'ভুল' ফরেনসিক রিপোর্ট-এই চিকিৎসককে মার্জনা নয়
মানুষই শুধু নয়; যন্ত্রেরও ভুল হতে পারে। কিন্তু তাই বলে 'কম্পিউটার' ১৩ বছরের কিশোরীর বয়স কেবল ২৫ বছর নয়, তাকে তিন সন্তানের জননী বানিয়ে দেবে_ এটা কেউই বিশ্বাস করবে না। শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে বরিশালের উজিরপুরের ধর্ষিতা কিশোরীর ব্যাপারে এমন সনদপত্র দেওয়ার পেছনে নিঃসন্দেহে বড় ধরনের ঘাপলা রয়েছে।
আমরা জানি, বিদ্যমান সমাজ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ধর্ষণের শিকার ও তার পরিবারের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া কত কঠিন। ফরেনসিক প্রতিবেদনসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র ঠিক থাকলেও অসহায় কত মানুষকে বিচারের দাবিতে সাত ঘাটের পানি খেতে হয়। ভুল ফরেনসিক প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে এ ক্ষেত্রে বিচারপ্রাপ্তির পথ আরও দীর্ঘায়িতই করা হয়েছে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্টরা উজিরপুরের এই অঘটনে এসব কারসাজি অগ্রাহ্য করে বিচার কাজ চালাতে পারবেন। একই সঙ্গে যারা কেবল অন্যায় নয়, বিচার ব্যবস্থাকে কাগুজে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে চেয়েছে তাদের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে বাদীপক্ষের নিরাপত্তাও। তাদের এই বক্তব্যই আমাদের কাছে আমলযোগ্য মনে হয় যে, আলোচ্য চিকিৎসক অর্থের বিনিময়েই ন্যায়বিচারের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চেয়েছেন। অন্যরা রিপোর্ট তৈরির পর তিনি না দেখেই স্বাক্ষর করেছেন_ আলোচ্য চিকিৎসকের এই অজুহাতও নেহাত খোঁড়াই বিবেচিত হয়। ধর্ষণ মামলার মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও তিনি কীভাবে না দেখে স্বাক্ষর করেন? তার ওপর অর্পিত অন্যান্য দায়িত্বও কি একইভাবে সম্পাদন করে থাকেন? কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ইতিমধ্যে তিনি যেসব প্রতিবেদন দিয়েছেন এবং কাজ সম্পাদন করেছেন সেগুলো যতদূর সম্ভব পুনর্মূল্যায়ন করা। সাংবাদিকদের কাছে স্বীকারোক্তিতে তিনি নিজেই কর্তব্যে অবহেলার সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে তারও আগে ধর্ষিতা কিশোরীর প্রতি আরেক দফা অন্যায়ের কারণে এই চিকিৎসকের বিচার হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। অন্যায় সহ্যকারী অন্যায়কারীর মতোই দোষী বলে গুণীজন বলে থাকেন। এই চিকিৎসক তার চেয়েও গুরুতর অপরাধ করেছেন। ন্যায়বিচার প্রত্যাশী মানুষের ঘৃণার আগুন কেবল তার জন্য যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন ন্যায়দণ্ডের কঠোর আঘাত।
No comments