দেশের দ্বিতীয় ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি নিজেই রোগী by ফিরোজ শিবলী
অযত্ন-অবহেলায় চট্টগ্রামে দেশের দ্বিতীয় ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি নিজেই রোগী হয়ে পড়েছে। মরিচা পড়েছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশে। নেই পর্যাপ্ত জনবল। যে ক'জন কর্মকর্তা আছেন কেউ অফিস করেন না। ঢাকা থেকে এসে বেতন নিয়ে চলে যান। অথচ দেশের ছোট-বড় ২৫০টি ওষুধ কারখানার ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করে এ ল্যাবরেটরিটি।
অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ভালো রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে নকল ও ভেজাল ওষুধে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের বাজার।
সরেজমিন নগরীর আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠসংলগ্ন ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে দেখা গেছে_ পরিচালক, সহকারী পরিচালকের কক্ষে তালা ঝুলছে। গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা ও পরদিন আড়াইটায় গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। ল্যাবরেটরির কেমিস্ট মোস্তাফা কামাল ও ল্যাব সহকারী আনোয়ার ছাড়া কেউ নেই। ব্যবহার না হওয়ায় যন্ত্রপাতিতে মরিচা পড়ছে। স্যাঁতসেঁতে নোংরা অধিকাংশ কক্ষ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ওষুধের নমুনা। পরিচালক শহীদুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক আশরাফ হোসেন থাকেন ঢাকায়। মাসের শেষ দিকে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন নিয়ে চলে যান। ফলে প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না। এ সুযোগে
অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অফিস ফাঁকি দেন। ওষুধ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে মান যাচাই না করে অনেক সময় নিম্নমানের ওষুধও ভালো বলে রিপোর্ট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির পরিচালক শহীদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'লোকবল সংকটের কারণে নানা সমস্যায় আছি। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। '
জানা গেছে, নগরীর আগ্রাবাদের এ ল্যাবরেটরি ছাড়া ঢাকায় মহাখালীতে আরেকটি ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি রয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ড্রাগ সুপারের অফিস থেকে বাজারে বিক্রি হওয়া নকল ও ভেজাল ওষুধগুলো পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। কিন্তু পরিচালকের দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, লোকবলের অভাব ও তদারকি না থাকায় মানুষের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বর্তমানে এখানে অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও হারবালসহ মাসে গড়ে ৬০টি ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত এক বছরে মোট ৫৫৭টি ওষুধের নুমনা পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে মানসম্পন্ন হয়েছে ৪৫০টি। সাতটি ওষুধের মানবহির্ভূত পাওয়া গেছে পরীক্ষায়। ওই ওষুধগুলোর কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
বর্তমানে এ ল্যাবরেটরিতে জীবাণুবিদ, সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বায়োলজিক্যাল ল্যাব কর্মকর্তা, টেকনিক্যাল সহকারী, অফিস সহকারীসহ ১২টি পদ খালি রয়েছে। তাছাড়া গত ১০ বছর ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেনা অত্যাধুনিক মেশিনগুলো অপারেট করতে পারেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে বাজারে নতুন আসা মিনারেলসমৃদ্ধ ভিটামিনসহ অন্য ওষুধগুলোর মান পরীক্ষা করা যায় না। লোকবল ও প্রশিক্ষণের অভাব আর অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে দেশের দ্বিতীয় ড্রাগ টেস্টিং এ ল্যাবরেটরি।
No comments