ঘোড়া by চঞ্চল আশরাফ
তোরাব মজুমদারের দুঃখ একটাই, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য সে রক্ষা করতে পারেনি। তার পিতামহর পিতামহ ঘোড়া চড়ত এবং তাদের আরো অনেক বিত্তবৈভব ছিল; এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, কিছু জমি আর ভিটামাটি ছাড়া। কারো মধ্যে এ নিয়ে কোনো আফসোস নেই। তার আছে। অনেক দিন ধরে এই সিদ্ধান্ত সে বয়ে বেড়াচ্ছে যে একটা ঘোড়া, যেভাবেই হোক, কিনতে হবে। কিন্তু সময় চলে যাচ্ছে; তার বয়স ষাট পার হয়ে গেছে।
ভেবেছিল, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জমির একটি অংশ বিক্রির টাকায় ঘোড়া কিনবে। কিন্তু কাশেম মজুমদার বলে দিয়েছে, সে মরার আগে সব বাটোয়ারা করে দেবে ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে; জীবিত অবস্থায় নিজেকে অসহায় করে কাউকে কোনো সম্পত্তি দেবে না। তোরাব মজুমদার অপেক্ষা করে কাশেম মজুমদারের মৃত্যুর জন্য; কিন্তু নব্বই পার হয়ে যায়, দাঁড়ানো অবস্থায়ও সে দিব্যি সোজা হয়ে থাকে; শীত আর কুয়াশা ঠেলে ফজরের নামাজ পড়তে পোয়া মাইল দূরে কাজিবাড়ির মসজিদে যায়, ফেরার পথে পুকুরপাড়ের চারটি খেজুরগাছ থেকে হাঁড়ি নামায় নামাজের সঙ্গী এয়াকুবকে দিয়ে; তারপর মক্তবের কোণে বেলালের দোকানে দুটি গুলগুলা আর এক কাপ চা খায়। সে ভাবে যে কাশেম মজুমদার কোনো দিন মরবে না। কারণ তার ঘোড়া দরকার, খুব দরকার; আর সে মরতে মরতে যদি মেইন রোড পাকা হয়ে যায়, ঘোড়া দিয়ে সে কী করবে; খুরে যদি ধুলা না ওড়ে, যদি তীব্র বেগে ছুটে যাওয়ার পর লোকে বুঝে ফেলে অশ্বারোহীটি তোরাব মজুমদার, যদি ঘোড়ার পাশ দিয়ে চলে ট্রাক ও টেম্পো, তাহলে কাশেম মজুমদারের মৃত্যুর দরকার নেই।
পরশুরাম প্রাইমারি স্কুলের বটগাছের নিচে বসে এই সব যখন সে ভাবছিল, ধুলা উড়িয়ে এক অশ্বারোহী দক্ষিণ দিক থেকে আসে। পৌষের রোদে ও উত্তরের বাতাসে সেই ধুলা ভেসে থাকে; তার মনে হয়, হঠাৎ এই সব ভাবনা, আকাঙ্ক্ষা ও অনিশ্চয়তাকে সমর্থন জানাতে শীতের হাওয়া আর ধুলা থেকে এই ঘোড়া সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমে তা কাছে আসে; এবং মুহূর্তের মধ্যে ঘোড়াটি তার আরোহীকে নিয়ে তোরাব মজুমদারকে অতিক্রম করে যায়, উত্তরের হাওয়া তার সামনে কিছুক্ষণ থমকে থাকলে সে কিছুই দেখতে পায় না; তারপর সে দেখতে পায় যে পরশুরাম বাজারের দিকে শিশুরা দৌড়াচ্ছে, সেও রওনা দেয়, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড রোডের যেখানে সিও অফিসের রাস্তাটা মিলেছে, সেখানকার কৃষ্ণচূড়াগাছটি ঘিরে একটা জটলা হয়েছে; তাতে শিশুর সংখ্যাই বেশি; ভিড় ঠেলে সে গাছের সঙ্গে বাঁধা ঘোড়াটি দেখে, জিজ্ঞাসা করে, 'মালিক কই?'
এক কিশোর বলে, 'করাতকলে।'
'অ্যাঁ, হিঁয়ানে কিয়া?'
'মনে অয় কাট কিনব।'
সে করাতকলে গিয়ে দেখে, জিন্নাহ টুপি পরা, পাকা দাড়িঅলা একটি লোক, বয়স ষাটের কম হবে না, বসে আছে। তার সামনে আরেকটি চেয়ার পাতা, যেখানে লাল তারাখচিত একটি কাপ, চা শেষ করা; পাশে বিস্কুটভর্তি পিরিচ।
'আইচ্ছা ভাইসাব, আমনে কনানতুন আইছেন?'
নীরবতা।
তার মনে হয়, লোকটি অনেক দূর থেকে এসেছে। ফলে স্থানীয় ভাষা সে বুঝতে পারছে না।
'আপনের ঘোড়াখান খোব সোন্দর। আরব দ্যাশের মনে অয়।'
লোকটি এবার তার মুখের দিকে মনোযোগ দেয়; বলে, 'এইটা আমার সোউবাগ্যের ঘোড়া। আমার ছয়টা মাইয়া হওনের ফর একটা ফোলা হইছিল। ওই খুশিতে আমার শ্বশুর আমারে উফহার দিছে। আপনের লগে ফরিচয় হইল না।'
খুব ভা্েলা লাগে তোরাব মজুমদারের; হাসে; বলে, 'অ্যাত সোন্দর আর সোউবাগ্যের ঘোড়া আমি দেখি নাই।'
কাঠ চেরাইয়ের শব্দ শুরু হয়, ভুতিজামগাছ থেকে পাখি উড়ে যায়; স্বর উঁচু করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জলিল পাটোয়ারীকে বলতে হয়, 'অ্যাতেনের বাপ কাশেম মজুমদার, সলিয়া মজুমদারবাড়ি, চিনলেন না?'
'আপনে ত খান্দানি মানুষ।' সে জলিল পাটোয়ারীর দিকে তাকায়; বলে, 'অ্যাতেনেরে এই চেয়ার খালি করি বসতে দাও।' চেয়ারে বসে তোরাব মজুমদার ঘোড়াটির দিকে তাকিয়ে থাকে। শিশুর দল প্রাণীটিকে ঘিরে ঘিরে দৌড়ায়, লাফায়; তাদের উল্লাসের শব্দ ভেসে আসে। তোরাব মজুমদার নিজের দাড়িতে হাত বোলায়। তারপর লোকটির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে ওঠে, 'আপনে যদি কিছু মনে না করেন একখান কথা কইতে চাই।'
'কন।'
'ঘোড়াটা আমার পছন্দ হইছে। আপনি কি এইটা বেচবেন? যত দাম লাগে আমি কিনুম।' বলার পরই তার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে; মুহূর্তে ভেবে নেয়, টাকা সে কোথায় পাবে, কাশেম মজুমদার তো মরেনি।
লোকটি বলে, 'এইটা আমার সোউবাগ্যের ঘোড়া, এইটা বেচুম না।' তোরাব মজুমদার কিছুক্ষণ কৃষ্ণচূড়াগাছটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার ন্যাড়া ডালের ওপর তখন একটা কাক বৃত্তাকার উড়তে থাকলে সে দৃষ্টি নামিয়ে রা্স্তায় রাখে আর দক্ষিণ দিক থেকে কাশেম মজুমদারকে আসতে দেখে। সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়; বলে, 'যাই। আফনে কি ইয়ানে বিয়্যাল তলক থাইকবেন?
'হাইনজা তলক আছি', লোকটি বলে।
তোরাব মজুমদার বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে। একটা গরু তীব্র দৌড়ে তাকে অতিক্রম করে যায়, পেছন পেছন রশি হাতে একটা কিশোরকে সে দৌড়াতে দ্যাখে। গরুর খুরে ধুলা ওড়ে। তার মনে হয়, ঘোড়া এর চেয়েও বেশি ধুলা ওড়ায়। সে নিজের স্বর শুনতে পায়, 'গরু আর ঘোড়ার মইদ্যে এইটা হইল একটা তফাত।' ভাবে, সে গরুর পেছনে এই রকম কতবার যে দৌড়েছে, তার কোনো হিসাব নেই।
বাড়িতে পেঁৗছে তার মনে হয়, লোকটাকে দাওয়াত করে শেষ চেষ্টা করে দেখা যায়। মনে হয়, খেয়ালের বশে সে মুখের ওপর কথাটা বলেছে। মানুষের মনের কি কোনো ঠিক আছে! আজকে না বেচুক, কালকে তো বেচবে। সে আরো একটা সিদ্ধান্ত নেয়, ঘোড়াটা কিনবেই এবং এই ঘোড়া ছাড়া পৃথিবীতে তার কেনার মতো পছন্দের আর কিছু নেই।
বিকেলে সে পরশুরাম বাজারের দিকে রওনা দেয়। করাতকলে গিয়ে জানতে পারে, লোকটি অমৃতবাবুর মিষ্টির দোকানে আছে। সেখানে দেখতে পায়, লোকটি আরো কয়েকজন মানুষকে নিয়ে একটা টেবিলে বসে আছে। তাকে ফের দেখে অবাক হওয়া স্বরে লোকটা তাকে বলে, 'মজুমদার সাব, আফনে?' সে সরাসরি বলে ফেলে, 'আফনেরে আমি দাওয়াত দিতে আইছি। আমার বাড়িত রাইতে খাইবেন।' লোকটা অভিভূত হয়; বলে, 'আমি বহুত খুশি হইছি। কিন্তু আমারে তো রাইতের মইদ্যেই গদিতে যাইতে হইব।' তার পাশে বসা একজন বলে, 'সওদাগর সাব, আফনের মালপত্র আমরা দেখি রাখুম। মজুমদার সাব যখন কইছে, ঘুরি আইয়েন।' সেই সময় ফেনীফেরত ট্রেনের ভেঁপু শোনা যায়।
ঘোড়াটি যখন তোরাব মজুমদারের বাড়ির উঠানে লাউয়ের মাচার খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হয়, তখন সূর্য ডুবছিল, বাড়ির পেছনের নারকেলগাছটির ছায়া সামনের হাঁস-মুরগির খোঁয়াড়ের ওপর পড়েছিল। শিশুরা ঘোড়াটিকে ঘিরে দাঁড়াতেই তোরাব মজুমদার ধমক দিল, 'ভাগ, ইয়ানে কিয়া?'
সেই ভিড় থেকে এক শিশু বলে উঠল, 'ইয়া ত ছিনামার ঘোড়া। কী সোন্দর!'
তোরাব মজুমদার বলে, 'হরান ভরি দ্যাখ, বেশিক্ষণ আর নাই।'
লোকটিকে বাড়ির বৈঠকখানায় চেয়ারে লম্বা একটা তোয়ালে রেখে সে বসতে বলে ভেতরে যায়। তার আগে কাছারিঘরের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জেনে নেয়, লোকটি মহিষের দই বেশ পছন্দ করে। সে আবার বাজারের দিকে ছোটে। পথে পুকুরের পাড়ে গ্রামের যুবকরা তার কাছে জানতে চায়, ঘোড়াটি সে কত টাকায় কিনেছে। সে বলে, ঘোড়ার মালিক এটি বিক্রি করবে না; কিন্তু সে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। এক যুবক বলে, এত সুন্দর ঘোড়া কেউ কি আর হাতছাড়া করতে চায়! 'আপনে বরং এক্কান কাম করেন, লোকটারে আমনের বাইত আইজ্জা রাইতে রাখার চেষ্টা করেন।' যুবকটি নিজের গলায় হাত এনে বলে, 'মাইরা মুহুরি নদীতে ফালাই দিমু। ঘোড়াটার মালিক আপনেই হইয়া যাইবেন। মাজেমইদ্যে আমগোরে চড়তে দিবেন। ইয়ান এক্কান সুযোগ।' শুনে তোরাব মজুমদার চেঁচিয়ে বলে, 'তোর মাতা খারাপ হইছে। যে কতা তুই কইছত, হেই কাম হইলে এই ঘোড়ার দিকে আঁই চাইয়াও থাইকতাম হাইরতাম ন। হারা জীবন এক্কান লাশের কতা মনে ভাসি উইটব।'
মহিষের দই খেতে খেতে লোকটি জানায়, যদি তার সেজ মেয়েটাকে পছন্দমতো কারো কাছে বিয়ে দিতে পারে, তাহলে ঘোড়াটি তাকেই উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। তার মনে আনন্দ বয়ে যায়। সে জানায়, তার ছেলে সুবেদার শাহ আলমের জন্য সে পাত্রী খুঁজছে। লোকটি মুখ তুলে তার দিকে তাকায়; বলে, 'আর্মিতে চাকরি করে? তাইলে ত বহুত সুপুরুষ। আফনের পোলারে যে পাইব হের মতো বাইগ্যবতী আর হয় না।' তোরাব মজুমদার বলে, 'আফনের সেজ মাইয়্যা ত হেই রকম বাইগ্যবতী হইতে ফারে।' বলে সে লোকটির দিকে তাকায়। তার দাড়ির মধ্যে সে আরবীয় ঘোড়াটির কেশর দেখতে পায় এবং ধুলার মধ্যে অদৃশ্য হওয়া এক অশ্বারোহী হিসেবে নিজেকে দেখে নেয়। লোকটি বলে, 'আফনের জামাইই ফাইব।' তখন খুব কাছে কোথাও শেয়ালের ডাক শোনা যায়।
সেই রাতে লোকটির বিদায়ের পর তোরাব মজুমদার বাড়িতে এসে নিজের ঘরে চিত হয়ে শোয়। ভাবে, যাক, কাশেম মজুমদারের মৃত্যুর দরকার হলো না। এখন শাহ আলমকে রাজি করানোর কাজটা সারতে হবে। কিন্তু অনেক দিন তার চিঠি আসে না, কোনো যোগাযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে কখনো কখনো গুজব শোনা যায়, 'সেনাবাহিনীতে নাকি খুব গণ্ডগোল হইতেছে। মারা যাইতেছে।' অনেকের লাশও নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! শাহ আলমের জন্য মায়া হয় তার, দেয়ালে টাঙানো ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকে সে। তারপর বিছানা থেকে উঠে দেয়াল থেকে ছবিটি নামায়, মুখের কাছে আনে এবং চুমু খায়। তোরাব মজুমদারের ঠোঁটে ধুলা লেগে যায়। ঘোড়ার কথা মনে পড়ে। সে ঠিক করে, পরের দিনই ঢাকা যাবে। সিদ্ধান্তটি তার খুব ভালো লাগে, ফের চিত হলে চোখ বুজে আসে, একটা ঘোড়াও আসে; উঠানে থামলে সে তার পিতামহর পিতামহকে ঘোড়া থেকে নামতে দেখে; তারপর দেখে, সে অচেনা এক পথের ধারে দাঁড়িয়ে আছে এবং বেশ কয়েকটি ঘোড়া ধুলা উড়িয়ে চকিতে অদৃশ্য হয়ে যায়। স্বপ্নে গণনার কাজ কেউ করে কি না, আমরা জানি না; তবে তোরাব মজুমদার ভাবতে পারে যে প্রথমে একটি, তারপর সতেরোটি; এটাও তার উদ্বেগ হয়ে স্বপ্নে দেখা দেয়_লক্ষণ সেন কি দুপুরের খাওয়া শেষ করে তলোয়ারটা হাতে নিতে পারবে? তারপর সে লক্ষণ সেনের রাজধানীতে যায় আর সেখানকার সমস্ত পরিত্যক্ত প্রাসাদে নিজের একমাত্র পুত্র শাহ আলমকে খুঁজতে থাকে।
সেদিনই কাশেম মজুমদার আর শোয়া থেকে উঠতে পারে না। তখন সকাল। তোরাব মজুমদার ব্যাগ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে সবে উঠানে নেমেছে, লাউয়ের মাচার খুঁটির দিকে তাকিয়েছে, ভেবেছে এখানেই সামান্য সময়ের জন্য বাঁধা ছিল ঘোড়াটি। কিছুদিন পর সারা জীবনের জন্য তার সঙ্গেই থাকবে।
'তোর আব্বার অবস্থা অ্যাক্কেরে খারাপ, তুই কই যরি?' খুদুবিবির এই কথায় সে পেছন ফিরে তাকায়; বলে, 'ঢাকায় যাইতে আছি, আফনের কি মাতা খারাপ, বাড়ির বাইর অনের সোময় অ্যামনে বাদা দেন কিল্লাই? হ্যাতেনের কিয়ের অসুখ? আইজ্জা অ্যাক্কেনা হুঁতি আরাম করের, করক না!'
খুদুবিবি বলে, 'তুই হাগল অই গেছত। তোর বাফে বিছনায় হ্যাশাব করি দিছে।'
'ঠাণ্ডা লাইগছে। ঠিক অই যাইব।'
এর পরের ঘটনা খুব দ্রুত ঘটতে থাকে। তোরাব মজুমদার ঢাকায় যায়, সেখানে জানতে পারে, সুবেদার শাহ আলম সাভারে আছে। সে সাভারে যায়, জানতে পারে, ময়নামতিতে আছে। সেখানে গেলে সে শুনতে পায়, ময়নামতিতে একজন শাহ আলম আছে, তবে তার বিচার চলছে এবং সে সুবেদার নয়। আবার ঢাকায় গিয়ে খোঁজ করার পরামর্শ পেয়ে সে সেখানে যায় এবং শোনে যে সব শাহ আলমের বিচার চলছে; অনেকের রায় হয়ে গেছে। কিন্তু শাহ আলমদের কী অপরাধ এবং সুবেদার শাহ আলমের রায় হয়েছে কি না কিংবা কী হয়েছে, জানতে পারে না। সে অস্থির হয়ে পড়ে; ঘোড়ার কথা আর খেয়াল থাকে না। যদিও শহরের যে রেস্টুরেন্টগুলোতে খেয়েছে, দু-চারটির দেয়ালে লাগানো সাদাকালো টিভিতে নারকেল তেলের বিজ্ঞাপনে সে ঘোড়া দেখেছে, গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৌড়ায়; ভেবেছে এই রকম তার ঘোড়াটাও গানের সঙ্গে ছুটবে; ট্রেনিং দিলেই এমনটা করতে পারবে।
তোরাব মজুমদার যখন ট্রেন থেকে পরশুরাম স্টেশনে নামে, তখন সামান্য দূরে দেখে সারিবাঁধা গরুর গাড়ি থেকে রাস্তার পাশে ইট নামিয়ে রাখা হচ্ছে। এক গাড়োয়ানের কাছ থেকে সে জানতে পারে, রাস্তাটা পাকা হবে। বাড়িতে পেঁৗছানোর আগে পুকুরের পাড়েই তাকে জড়িয়ে ধরে চাচাতো ভাই হাসিব মজুমদার। 'তোর বাপ তোর নাম দরি কতবার ডাইকছে, কইছে, আঁর হাগলা আউলাজাউলা হুতগারে দেইয়ের না কা, আঁর শাআলাম কই' বলে সে কাঁদতে থাকে।
উঠানে এসে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে লাউয়ের মাচার খুঁটির দিকে তাকিয়ে থাকে সে। ব্যাগটা তার হাত থেকে পড়ে যায়। তারপর খুঁটিটা ধরে একটা হ্যাঁচকা টান দিলে গোটা মাচাই পড়ে যায়। নারকেলগাছের ছায়া খুব দ্রুত দীর্ঘ হতে থাকে।
পরশুরাম প্রাইমারি স্কুলের বটগাছের নিচে বসে এই সব যখন সে ভাবছিল, ধুলা উড়িয়ে এক অশ্বারোহী দক্ষিণ দিক থেকে আসে। পৌষের রোদে ও উত্তরের বাতাসে সেই ধুলা ভেসে থাকে; তার মনে হয়, হঠাৎ এই সব ভাবনা, আকাঙ্ক্ষা ও অনিশ্চয়তাকে সমর্থন জানাতে শীতের হাওয়া আর ধুলা থেকে এই ঘোড়া সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমে তা কাছে আসে; এবং মুহূর্তের মধ্যে ঘোড়াটি তার আরোহীকে নিয়ে তোরাব মজুমদারকে অতিক্রম করে যায়, উত্তরের হাওয়া তার সামনে কিছুক্ষণ থমকে থাকলে সে কিছুই দেখতে পায় না; তারপর সে দেখতে পায় যে পরশুরাম বাজারের দিকে শিশুরা দৌড়াচ্ছে, সেও রওনা দেয়, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড রোডের যেখানে সিও অফিসের রাস্তাটা মিলেছে, সেখানকার কৃষ্ণচূড়াগাছটি ঘিরে একটা জটলা হয়েছে; তাতে শিশুর সংখ্যাই বেশি; ভিড় ঠেলে সে গাছের সঙ্গে বাঁধা ঘোড়াটি দেখে, জিজ্ঞাসা করে, 'মালিক কই?'
এক কিশোর বলে, 'করাতকলে।'
'অ্যাঁ, হিঁয়ানে কিয়া?'
'মনে অয় কাট কিনব।'
সে করাতকলে গিয়ে দেখে, জিন্নাহ টুপি পরা, পাকা দাড়িঅলা একটি লোক, বয়স ষাটের কম হবে না, বসে আছে। তার সামনে আরেকটি চেয়ার পাতা, যেখানে লাল তারাখচিত একটি কাপ, চা শেষ করা; পাশে বিস্কুটভর্তি পিরিচ।
'আইচ্ছা ভাইসাব, আমনে কনানতুন আইছেন?'
নীরবতা।
তার মনে হয়, লোকটি অনেক দূর থেকে এসেছে। ফলে স্থানীয় ভাষা সে বুঝতে পারছে না।
'আপনের ঘোড়াখান খোব সোন্দর। আরব দ্যাশের মনে অয়।'
লোকটি এবার তার মুখের দিকে মনোযোগ দেয়; বলে, 'এইটা আমার সোউবাগ্যের ঘোড়া। আমার ছয়টা মাইয়া হওনের ফর একটা ফোলা হইছিল। ওই খুশিতে আমার শ্বশুর আমারে উফহার দিছে। আপনের লগে ফরিচয় হইল না।'
খুব ভা্েলা লাগে তোরাব মজুমদারের; হাসে; বলে, 'অ্যাত সোন্দর আর সোউবাগ্যের ঘোড়া আমি দেখি নাই।'
কাঠ চেরাইয়ের শব্দ শুরু হয়, ভুতিজামগাছ থেকে পাখি উড়ে যায়; স্বর উঁচু করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জলিল পাটোয়ারীকে বলতে হয়, 'অ্যাতেনের বাপ কাশেম মজুমদার, সলিয়া মজুমদারবাড়ি, চিনলেন না?'
'আপনে ত খান্দানি মানুষ।' সে জলিল পাটোয়ারীর দিকে তাকায়; বলে, 'অ্যাতেনেরে এই চেয়ার খালি করি বসতে দাও।' চেয়ারে বসে তোরাব মজুমদার ঘোড়াটির দিকে তাকিয়ে থাকে। শিশুর দল প্রাণীটিকে ঘিরে ঘিরে দৌড়ায়, লাফায়; তাদের উল্লাসের শব্দ ভেসে আসে। তোরাব মজুমদার নিজের দাড়িতে হাত বোলায়। তারপর লোকটির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে ওঠে, 'আপনে যদি কিছু মনে না করেন একখান কথা কইতে চাই।'
'কন।'
'ঘোড়াটা আমার পছন্দ হইছে। আপনি কি এইটা বেচবেন? যত দাম লাগে আমি কিনুম।' বলার পরই তার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে; মুহূর্তে ভেবে নেয়, টাকা সে কোথায় পাবে, কাশেম মজুমদার তো মরেনি।
লোকটি বলে, 'এইটা আমার সোউবাগ্যের ঘোড়া, এইটা বেচুম না।' তোরাব মজুমদার কিছুক্ষণ কৃষ্ণচূড়াগাছটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার ন্যাড়া ডালের ওপর তখন একটা কাক বৃত্তাকার উড়তে থাকলে সে দৃষ্টি নামিয়ে রা্স্তায় রাখে আর দক্ষিণ দিক থেকে কাশেম মজুমদারকে আসতে দেখে। সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়; বলে, 'যাই। আফনে কি ইয়ানে বিয়্যাল তলক থাইকবেন?
'হাইনজা তলক আছি', লোকটি বলে।
তোরাব মজুমদার বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে। একটা গরু তীব্র দৌড়ে তাকে অতিক্রম করে যায়, পেছন পেছন রশি হাতে একটা কিশোরকে সে দৌড়াতে দ্যাখে। গরুর খুরে ধুলা ওড়ে। তার মনে হয়, ঘোড়া এর চেয়েও বেশি ধুলা ওড়ায়। সে নিজের স্বর শুনতে পায়, 'গরু আর ঘোড়ার মইদ্যে এইটা হইল একটা তফাত।' ভাবে, সে গরুর পেছনে এই রকম কতবার যে দৌড়েছে, তার কোনো হিসাব নেই।
বাড়িতে পেঁৗছে তার মনে হয়, লোকটাকে দাওয়াত করে শেষ চেষ্টা করে দেখা যায়। মনে হয়, খেয়ালের বশে সে মুখের ওপর কথাটা বলেছে। মানুষের মনের কি কোনো ঠিক আছে! আজকে না বেচুক, কালকে তো বেচবে। সে আরো একটা সিদ্ধান্ত নেয়, ঘোড়াটা কিনবেই এবং এই ঘোড়া ছাড়া পৃথিবীতে তার কেনার মতো পছন্দের আর কিছু নেই।
বিকেলে সে পরশুরাম বাজারের দিকে রওনা দেয়। করাতকলে গিয়ে জানতে পারে, লোকটি অমৃতবাবুর মিষ্টির দোকানে আছে। সেখানে দেখতে পায়, লোকটি আরো কয়েকজন মানুষকে নিয়ে একটা টেবিলে বসে আছে। তাকে ফের দেখে অবাক হওয়া স্বরে লোকটা তাকে বলে, 'মজুমদার সাব, আফনে?' সে সরাসরি বলে ফেলে, 'আফনেরে আমি দাওয়াত দিতে আইছি। আমার বাড়িত রাইতে খাইবেন।' লোকটা অভিভূত হয়; বলে, 'আমি বহুত খুশি হইছি। কিন্তু আমারে তো রাইতের মইদ্যেই গদিতে যাইতে হইব।' তার পাশে বসা একজন বলে, 'সওদাগর সাব, আফনের মালপত্র আমরা দেখি রাখুম। মজুমদার সাব যখন কইছে, ঘুরি আইয়েন।' সেই সময় ফেনীফেরত ট্রেনের ভেঁপু শোনা যায়।
ঘোড়াটি যখন তোরাব মজুমদারের বাড়ির উঠানে লাউয়ের মাচার খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হয়, তখন সূর্য ডুবছিল, বাড়ির পেছনের নারকেলগাছটির ছায়া সামনের হাঁস-মুরগির খোঁয়াড়ের ওপর পড়েছিল। শিশুরা ঘোড়াটিকে ঘিরে দাঁড়াতেই তোরাব মজুমদার ধমক দিল, 'ভাগ, ইয়ানে কিয়া?'
সেই ভিড় থেকে এক শিশু বলে উঠল, 'ইয়া ত ছিনামার ঘোড়া। কী সোন্দর!'
তোরাব মজুমদার বলে, 'হরান ভরি দ্যাখ, বেশিক্ষণ আর নাই।'
লোকটিকে বাড়ির বৈঠকখানায় চেয়ারে লম্বা একটা তোয়ালে রেখে সে বসতে বলে ভেতরে যায়। তার আগে কাছারিঘরের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জেনে নেয়, লোকটি মহিষের দই বেশ পছন্দ করে। সে আবার বাজারের দিকে ছোটে। পথে পুকুরের পাড়ে গ্রামের যুবকরা তার কাছে জানতে চায়, ঘোড়াটি সে কত টাকায় কিনেছে। সে বলে, ঘোড়ার মালিক এটি বিক্রি করবে না; কিন্তু সে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। এক যুবক বলে, এত সুন্দর ঘোড়া কেউ কি আর হাতছাড়া করতে চায়! 'আপনে বরং এক্কান কাম করেন, লোকটারে আমনের বাইত আইজ্জা রাইতে রাখার চেষ্টা করেন।' যুবকটি নিজের গলায় হাত এনে বলে, 'মাইরা মুহুরি নদীতে ফালাই দিমু। ঘোড়াটার মালিক আপনেই হইয়া যাইবেন। মাজেমইদ্যে আমগোরে চড়তে দিবেন। ইয়ান এক্কান সুযোগ।' শুনে তোরাব মজুমদার চেঁচিয়ে বলে, 'তোর মাতা খারাপ হইছে। যে কতা তুই কইছত, হেই কাম হইলে এই ঘোড়ার দিকে আঁই চাইয়াও থাইকতাম হাইরতাম ন। হারা জীবন এক্কান লাশের কতা মনে ভাসি উইটব।'
মহিষের দই খেতে খেতে লোকটি জানায়, যদি তার সেজ মেয়েটাকে পছন্দমতো কারো কাছে বিয়ে দিতে পারে, তাহলে ঘোড়াটি তাকেই উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। তার মনে আনন্দ বয়ে যায়। সে জানায়, তার ছেলে সুবেদার শাহ আলমের জন্য সে পাত্রী খুঁজছে। লোকটি মুখ তুলে তার দিকে তাকায়; বলে, 'আর্মিতে চাকরি করে? তাইলে ত বহুত সুপুরুষ। আফনের পোলারে যে পাইব হের মতো বাইগ্যবতী আর হয় না।' তোরাব মজুমদার বলে, 'আফনের সেজ মাইয়্যা ত হেই রকম বাইগ্যবতী হইতে ফারে।' বলে সে লোকটির দিকে তাকায়। তার দাড়ির মধ্যে সে আরবীয় ঘোড়াটির কেশর দেখতে পায় এবং ধুলার মধ্যে অদৃশ্য হওয়া এক অশ্বারোহী হিসেবে নিজেকে দেখে নেয়। লোকটি বলে, 'আফনের জামাইই ফাইব।' তখন খুব কাছে কোথাও শেয়ালের ডাক শোনা যায়।
সেই রাতে লোকটির বিদায়ের পর তোরাব মজুমদার বাড়িতে এসে নিজের ঘরে চিত হয়ে শোয়। ভাবে, যাক, কাশেম মজুমদারের মৃত্যুর দরকার হলো না। এখন শাহ আলমকে রাজি করানোর কাজটা সারতে হবে। কিন্তু অনেক দিন তার চিঠি আসে না, কোনো যোগাযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে কখনো কখনো গুজব শোনা যায়, 'সেনাবাহিনীতে নাকি খুব গণ্ডগোল হইতেছে। মারা যাইতেছে।' অনেকের লাশও নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! শাহ আলমের জন্য মায়া হয় তার, দেয়ালে টাঙানো ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকে সে। তারপর বিছানা থেকে উঠে দেয়াল থেকে ছবিটি নামায়, মুখের কাছে আনে এবং চুমু খায়। তোরাব মজুমদারের ঠোঁটে ধুলা লেগে যায়। ঘোড়ার কথা মনে পড়ে। সে ঠিক করে, পরের দিনই ঢাকা যাবে। সিদ্ধান্তটি তার খুব ভালো লাগে, ফের চিত হলে চোখ বুজে আসে, একটা ঘোড়াও আসে; উঠানে থামলে সে তার পিতামহর পিতামহকে ঘোড়া থেকে নামতে দেখে; তারপর দেখে, সে অচেনা এক পথের ধারে দাঁড়িয়ে আছে এবং বেশ কয়েকটি ঘোড়া ধুলা উড়িয়ে চকিতে অদৃশ্য হয়ে যায়। স্বপ্নে গণনার কাজ কেউ করে কি না, আমরা জানি না; তবে তোরাব মজুমদার ভাবতে পারে যে প্রথমে একটি, তারপর সতেরোটি; এটাও তার উদ্বেগ হয়ে স্বপ্নে দেখা দেয়_লক্ষণ সেন কি দুপুরের খাওয়া শেষ করে তলোয়ারটা হাতে নিতে পারবে? তারপর সে লক্ষণ সেনের রাজধানীতে যায় আর সেখানকার সমস্ত পরিত্যক্ত প্রাসাদে নিজের একমাত্র পুত্র শাহ আলমকে খুঁজতে থাকে।
সেদিনই কাশেম মজুমদার আর শোয়া থেকে উঠতে পারে না। তখন সকাল। তোরাব মজুমদার ব্যাগ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে সবে উঠানে নেমেছে, লাউয়ের মাচার খুঁটির দিকে তাকিয়েছে, ভেবেছে এখানেই সামান্য সময়ের জন্য বাঁধা ছিল ঘোড়াটি। কিছুদিন পর সারা জীবনের জন্য তার সঙ্গেই থাকবে।
'তোর আব্বার অবস্থা অ্যাক্কেরে খারাপ, তুই কই যরি?' খুদুবিবির এই কথায় সে পেছন ফিরে তাকায়; বলে, 'ঢাকায় যাইতে আছি, আফনের কি মাতা খারাপ, বাড়ির বাইর অনের সোময় অ্যামনে বাদা দেন কিল্লাই? হ্যাতেনের কিয়ের অসুখ? আইজ্জা অ্যাক্কেনা হুঁতি আরাম করের, করক না!'
খুদুবিবি বলে, 'তুই হাগল অই গেছত। তোর বাফে বিছনায় হ্যাশাব করি দিছে।'
'ঠাণ্ডা লাইগছে। ঠিক অই যাইব।'
এর পরের ঘটনা খুব দ্রুত ঘটতে থাকে। তোরাব মজুমদার ঢাকায় যায়, সেখানে জানতে পারে, সুবেদার শাহ আলম সাভারে আছে। সে সাভারে যায়, জানতে পারে, ময়নামতিতে আছে। সেখানে গেলে সে শুনতে পায়, ময়নামতিতে একজন শাহ আলম আছে, তবে তার বিচার চলছে এবং সে সুবেদার নয়। আবার ঢাকায় গিয়ে খোঁজ করার পরামর্শ পেয়ে সে সেখানে যায় এবং শোনে যে সব শাহ আলমের বিচার চলছে; অনেকের রায় হয়ে গেছে। কিন্তু শাহ আলমদের কী অপরাধ এবং সুবেদার শাহ আলমের রায় হয়েছে কি না কিংবা কী হয়েছে, জানতে পারে না। সে অস্থির হয়ে পড়ে; ঘোড়ার কথা আর খেয়াল থাকে না। যদিও শহরের যে রেস্টুরেন্টগুলোতে খেয়েছে, দু-চারটির দেয়ালে লাগানো সাদাকালো টিভিতে নারকেল তেলের বিজ্ঞাপনে সে ঘোড়া দেখেছে, গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৌড়ায়; ভেবেছে এই রকম তার ঘোড়াটাও গানের সঙ্গে ছুটবে; ট্রেনিং দিলেই এমনটা করতে পারবে।
তোরাব মজুমদার যখন ট্রেন থেকে পরশুরাম স্টেশনে নামে, তখন সামান্য দূরে দেখে সারিবাঁধা গরুর গাড়ি থেকে রাস্তার পাশে ইট নামিয়ে রাখা হচ্ছে। এক গাড়োয়ানের কাছ থেকে সে জানতে পারে, রাস্তাটা পাকা হবে। বাড়িতে পেঁৗছানোর আগে পুকুরের পাড়েই তাকে জড়িয়ে ধরে চাচাতো ভাই হাসিব মজুমদার। 'তোর বাপ তোর নাম দরি কতবার ডাইকছে, কইছে, আঁর হাগলা আউলাজাউলা হুতগারে দেইয়ের না কা, আঁর শাআলাম কই' বলে সে কাঁদতে থাকে।
উঠানে এসে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে লাউয়ের মাচার খুঁটির দিকে তাকিয়ে থাকে সে। ব্যাগটা তার হাত থেকে পড়ে যায়। তারপর খুঁটিটা ধরে একটা হ্যাঁচকা টান দিলে গোটা মাচাই পড়ে যায়। নারকেলগাছের ছায়া খুব দ্রুত দীর্ঘ হতে থাকে।
No comments