চরাচর-সুস্থতার প্রতিবন্ধক by বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
একসময় বাংলাদেশে ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন ভেজাল খাদ্যে ভরে গেছে সারা দেশ। চকচকে-ঝকঝকে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে নিম্নমানের অস্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিহীন খাবার পরিবেশন করে চলেছে শহর কিংবা গ্রামাঞ্চলের ছোট-বড় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। আমরা না জেনে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর ওই পুষ্টিহীন, অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের ওই সব খাবার খেয়ে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছি।
হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো পুষ্টিহীন খাবার তৈরি ও পরিবেশনের পাশাপাশি আরো সমস্যায় জর্জরিত। যেমন_বখাটেদের আড্ডা, বয়দের অপরিষ্কার পোশাক পরিধান, হোটেলটির চারপাশ অপরিষ্কার এবং দুর্গগ্ধ, ড্রেনের পাশে রান্নাঘর স্থাপন, আগের দিনের রয়ে যাওয়া বাসি খাবারগুলো পরের দিনের নতুন খাবারের সঙ্গে মিশ্রণ, কম দামে পচা ডিমসহ অন্য দ্রব্যাদি ক্রয় করে খাবারের সঙ্গে মিশ্রণ প্রভৃতি। সুষম খাদ্যের মতো নিরাপদ খাদ্য সুস্বাস্থ্য রক্ষা করার পূর্বশর্ত। সুষম খাদ্য বলতে পরিমাণগত এমন খাদ্য বোঝায়, যা প্রয়োজনীয় ক্যালোরি জোগান দেয়। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দৈনিক গড়ে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ ক্যালরি দরকার। এই ক্যালরি পেতে হলে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ, মাংস, ফলমূল, শাকসবজি ও দুধ-কলা থাকতে হবে। নানা কারণে নিরাপদ খাদ্যের অভাব হতে পারে। ভেজাল মেশানো, অধিক উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার প্রভৃতি অন্যতম। উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যে ভেজাল মেশানো মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য হয়। আমাদের দেশে একসময় গোবর সার এবং নানা প্রক্রিয়ায় তৈরি জৈব সারের ব্যবহারই ছিল প্রধান। কিন্তু এখন রাসায়নিক সার বা কীটনাশক সরাসরি ব্যবহার করে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, মানুষের শরীরের রোগব্যাধির প্রায় ৮০ শতাংশ হয় অনিরাপদ খাদ্য ও পানির কারণে। বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন মৌসুমে প্রায় ৭০ ধরনের বিভিন্ন ফল জন্মে। দেহের জন্য পুষ্টিকর এসব ফল সরাসরি খাওয়া যায়। এসব দেশি ফল থেকে পুষ্টির সবটুকুই পাওয়া সম্ভব। এসব ফল আগাম বাজারজাত করতে কৃত্রিম উপায়ে পাকানো হয়। অতিমুনাফার লোভে ফল পাকাতে ব্যবসায়ীরা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মেশাচ্ছে। বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত এসব ফল খেলে দীর্ঘমেয়াদি বদহজম, পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিকসহ নানা রোগ হচ্ছে। পানীয় জল থেকে শুরু করে শিল্পোৎপাদিত খাদ্যপণ্য ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ_কোনো কিছুই আজ আর ভেজালমুক্ত নয়। সবজি, ফল, দুধ, মাছের পচন রোধে আজ রাসায়নিক পদার্থ, বিষাক্ত রং ও সুগগ্ধি ব্যবহার করা হচ্ছে। শহরের বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে গ্রামের ক্ষুদ্র দুগ্ধ বিক্রেতাসহ সবাই আজ ভেজালের অভিশাপে জড়িত। সুস্থভাবে বেঁচে থাকা খাদ্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। 'নিরাপদ খাদ্য' সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য কর্মশালা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
No comments