ছাত্রী উপবৃত্তি প্রকল্প সংকুচিত হচ্ছেঃ এ সিদ্ধান্ত দরিদ্রবান্ধব নয়
ছাত্রী উপবৃত্তি কার্যক্রম সংকুচিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার শিক্ষা প্রসারের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। ১৯৯৪ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আগ্রহে ও নির্দেশে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এতদিন পর্যন্ত এ কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র পরিবারের স্কুলগামী সব ছাত্রী উপবৃত্তি পেয়ে আসছিল।
কারা দরিদ্র বলে গণ্য হবে তা নির্ধারণের জন্য একটি মাপকাঠি ছিল। এই মাপকাঠিতে যোগ্য বিবেচিত হলে শতকরা একশ’ ভাগ স্কুলছাত্রী উপবৃত্তি পাবে— এটাই ছিল বিধান। এ কার্যক্রমের আওতায় গরিব ছাত্রীরা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগের পাশাপাশি ২৫ থেকে ৬০ টাকা হারে মাসিক উপবৃত্তি ও পাঠ্যবই কেনার টাকা পেত। নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য চালু করা এ প্রকল্প প্রতিবার মেয়াদান্তে নতুন মেয়াদের জন্য বলবত্ হয়ে আসছিল সংশ্লিষ্ট শর্তাবলীর কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়ে। প্রকল্পটির সর্বশেষ মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য এ উপবৃত্তি কার্যক্রম আবার সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ২টা ফ্যাকড়া তুলেছে। প্রথমতম, সরকার বলছে, যেহেতু আগের কার্যক্রমের মেয়াদ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গেছে এবং ২০০৯-এর জুলাই থেকে নতুন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, সে কারণে মাঝের ৬ মাসের অর্থাত্ ২০০৯-এর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের উপবৃত্তির টাকা গরিব ছাত্রীদের দেয়া হবে না। দ্বিতীয়ত, এতদিন দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত ছাত্রীরা সবাই উপবৃত্তি পেয়ে আসছিল। এখন থেকে মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ গরিব ছাত্রী এ সুবিধা পাবে। অর্থাত্ এরই মধ্যে পেয়ে আসা একটা আর্থিক সুবিধা থেকে শতকরা ৭০ ভাগ গরিব ছাত্রীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। নারী শিক্ষার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।
ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেয়ার এ কার্যক্রমকে একটা সফল প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মহল। প্রকল্পটি চালু হওয়ার আগে দেশের স্কুলগুলোতে ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ। তাদের মধ্যে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা সম্পন্ন করত মাত্র ৫ ভাগ। বেগম জিয়ার নির্দেশে উপবৃত্তি চালু হওয়ার পর এ চিত্র নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায়। স্কুলস্তরে ছাত্রীদের উপস্থিতির হার বেড়ে ৫৩ শতাংশে উন্নীত হয়। তাদের মধ্যে ঝরে পড়ার প্রবণতা এবং বাল্যবিবাহও কমে যায় উল্লেখযোগ্যভাবে। এ ধারাবাহিক অগ্রগতির মাথায় কুড়াল মারার বুদ্ধি সরকারকে কে দিয়েছে, আমরা জানি না। যারাই দিয়ে থাকুক এর পরিণতির দায় সরকারকেই নিতে হবে। যে কোনো উন্নয়নশীল দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় এবং প্রদত্ত সুবিধাদি আরও বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে। বর্তমান সরকার এর উল্টো কাজটি করে নিজেদের চরিত্র চিনিয়ে দিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে থাকেন। কিন্তু তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ জনগণের কাছে ভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়ন এখন একটি জনপ্রিয় স্লোগান। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা পেতে হলে যোগ্যতা চাই। আর যোগ্যতা তথা সামর্থ্যের প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষা। উন্নয়নের সুষম বিকাশের স্বার্থে মহিলাদের জন্য চাকরির কোটা রাখা হলেও এ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষিত মহিলা পাওয়া না যায়। তাই নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে নারী শিক্ষার বিকাশ ঘটানো। গত ১৫ বছর ধরে এই পূর্ব শর্ত পূরণের যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল উপবৃত্তি প্রকল্পের মাধ্যমে, বর্তমান সরকার তা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংকুচিত করে কাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চাইছে আমরা জানি না। তবে বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এ সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে মর্মে যে গুঞ্জন সর্বত্র চালু আছে, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে তা আরও বাড়বে। আমরা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই নেতিবাচক সিদ্ধান্ত পরিহার করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।
ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেয়ার এ কার্যক্রমকে একটা সফল প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মহল। প্রকল্পটি চালু হওয়ার আগে দেশের স্কুলগুলোতে ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ। তাদের মধ্যে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা সম্পন্ন করত মাত্র ৫ ভাগ। বেগম জিয়ার নির্দেশে উপবৃত্তি চালু হওয়ার পর এ চিত্র নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায়। স্কুলস্তরে ছাত্রীদের উপস্থিতির হার বেড়ে ৫৩ শতাংশে উন্নীত হয়। তাদের মধ্যে ঝরে পড়ার প্রবণতা এবং বাল্যবিবাহও কমে যায় উল্লেখযোগ্যভাবে। এ ধারাবাহিক অগ্রগতির মাথায় কুড়াল মারার বুদ্ধি সরকারকে কে দিয়েছে, আমরা জানি না। যারাই দিয়ে থাকুক এর পরিণতির দায় সরকারকেই নিতে হবে। যে কোনো উন্নয়নশীল দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় এবং প্রদত্ত সুবিধাদি আরও বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে। বর্তমান সরকার এর উল্টো কাজটি করে নিজেদের চরিত্র চিনিয়ে দিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে থাকেন। কিন্তু তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ জনগণের কাছে ভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়ন এখন একটি জনপ্রিয় স্লোগান। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা পেতে হলে যোগ্যতা চাই। আর যোগ্যতা তথা সামর্থ্যের প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষা। উন্নয়নের সুষম বিকাশের স্বার্থে মহিলাদের জন্য চাকরির কোটা রাখা হলেও এ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষিত মহিলা পাওয়া না যায়। তাই নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে নারী শিক্ষার বিকাশ ঘটানো। গত ১৫ বছর ধরে এই পূর্ব শর্ত পূরণের যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল উপবৃত্তি প্রকল্পের মাধ্যমে, বর্তমান সরকার তা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংকুচিত করে কাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চাইছে আমরা জানি না। তবে বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এ সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে মর্মে যে গুঞ্জন সর্বত্র চালু আছে, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে তা আরও বাড়বে। আমরা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই নেতিবাচক সিদ্ধান্ত পরিহার করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।
খাঁচায় বন্দি সিএনজি যাত্রী
এই নগরীতে সিএনজিচালিত যানবাহন এক নবযুগের সূচনা করেছিল। যানবাহনে বিষাক্ত ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছিল রাজধানী। নিঃশ্বাসে নিচ্ছিলাম বিষ। দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যানবাহনের পাশে দাঁড়ালে নাক-চোখ ব্যথা করতে শুরু করত। এখন দেশের বড় শহরগুলোতে দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিনের যানবাহন নিষিদ্ধ। যদিও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয়নি। তবু চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিনের যানবাহন নিষিদ্ধ করার পর পরিবেশ-পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে। ঢাকায় নিঃশ্বাস নেয়া সহজ হয়েছে।
শুরুতে সিএনজিচালিত তিন চাকার বেবিট্যাক্সি মিটারে চললেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মিটারে আর চলে না। পরিবেশ সমস্যা দূর হলেও যাত্রীসাধারণের যাতায়াত সমস্যা প্রকট রূপ নিতে শুরু করে। এখনও সে অবস্থা যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই। এখন মিটারে সিএনজি চলে না। যাত্রীরাও আর মিটারের কথা কল্পনা করে না। মিটার বেবিট্যাক্সির মতো ভাড়া মিটিয়েই সিএনজিতে ওঠে। রাতে কখনও তাকে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া গুনতে হয়। নগরীতে এসব যানবাহনের যাত্রীরা বড় অসহায়। একটি সিএনজি’র দুটি পক্ষ—মালিক পক্ষ ও যাত্রী পক্ষ। মালিক পক্ষে দুজন ব্যক্তির স্বার্থ জড়িত—চালক ও মালিক। যাত্রী পক্ষে হাজার হাজার মানুষ। সরকার ওই দুজন মানুষের স্বার্থ দেখে। হাজার হাজার মানুষের স্বার্থ দেখার ক্ষেত্রে তারা মনোযোগী নয়।
সিএনজিচালিত যানবাহন চালু হওয়ার পর এই যানবাহন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে থাকে অহরহ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা সিএনজি চালককে হত্যা করে যানবাহনগুলো ছিনিয়ে নিতে শুরু করে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় যে, সিএনজি চালকদের জীবন রক্ষার জন্য চালকের আসনের দু’দিকে লোহা দিয়ে নেট তৈরি করে দেয়া হয়। অর্থাত্ আত্মরক্ষার জন্য পুলিশের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের দায়-দায়িত্ব সিএনজি মালিক পক্ষ নিজেরাই গ্রহণ করে। এর ফলে যে কোনোরকম উপকার হয়নি, তা নয়। ছিনতাইকারীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন চালকরা।
কিন্তু যাত্রী যে অসহায়, তেমন অসহায়ই থেকে যায়। যাত্রীরা অহরহ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে জানমাল হারান। এরও নানা ধরনের কৌশল ছিল। সন্ধ্যার আঁধারে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে যানবাহন খারাপ বলে গাড়ি থামিয়ে দিত চালক। তারপর যমদূতের মতো এসে হাজির হতো ছিনতাইকারী পিস্তল বা ছোরা হাতে। যাত্রীদের মুখে মেখে দিত বিষাক্ত মলম। তারপর সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে যাত্রীদের আহত কিংবা আরও নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে যেত তারা। এটা শুধু সিএনজির বেলায়ই ঘটত না। ঘটত এবং ঘটে রিকশায় ও কালো ট্যাক্সিতে। এ ধরনের ছিনতাই এত বেড়ে গিয়েছিল যে, খবরের কাগজগুলোতে ওই ছিনতাইকারীদের নাম দেয়া হয়েছিল মলম পার্টি। মলম পার্টির দৌরাত্ম্য এখনও আছে। ফলে নগরীতে সিএনজি ও কালো ট্যাক্সি হয়ে উঠেছিল একটি ত্রাসের নাম। তাই সিএনজিতে উঠতে ভয় পেতে শুরু করেছিল সাধারণ মানুষ। একদিকে সিএনজি চালকের দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া চায়, অপরদিকে তারা কোন মলম পার্টি বা অজ্ঞান পার্টির হাতে তুলে দেবে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হলো। ছিনতাই-চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি রোধে পুলিশ-র্যাব কোনো কার্যকর ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। এসব সংঘবদ্ধ অপরাধীকে ধরতে গোয়েন্দা শাখার ব্যর্থতাও পর্বতপ্রমাণ।
তাই সিএনজিগুলোতে যাত্রী নিরাপত্তার নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। আগে তো শুধু চালকদের অংশই লোহার খাঁচা দিয়ে নিরাপদ করা হয়েছিল, এখন যাত্রীদের জন্যও খাঁচার ব্যবস্থা করা শুরু হয়েছে। যাতে জ্যামের মধ্যে ছিনতাইকারীরা দ্রুত যাত্রীদের পাশে বসে ছুরি ধরে বা পিস্তল ঠেকিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট না দিতে পারে। এ ব্যবস্থা একদিকে ভালোই। যাত্রীরা হয়তো খানিকটা নিরাপত্তা পেয়েছেন। কিন্তু এ ব্যবস্থা আইন-শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতির নির্দেশক মনে হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারীদের কাছে বড় বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। যার যার নিরাপত্তার কথা তাকেই ভাবতে হচ্ছে। –লে খাঁচায় বন্দি হয়ে পড়ছে সিএনজি যাত্রী নাগরিকরা।
এ থেকে শাসক গোষ্ঠীর দুর্বলতাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার যে দায়িত্ব তাদের কাঁধে অর্পিত হয়েছে, সে দায়িত্ব যে তারা পালন করতে পারছেন না, কিংবা সে দায়িত্ব পালনে তারা যে মনোযোগী নন, সেটাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু এত ব্যর্থতা বা অনীহা এক সময় নাগরিকদের যে বিদ্রোহী করে তুলবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এই নগরীতে সিএনজিচালিত যানবাহন এক নবযুগের সূচনা করেছিল। যানবাহনে বিষাক্ত ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছিল রাজধানী। নিঃশ্বাসে নিচ্ছিলাম বিষ। দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যানবাহনের পাশে দাঁড়ালে নাক-চোখ ব্যথা করতে শুরু করত। এখন দেশের বড় শহরগুলোতে দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিনের যানবাহন নিষিদ্ধ। যদিও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয়নি। তবু চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিনের যানবাহন নিষিদ্ধ করার পর পরিবেশ-পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে। ঢাকায় নিঃশ্বাস নেয়া সহজ হয়েছে।
শুরুতে সিএনজিচালিত তিন চাকার বেবিট্যাক্সি মিটারে চললেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মিটারে আর চলে না। পরিবেশ সমস্যা দূর হলেও যাত্রীসাধারণের যাতায়াত সমস্যা প্রকট রূপ নিতে শুরু করে। এখনও সে অবস্থা যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই। এখন মিটারে সিএনজি চলে না। যাত্রীরাও আর মিটারের কথা কল্পনা করে না। মিটার বেবিট্যাক্সির মতো ভাড়া মিটিয়েই সিএনজিতে ওঠে। রাতে কখনও তাকে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া গুনতে হয়। নগরীতে এসব যানবাহনের যাত্রীরা বড় অসহায়। একটি সিএনজি’র দুটি পক্ষ—মালিক পক্ষ ও যাত্রী পক্ষ। মালিক পক্ষে দুজন ব্যক্তির স্বার্থ জড়িত—চালক ও মালিক। যাত্রী পক্ষে হাজার হাজার মানুষ। সরকার ওই দুজন মানুষের স্বার্থ দেখে। হাজার হাজার মানুষের স্বার্থ দেখার ক্ষেত্রে তারা মনোযোগী নয়।
সিএনজিচালিত যানবাহন চালু হওয়ার পর এই যানবাহন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে থাকে অহরহ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা সিএনজি চালককে হত্যা করে যানবাহনগুলো ছিনিয়ে নিতে শুরু করে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় যে, সিএনজি চালকদের জীবন রক্ষার জন্য চালকের আসনের দু’দিকে লোহা দিয়ে নেট তৈরি করে দেয়া হয়। অর্থাত্ আত্মরক্ষার জন্য পুলিশের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের দায়-দায়িত্ব সিএনজি মালিক পক্ষ নিজেরাই গ্রহণ করে। এর ফলে যে কোনোরকম উপকার হয়নি, তা নয়। ছিনতাইকারীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন চালকরা।
কিন্তু যাত্রী যে অসহায়, তেমন অসহায়ই থেকে যায়। যাত্রীরা অহরহ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে জানমাল হারান। এরও নানা ধরনের কৌশল ছিল। সন্ধ্যার আঁধারে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে যানবাহন খারাপ বলে গাড়ি থামিয়ে দিত চালক। তারপর যমদূতের মতো এসে হাজির হতো ছিনতাইকারী পিস্তল বা ছোরা হাতে। যাত্রীদের মুখে মেখে দিত বিষাক্ত মলম। তারপর সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে যাত্রীদের আহত কিংবা আরও নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে যেত তারা। এটা শুধু সিএনজির বেলায়ই ঘটত না। ঘটত এবং ঘটে রিকশায় ও কালো ট্যাক্সিতে। এ ধরনের ছিনতাই এত বেড়ে গিয়েছিল যে, খবরের কাগজগুলোতে ওই ছিনতাইকারীদের নাম দেয়া হয়েছিল মলম পার্টি। মলম পার্টির দৌরাত্ম্য এখনও আছে। ফলে নগরীতে সিএনজি ও কালো ট্যাক্সি হয়ে উঠেছিল একটি ত্রাসের নাম। তাই সিএনজিতে উঠতে ভয় পেতে শুরু করেছিল সাধারণ মানুষ। একদিকে সিএনজি চালকের দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া চায়, অপরদিকে তারা কোন মলম পার্টি বা অজ্ঞান পার্টির হাতে তুলে দেবে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হলো। ছিনতাই-চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি রোধে পুলিশ-র্যাব কোনো কার্যকর ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। এসব সংঘবদ্ধ অপরাধীকে ধরতে গোয়েন্দা শাখার ব্যর্থতাও পর্বতপ্রমাণ।
তাই সিএনজিগুলোতে যাত্রী নিরাপত্তার নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। আগে তো শুধু চালকদের অংশই লোহার খাঁচা দিয়ে নিরাপদ করা হয়েছিল, এখন যাত্রীদের জন্যও খাঁচার ব্যবস্থা করা শুরু হয়েছে। যাতে জ্যামের মধ্যে ছিনতাইকারীরা দ্রুত যাত্রীদের পাশে বসে ছুরি ধরে বা পিস্তল ঠেকিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট না দিতে পারে। এ ব্যবস্থা একদিকে ভালোই। যাত্রীরা হয়তো খানিকটা নিরাপত্তা পেয়েছেন। কিন্তু এ ব্যবস্থা আইন-শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতির নির্দেশক মনে হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারীদের কাছে বড় বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। যার যার নিরাপত্তার কথা তাকেই ভাবতে হচ্ছে। –লে খাঁচায় বন্দি হয়ে পড়ছে সিএনজি যাত্রী নাগরিকরা।
এ থেকে শাসক গোষ্ঠীর দুর্বলতাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার যে দায়িত্ব তাদের কাঁধে অর্পিত হয়েছে, সে দায়িত্ব যে তারা পালন করতে পারছেন না, কিংবা সে দায়িত্ব পালনে তারা যে মনোযোগী নন, সেটাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু এত ব্যর্থতা বা অনীহা এক সময় নাগরিকদের যে বিদ্রোহী করে তুলবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
আবারও উেসর কাছে ফেরা
মানুষ কেবলই উেসর কাছে ফিরতে চায়। এই নগরীতে যারা বেড়ে উঠছেন, তাদের অধিকাংশেরই পল্লী গ্রামে ঠিকানা আছে। অন্তত দুই ঈদে নাগরিকরা সেই উেসর দিকে ছুটতে শুরু করে। বাস-ট্রেন-লঞ্চের টিকিট আগাম ফুরিয়ে যায়। যিনি অন্য সময় এসি বাসে, ফার্স্ট ক্লাসে চলাচল করেন; ঈদের সময় তিনি যেনতেন যানবাহনে যেতেও পরোয়া করেন না। দেশে যাবেন। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করবেন—সে এক উত্তেজনা। পথে শত বিড়ম্বনার আশঙ্কা আছে। বাস-লঞ্চ অচল হয়ে যেতে পারে। বাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কোনো কিছুই পরোয়া করেন না নাগরিকরা।
এ কেবলই উেসর দিকে ফেরার আকাঙ্ক্ষা। নাগরিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। পৃথিবীর প্রায় সব শ্রেণীই কেবলই উেসর দিকে ফিরে যেতে চায়। এটা মানুষ, ইলিশ, হরিণের বেলায়ও সত্য। বাংলাদেশের ভেতরে যারা থাকেন, তারা ফিরে যেতে চান গ্রামের দিকে, কিংবা আত্মীয়-পরিজনের বসতি ভিন্ন কোনো শহরের দিকে। যারা প্রবাসী তারা হয়তো ঈদের সময় ঘরে ফেরার কথা ভাবেন না। ভাবেন কবে দেশে ফিরবেন, যাবেন নিজ পরিজন-প্রিয়জনের কাছে।
ইলিশেরা প্রধানত জন্ম নেয় ব্রহ্মপুত্রের মুখে। তারপর বড় হলে পানিতে ভেসে মেঘনা পেরিয়ে চলে যায় সমুদ্রের কাছে। কিন্তু মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ স্রোত উজিয়ে আবারও ব্রহ্মপুত্রের দিকে আসতে শুরু করে। সেও কেবল উেসর দিকে ফেরা। একটি হরিণ জন্মগ্রহণের পর থেকেই তাড়িত হতে শুরু করে শিয়াল, শূকর, বাঘ, সিংহ, হায়েনা, বুনো কুকুর দ্বারা। কিন্তু তবু উত্স ছেড়ে দেশান্তরিত হয় না। যেখানে জন্মগ্রহণ করে, সারা জীবন তার আশপাশেই ঘোরাফেরা করতে থাকে। জন্মস্থান থেকে ২০-২২ কিলোমিটারের বেশি দূরে সে কখনও যায় না। শত বিপদ মাথায় নিয়েও, মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও কেবলই উেসর আশপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকে। কাকেরাও দেশান্তরিত হয় না। যে বনে যে গাছে তার জন্ম, সে বনের আশপাশেই সে বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়। সে বনভূমি উচ্ছেদ হলে তার আশপাশেই কোনো গাছে ঠাঁই করে নেয়। অতিথি পাখিরা শীতের তাড়নায় হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে শীতকাল কাটায়। কিন্তু শীতের শেষে আবারও উেসর দিকে উড়াল দেয়, উেসর কাছে ফিরে যায়।
প্রাণীকুলের এ এক আশ্চর্য চেতনা। কিন্তু তিন-চার পুরুষ আগে যারা নাগরিক হয়েছেন, তাদের উেসর চিহ্ন মুছে গেছে। তারা উত্স সন্ধানী নাগরিকদের দিকে গ্রাম্য বলে বাঁকা চোখে তাকান। যেন এরা এখনও নাগরিক হয়ে উঠতে পারল না। উত্সবে-আনন্দে নগরীকে ভালোবাসতে পারল না। এ আফসোসের কোনো মূল্য নেই। নাড়ির টান যতদিন আছে, ততদিন মানুষ উেসর দিকে ফিরবেই, কোনো বাঁকা দৃষ্টি তাকে বাধা দিতে পারবে না।
মানুষ কেবলই উেসর কাছে ফিরতে চায়। এই নগরীতে যারা বেড়ে উঠছেন, তাদের অধিকাংশেরই পল্লী গ্রামে ঠিকানা আছে। অন্তত দুই ঈদে নাগরিকরা সেই উেসর দিকে ছুটতে শুরু করে। বাস-ট্রেন-লঞ্চের টিকিট আগাম ফুরিয়ে যায়। যিনি অন্য সময় এসি বাসে, ফার্স্ট ক্লাসে চলাচল করেন; ঈদের সময় তিনি যেনতেন যানবাহনে যেতেও পরোয়া করেন না। দেশে যাবেন। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করবেন—সে এক উত্তেজনা। পথে শত বিড়ম্বনার আশঙ্কা আছে। বাস-লঞ্চ অচল হয়ে যেতে পারে। বাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কোনো কিছুই পরোয়া করেন না নাগরিকরা।
এ কেবলই উেসর দিকে ফেরার আকাঙ্ক্ষা। নাগরিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। পৃথিবীর প্রায় সব শ্রেণীই কেবলই উেসর দিকে ফিরে যেতে চায়। এটা মানুষ, ইলিশ, হরিণের বেলায়ও সত্য। বাংলাদেশের ভেতরে যারা থাকেন, তারা ফিরে যেতে চান গ্রামের দিকে, কিংবা আত্মীয়-পরিজনের বসতি ভিন্ন কোনো শহরের দিকে। যারা প্রবাসী তারা হয়তো ঈদের সময় ঘরে ফেরার কথা ভাবেন না। ভাবেন কবে দেশে ফিরবেন, যাবেন নিজ পরিজন-প্রিয়জনের কাছে।
ইলিশেরা প্রধানত জন্ম নেয় ব্রহ্মপুত্রের মুখে। তারপর বড় হলে পানিতে ভেসে মেঘনা পেরিয়ে চলে যায় সমুদ্রের কাছে। কিন্তু মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ স্রোত উজিয়ে আবারও ব্রহ্মপুত্রের দিকে আসতে শুরু করে। সেও কেবল উেসর দিকে ফেরা। একটি হরিণ জন্মগ্রহণের পর থেকেই তাড়িত হতে শুরু করে শিয়াল, শূকর, বাঘ, সিংহ, হায়েনা, বুনো কুকুর দ্বারা। কিন্তু তবু উত্স ছেড়ে দেশান্তরিত হয় না। যেখানে জন্মগ্রহণ করে, সারা জীবন তার আশপাশেই ঘোরাফেরা করতে থাকে। জন্মস্থান থেকে ২০-২২ কিলোমিটারের বেশি দূরে সে কখনও যায় না। শত বিপদ মাথায় নিয়েও, মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও কেবলই উেসর আশপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকে। কাকেরাও দেশান্তরিত হয় না। যে বনে যে গাছে তার জন্ম, সে বনের আশপাশেই সে বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়। সে বনভূমি উচ্ছেদ হলে তার আশপাশেই কোনো গাছে ঠাঁই করে নেয়। অতিথি পাখিরা শীতের তাড়নায় হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে শীতকাল কাটায়। কিন্তু শীতের শেষে আবারও উেসর দিকে উড়াল দেয়, উেসর কাছে ফিরে যায়।
প্রাণীকুলের এ এক আশ্চর্য চেতনা। কিন্তু তিন-চার পুরুষ আগে যারা নাগরিক হয়েছেন, তাদের উেসর চিহ্ন মুছে গেছে। তারা উত্স সন্ধানী নাগরিকদের দিকে গ্রাম্য বলে বাঁকা চোখে তাকান। যেন এরা এখনও নাগরিক হয়ে উঠতে পারল না। উত্সবে-আনন্দে নগরীকে ভালোবাসতে পারল না। এ আফসোসের কোনো মূল্য নেই। নাড়ির টান যতদিন আছে, ততদিন মানুষ উেসর দিকে ফিরবেই, কোনো বাঁকা দৃষ্টি তাকে বাধা দিতে পারবে না।
বদলে যাচ্ছে নাগরিকদের পোশাক-আশাক
এবার অগ্রহায়ণ আসতে না আসতেই নগরীর চেহারা বদলে গেছে। বদলে গেছে নাগরিকদের পোশাক-আশাক। কোনো কোনো নাগরিক শার্টের ওপর চাপিয়েছেন পাতলা সোয়েটার। কেউ কেউ স্যুট-টাই। কারও গায়ে চাদর। রোদের তাপ কমতে শুরু করেছে। এখন আর হাঁটলেই ঘেমে যাচ্ছে না নাগরিকরা।
আবহাওয়াবিদরা আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এবার দেশে আগাম শীত নামবে। শীতের তীব্রতাও বেশি হবে। এসব পূর্বাভাস আবহাওয়াবিদরা দেন, আবহাওয়াবিদরা বিচার করেন। সাধারণ নগরিকরা এসব পূর্বাভাসের ধার ধারেন না। শীত পড়লে গায়ে গরম কাপড় তোলেন, শীত চলে গেলে সেসব কাপড় আবার আলমারি বা স্যুটকেসে গুটিয়ে রাখেন। ওসব কাপড় বের করতে আবার শীত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
গত কয়েক দিন ধরে বাসাবাড়ি বিশেষ করে কলোনির ফ্ল্যাটগুলোর বারান্দায় লক্ষ্য করে দেখলাম, শুকাতে দেয়া হয়েছে লেপ-কম্বল। কোথাওবা সোয়েটার-ব্লেজার, কোথাওবা পশমি চাদর। স্যুটকেসে আটকানো ভ্যাপসা বা ন্যাপথলিনের ঘ্রাণ দূর করার জন্য।
রাজধানীর ফুটপাতে এখন গরম কাপড়ের বিক্রি চলছে ধুম। হাফ-ফুল সোয়েটার, ব্লেজার, সস্তা কিংবা দামি কম্বল। এসব কম্বলের দাম সোয়াশ’ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাফলার বিশ টাকা থেকে দুইশ’ টাকা।
কেউ কেউ ট্রলি বা ভ্যানগাড়ির ওপর সাজিয়ে বসেছে গরম কাপড়ের পসরা। এক এক স্থানে এক এক শ্রেণীর ক্রেতা। সাধ্য অনুযায়ী গরম পোশাক কিনবে মানুষ।
আর একশ্রেণীর বিপন্ন মানুষ আছে, যারা এসব পণ্যের দর্শক মাত্র। গায়ে নোংরা পোশাক কিংবা কোনো পোশাকই নেই। এর ওপর নগরীতে ভাসমান মানুষ বাড়ছে। তাদের মাথার ওপর কোনো আচ্ছাদন নেই। ফুটপাতে পলিথিনের আচ্ছাদন। দিনের বেলায় গুটিয়ে রাখতে হয়। সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে শিশুসহ পরিবার। গরম কাপড় কেনার অর্থের সংস্থান তাদের নেই। ফলে রাস্তা থেকে সংগ্রহ করা আবর্জনা কুড়িয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করে। এবারের এই আগাম শীতে কী যে দাঁড়াবে তাদের অবস্থা!
আরেক শ্রেণীর নাগরিক আছে, যাদের শীতের প্রস্তুতি সারা বছরই। তারা দেশীয় দর্জির দোকানে সেলাই করা প্যান্ট-শার্ট-ব্লেজার পরেন না। পরেন না দেশি ব্র্যান্ডের জুতাও। পৃথিবীর সেরা সেরা ব্র্যান্ড তাদের অঙ্গের শোভা বাড়ায়। পিয়েরে কার্ডিন, গুছি নিদেনপক্ষে মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার তাদের ব্র্যান্ড। শীত-গ্রীষ্মে তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাড়িতে ঘুমান। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে কাজ করেন। যেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই, সেখানে তারা যানও না, নিতান্ত দায়ে না পড়লে। এই শ্রেণীর নাগিরকরা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের শীত-গ্রীষ্ম সমান।
সরকারি বড় আমলারাও এমন জীবনে অভ্যস্ত। মাঝখানে দিনবদলের সরকার ড্রেস কোড দিয়ে স্যুট পরা বন্ধ করে দিয়েছিল। এসি বন্ধ করে বিদ্যুত্ বাঁচানোই ছিল অভিপ্রায়। নিতান্তই হাসির কথা! যাই হোক, শীতকালে সম্ভবত ড্রেস কোড পরিবর্তন করবে সরকার। দেখা যাক কী করে!
ফুটনোট
রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের একটি গরম কাপড়ের দোকানে সোয়েটারের দাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন একজন নাগরিক। দোকানি বলল, ‘আটশ’ টাকা’। কাপড়টি রেখে চলে যাচ্ছিলেন ক্রেতা। দোকানি সোয়েটারটির জন্য যে কোনো একটি দাম বলতে পীড়াপীড়ি করতে থাকল। ক্রেতা শেষ পর্যন্ত বললেন, ‘দেড়শ’ টাকা’। দোকানি বললেন, ‘কিনতে তো পারবেন না। ওটার ওপর হাতটা তাপিয়ে যান।’
লেখক : কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক
এবার অগ্রহায়ণ আসতে না আসতেই নগরীর চেহারা বদলে গেছে। বদলে গেছে নাগরিকদের পোশাক-আশাক। কোনো কোনো নাগরিক শার্টের ওপর চাপিয়েছেন পাতলা সোয়েটার। কেউ কেউ স্যুট-টাই। কারও গায়ে চাদর। রোদের তাপ কমতে শুরু করেছে। এখন আর হাঁটলেই ঘেমে যাচ্ছে না নাগরিকরা।
আবহাওয়াবিদরা আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এবার দেশে আগাম শীত নামবে। শীতের তীব্রতাও বেশি হবে। এসব পূর্বাভাস আবহাওয়াবিদরা দেন, আবহাওয়াবিদরা বিচার করেন। সাধারণ নগরিকরা এসব পূর্বাভাসের ধার ধারেন না। শীত পড়লে গায়ে গরম কাপড় তোলেন, শীত চলে গেলে সেসব কাপড় আবার আলমারি বা স্যুটকেসে গুটিয়ে রাখেন। ওসব কাপড় বের করতে আবার শীত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
গত কয়েক দিন ধরে বাসাবাড়ি বিশেষ করে কলোনির ফ্ল্যাটগুলোর বারান্দায় লক্ষ্য করে দেখলাম, শুকাতে দেয়া হয়েছে লেপ-কম্বল। কোথাওবা সোয়েটার-ব্লেজার, কোথাওবা পশমি চাদর। স্যুটকেসে আটকানো ভ্যাপসা বা ন্যাপথলিনের ঘ্রাণ দূর করার জন্য।
রাজধানীর ফুটপাতে এখন গরম কাপড়ের বিক্রি চলছে ধুম। হাফ-ফুল সোয়েটার, ব্লেজার, সস্তা কিংবা দামি কম্বল। এসব কম্বলের দাম সোয়াশ’ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাফলার বিশ টাকা থেকে দুইশ’ টাকা।
কেউ কেউ ট্রলি বা ভ্যানগাড়ির ওপর সাজিয়ে বসেছে গরম কাপড়ের পসরা। এক এক স্থানে এক এক শ্রেণীর ক্রেতা। সাধ্য অনুযায়ী গরম পোশাক কিনবে মানুষ।
আর একশ্রেণীর বিপন্ন মানুষ আছে, যারা এসব পণ্যের দর্শক মাত্র। গায়ে নোংরা পোশাক কিংবা কোনো পোশাকই নেই। এর ওপর নগরীতে ভাসমান মানুষ বাড়ছে। তাদের মাথার ওপর কোনো আচ্ছাদন নেই। ফুটপাতে পলিথিনের আচ্ছাদন। দিনের বেলায় গুটিয়ে রাখতে হয়। সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে শিশুসহ পরিবার। গরম কাপড় কেনার অর্থের সংস্থান তাদের নেই। ফলে রাস্তা থেকে সংগ্রহ করা আবর্জনা কুড়িয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করে। এবারের এই আগাম শীতে কী যে দাঁড়াবে তাদের অবস্থা!
আরেক শ্রেণীর নাগরিক আছে, যাদের শীতের প্রস্তুতি সারা বছরই। তারা দেশীয় দর্জির দোকানে সেলাই করা প্যান্ট-শার্ট-ব্লেজার পরেন না। পরেন না দেশি ব্র্যান্ডের জুতাও। পৃথিবীর সেরা সেরা ব্র্যান্ড তাদের অঙ্গের শোভা বাড়ায়। পিয়েরে কার্ডিন, গুছি নিদেনপক্ষে মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার তাদের ব্র্যান্ড। শীত-গ্রীষ্মে তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাড়িতে ঘুমান। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে কাজ করেন। যেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই, সেখানে তারা যানও না, নিতান্ত দায়ে না পড়লে। এই শ্রেণীর নাগিরকরা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের শীত-গ্রীষ্ম সমান।
সরকারি বড় আমলারাও এমন জীবনে অভ্যস্ত। মাঝখানে দিনবদলের সরকার ড্রেস কোড দিয়ে স্যুট পরা বন্ধ করে দিয়েছিল। এসি বন্ধ করে বিদ্যুত্ বাঁচানোই ছিল অভিপ্রায়। নিতান্তই হাসির কথা! যাই হোক, শীতকালে সম্ভবত ড্রেস কোড পরিবর্তন করবে সরকার। দেখা যাক কী করে!
ফুটনোট
রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের একটি গরম কাপড়ের দোকানে সোয়েটারের দাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন একজন নাগরিক। দোকানি বলল, ‘আটশ’ টাকা’। কাপড়টি রেখে চলে যাচ্ছিলেন ক্রেতা। দোকানি সোয়েটারটির জন্য যে কোনো একটি দাম বলতে পীড়াপীড়ি করতে থাকল। ক্রেতা শেষ পর্যন্ত বললেন, ‘দেড়শ’ টাকা’। দোকানি বললেন, ‘কিনতে তো পারবেন না। ওটার ওপর হাতটা তাপিয়ে যান।’
লেখক : কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক
No comments