চরম দারিদ্র্যে দেশের ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুঃ তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতেই হবে
বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশু-দারিদ্র্য এবং বঞ্চনা কতটা গভীর উদ্বেগের বিষয়, তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে সম্প্রতি ইউনিসেফ কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে শিশুদের দারিদ্র্যাবস্থা ও বৈষম্য’ বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, দেশে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশু বাসস্থান, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্য ও নিরাপদ খাবারপানিসহ বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত।
এসব শিশু নিরঙ্কুশ দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বসবাস করায় তাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে ও নানামুখী গুরুতর প্রতিকূলতায় অনেক শিশু অকাল মৃত্যুর শিকার হয়। দেশে মোট সাড়ে ৬ কোটি শিশু রয়েছে। ইউনিসেফের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এদের অর্ধেক নিরঙ্কুশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। দেশের শতকরা ৪১ ভাগ শিশু আবাসন, ৬৪ ভাগ পয়ঃনিষ্কাশন, ৫৭ ভাগ পুষ্টি, ১৬ ভাগ স্বাস্থ্যসেবা ও ৭১ ভাগ তথ্য প্রাপ্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ বাস্তবতাকে ভয়াবহ না বলে উপায় নেই। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে, দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা এসব শিশু তাদের জীবনের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধার মুখে পড়ে।
দেশে মোট কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা ৭৪ লাখ ২০ হাজার। এর অর্থ হচ্ছে প্রতি ৬ শিশুর একজন কর্মজীবী। এ পটভূমিতে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা চরম দুর্দশার শিকার। তাদের বঞ্চনা ও অসহায়ত্ব প্রতিদিন মানবিকতাকে পরিহাস করে চলেছে। এসব শিশু হরহামেশা কর্মস্থলে, স্কুলে, পরিবারে, পরিবারের বাইরে নানা ধরনের বঞ্চনা, নিপীড়ন, সহিংসতা, যৌন হয়রানি, অশ্লীল মন্তব্য ও শোষণ সহ্য করছে। অস্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে সৃষ্ট দুর্দশার আবর্ত থেকে এসব শিশুর বেরিয়ে আসার সুযোগ নেই বললেই চলে। এদের মধ্যে আবার গ্রামের শিশুরা বেশি বঞ্চনার শিকার। সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হচ্ছে গ্রামের বহু গরিব শিশুর মধ্যে বঞ্চনাবোধ সক্রিয় নয়। তারা এই বঞ্চনাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছে এবং এর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। ফলে জাতির স্বাভাবিক বিকাশ যে গুরুতর বাধার সম্মুখীন, সে ব্যাপারে আমরা সচেতন—একথা বুকে হাত দিয়ে বলা যাবে না।
একুশ শতকে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) জাতিসংঘের একটি সাড়া জাগানো প্রকল্প। কিন্তু দেশের অর্ধেক শিশু যদি চরম দারিদ্র্যের নিগড়ে আটকা পড়ে থাকে, তবে আমাদের দেশে অন্তত এ প্রকল্প সফল হওয়ার আশা না করাই ভালো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের দেশে কোনো উন্নতি হয়নি—এ কথা বলা যাবে না। দেশে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান গড় হিসাবে বেড়েছে, বেড়েছে বাংলাদেশীদের গড় আয়ুও। এসব অর্জনের পাশাপাশি গরিব মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বেড়েছে গরিব শিশুর সংখ্যাও। এর অর্থ হলো—যারা গরিব ছিল, শুধু তারা যে গরিব রয়ে গেছে তা নয়; বরং প্রতিদিন নতুন গরিব জন্ম নিচ্ছে এবং জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ায় গরিবদের বিশেষ করে গরিব শিশুদের প্রতি মমত্ব হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের উন্নয়ন আসলে প্রকট ধনবৈষম্যের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ইউনিসেফের গবেষণা জরিপে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা আমাদের চোখের সামনে থাকে না; কারণ আমরা গড় হিসাবের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। অথচ গড় হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়া একেবারেই সোজা। শতায়ু মানুষ আর জন্মগ্রহণের পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া শিশুর গড় আয়ু বের করে ৫০ বছর ধরা যায় বটে; কিন্তু এতে সদ্যোজাত শিশুটি গড় হিসাবের কারণে মৃত থেকে জীবন্ত হয়ে ওঠে না। এই সরল সত্য বিষয়টি মাথায় রেখে সুষম উন্নয়নের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে ধনবৈষম্য হ্রাস পায়। আমাদের সম্পদ সীমিত। তাই সবাই মিলে ভাগ করে খাওয়ার মানসিকতা না থাকলে এ সম্পদ দিয়ে চরম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে জেতা যাবে না।
দরিদ্র শিশুদের অনেকে শৈশব কাটিয়ে ওঠার আগেই মারা যায়। যারা টিকে থাকে, তারা নানা অসম্পূর্ণতা নিয়ে বড় হয় বিধায় সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তারা যে ধরনের বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার হয়, তার ফলে সৃষ্ট হতাশা ও ক্রোধ থেকে তাদের কেউ কেউ বিপথগামী হয়ে সমাজের অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলে। এই অস্থিরতার পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকে তা আমরা প্রতিদিনই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ক্রসফায়ারের নামে বিনাবিচারে মানুষ খুন করেও যে অপরাধ দমন করা যাচ্ছে না, তার একটা বড় কারণ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দেশের অর্ধেক শিশুর বেড়ে ওঠা। তাই মানবাধিকার সমুন্নত রাখার স্বার্থে তো বটেই, আমাদের নিজেদের গরজেই দরিদ্র শিশুদের দারিদ্র্য মোচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা একটা জরুরি কাজ।
দেশে মোট কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা ৭৪ লাখ ২০ হাজার। এর অর্থ হচ্ছে প্রতি ৬ শিশুর একজন কর্মজীবী। এ পটভূমিতে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা চরম দুর্দশার শিকার। তাদের বঞ্চনা ও অসহায়ত্ব প্রতিদিন মানবিকতাকে পরিহাস করে চলেছে। এসব শিশু হরহামেশা কর্মস্থলে, স্কুলে, পরিবারে, পরিবারের বাইরে নানা ধরনের বঞ্চনা, নিপীড়ন, সহিংসতা, যৌন হয়রানি, অশ্লীল মন্তব্য ও শোষণ সহ্য করছে। অস্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে সৃষ্ট দুর্দশার আবর্ত থেকে এসব শিশুর বেরিয়ে আসার সুযোগ নেই বললেই চলে। এদের মধ্যে আবার গ্রামের শিশুরা বেশি বঞ্চনার শিকার। সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হচ্ছে গ্রামের বহু গরিব শিশুর মধ্যে বঞ্চনাবোধ সক্রিয় নয়। তারা এই বঞ্চনাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছে এবং এর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। ফলে জাতির স্বাভাবিক বিকাশ যে গুরুতর বাধার সম্মুখীন, সে ব্যাপারে আমরা সচেতন—একথা বুকে হাত দিয়ে বলা যাবে না।
একুশ শতকে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) জাতিসংঘের একটি সাড়া জাগানো প্রকল্প। কিন্তু দেশের অর্ধেক শিশু যদি চরম দারিদ্র্যের নিগড়ে আটকা পড়ে থাকে, তবে আমাদের দেশে অন্তত এ প্রকল্প সফল হওয়ার আশা না করাই ভালো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের দেশে কোনো উন্নতি হয়নি—এ কথা বলা যাবে না। দেশে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান গড় হিসাবে বেড়েছে, বেড়েছে বাংলাদেশীদের গড় আয়ুও। এসব অর্জনের পাশাপাশি গরিব মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বেড়েছে গরিব শিশুর সংখ্যাও। এর অর্থ হলো—যারা গরিব ছিল, শুধু তারা যে গরিব রয়ে গেছে তা নয়; বরং প্রতিদিন নতুন গরিব জন্ম নিচ্ছে এবং জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ায় গরিবদের বিশেষ করে গরিব শিশুদের প্রতি মমত্ব হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের উন্নয়ন আসলে প্রকট ধনবৈষম্যের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ইউনিসেফের গবেষণা জরিপে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা আমাদের চোখের সামনে থাকে না; কারণ আমরা গড় হিসাবের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। অথচ গড় হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়া একেবারেই সোজা। শতায়ু মানুষ আর জন্মগ্রহণের পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া শিশুর গড় আয়ু বের করে ৫০ বছর ধরা যায় বটে; কিন্তু এতে সদ্যোজাত শিশুটি গড় হিসাবের কারণে মৃত থেকে জীবন্ত হয়ে ওঠে না। এই সরল সত্য বিষয়টি মাথায় রেখে সুষম উন্নয়নের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে ধনবৈষম্য হ্রাস পায়। আমাদের সম্পদ সীমিত। তাই সবাই মিলে ভাগ করে খাওয়ার মানসিকতা না থাকলে এ সম্পদ দিয়ে চরম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে জেতা যাবে না।
দরিদ্র শিশুদের অনেকে শৈশব কাটিয়ে ওঠার আগেই মারা যায়। যারা টিকে থাকে, তারা নানা অসম্পূর্ণতা নিয়ে বড় হয় বিধায় সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তারা যে ধরনের বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার হয়, তার ফলে সৃষ্ট হতাশা ও ক্রোধ থেকে তাদের কেউ কেউ বিপথগামী হয়ে সমাজের অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলে। এই অস্থিরতার পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকে তা আমরা প্রতিদিনই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ক্রসফায়ারের নামে বিনাবিচারে মানুষ খুন করেও যে অপরাধ দমন করা যাচ্ছে না, তার একটা বড় কারণ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দেশের অর্ধেক শিশুর বেড়ে ওঠা। তাই মানবাধিকার সমুন্নত রাখার স্বার্থে তো বটেই, আমাদের নিজেদের গরজেই দরিদ্র শিশুদের দারিদ্র্য মোচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা একটা জরুরি কাজ।
No comments