শেখ হাসিনাকে ডিলিট ডিগ্রি প্রদান-মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ত্রিপুরার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সমর্থনের জন্য ত্রিপুরার জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি গ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বুধবার আগরতলা বিমানবন্দরে অবতরণকালে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতাসংগ্রামে আপনাদের বিশাল অবদানের কথা স্মরণ করে আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি।


’শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারের জন্য তাঁকে এই সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির নবম সমাবর্তনে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ হামিদ আনসারী প্রধানমন্ত্রীকে এ ডিগ্রি দেন। ১৯৮৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর শেখ হাসিনা হচ্ছেন প্রথম বিদেশি নেতা, যাঁকে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ ডিগ্রি দেওয়া হলো।
ডিলিট ডিগ্রি গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সম্মান আমাকে জনগণের সেবায় আরও নিবেদিত হতে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অসহায় মানুষ যখন সবকিছু হারিয়ে কেবল জীবন নিয়ে স্রোতের মতো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসছিল, তখন আপনারা দুই বাহু প্রসার করে তাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। আমাদের মনে সেই ভয়াবহ দিনগুলোর স্মৃতি এবং আমাদের জনগণের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থন অমলিন রয়েছে।’ তিনি বলেন, ত্রিপুরা ১৯৭১ সালে শরণার্থীতে ভরে গিয়েছিল। সে সময় ত্রিপুরার জনসংখ্যার চেয়ে শরণার্থীর সংখ্যা ছিল বেশি।
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, ত্রিপুরার রাজ্যপাল ডিওয়াই পাতিল, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, ভারতের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী মন্ত্রী কপিল সিবাল এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অরুণোদয় সাহা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিয় কুমার বাগচী এতে সভাপতিত্ব করেন। তিনি শেখ হাসিনার উদ্দেশে একটি মানপত্র পাঠ করেন। এর আগে শেখ হাসিনা ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য উন্মোচন করেন।
শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের উদ্যোগে গতকাল প্রধানমন্ত্রীকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের ভাগ্য প্রতিবেশী দেশ দুটির পারস্পরিক বহুমুখী সম্পর্কের মধ্যে নিহিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আস্থাহীনতা ও ভুল-বোঝাবুঝির কারণে অতীতে বারবার এই সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ও বাংলাদেশের জনগণ ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক কল্যাণকর সম্পর্ক স্থাপনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতীতকে পেছনে ফেলে আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই দুই দেশের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে সামনে এগিয়ে যেতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উভয় দেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে নজর দিতে হবে এবং আমাদের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর জন্য দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ সালে তাঁর ভারত সফরের পর ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে নিরাপত্তা, স্থলসীমানা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়গুলো আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা উভয় সরকার এখন গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিয়েছি, যাতে উভয় দেশের জনগণ তার সুফল ভোগ করতে পারে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল পরিবহন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং একই পথে পরীক্ষামূলকভাবে কার্গো চলাচল করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আখাউড়া-আশুগঞ্জ রেল যোগাযোগ এবং ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ব্যাপারে উভয় দেশের কর্মকর্তারা একটি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘সাবরোম-রামগড় স্থল শুল্কবন্দর চালু ও বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সীমান্তে চারটি সীমান্তহাট বসানোর ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছি।’ এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার পাশাপাশি গোটা অঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতে বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের জন্য সে দেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা (ত্রিপুরার জনগণ) প্রতিযোগিতামূলক বাজারদরে এখন অনেক বাংলাদেশি পণ্য কিনতে পারেন।’ ত্রিপুরার ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিকদের বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাপক বিদ্যুতের চাহিদার কারণে আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারি।’ তিনি বলেন, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদ্যুৎ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘ত্রিপুরা থেকে আমরা বিদ্যুৎ কিনতে অথবা এখানকার বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’ বাসস।

No comments

Powered by Blogger.