতে হলে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্তে যদি সরকারের পূর্বানুমোদনের প্রয়োজন হয় তাহলে দুর্নীতি দমন সম্ভব হবে না।' সংসদীয় কমিটির সভাপতি প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, 'সরকারের কাছ থেকে আগে অনুমোদন নিতে হলে কমিশনের দরকার নেই। এ ধরনের কাজ পুলিশ দিয়েই চলতে পারে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে লাভ নেই। এটিকে কার্যকর সংস্থায় পরিণত করতে হবে।' কমিটির সদস্যরা তাদের সুপারিশ প্রণয়নের আগে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় এ ধরনের কমিশনের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছেন। ওই সব দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সরকারের কাছ থেকে আগেভাগে অনুমোদন নিতে হয় না। বাংলাদেশে সংসদীয় কমিটি কিংবা সরকারি প্রতিনিধি দলের 'অভিজ্ঞতা অর্জনে বিদেশ সফর' নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি তারা যথার্থ অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন এবং তা কাজে লাগাতে সচেষ্ট হয়েছেন। জাতীয় সংসদ তা বিবেচনায় নেবে এবং এমন একটি আইন প্রণয়ন করবে, যা কমিশনকে প্রকৃতই জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ করে তুলতে পারবে_ এটাই প্রত্যাশা।
No comments